নতুন বছরেও আয়ের প্রবৃদ্ধি সন্তোষজনক থাকবে, আশা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের
নানামুখী পদক্ষেপের কারণে আসছে বছরও জাতীয় আয়ের প্রবৃদ্ধি সন্তোষজনক থাকবে বলে আশা প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। বুধবার (২১ নভেম্বর) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ এ আশা ব্যক্ত করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
বাংলাদশ ব্যাংক জানায়, কোভিড-১৯ মহামারি, রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধ ও উন্নত বিশ্বের নীতি সুদহারের ক্রমাগত বৃদ্ধিসর নানা প্রতিকূলতার প্রভাবে দেশের অর্থনীতির বৈদেশিক খাত সাম্পতিক সময়ে অনেকাটা চাপের মুখে পড়ে। এরপরও দেশের অর্থনীতির প্রকৃত খাতের প্রায় সব সূচকই স্বস্তিদায়ক অবস্থায় রয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক ও সরকারি নীতি সহায়তার ফলে গ্রামীণ অর্থনীতি বিশেষ করে কৃষি উৎপাদন এবং ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের পরিস্থিতি বেশ ভাল অবস্থায় রয়েছে। পাশাপাশি শিল্পোৎপাদন, যা শিল্প উৎপাদন সূচকের মাধ্যমে প্রকাশিত হয়, তাতে ভালো প্রবৃদ্ধি পরিলক্ষিত হচ্ছে।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সরকারের উৎপাদনমুখী ও উন্নয়নমুখী ব্যয় বৃদ্ধি অর্থনীতির গতিশীলতাকে চলমান রাখার জন্য সহায়ক ভূমিকা পালন করেছে। অন্যদিকে রাজস্ব আহরণের বিভিন্ন পদক্ষেপের কারণে রাজস্ব আয়ও যথেষ্ট বৃদ্ধি পেয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক ও বাংলাদেশ সরকারের গৃহীত নানামুখী পদক্ষেপের ফলে দেশের জাতীয়ে আয়ের প্রবৃদ্ধি ২০২৩-২৪ অর্থ বছরেও সন্তোষজনক থাকবে বলে আশা করা যায়। সরকারের বিভিন্ন অবকাঠামোগত মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নসহ শিল্প ও সেবা খাতে চলমান ব্যাপক অর্থনৈতিক কার্যক্রম এবং কাঙ্খিত মাত্রায় কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধির ফলে চলতি অর্থবছরে জিডিপির প্রবৃদ্ধির হার ৬ দশমিক ৫ শতাংশের অধিক হতে পারে।
আরও পড়ুন>>> বর্তমান রিজার্ভকে ‘স্বস্তিদায়ক’ বলছে বাংলাদেশ ব্যাংক
বিরাজমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে রপ্তানি ও রেমিট্যান্সের ভালো প্রবৃদ্ধি স্বত্ত্বেও আমদানি ব্যয় দ্রুত বৃদ্ধির ফলে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের ওপর চাপ তৈরি হয়। একইভাবে বিনিময় হারের ওপরও জোরালো চাপ সৃষ্টি হয়। এছাড়াও বৈশ্বিক পণ্যমূল্য বৃদ্ধি, বাংলাদেশি টাকার অবমূল্যায়ন এবং অভ্যন্তরীণভাবে মৌসুমী আবহাওয়ার প্রতিকূল প্রভাব ও উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি পাওয়াসহ সরবরাহ ব্যবস্থা বিঘ্নিত হয়। এতে দেশে উচ্চ মূল্যস্ফীতি দেখা দেয়।
পাশাপাশি বাংলাদেশ ব্যাংক মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণসহ বিনিময় হার এবং বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের ওপর চাপ প্রশমনে নানামুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করে। এর মধ্যে নীতি সুদহারের বৃদ্ধি, আমানত ও ব্যাংক ঋণের সুদহারে সীমা তুলে দিয়ে তা বাজারমুখী করা, টাকা ছাপিয়ে সরকারকে লোন না দেওয়া, আমদানি ব্যয় নিয়ন্ত্রণ এবং রপ্তানি আয় ও রেমিট্যান্স বৃদ্ধির ব্যবস্থা নেওয়া, বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হারকে বাজারমুখী করা, আমদানি মূল্য যাচাইসহ বৈদেশিক মুদ্রা বাজার তদারকি বৃদ্ধি করা এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে প্রয়োজনীয় দ্রব্যের আমদানি ব্যয় মেটানোর ব্যবস্থা নেওয়া ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।
এ পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ ব্যাংক জানিয়েছে, বৈদেশিক মুদ্রার বর্তমান রিজার্ভ আইএমএফ এর বিপিএম-৬ অনুযায়ী প্রায় ২০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের মতো আছে। এ রিজার্ভ দিয়ে প্রায় ৪ মাসের আমদানি ব্যয় মেটানো সম্ভব। এটা আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী যে কোনো অর্থনীতির জন্য স্বস্তিদায়ক।
গত বছরের প্রায় ৩ দশমিক ৩ বিলিয়ন ডলারের ঘাটতি কাটিয়ে সেপ্টেম্বর মাস নাগাদ প্রায় ১ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের মতো উদ্বৃত্ত হয়েছে। তবে ফাইন্যান্সিয়াল অ্যাকাউন্টের পূর্বের একটা স্বস্তিদায়ক উদ্বৃত্ত অবস্থা থেকে ঘাটতি পরিস্থিতি সৃষ্টি হওয়ার কারণে সার্বিক বৈদেশিক লেনদেন ভারসাম্যে এখনো কিছুটা ঘাটতি রয়েছে। বৈদেশিক লেনদেন ভারসামো শিগগির একটা স্বস্তিদায়ক অবস্থা ফিরে আসবে বলে আশা করছে নিয়ন্ত্রণ সংস্থাটি। বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ সংরক্ষণসহ মুদ্রা বিনিময় হারের স্থিতিশীলতা আনতে আরও সহায়ক হবে।
ইএআর/এমআইএইচএস/জেআইএম