শীতেও জমছে না জুতার বাজার

মো. নাহিদ হাসান
মো. নাহিদ হাসান মো. নাহিদ হাসান , নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ১০:২০ এএম, ১০ ডিসেম্বর ২০২৩

ফ্যাশনপ্রিয় মানুষের জন্য শীত প্রিয় ঋতু। বিশেষ করে এ সময় তরুণ-তরুণীদের মধ্যে বাহারি পোশাক এবং জুতার প্রতি ঝোঁক দেখা যায়। আবার শীত থেকে বাঁচতেও এ সময় নানান ধরনের জুতার প্রতি বিশেষ মনোযোগ থাকে মানুষের। সব বয়সী মানুষের মধ্যেই এ প্রবণতা দেখা যায়। শীত থেকে বাঁচতে বা ফ্যাশনের জন্য হলেও এ সময়ে অনেকেই একাধিক জুতা ক্রয় করেন। বাজারে বয়সভেদে নানান ধরনের জুতার দেখা মেলে, দামেও থাকে ভিন্নতা। শীতে ক্রেতার চাহিদা মেটাতে বেশ আগেভাগেই বিক্রির প্রস্তুতি শুরু করেন ব্যবসায়ীরা। তবে এবছর এখনো জমে ওঠেনি জুতার বাজার, বরং আগের চেয়ে জুতা বিক্রি কমেছে বলে দাবি ব্যবসায়ীদের।

ব্যবসায়ীরা জানান, একদিকে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্যবৃদ্ধি, আবার জুতার দামও বেড়েছে। এসব কারণে জুতা বিক্রি কমেছে। তবে বাজারে যেসব জুতা বিক্রি হচ্ছে তার মধ্যে বিদেশি জুতার চাহিদা বেশি বলেও জানান তারা।

shoe-marjet-4.jpg

গত কয়েকদিন রাজধানীর বিভিন্ন জুতার মার্কেট ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে। জুতা ব্যবসায়ীরা বলছেন, দেশি জুতার তুলনায় বিদেশ থেকে আনা জুতা টেকসই ও মানে ভালো হওয়ায় এসব জুতার কদর বেশি। বেশিরভাগ ক্রেতা দোকানে এসেই প্রথমে বিদেশি জুতার খোঁজ করেন। এছাড়া বিদেশি এসব জুতা দীর্ঘস্থায়ী এবং ভালো ডিজাইনের হওয়ায় বাড়তি নজর কাড়ে ক্রেতাদের।

আরও পড়ুন>> ওভারকোট-কো অর্ডে স্টাইল করুন শীতে

ঢাকায় জুতার সবচেয়ে বড় মার্কেট গুলিস্তান, এলিফ্যান্ট রোড, শ্যামলী এবং হাজারীবাগে অবস্থিত। এর মধ্যে পাইকারি জুতা সবচেয়ে বেশি কেনাবেচা হয় গুলিস্তানে। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত এবং ঢাকার ছোট ছোট বিভিন্ন মার্কেটের দোকানিরা এখান থেকে জুতা ক্রয় করেন। এলিফ্যান্ট রোডে রাজধানীর অন্যতম বড় জুতার মার্কেট অবস্থিত। এক সারিতে অনেকগুলো দোকান এখানে। ফলে ঘুরে ঘুরে জুতা কেনার সুবিধা থাকায় রাজধানীর অনেক ক্রেতাই এ মার্কেট থেকে জুতা কেনেন।

এই মার্কেটের বিক্রেতারা জানান, বিদেশি জুতার মধ্যে ভিয়েতনাম, চীন, থাইল্যান্ড এবং ভারত থেকে সবচেয়ে বড় জুতার চালান দেশে আসে। এর মধ্যে চীন থেকে আসা জুতার চাহিতা বেশি। কারণ হিসেবে বিক্রেতারা বলছেন, চীনের জুতা দামে কম এবং মানে ভালো। এসব জুতা অনায়াসে দুই বছর ব্যবহার করা যায়।

shoe-marjet-4.jpg

এলিফ্যান্ট রোডের ‘সাকসেস কালেকশন’র দোকানি আল-আমিন জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমাদের দোকানে যেসব জুতা আছে তার বেশিরভাগই বিদেশি। এখানে চীন, থাইল্যান্ড, ভারতসহ অনেক দেশ থেকেই জুতা আসে। কাস্টমাররা দেখে পছন্দ করে জুতা কেনেন। এখানে সব ধরনের জুতা আছে। যার যেমনটি পছন্দ, তারা সেটি কেনেন।’

আরও পড়ুন>> বিক্রি কমে উৎপাদনে ভাটা, ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের মাথায় হাত

বিদেশি এসব জুতার মধ্যে পান্ডা, পুমা, অ্যাডিডাস, নাইকি, ফিলা, নিউ ভ্যালেন্সসহ বেশ কয়েকটি ব্র্যান্ডের চাহিদা বেশি। তবে গত কয়েক বছরের তুলনায় এবার বিক্রি অনেকটা কম বলে দাবি বিক্রেতাদের। তারা বলেন, ‘ক্রেতার সংখ্যা যেমন কমেছে, তেমনি ক্রেতাদের একাধিক জোড়া জুতা কেনার প্রবণতাও কমেছে।’ কারণ হিসেবে তারা বলছেন, ‘জুতার মূল্যবৃদ্ধি পাওয়ায় অনেকে আগে যেমন একাধিক জোড়া জুতা ব্যবহার করতেন, এখন আর করেন না।’

