মুখ থুবড়ে পড়েছে এডিপি বাস্তবায়ন, একযুগে সর্বনিম্ন
চলতি (২০২৩-২৪) অর্থবছরের প্রথম ৭ মাসে (জুলাই- জানুয়ারি) বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) বাস্তবায়ন হয়েছে মোট বরাদ্দের মাত্র ২৭ দশমিক ১১ শতাংশ। অর্থবছরের বাকি আছে আর মাত্র ৫ মাস। এই সময়ে বাস্তবায়ন করতে হবে অর্থবছরের বরাদ্দের বাকি ৭২ দশমিক ৮৯ শতাংশ এডিপি। গত এক যুগে এডিপি বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে এমন বেহাল দশা দেখা যায়নি।
কয়েকটি মন্ত্রণালয় ছাড়া বেশিরভাগই তাদের কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে পারছে না। ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জানুয়ারি মাস পর্যন্ত (প্রথম ৭ মাসের) এডিপি বাস্তবায়নের অগ্রগতি প্রতিবেদন সূত্রে এমন তথ্য জানা গেছে।
বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, চলতি অর্থবছরের প্রথম ৭ মাসে গত এক যুগের মধ্যে সবচেয়ে কম এডিপি বাস্তবায়ন হয়েছে। জুলাই-জানুয়ারি পর্যন্ত সময়ে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) বাস্তবায়নের হার দাঁড়িয়েছে মাত্র ২৭ দশমিক ১১ শতাংশ। যা গত অর্থবছরের চেয়েও ১ শতাংশ কম। ২০২২-২৩ অর্থবছরের আলোচ্য সময়ে এডিপি বাস্তবায়ন হয়েছিল ২৮ দশমিক ১৬ শতাংশ। এমনকি গত এক যুগের মধ্যে চলতি অর্থবছরের মতো কখনো এত কম এডিপি বাস্তবায়ন হয়নি।
গত এক যুগের বিভিন্ন অর্থবছরের এডিপি বাস্তবায়নের চিত্র পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, সবচেয়ে বেশি এডিপি বাস্তবায়ন হয়েছিল ২০১৮-১৯ অর্থবছরে। ওই অর্থবছরে এডিপি বাস্তবায়ন হয়েছিল মোট বরাদ্দের ৩৪ দশমিক ৪৩ শতাংশ। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ছিল ৩৩ দশমিক ৩৫ শতাংশ। এছাড়া ২০১৫-১৬ ও ২০২০-২১ অর্থবছরে ছিল ২৮ শতাংশের ওপরে। বাকি অর্থবছরগুলোতে এডিপি বাস্তবায়নের হার ছিল ৩০ শতাংশের ওপরে।
আরও পড়ুন
•পৌনে ৭ মাসে রাজস্ব আদায় ১ লাখ ৯৮ হাজার কোটি টাকা
•রিজার্ভ বাড়াতে আসছে অফশোর ব্যাংকিং, হচ্ছে আইন
অর্থবছরের তুলনায় কম হলেও মাসের হিসাবে জানুয়ারিতে এডিপি বাস্তবায়ন হার গত অর্থবছরের জানুয়ারির সমান। তবে ২০২২-২৩ অর্থবছর ছাড়া গত এক যুগের মধ্যে জানুয়ারি মাসে সবচেয়ে কম এডিপি বাস্তবায়ন হয়েছে চলতি অর্থবছরে।
আইএমইডির তথ্য অনুযায়ী, শুধু জানুয়ারি মাসে এডিপি বাস্তবায়ন হয়েছে ৪ দশমিক ৬৩ শতাংশ। ২০২২-২৩ অর্থবছরেও এই হার একই ছিল। যদিও অন্য অর্থবছরগুলোতে জানুয়ারি মাসে বাস্তবায়ন হার ছিল ৫ থেকে ৭ শতাংশের কাছাকাছি।
পরিকল্পনা কমিশনের তথ্যমতে, ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে মোট এক হাজার ৩৯২টি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। এগুলো বাস্তবায়নে এডিপিতে বরাদ্দ রাখা হয় ২ লাখ ৭৪ হাজার ৬৭৪ কোটি টাকা। অর্থবছরের ৭ মাসে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের তত্ত্বাবধানে থাকা এসব প্রকল্পের বিপরীতে খরচ হয়েছে মাত্র ৭৪ হাজার ৪৬৪ কোটি ১৯ লাখ টাকা।
বরাদ্দের তুলনায় বাস্তবায়ন অগ্রগতিতে সবচেয়ে বেশি এগিয়ে আইএমইডি। বিভাগটি বাস্তবায়ন করেছে ৯৩ দশমিক ৭৬ শতাংশ। শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় বাস্তবায়ন করেছে ৭৭ দশমিক ৩৪ শতাংশ। এছাড়া দুর্নীতি দমন কমিশন বাস্তবায়ন করেছে ৭১ দশমকি শূন্য ৩ শতাংশ এবং জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ বাস্তবায়ন করছে ৫৯ দশমিক ২৩ শতাংশ।
অন্যদিকে, অর্থবছরের ৭ মাস পার হলেও বরাদ্দের ১০ শতাংশও বাস্তবায়ন করতে পারেনি দুই মন্ত্রণালয় ও বিভাগ। এর মধ্যে সবচেয়ে কম এডিপি বাস্তবায়ন করেছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। ৭ মাসে তাদের বরাদ্দের মাত্র ৩ দশমিক ৫৬ শতাংশ বাস্তবায়ন করতে পেরেছে তারা। মোট বরাদ্দের মাত্র ৬ দশমিক ৬৪ শতাংশ বাস্তবায়ন করেছে অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ। এছাড়া এডিপির ২০ শতাংশও বাস্তবায়ন করতে পারেনি ১০টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগ।
এমওএস/কেএসআর/জিকেএস