২০২৩-২৪ অর্থবছর
প্রথম ৬ মাসে সবচেয়ে কম এডিপি বাস্তবায়ন
গত কয়েক বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন এডিপি বাস্তবায়ন হয়েছে চলতি অর্থবছরের প্রথম ৬ মাসে (জুলাই-ডিসেম্বরে)। এ সময়ে এডিপি বাস্তবায়নের হার ২২ দশমিক ৪৮ শতাংশ। এর আগে কোনো অর্থবছরের প্রথম ৬ মাসে এত কম এডিপি বাস্তবায়ন হয়নি। গত অর্থবছরে সর্বনিম্ন ২৩ দশমিক ৫৩ শতাংশ এডিপি বাস্তবায়ন হয়েছিল। পরিকল্পনা কমিশনের বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) প্রকাশিত হালনাগাদ প্রতিবেদনের তথ্য বিশ্লেষণে এ চিত্র দেখা যায়।
চলতি অর্থবছরে সরকারের এডিপি বরাদ্দ ২ লাখ ৭৪ হাজার কোটি টাকা। ডিসেম্বর পর্যন্ত ৫৮ মন্ত্রণালয় ও বিভাগের এক হাজার ৩৯২টি প্রকল্পে বরাদ্দের অর্থ খরচ হয়েছে মাত্র ২২ দশমিক ৪৮ শতাংশ। গত অর্থবছরের একই সময়ে এর বাস্তবায়ন ছিল ২৩ দশমিক ৫৩ শতাংশ। গত পাঁচ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ বাস্তবায়ন ছিল ২০২১-২২ অর্থবছরে। ওই বছর আলোচ্য সময়ে এডিপি বাস্তবায়ন হয়েছিল ২৪ দশমিক শূন্য ৬ শতাংশ।
আরও পড়ুন: আবারও সেঞ্চুরি হাঁকালো পেঁয়াজ!
ডিসেম্বর শেষে বিভিন্ন প্রকল্পে অর্থ ব্যয় হয়েছে ৬১ হাজার ৭৩৯ কোটি ৬৯ লাখ টাকা। যা মোট বরাদ্দের ২২ দশমিক ৪৮ শতাংশ। একক মাস হিসেবে গত ডিসেম্বরে বিভিন্ন প্রকল্পে সরকারের বাস্তবায়ন ৫ দশমিক ৪২ শতাংশ। গত বছর তা ছিল ৫ দশমিক ১৩ শতাংশ। গত ডিসেম্বরে ব্যয় হয় ১৪ হাজার ৮৮২ কোটি টাকা।
আইএমইডির কর্মকর্তারা জানান, এডিপি বাস্তবায়নে সরকার বিভিন্ন কৌশল প্রণয়ন করলেও মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলো এখনো তাদের বাস্তবায়ন সক্ষমতা সেভাবে গড়ে তুলতে পারেনি।
তাদের মতে, প্রকল্পের দরপত্র আহ্বান থেকে শুরু করে, ভূমি অধিগ্রহণ, বৈদেশিক অর্থায়ন নিশ্চিত করা, প্রশাসনিক অনুমোদন, প্রকল্প পরিচালক নিয়োগ, যথাযথ সম্ভাব্যতা জরিপের অভাব এবং বাস্তবায়নকারী সংস্থাগুলোর মধ্যে সমন্বয়ের অভাবের মতো নানান সমস্যা এডিপি বাস্তবায়নের পথে বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে।
এদিকে, খরচ কম হওয়ার পেছনে চলতি অর্থবছরের শুরু থেকে ব্যয়সাশ্রয়ী নীতিকে দায়ী করছেন অনেকে। ২০২২-২৩ অর্থবছরে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে প্রকল্প বাস্তবায়ন, জরুরি না হলে বিদেশ সফর ও গাড়ি কেনা বন্ধ, আসবাবপত্র কেনায় আরও সাশ্রয়ী হওয়াসহ নানান উদ্যোগ নেওয়া হয়। এ সিদ্ধান্ত এখনো বহাল আছে। এর প্রভাব পড়েছে এ অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসের এডিপি বাস্তবায়নে। দেশের অর্থনীতিতে চাপের পরিস্থিতিতে সরকার গত অর্থবছর প্রকল্পগুলোকে ‘এ’, ‘বি’ ও ‘সি’ শ্রেণিতে ভাগ করে। চলতি অর্থবছরে এডিপি বরাদ্দের ৬১ দশমিক ৫৩ শতাংশ সরকারি অর্থায়ন। এছাড়া ৯৪ হাজার কোটি টাকা বা ৩৪ দশমিক ২২ শতাংশ বিদেশি ঋণ ও ১১ হাজার ৬৭৪ কোটি বা ৪ দশমিক ২৫ শতাংশ সংস্থাগুলোর নিজস্ব অর্থায়নে।