সিটি সুপার মার্কেটে জুতা কিনতে আসা ক্রেতা শাহাদাত হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, ‘শীতে স্নিকার কিনতে আসলাম। দেখে পছন্দ করে একজোড়া কিনলাম। গত শীতেও একজোড়া কিনেছিলাম। তবে এবার দাম একটু বেশি।’

shoe-marjet-4.jpg

‘আয়ান কালেকশন’ নামের জুতার দোকানে বাচ্চাদের জুতা বিক্রি হয়। দোকানটিতে এক থেকে ১০ বছর বয়সীদের বিভিন্ন ডিজাইনের জুতার দেখা মেলে। এর সবই বিদেশি। বিক্রেতারা বলেন, ‘দেশে এসব বয়সী এবং এসব ডিজাইনের জুতা সেভাবে তৈরি না হওয়ায় ক্রেতাদের চাহিদার প্রথমেই রয়েছে এসব বিদেশি জুতা।’ দোকানটিতে ৩০০ টাকা থেকে শুরু করে দুই হাজার টাকা পর্যন্ত দামের জুতা রয়েছে, যার সবই বিদেশি।

এই দোকানের বিক্রেতা মো. মামুন বলেন, ‘বিদেশি জুতার খদ্দের (ক্রেতা) বেশি। তবে এ সিজনে বিক্রি নেই। দুপুর ১টা বাজে, এখনো এক জোড়া জুতা বিক্রি করতে পারিনি। কাস্টমার নেই মার্কেটে। ব্যবসার অবস্থা খারাপ।’

আরও পড়ুন>> বিক্রি তলানিতে, ধুঁকছে ব্র্যান্ড হাউজগুলো

বয়সভেদে জুতার চাহিদার তারতম্য যেমন রয়েছে, তেমনি দামেরও পার্থক্য রয়েছে। বিক্রেতারা বলছেন, বর্তমানে ১৬ থেকে ৩৫ বছর বয়সী ব্যক্তিরা স্নিকার পছন্দ করেন বেশি। তাই বাজারে এসব জুতার চাহিদাও বেশি। আর ৩৫ থেকে ৪৫ বছর বয়সীদের অনেকেরই পছন্দ চামড়ার জুতা।

শ্যামলী স্কয়ারের জুতা ব্যবসায়ী শাহারুল আলম বলেন, ‘আমার দোকানে সব বয়সীদের জুতা বিক্রি করি। তবে আগের মতো আর বিক্রি নেই। এখন বেশি দামে কিনতে হয়, তাই বিক্রির রেটও বেশি। আগে দিনে ১০ হাজার টাকা অনায়াসে বিক্রি করতাম। এখন পাঁচ-ছয় হাজার টাকা বিক্রি করতেই কষ্ট।’

shoe-marjet-4.jpg

জুতায় বেশি ভ্যাট-ট্যাক্স দাম বাড়ার অন্যতম কারণ বলে জানান ব্যবসায়ীরা। বিদেশ থেকে ৫০০ টাকায় জুতা কিনে দেশে আনলে সেই জুতায় আরও ৭০০ টাকা ভ্যাট-ট্যাক্স দিতে হয়। এভাবেই জুতার মূল্যবৃদ্ধি পায়। দেশের বাজারে এসব জুতা এক হাজার ৫০০ টাকা থেকে দুই হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া ডলারের বিপরীতে বাংলাদেশি টাকার মান কমে যাওয়ায় বিদেশ থেকে জুতা ক্রয়ে বাড়তি অর্থ গুনতে হয় ব্যবসায়ীদের।

আরও পড়ুন>> শীতের বেচাকেনা নিয়ে শঙ্কায় কেরানীগঞ্জের ব্যবসায়ীরা

বাজারের ছোট দোকানের ব্যবসায়ীরা পাইকারি দোকান থেকে জুতা কেনেন। বিদেশ থেকে জুতা আনতে প্রতি কনটেইনারে দুই কোটি বা তারও বেশি টাকার জুতা আনতে হয়। কনটেইনারে জুতা আনা বড় ব্যবসায়ীরা আবার মাঝেমধ্যে জুতার দাম বাড়িয়ে দেয়। ফলে অনেক সময় ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটে জুতার দাম বেড়ে যায়। কনটেইনারে জুতার অর্ডার দিলে দুই মাস বা কোনো কোনো ক্ষেত্রে তারও বেশি সময় লাগে।

গুলিস্তানের জুতা ব্যবসায়ী আরমান হোসেন বলেন, ‘ব্যবসা আগের মতো নেই। এখন বিক্রি কম, তাই অর্ডারও কম। শীত বাড়লে বিক্রি কিছুটা বাড়তে পারে। তাই আগেই কিছু জুতার অর্ডার দিয়ে রাখছি, বিক্রি কেমন হবে জানি না। আমাদের ব্যবসায় অনুমান করে অর্ডার দিতে হয়। এবার বিক্রি না হলে আগামী বছর হবে।’

তবে পণ্য খালাসে সময় বেশি লাগায় অনেক সময় ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয় বলে জানান ব্যবসায়ীরা৷

এনএস/ইএ/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।