ভরা মৌসুমে আলুর চড়া দামে বিরক্ত খুচরা ব্যবসায়ীরাও
‘মৌসুমের সময় জীবনে কখনো এত দামে আলু বিক্রি করিনি। ভালো লাগে না। খালি খালি কাস্টমারের সঙ্গে তর্ক হয়। কী করবো বলেন? বেশি দামে কিনে কমে বিক্রি করবো কীভাবে?’
কথাগুলো বলছিলেন শান্তিনগর বাজারের জহির মিয়া। তিনি সেখানে বিশ বছরের বেশি সময় সবজি বিক্রি করছেন। তিনিও আলুর বাড়তি দামে বিব্রত, বিরক্ত। আগে কখনো ভরা মৌসুমে এত দামে আলু বিক্রির রেকর্ড তার নেই।
তিনি বলেন, আলু যখন নতুন আসে, তখনকার কথা ভিন্ন। এখন তো ভরা সিজন। এত দাম কেন, আমার নিজেরই মাথায় খেলে না।
এ ব্যবসায়ী জানান, প্রতিদিন ৩০ থেকে ৪০ কেজি আলু পাইকারি বাজার থেকে কেনেন তিনি। অন্যান্য সবজির সঙ্গে সারাদিন সেটি বিক্রি করেন। বুুধবার সকালে তিনি কারওয়ান বাজার থেকে প্রতিকেজি নতুন আলু কিনেছেন ৭২ টাকা কেজি দরে। বিক্রি করছেন ৮০ টাকায়।
আর পুরাতন আলু আনেন একবস্তা করে। কারণ পুরাতন আলু সংরক্ষণ করা যায়। তার দাবি সে আলুগুলো কিনেছেন ৬৪ টাকায়, যা ৭০ থেকে ৭৫ টাকায় বিক্রি করছেন।
শান্তিনগরসহ আশপাশে সেগুনবাগিচা ও ফকিরাপুল বাজার ঘুরেও আলুর একই দাম দেখা গেলো। অর্থাৎ ৭০ টাকার নিচে এখন কোনো আলু মিলছে না। ভালো (বাছায় করা) আলুর দাম ৮০ টাকা প্রতিকেজি।
সেগুনবাগিচা বাজারের বিক্রেতা অনিস বলেন, নতুন একবস্তা (৭০ কেজি) আলুর দাম এখন ৪ হাজার ৮০০ টাকা কেনা। এরপর পরিবহন ও খাজনাসহ দাম পড়ে ৭২ টাকা কেজি। এরমধ্যে প্রায় ১০ কেজি আলু থাকে একদম ছোট ও খারাপ মানের। যেগুলো আলাদা করে কম দামে বিক্রি করতে হয়। যে কারণে ৮০ টাকার নিচে আলু বিক্রি করলে মুনাফা হবে না।
এ ব্যবসায়ী বলেন, সরবরাহে ঘাটতির কারণে এখনো আলুর দাম কমছে না। ভারত থেকে আলু আমদানি বন্ধ হওয়ার পর থেকে বাজার আরও চড়ে গেছে। যদিও প্রতিদিন আলুর সরবরাহ একটু একটু করে বাড়ছে। জানুয়ারি মাসে হয়তো আলুর দাম কম থাকবে।
এদিকে খালেক মিয়া নামের একজন ব্যবসায়ী বলেন, এ মাসের শুরুতে আলুর দাম কমার দিকে ছিল। নতুন আলুও প্রতিকেজি ৬০ টাকায় নেমেছিল। কিন্তু মাসের শুরুতে বৃষ্টি হয়। এরপর বাজারে আলু কম আসতে শুরু করে।
তিনি বলেন, শুনেছি মুন্সিগঞ্জসহ বিভিন্ন এলাকায় আলুর ক্ষেত নষ্ট হয়ে গেছে। তাই দামও বাড়তে থাকে। তারপরও মৌসুমের শুরুতে নতুন আলুর দাম কয়েক দিন একটু বেশি থাকলেও পুরোনো আলুর দাম কখনো এত বেশি হতে দেখিনি।
তিনি আরও বলেন, মাঝে ভারত থেকে সামান্য কিছু আলু এসেছে। সেটাও এখন বন্ধ। সব মিলে আলুর বাজারে এ খারাপ অবস্থা।
এদিকে গত বছরের একই সময়ের চেয়ে আলু তিনগুণ দামে বিক্রি হচ্ছে। ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) বাজারদরের তালিকানুযায়ী, ঢাকায় মানভেদে প্রতি কেজি নতুন ও পুরোনো আলু বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৭০ টাকায়। সরকারি সংস্থাটির হিসাব পর্যালোচনায় দেখা যায়, গত এক মাসে আলুর দাম বেড়েছে ৩৭ শতাংশের মতো। গত বছরের এ সময়ে ঢাকার বাজারে নতুন ও পুরোনো আলুর কেজি ছিল ২০ থেকে ২৫ টাকা। এর মানে, দেশে এক বছরের ব্যবধানে পণ্যটির দাম বেড়েছে ১৮৯ শতাংশ।
এ বছর সেপ্টেম্বর থেকে হঠাৎ আলুর দাম বাড়তে শুরু করে। বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকার খুচরা পর্যায়ে প্রতি কেজিতে আলুর দাম ৩৫-৩৬ টাকা (হিমাগার পর্যায়ে ২৬-২৭) বেঁধে দেয়। সেই সঙ্গে আমদানির অনুমতি এবং দাম স্থিতিশীল রাখতে বাজারে অভিযান শুরু করে প্রশাসন। জেলায় জেলায় হিমাগার পর্যায়েও তদারক করা হয়। তবে এখন পর্যন্ত বাজারে বড় কোনো প্রভাব দেখা যায়নি। প্রতি কেজির দাম ৫০ টাকার নিচে নামেনি।
এনএইচ/এমএইচআর/এমএস