এক বছরে রিজার্ভ কমলো ৯ বিলিয়ন ডলার

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ১০:২৩ পিএম, ২৩ নভেম্বর ২০২৩

দেশে ডলারের বাজারে অস্থিরতা ক্রমান্বয়ে বাড়ছে। বেঁধে দেওয়া দরে ব্যাংক ও মানি চেঞ্জারগুলোতে ডলার পাওয়া যাচ্ছে না। আর খোলাবাজারে ডলার বিক্রি অতীতের সব রেকর্ড ভেঙে পড়েছে। ডলারের নিয়ন্ত্রণ কালোবাজারিদের দখলে। খোলাবাজারে কালোবাজারিরা প্রতি ডলার ১২৮ টাকা পর্যন্ত বিক্রি করেছেন। তবুও ক্রেতারা চাহিদা মতো ডলার পাচ্ছেন না।

দিন দিন ডলার সংকট আরও প্রকট হচ্ছে। মার্কিন মুদ্রাটির সংকটে আমদানিতে কড়াকড়ি করা হয়েছে। সংকট নিরসনে রীতিমত হিমশিম খেতে হচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে। পরিস্থিতি সামাল দিতে রিজার্ভ থেকে ডলার সরবরাহ করা হচ্ছে। মজুত থেকে ডলার বিক্রি ও আমদানি দায় মেটাতে রিজার্ভের ওপর চাপ আরও বাড়ছে।

চলতি মাস নভেম্বরের প্রথম ২২ দিনে রিজার্ভ কমেছে ১.৩১ বিলিয়ন বা ১৩১ কোটি ডলার। আর চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের সাড়ে চার মাসে কমেছে ৬ বিলিয়ন ডলার। আর এক বছরের হিসাবে রিজার্ভ কমেছে ৯ বিলিয়ন (৮.৯৩ বিলিয়ন) ডলার।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত ৩১ অক্টোবর বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ছিল ২ হাজার ৬৪৭ কোটি ডলার বা ২৫.৪৭ বিলিয়ন ডলার। চলতি মাস নভেম্বরের ২২ দিনে ১ দশমিক ৩১ বিলিয়ন ডলার কমে গত ২২ নভেম্বর রিজার্ভ দাঁড়িয়েছে ২৫ দশমিক ১৬ বিলিয়ন ডলারে। এটি বাংলাদেশ ব্যাংকের গ্রস রিজার্ভ হিসাব। আর আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল সংস্থা বা আইএমএফ স্বীকৃত বিপিএম-৬ অনুযায়ী দেশে খরচ করার রিজার্ভ আছে ১৯ দশমিক ৫২ বিলিয়ন ডলার।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলতি বছরে জুন মাসে গ্রস রিজার্ভ ছিল ৩১ দশমিক ২০ বিলিয়ন ডলার। গত বছরের ২২ নভেম্বর রিজার্ভ ছিল ৩৪ দশমিক শূন্য ৯ বিলিয়ন ডলার। অর্থাৎ চলতি অর্থবছরের ৪ মাস ২২ দিনে রিজার্ভ কমেছে ৬ দশমিক শূন্য ৪ বিলিয়ন ডলার। আর এক বছরের ব্যবধানে কমেছে ৮ দশমিক ৯৩ বিলিয়ন ডলার।

আইএমএফের ব্যালান্স অব পেমেন্টস অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট পজিশন ম্যানুয়াল (বিপিএম-৬) বলছে- রিজার্ভ গণনায় বাংলাদেশ ব্যাংক বিভিন্ন তহবিলের পাশাপাশি বিমানকে দেওয়া ঋণ গ্যারান্টি, পায়রা বন্দর কর্তৃপক্ষকে দেওয়া ঋণ, ইসলামী উন্নয়ন ব্যাংকে রাখা আমানত এবং নির্দিষ্ট গ্রেডের নিচে থাকা সিকিউরিটিতে বিনিয়োগ রিজার্ভের অন্তর্ভুক্ত নয়। বাংলাদেশ ব্যাংক এগুলোকেও রিজার্ভ হিসেবে দেখিয়ে আসছিল। এসব হিসাব বাদ দেওয়ার কারণে রিজার্ভ থেকে ৫ দশমিক ৬৪ বিলিয়ন ডলার কমে যায়।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, ডলার সংকটের কারণে বাজার ঠিক রাখা ও জরুরি আদমদানিতে রিজার্ভ থেকে বাজারে ডলার ছাড়া হচ্ছে। আবার ফাইন্যান্সিয়াল অ্যাকাউন্ট নেগেটিভ থাকায় রিজার্ভ কমছে। অন্যদিকে রপ্তানি ও রেমিট্যান্স প্রবাহ কাঙ্ক্ষিত না হওয়ায় রিজার্ভের ওপর বাড়তি চাপ তৈরি হচ্ছে।

দেশের মধ্যে নেওয়া ডলার সংকট নিরসনের কোনো উদ্যোগই কাজে আসছে না। তবে এর মাঝেই নতুন করে আশা জাগাচ্ছে রেমিট্যান্স। ডলার সংকটময় পরিস্থিতিতে এ মুদ্রাটি আয়ের অন্যতম উৎস রেমিট্যান্স বাড়তে শুরু করেছে। চলতি মাস নভেম্বরের প্রথম ১৭ দিনে প্রায় ১১৮ কোটি ৭০ লাখ ডলারের বেশি রেমিট্যান্স এসেছে দেশে। আর প্রতিদিন গড়ে আসছে প্রায় ৭ কোটি (৬.৯৮ কোটি) ডলার। এভাবে রেমিট্যান্স আসার ধারা অব্যাহত থাকলে মাস শেষে দুই বিলিয়ন বা ২০৯ কোটি ডলার ছাড়িয়ে যাবে। এর আগে সবশেষ গত আগস্টে ২ বিলিয়ন ডলার অতিক্রম করেছিল রেমিট্যান্স।

দেশের মধ্যে চলা ডলারের চরম সংকটের মধ্যেই গতকাল প্রতি ডলারে ৫০ পয়সা কমানো হয়। প্রতি ডলারে ৫০ পয়সা করে কমিয়ে আমদানিতে ১১০ টাকা ৫০ পয়সা এবং রপ্তানি ও রেমিট্যান্সে ১১০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীদের সংগঠন এবিবি ও বৈদেশিক মুদ্রা লেনদেনকারী ব্যাংকের সংগঠন বাফেদার যৌথ সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়। সভায় মধ্যস্থতা করে বাংলাদেশ ব্যাংক।

বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক মেজবাউল হক বলেন, গতকাল বুধবার বাফেদা-এবিবি রপ্তানি-রেমিট্যান্স ও আমদানি সব ক্ষেত্রেই ডলারের দাম ৫০ পয়সা কমিয়েছে। এতে ডলারের বিপরীতে টাকার মান বাড়বে। এখন আমদানি কমে যাওয়ায় ডলারের চাহিদা কমে এসেছে। আগামী বছরের সেপ্টেম্বরের মধ্যে বিল পরিশোধের চাপ অতি নগণ্যতে নেমে আসবে বলে জানান তিনি।

ইএআর/জেএইচ

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।