নারী উদ্যোক্তা তৈরির ‘উদ্যোক্তা’ ফাহমিদা নিজাম
তথ্য-প্রযুক্তির যুগে নিজেকে বদলে ফেলার এক অন্যতম মাধ্যম অনলাইন প্ল্যাটফর্ম। অনেক তরুণ-তরুণী অনলাইন ও সোশ্যাল মিডিয়া কাজে লাগিয়ে হয়েছেন উদ্যোক্তা। নিজে স্বাবলম্বী হয়েছেন, আয় করছেন লাখ লাখ টাকা। নিজ ও পরিবারের আর্থিক চাহিদা পূরণ করে সঞ্চয় করছেন, বাড়িয়েছেন ব্যবসার পরিধিও। ক্ষুদ্র উদ্যোগকে কাজে লাগিয়ে হয়েছেন সফল উদ্যোক্তা।
এমন এক নারী উদ্যোক্তা আর কে ফাহমিদা নিজাম। নিজে সফল হওয়ার পাশাপাশি স্বপ্ন দেখেন উদ্যোক্তা তৈরির, বিশেষ করে নারী উদ্যোক্তা তৈরির। এতেও সফল তিনি। বলা যায় নারী উদ্যোক্তা তৈরির ‘উদ্যোক্তা’ ফাহমিদা নিজাম। লেডিস কেয়ার বিউটি আড্ডা (এলসিবিএ) নামে ফেসবুক গ্রুপ খুলে ভাগ্য খুলেছেন শত শত নারীর।
অনেক শিক্ষার্থীর মধ্যেও ব্যবসা করার ইচ্ছে আছে। কিন্তু অর্থ নেই, ব্যবসার কৌশল জানা নেই। আমি প্রাথমিকভাবে তাদের স্বল্প পুঁজিতে কীভাবে ব্যবসা করা যায় সেটা শেয়ার করি।
সম্প্রতি উত্তরায় আর কে ফাহমিদা নিজামের সঙ্গে কথা হয় জাগো নিউজের। নিজের উদ্যোগের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘সমাজের অনেক নারীই উদ্যোক্তা হতে চান, কিন্তু উদ্যোগ থাকলেও সুযোগ হচ্ছে না। আমি তাদের উদ্যোগকে ছড়িয়ে দিতে চাই। এ কারণেই আমার স্বপ্ন নারী উদ্যোক্তা তৈরি করা, যারা সফল হয়ে অবদান রাখবেন দেশের অর্থনীতিতে। বর্তমানে বেকারত্ব বেড়েই চলছে। আমার এই ক্ষুদ্র প্রচেষ্টার মাধ্যমে অনেক নারীর আয়ের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। এটাই আমার কাছে চরম পাওয়া।’
আরও পড়ুন
- সোয়া কোটি টাকা অনুদান পেলেন ২৫০ নারী উদ্যোক্তা
- নারী জামানতকারী দেখিয়েও ঋণ নিতে পারবেন নারী উদ্যোক্তারা
- দেশের অর্থনীতিতে অবদান রাখছেন নারী উদ্যোক্তারা
ফাহমিদা নিজাম বলেন, ‘অনেক শিক্ষার্থীর মধ্যেও ব্যবসা করার ইচ্ছে আছে। কিন্তু অর্থ নেই, ব্যবসার কৌশল জানা নেই। আমি প্রাথমিকভাবে তাদের স্বল্প পুঁজিতে কীভাবে ব্যবসা করা যায় সেটা শেয়ার করি। পরে তারা বাসায় বসে যে যেটা তৈরি করতে পারেন, সেই পণ্য দিয়েই প্রাথমিক ব্যবসা শুরু হয় আমাদের গ্রুপের মাধ্যমে। এখন তাদের অনেকেই মাসে ১০ হাজার থেকে ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত আয় করছেন। অনেকেই তাদের পণ্য দেশের বাইরে পাঠাচ্ছেন।’
উদ্যোক্তা তৈরির স্বপ্ন দেখা এ নারী উদ্যোক্তা বলেন, ‘একজন নারী উদ্যোক্তা হওয়ার পাশাপাশি অন্য নারী উদ্যোক্তাদের নিয়ে ক্ষুদ্র থেকে ক্ষুদ্রতর পরিসরে কাজ করার উদ্যোগ নিয়েছি। আমার উদ্যোগের নাম লেডিস কেয়ার বিউটি আড্ডা (এলসিবিএ)। এটা নারীদের নিয়ে কাজ করা একটি ফেসবুক গ্রুপ। এখানে নতুন যারা আসেন তারা কীভাবে কাজ করবেন সেটা বোঝানো হয়। কাজ করার মাধ্যমটা আমরা করে দেই।’
‘অনেক নারী আছেন যারা কোনো একটি পণ্য ভালো তৈরি করতে পারেন। সেটা নিয়ে উদ্যোক্তা হওয়ার স্বপ্নও দেখেন। এমন ছোট ছোট উদ্যোগ নিয়ে নারীরা চাইলে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেন। আমাদের এখানে খুব সহজে, কোনো ধরনের চার্জ ছাড়াই আসতে পারেন। সেলার কার্ডের মাধ্যমে আমাদের গ্রুপের সদস্যরা ঘরে বসে স্বল্প মূলধন নিয়ে কাজ করতে পারেন সহজেই। তার কাজ, পণ্য বিক্রি ও ব্যবসার পরিধি বাড়ানোর বিষয়েও শেখানো হয় গ্রুপের মাধ্যমে।’
