পাইকারি ও খুচরায় আলুর দামের ব্যবধান ২০ টাকা
একদম গ্রামগঞ্জের মোকামে প্রতি কেজি আলু বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকা কেজি দরে। সে আলু হাতবদলে পাইকারি বাজারে এসে বিক্রি হচ্ছে ৫৬-৬০ টাকায়, যা আরও কয়েক হাত বদলে খুচরা বাজারে ভোক্তাকে কিনতে হচ্ছে ৭০ থেকে ৮০ টাকা দরে। সোমবার (১ জানুয়ারি) ঢাকাসহ দেশের কয়েকটি বাজারের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে এমনটা।
এদিকে খুচরা বাজারে একদম ভরা মৌসুমে আলুর এমন দাম রেকর্ড সর্বোচ্চ। এতে যেমন বিরক্ত ক্রেতা, তেমনই বিরক্ত বিক্রেতারাও। তবে যেন কোনো এক অদৃশ্য কারণে এ পণ্যটি নাগালের মধ্যে আসছে না। কিছুটা সরবরাহ সংকট থাকলেও বর্তমান দাম অযৌক্তিক বলছেন বাজার সংশ্লিষ্টরা।
রামপুরা, মালিবাগ ও খিলগাঁও বাজার ঘুরে দেখা যায়, প্রতি কেজি আলু ৭০ টাকার নিচে মিলছে না। ভালো (বাছাই করা) আলুর দাম ৮০ টাকা। রাজধানীর ওই তিনটি বাজার ঘুরে পাইকারি ও খুচরা বাজারে আলুর দামে বড় পার্থক্য দেখা গেছে।
সেখানে উত্তরবঙ্গের জয়পুরহাটের জামালগঞ্জ বাজারে একইদিনে আলু বিক্রি হয়েছে প্রতিমণ (৪০ কেজি) দুই হাজার টাকা। অর্থাৎ প্রতিকেজি ৫০ টাকা। যে আলু পরিবহন খরচসহ রাজধানীর পাইকারি আড়তে এসে হচ্ছে ৫৮ থেকে ৬০ টাকা।
আরও পড়ুন>> ভরা মৌসুমেও আলুর দামে ক্ষোভে ফুঁসছে ক্রেতা
জামালগঞ্জ বাজারের পাইকারি ব্যবসায়ী চপল মিয়া জাগো নিউজকে বলেন, চাষিরা মোকামে প্রতিমণ আলু মানভেদে ১৯০০ থেকে ২১০০ টাকায় বিক্রি করছে। গড়ে কেজি পড়ছে ৫০ টাকা।
অন্যদিকে একইদিনে পাইকারি কারওয়ান বাজার ও শ্যামবাজারে আলু বিক্রি হয়েছে প্রতি পাল্লা ২৯০ থেকে ৩০০ টাকা। অর্থাৎ প্রতি কেজি ৬০ টাকার মধ্যে। ওই আলু রাজধানীর অন্যান্য খুচরা বাজারে এসে দাম বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ৮০ টাকায়।
জানতে চাইলে রামপুরা বাজারের খুচরা বিক্রেতা এনামুল হক বলেন, লাভ বেশি করছি বলা যাবে না। অনেক খরচ রয়েছে। আমরা সব খরচ মিটিয়ে খুব অল্প লাভে পণ্য বিক্রি করতে পারি। কখনো কখনো লোকসানও হয়। দাম কমে যায়।
তিনি আরও বলেন, প্রতি বস্তা আলু কিনলে তাতে অনেক গুড়া আলু পড়ে। সেগুলো বেছে কমদামে বিক্রি করতে হয়। কিছু ঘাততি রয়েছে। সেটাও ওই দামের মধ্যে বাদ পড়ে।
আরও পড়ুন>> ‘জীবনে কখনো এত দামে আলু বিক্রি করিনি’
এদিকে গত বছরের একই সময়ের চেয়ে আলু চারগুণ দামে বিক্রি হচ্ছে। ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) বাজারদরের তালিকানুযায়ী, গত বছর এ সময় আলু ১৬ থেকে ২২ টাকার মধ্যে বিক্রি হয়েছে।
এসব বিষয়ে কথা হয় কনজ্যুমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমানের সঙ্গে। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ‘এখন বাজারে কোনো ব্যালান্স (ভারসাম্য) নেই। কোথাও সিন্ডিকেট কাজ করছে, কোথাও মুদ্রাস্ফীতির পরিবেশ কাজে লাগিয়ে অতি মুনাফালোভীদের সক্রিয় করা হয়েছে। আলুর ক্ষেত্রে যতটা সমস্যা রয়েছে, তার চেয়ে বেশি সমস্যাকে কাজে লাগিয়ে অবৈধ মুনাফা করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, এ আলু নিয়ে সরকার কিছুদিন হৈচৈ করেছে। কিন্তু ক্রেতা প্রতারণার নানা ক্ষেত্র এখন বাজারে। সেক্ষেত্রে আইন আরও কার্যকর প্রয়োজন। কঠোর প্রয়োগ প্রয়োজন। ওই দুর্বলতার করণে ব্যবসায়ীরা তোয়াক্কাহীন হয়ে পড়েছে।
আরও পড়ুন>> ভরা মৌসুমে আলুর চড়া দামে বিরক্ত খুচরা ব্যবসায়ীরাও
গোলাম রহমান বলেন, ‘ব্যবসায়ীরা ভালো করে জানেন, আমাদের আইনি দুর্বলতা ও জটিলতা রয়েছে। তারা সেটার সুযোগ নিচ্ছে। আমাদের আইনের প্রয়োগ আরও কার্যকর করা দরকার। বাজার নিয়ন্ত্রণে চলমান কার্যক্রম একদমই যথেষ্ট নয়।’
এ বছর সেপ্টেম্বর থেকে হঠাৎ আলুর দাম বাড়তে শুরু করে। বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকার খুচরা পর্যায়ে প্রতি কেজিতে আলুর দাম ৩৫-৩৬ টাকা (হিমাগার পর্যায়ে ২৬-২৭) বেঁধে দেয়। সেই সঙ্গে আমদানির অনুমতি এবং দাম স্থিতিশীল রাখতে বাজারে অভিযান শুরু করে প্রশাসন। জেলায় জেলায় হিমাগার পর্যায়েও তদারক করা হয়। তবে এখন পর্যন্ত বাজারে বড় কোনো প্রভাব দেখা যায়নি। প্রতি কেজির দাম ৫০ টাকার নিচে নামেনি।
এনএইচ/বিএ/জেআইএম