ছোট হয়ে যাচ্ছে শাকের আঁটি

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ১২:৩৯ পিএম, ৩১ অক্টোবর ২০২৩

রামপুরা বাজারে শাক কেনার জন্য সামান্য দরদাম করছিলেন স্কুলশিক্ষক এনামুল হক। অবশেষে ৩৫ টাকায় এক আঁটি পালংশাক কেনেন তিনি। কিন্তু দোকানি যখন তার হাতে শাকের আঁটি তুলে দেন তখন যেন চমকে ওঠেন এনামুল হক। বলে ওঠেন, ‘ভাই এটা কি? আঁটি এত চিকন কেন? এর দাম কীভাবে ৩৫ টাকা হয়? এটা নেবো না।’

এসময় বিক্রেতা জবাব দেন, ‘দাম বলে এখন নেবেন না কেন? আঁটি কি আমি বেঁধেছি? এগুলো ৩২ টাকা আঁটি কেনা। না নিলে কিছু করার নেই।’

এরপর শাক না নিয়েই রওয়ানা দেন এনামুল হক। কিছুটা এগিয়ে যাওয়ার পর তার সঙ্গে কথা হয়। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ‘কিছুদিন আগেও এমন শাকের আঁটি যতটা মোটা ও ওজনদার ছিল, তার অর্ধেকও এখন নেই। আগের এক আঁটি শাক এখন দুই আটিতেও পাওয়া যাচ্ছে না। তবে দাম কমেনি, উল্টো বেড়েছে।’

jagonews24

এরপর কথা হয় ওই শাক বিক্রেতা এহসানের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘দামের কারণে শাকের আঁটি ছোট হয়ে গেছে। আগের সমপরিমাণ শাক দিলে ওই আটির দাম প্রায় দ্বিগুণ হয়ে যাবে। এত দামে ক্রেতারা শাক খেতে চান না। যে কারণে এখন শাক কমিয়ে দাম কিছুটা সমন্বয় করা হয়েছে।’

বিক্রেতার ভাষায়, ‘আগের মতো মোটা আটি কেনার ক্ষমতা এখন অনেকে হারায়ে ফেলছে, তাগো লাইগ্যা এই চিকনটা বিক্রি করি।’

খুচরা বাজারে শাক ওজন করে বিক্রি হয় না, সচরাচর আঁটিতে বিক্রি হয়। পাইকারিতেও তাই। তবে এই সুযোগে শাকের আঁটিতে পরিমাণ ও ওজন কমে যাচ্ছে, যা এক ধরনের কৌশলও বলে মনে করছেন ক্রেতারা।

খোঁজ নিয়েও এমনটি জানা যায়। পাইকারি বাজারে শাক আঁটি হিসেবে বিক্রি হলেও সেগুলো খুচরা বিক্রেতার কাছে এসে পরিমাণ কমিয়ে নতুন আঁটি বাঁধা হচ্ছে। অর্থাৎ কখনো কখনো পাইকারির দুই আঁটি হয়ে যাচ্ছে খুচরায় তিন আঁটি। এতে অসাধু কৌশলে বাড়তি মুনাফা করছেন খুচরা বিক্রেতারা।

রাজধানীর বেশ কয়েকজন শাক বিক্রেতার সঙ্গে কথা বলেই এ তথ্য জানা গেছে। তারা আরেক কারণেও শাকের আঁটি ভাঙছেন। তারা এক আঁটিতে এমন পরিমাণে শাক বাঁধছেন যেন এতে একটি পরিবারের প্রয়োজন না মেটে। বাধ্য হয়ে ক্রেতারা দুই বা তার বেশি আঁটি শাক কেনেন। এতে বিক্রি ভালো হয়।

আরও পড়ুন>> আলুর দামে আগুন, আমদানিতে সমাধান খুঁজছে সরকার

কারওয়ান বাজারের পাইকারি শাক বিক্রেতা খোরশেদ আলম বলেন, ‘খুচরা বিক্রেতারা এভাবে আঁটিতে শাক কমিয়ে ফেলছেন। ওজনে বিক্রি না হওয়াতে এ সমস্যা। এতে ক্রেতারা একভাবে প্রতারিত হচ্ছে।’

এদিকে ভ্যানে করে শাক বিক্রেতা আবু সাইদ বলেন, ‘একটা লোক সারাদিন খাটেন। দিনে ১০০ থেকে ১৫০ আঁটি শাক বিক্রি করা কঠিন। প্রতি আঁটিতে দুই/তিন টাকা লাভ করলে সংসার চলবে কীভাবে? বাধ্য হয়ে অনেকে এমন করছেন।’

jagonews24

তিনি আরও বলেন, ‘পাইকারি বাজারে শাকের দাম প্রচুর বেড়েছে। এতে বিক্রি কমে গেছে।’

ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এক আঁটি লাউ ও কুমড়াশাকের দাম এখন পড়ছে ৫০ থেকে ৬০ টাকা। পাইকারি বাজারে এক আঁটিতে ছয়-সাতটি লতা থেকে। অথচ খুচরা বাজারে গিয়ে তা হয়ে যায় তিন-চারটি লতা এবং একই দামে বিক্রি।

খুচরা বাজারে এক আঁটি পুঁইশাকের দাম রাখা হচ্ছে ৩০ থেকে ৪০ টাকা। তবে পরিমাণে একইভাবে কম। যদিও পাইকারি বাজারে এ দুই ধরনের শাকের দাম গত এক মাসের ব্যবধানে ১০ থেকে ২০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে।

আরেক খুচরা বিক্রেতা খাদেমুল ইসলাম বলেন, ‘পাইকারির মতো হুটহাট আমরা দাম বাড়িয়ে দিলে বিক্রি হবে না। কারণ শাকের ক্রেতা গরিব মানুষ বেশি, আগে দামের কথা চিন্তা করে।’

এদিকে বাজারে আগে কিছুটা কম দামে যেসব শাক পাওয়া যেতো, সেগুলোর দামও বেড়েছে আঁটিপ্রতি ১০ থেকে ১৫ টাকা। পাটশাকের দাম এখন ২০ থেকে ২৫ টাকা আঁটি। বাজারে লালশাক ২৫ থেকে ৩০ টাকা, পালংশাক ৩০ থেকে ৩৫ টাকা, কলমিশাক ১৫ থেকে ২০ টাকা, মুলাশাক ১৫ থেকে ২০ টাকা, আর হেলেঞ্চা শাক ১০ থেকে ২০ টাকা আঁটি বিক্রি হচ্ছে। এমন বেশ কয়েক পদের শাকের দাম গত এক মাসে দ্বিগুণ হয়েছে।

এনএইচ/ইএ/জিকেএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।