ফজলুর রহমান: একজন স্বপ্নবাজ মানুষের প্রস্থান
# ৪২ টাকার পুঁজি থেকে ২৫ হাজার মানুষের কর্মসংস্থান
# সরিষার তেল উৎপাদনে শুরু, এখন ৪০টির বেশি প্রতিষ্ঠান
বিশিষ্ট ব্যবসায়ী, শিল্পোদ্যোক্তা এবং সিটি গ্রুপের চেয়ারম্যান ফজলুর রহমান। একজন স্বপ্নবাজ মানুষ। স্বপ্ন দেখেছেন, রূপ দিয়েছেন বাস্তবে। তিলে তিলে গড়ে তুলেছেন ৪০টির বেশি প্রতিষ্ঠান। কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করেছেন ২৫ হাজারের বেশি মানুষের। দেশের অর্থনীতিতে রেখেছেন অসামান্য অবদান। দেশের শিল্প-বাণিজ্য, অর্থনীতির বিকাশেও রেখেছেন গুরুত্বপূর্ণ অবদান। আজ সবকিছুর মায়া ছেড়ে পরপারে পাড়ি জমিয়েছেন এই সফল শিল্পোদ্যোক্তা।
১৯৭২ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি সরিষার তেল উৎপাদনের উদ্যোগ নেওয়ার মধ্যদিয়ে সিটি গ্রুপের কার্যক্রম শুরু হয় ফজলুর রহমানের হাত ধরে। তার প্রথম উদ্যোগ সফল হওয়ায় সিটি গ্রুপ নতুন নতুন ক্ষেত্রে বিনিয়োগ শুরু করে। উৎপাদন, শিল্পোদ্যোগ ও ট্রেডিংয়ে বিনিয়োগ করা হয় তার হাত ধরে। নব্বই দশকের গোড়ার দিকে আরও উদ্যোগ হাতে নেয় সিটি গ্রুপ।
পাঁচ দশকে ব্যবসা প্রসারিত করে নিয়ে গেছেন অন্য এক উচ্চতায়। খাদ্যশিল্প নিয়ে গেছেন গতানুগতিক ব্যবসায়ী গণ্ডির বাইরে। তিনি প্রসার ঘটান প্যাকেজিং, শক্তি (এনার্জি), ইস্পাত, জাহাজ নির্মাণের ব্যবসা এবং শিল্প প্রকল্পের (সিটি ইকোনমিক জোন)। তার ব্যবসায়িক দক্ষতা এবং পরিশ্রমের ফলে দেশের অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক বাজারে পরিচিতি পায় গ্রুপের উৎপাদিত পণ্য।
আরও পড়ুন>> জুরাইন কবরস্থানে চিরনিদ্রায় শায়িত ফজলুর রহমান
৪২ টাকার পুঁজি থেকে আজ তিনি ২৫ হাজারের বেশি মানুষের জীবিকার ব্যবস্থা করেছেন। বর্তমানে দেশের শীর্ষ এ শিল্পগোষ্ঠীর অধীনে রয়েছে ৪০টির বেশি প্রতিষ্ঠান। যার বার্ষিক টার্নওভার প্রায় ২৫ হাজার কোটি টাকা। তাদের উৎপাদিত পণ্য দেশের অভ্যন্তরীণ বাজারের বাজারের পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্র, চীন, জাপান, মালয়েশিয়া, ভারত, কম্বোডিয়া ও নেপালে যাচ্ছে।
ব্যবসায়িক অবদানের স্বীকৃতিও পেয়েছেন এই শিল্পোদ্যোক্তা। কেবল দেশেই পুরস্কার পাননি, আন্তর্জাতিক স্বীকৃতিও পেয়েছেন তিনি। অসামান্য উদ্যোগের স্বীকৃতিস্বরূপ ডিএইচএল-ডেইলি স্টার আয়োজিত ‘বিজনেস পার্সন অফ দ্য ইয়ার ২০০৫’ পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন। তিনি ২০১৮-২০১৯ অর্থবছরের ‘সেরা করদাতা’ হন। তিনি বাণিজ্য মন্ত্রণালয় স্বীকৃত একজন বাণিজ্যিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি (সিআইপি)। এ উদ্যোক্তা বাংলাদেশ সুগার রিফাইনার্স অ্যাসোসিয়েশন এবং বাংলাদেশ ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনার্স এবং বনস্পতি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান ও যমুনা ব্যাংক লিমিটেডের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেছেন।
শুধু ব্যবসা নয়, সামাজিক দায়বদ্ধতা নিয়েও সচেতন ছিলেন ফজলুর রহমান। পুরান ঢাকার মানুষের জন্য দেশের অন্যতম আধুনিক আজগর আলী হাসপাতাল নির্মাণ করেছেন। তার হাতে গড়া মেডিকেল কলেজ ও নার্সিং ইনস্টিটিউটও রয়েছে।
আরও পড়ুন>> সিটি গ্রুপের চেয়ারম্যান ফজলুর রহমান মারা গেছেন
স্বপ্নবাজ ফজলুর রহমানের জন্ম ১৯৪৭ সালের ৬ মে। ১১ ভাই-বোনের মধ্যে ফজলুর রহমান ছিলেন দ্বিতীয়। অবশেষে সবাইকে কাঁদিয়ে সফল স্বপ্নবাজ এ শিল্প উদ্যোক্তা সোমবার (২৫ ডিসেম্বর) ভোর ৪টার দিকে রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন। দীর্ঘদিন ধরে ডায়াবেটিস ও শ্বাসকষ্টজনিত রোগে ভুগছিলেন তিনি। তার বয়স হয়েছিল ৭৬ বছর। তিনি স্ত্রী, এক ছেলে, তিন মেয়েসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন।
এদিন বিকেল সোয়া ৪টার দিকে গেন্ডারিয়া ধূপখোলা মাঠে মরহুমের নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। পরে জুরাইন কবরস্থানে দাফন করা হয়।
তার মৃত্যুতে শোক জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি, তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের চেয়ারম্যান এবং প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) আহসান খান চৌধুরী, এলজিআরডি মন্ত্রী, এফবিসিসিআই সভাপতি, মেঘনা গ্রুপের চেয়ারম্যান, এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যান ও বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যানসহ অন্যান্য ব্যবসায়ী, সামাজিক ও রাজনৈতিক ব্যক্তিরা।
ইএআর/ইএ/এএসএম