আরও পড়ুন: ২১ দিনে রিজার্ভ কমেছে ১৭৬ কোটি ডলার
বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে দেখা যায়, এবার সরকারি অর্থায়নের বরাদ্দ আইএমইডির দেওয়া তথ্যের ইতিহাসে সবচেয়ে কম। ডিসেম্বর পর্যন্ত সরকারি অর্থের ব্যয় হয়েছে মাত্র ৩৪ হাজার ৪২৯ কোটি টাকা বা ২০ দশমিক ৩৭ শতাংশ। সাম্প্রতিক সরকারি অর্থের সবচেয়ে বেশি ব্যয় হয়েছে ২০১৯-২০ অর্থবছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়ে। ওই অর্থবছরে সরকারি অর্থের ব্যয় হয় ২৯ দশমিক শূন্য ৮ শতাংশ।
বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, সবচেয়ে কম অর্থ খরচ করেছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এ মন্ত্রণালয়ের মাত্র ৭টি প্রকল্পের জন্য ৯৩ কোটি ৪৮ লাখ টাকা বরাদ্দ থাকলেও খরচ হয়েছে মাত্র ৩ কোটি টাকা। এটি মোট বরাদ্দের ৩ দশমিক ২৯ শতাংশ।
কম অর্থ ব্যয়ের দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ। এ মন্ত্রণালয়ের ৬টি প্রকল্পের বিপরীতে ৩১৭ কোটি টাকা বরাদ্দ থাকলেও ব্যয় হয়েছে মাত্র ১৩ কোটি ৬৫ লাখ টাকা। যা বরাদ্দের ৪ দশমিক ২৯ শতাংশ।
স্বাস্থ শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের ১৭টি প্রকল্পের বিপরীতে ২ হাজার ৭৫৪ কোটি টাকা বরাদ্দ ছিল। খরচ হয়েছে মাত্র ২৪৩ কোটি টাকা। যা এ মন্ত্রণালয়ের মোট বরাদ্দের ৮ দশমিক ৮২ শতাংশ।
আরও পড়ুন: কনটেইনার সংকট নেই, পরিবহন জটিলতায় বাড়ছে আমদানি-রপ্তানি খরচ
নৌ-পরিবহন মন্ত্রণলায়ের ৩২টি প্রকল্পের বিপরীতে ৯ হাজার ৯৩৩ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে চলতি অর্থবছর। গত ছয় মাসে এ মন্ত্রণালয় মাত্র ৯১৭ কোটি ১১ লাখ টাকা ব্যয় করতে পেরেছে। মোট বরাদ্দের বিপরীতে তাদের খরচ ৯ দশমিক ২৩ শতাংশ।
সবচেয়ে বেশি অর্থ ব্যয় করেছে সরকারের বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ (আইএমইডি)। এ বিভাগের ৩ প্রকল্পের বিপরীতে বরাদ্দ ছিল ১২২ কোটি টাকা। এর মধ্যে ছয় মাসেই তারা খরচ করেছে ১১৪ কোটি ৫০ লাখ টাকা। এরই মধ্যে মোট বরাদ্দের ৯৩ দশমিক ৪২ শতাংশ খরচ করেছে আইএমইডি।
দ্রুত বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে দ্বিতীয় শীর্ষ অবস্থানে রয়েছে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়। এ মন্ত্রণালয়ের ৪ প্রকল্পের বিপরীতে বরাদ্দ রয়েছে ১১ কোটি টাকা, ছয় মাসে তারা ব্যয় করেছে ৯০ কোটি ৪৬ লাখ টাকা। মোট বরাদ্দের ৭৬ দশমিক ৮ শতাংশই ব্যয় হয়েছে এ মন্ত্রণালয়ের।
এমওএস/কেএসআর/এএসএম