অবরোধে ফাঁকা মতিঝিল, গ্রাহক নেই ব্যাংক-আর্থিক প্রতিষ্ঠানে
বিএনপি-জামায়াতের ডাকা টানা তিনদিনের সর্বাত্মক অবরোধ কর্মসূচির তৃতীয় তথা শেষ দিনেও রাজধানীর মতিঝিলের ব্যাংকপাড়া অনেকটাই কর্মচাঞ্চল্যহীন। ব্যাংক এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো খোলা থাকলেও গ্রাহক না থাকায় অধিকাংশ সেবা কাউন্টারের কর্মকর্তাদের অলস সময় কাটাতে দেখা গেছে।
আগের দুদিনের মতো অবরোধ কর্মসূচির তৃতীয় দিন বৃহস্পতিবারও (২ নভেম্বর) নাশকতা এড়াতে রাজধানীজুড়ে নিরাপত্তা জোরদার রেখেছে সরকার। বিভিন্ন সড়কের মূল পয়েন্টে মোতায়েন রয়েছে অতিরিক্ত পুলিশ। টহল দিতে দেখা গেছে বিজিবি সদস্যদেরও।
অবরোধের শেষ দিনেও সকাল থেকে মতিঝিল এলাকায় গণপরিবহনের তেমন দেখা মেলেনি। বিভিন্ন বাস কোম্পানির দু-একটি বাস চলাচল করলেও সেগুলোতে যাত্রীসংখ্যা ছিল হাতেগোনা। পথচারীর সংখ্যাও কম। বলা চলে, প্রয়োজন ছাড়া এদিনও কেউ ঘর থেকে বের হননি। যারা বের হয়েছেন তাদের বেশিরভাগই অফিস কিংবা বিভিন্ন কর্মস্থলগামী।
একই অবস্থা দেখা গেছে কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনেও। নিয়মিত শিডিউল অনুযায়ী ট্রেন চলাচল করলেও যাত্রীচাপ না থাকায় প্ল্যাটফর্ম অনেকটাই ফাঁকা। ট্রেনের টিকিটের জন্যও নেই যাত্রীদের দৌড়ঝাপ। তবে বাস চলাচল সীমিত থাকায় নগরীজুড়ে বেড়েছে রিকশা ও সিএনজিচালিত অটোরিকশার আধিপত্য।
এদিকে, আগের দুদিনের মতো অবরোধের তৃতীয় দিনও ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো খোলা রয়েছে। ব্যাংক-আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মূল ফটকে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। অনেক প্রতিষ্ঠানের শাখায় সামনের দরজা বন্ধ থাকলেও স্বাভাবিক নিয়মেই চলছে ব্যাংক, বিমা, আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম। তবে শাখাগুলোয় তেমন গ্রাহক না থাকায় অধিকাংশ সেবা কাউন্টারের কর্মকর্তাদের অলস থাকতে দেখা যায়।
বৃহস্পতিবার (২ নভেম্বর) কমলাপুর, ফকিরাপুল, আরামবাগ, শাপলা চত্বর, ইত্তেফাক মোড়, দৈনিক বাংলা ও বক চত্বর এলাকা ঘুরে দেখা যায়, এসব এলাকায় রিকশা ও পিকআপভ্যান চলাচাল করছে। ব্যক্তিগত (প্রাইভেট) গাড়িও চলছে। সবচেয়ে বেশি দেখা গেছে রিকশা ও মোটরসাইকেল। সড়কে রিকশা-পিকআপভ্যানের পাশাপাশি অ্যাম্বুলেন্স চলাচল করছে। তবে গণপরিবহন চলাচল করছে সীমিত আকারে।
প্রধান সড়ক ও বিভিন্ন অলিগলিতে পথচারীদের ভিড় নেই। যারা চলাচল করছেন তাদের বেশিরভাগই অফিসের কর্মচারি-কর্মকর্তা। সরকারি-বেসরকারি অফিস চলছে। নিয়ম মেনেই চলছে ব্যাংক-আর্থিক প্রতিষ্ঠান। সকাল থেকে কর্মকর্তারা ব্যাংক-আর্থিক প্রতিষ্ঠানে এলেও গ্রাহক সংখ্যা নেই। এ কারণে ব্যাংকের শাখাগুলোর অধিকাংশ সেবা কাউন্টারের কর্মকর্তা বসে বসেই অলস সময় কাটাচ্ছেন। কিছু গ্রাহক এলেও তা অন্য স্বাভাবিক দিনের তুলনায় একেবারেই নগণ্য।
রাষ্ট্র মালিকানাধীন একটি ব্যাংকের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জাগো নিউজকে জানান, হরতাল-অবরোধের কারণে অনেকের মাঝেই ভীতি কাজ করছে। অবরোধে সাধারণ মানুষ বাইরে বের হচ্ছেন না। একই কারণে ব্যাংকের গ্রাহকও ব্যাংকে আসতে ভয় পাচ্ছেন। যদিও আমাদের সার্বিক নিরাপত্তা রয়েছে ব্যাংকের মধ্যে। তবে দুপুরের পর গ্রাহক বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
এদিন সকাল থেকে মতিঝিল ও এর আশপাশের এলাকার ফুটপাফের দোকানগুলো বেশিরভাগই বন্ধ থাকতে দেখা গেছে। কিছু দোকান খোলা থাকলেও ক্রেতার উপস্থিতি নেই।
ফুটপাথের চা দোকানি নুর হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, অবরোধের আগে বেচাবিক্রি ভালো ছিল। এখন পথচারী নেই, দোকানে ক্রেতাও নেই। জনসমাগম যত বেশি বিক্রিও তত বেশি হয়।
মতিঝিল এবং এর আশপাশ এলাকার সড়কে গণপরিবহনের তেমন দেখা নেই। মাঝে মাঝে দু-একটি বাস চোখে পড়লেও যাত্রীসংখ্যা একেবারেই কম। একই অবস্থা কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনেও। নির্দিষ্ট সময়ে ট্রেন ছাড়লেও যাত্রীসংখ্যা কম। এতে আয় কমেছে কুলিদেরও।
কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনের কুলি সুরুজ জাগো নিউজকে বলেন, আগে দিনে ৮০০ টাকা আয় হলেও গত কয়েকদিনে ৩০০-৪০০ টাকার বেশি আয় হচ্ছে না। হরতাল-অবরোধের কারণে এমনটা হয়েছে। একই কথা জানান কুলি হাসান ও সুমনসহ অন্যরাও।
ইএআর/এমকেআর/জিকেএস