নতুন উদ্যোক্তার বিষয়ে ফাহমিদা নিজাম বলেন, ‘লেডিস কেয়ার বিউটি আড্ডায় ৬ হাজার ২শর বেশি নারী সদস্য। খুব সহজে সফলতার সঙ্গে যে যা পণ্য তৈরি করেন সেগুলো নিয়ে কাজ করছেন তারা। নতুন কোনো নারী যদি আমাদের সঙ্গে আসতে চান প্রথমেই আমরা তাকে বলি- কী নিয়ে কাজ করতে চান? তাকে বলি তার আগ্রহের জায়গাটা আমাদের জানাতে বা বলি নিজেকে প্রশ্ন করেই জানুন কোন কাজটি করতে পারেন। ইচ্ছে করলে আমরা তো অনেক কাজই করতে পারি, কিন্তু এর মধ্যে কোন কাজটি সবচেয়ে ভালো করতে পারি সেটা নিয়েই তাদের কাজ করা উচিত। আপনি যেটা করতে ভালোবাসেন, স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন সেটা নিয়েই এগিয়ে যাওয়া ভালো। এক্ষেত্রে খুব সহজেই অনলাইনে কাজটা করা যায়, আমাদের পূর্ণাঙ্গ সাপোর্ট থাকে তাদের জন্য।’
অনেক নারী আছেন যারা কোনো একটি পণ্য ভালো তৈরি করতে পারেন। সেটা নিয়ে উদ্যোক্তা হওয়ার স্বপ্নও দেখেন। এমন ছোট ছোট উদ্যোগ নিয়ে নারীরা চাইলে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেন। আমাদের এখানে খুব সহজে, কোনো ধরনের চার্জ ছাড়াই আসতে পারেন।
লেডিস কেয়ার গ্রুপের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘নতুন কোনো উদ্যোগ নিয়ে কাজ করতে প্রয়োজন ব্যক্তি পরিচিতি, অ্যাক্টিভিটিজ, নিজেকে তৈরি করা। সবাইকে চিনতে হবে, সবার সঙ্গে পরিচিত হতে পারবেন এ গ্রুপের মাধ্যমে। মাঝেমধ্যে আমরা একত্রিত হই, নিজেদের উদ্যোগ বিনিময় করি। তবে উদ্যোক্তা হয়ে সফলতা পেতে ধৈর্য ও সততা খুবই দরকার। উদ্যোক্তার সততার ওপরেই কিন্তু গ্রাহক আসে।’
আরও পড়ুন
- যেভাবে সফল নারী উদ্যোক্তা হলেন মনিরা
- ড্রাগন চাষে জীবন বদলেছে চম্পা বেগমের
- মালয়েশিয়ায় প্রবাসী নারী উদ্যোক্তা জাহিদার নিরলস সংগ্রাম
‘ঠিকমতো যদি পণ্য দিতে পারেন তাহলে ক্রেতার সংখ্যা দিন দিন চক্রাকারে বাড়তে থাকে। আবার মন্দ কাজ করলে এর চেয়ে দ্রুত গতিতে বদনামটাও ছড়িয়ে পড়ে। এখানে সততার সঙ্গে কাজ করতে হবে। অনেক সময় পরিবার থেকে বাধা আসে। তবে আমাদের গ্রুপের সবাই নারী, কোনো পুরুষ নেই। এখানে স্বাধীনতা রয়েছে, কারণ সবাই এখানে নারী। খুব সহজে, নিরাপত্তা বজায় রেখেই আমাদের গ্রুপের সদস্য তৈরি করি। পরে তিনি তার পণ্য নিয়ে কাজ করেন। গ্রুপের মাধ্যমেও ক্রেতা আসে, আবার ব্যক্তি উদ্যোগেও ক্রেতা আসে।’
কী ধরনের পণ্য নিয়ে কাজ করছেন- এমন প্রশ্নে ফাহমিদা বলেন, ‘আমাদের এখানে নির্দিষ্ট কোনো পণ্য নেই। এখানে সবাই যে যার মতো বাড়িতে বানানো আইটেম নিয়ে কাজ করেন। কেউ জামদানির ব্যাগ তৈরি করেন, জামদানির জুতা, হ্যান্ডিক্রাফট, ক্রোকারিজ আইটেম, শাড়ি, সালোয়ার-কামিজ, কাতান পিস, নকশিকাঁথা, কসমেটিকস, জুয়েলারি আইটেম, খাদ্য বিশেষ করে শীতের পিঠা-পুলি, দুপুরের খাবার ইত্যাদি।’
আগামীতে যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের সঙ্গে প্রশিক্ষণ ও ঋণ সহায়তা নিয়ে কাজ করার ইচ্ছা আছে বলেও জানান তিনি।
ইএআর/কেএসআর/জিকেএস