রাজনৈতিক অস্থিরতার শঙ্কার ধাক্কা শেয়ারবাজারে
রাজনৈতিক অস্থিরতার আশঙ্কায় দেশের শেয়ারবাজারে ফের দরপতন দেখা দিয়েছে। সপ্তাহের শেষ কার্যদিবস বৃহস্পতিবার প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) এবং অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) সবকটি মূল্যসূচক কমেছে। একই সঙ্গে ডিএসইতে লেনদেন কমে তিনশো কোটি টাকার ঘরে চলে এসেছে।
আগামী ২৮ অক্টোবর ঢাকায় আওয়ামী লীগ ও বিএনপির সমাবেশ ঘিরে রাজনৈতিক অস্থিরতা সৃষ্টির আশঙ্কা সৃষ্টি হওয়ায় শেয়ারবাজারে এই লেনদেন খরা ও দরপতন দেখা দিয়েছে বলে মনে করছেন বাজার সংশ্লিষ্টরা।
তারা বলছেন, ২৮ অক্টোবরের সমাবেশ ঘিরে দুই দলই পক্ষে-বিপক্ষে কথা বলছেন। এতে আগামী ২৮ অক্টোবর কী হবে, তা নিয়ে সবাই এক ধরনের শঙ্কার মধ্যে রয়েছেন। এ কারণে শেয়ারবাজারের বিনিয়োগকারীরাও নতুন বিনিয়োগ না করে পর্যবেক্ষণে রয়েছেন। ফলে দরপতন ও লেনদেন খরা দেখা দিয়েছে।
এর আগে যুক্তরাষ্ট্রর ভিসা নিষেধাজ্ঞার খবরে শেয়ারবাজারে টানা দুই সপ্তাহ দরপতন হয়। তবে গত সপ্তাহের শেষদিকে পতন থেকে বেরিয়ে আসার আভাস দেয় শেয়ারবাজার। চলতি সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবস দরপতন হলেও পরের দুই কার্যদিবস শেয়ারবাজারে ঊর্ধ্বমুখিতার দেখা মেলে। তবে বৃহস্পতিবার এসে আবার দরপতন দেখতে হলো।
এদিন শেয়ারবাজারে লেনদেন শুরু হওয়ার আগেই বিভিন্ন ব্রোকারেজ হাউসে আলোচনার খোরাক হয় ২৮ অক্টোবর। বিনিয়োগকারী ও ব্রোকারেজ হাউসের কর্মীরাও ২৮ অক্টোবর নিয়ে আলোচনায় মত্ত হন। যার প্রভাব শেয়ারবাজারের লেনদেন ও মূল্যসূচকেও দেখা যায়।
লেনদেনের শুরুর দিকে সূচক কিছুটা ঊর্ধ্বমুখী থাকলেও প্রথম ঘণ্টার লেনদেন শেষ হওয়ার আগেই ঋণাত্মক হয়ে পড়ে। একের পর এক প্রতিষ্ঠানের দরপতন হওয়ায় এক পর্যায়ে ডিএসইর প্রধান সূচক ১২ পয়েন্ট কমে যায়। তবে লেনদেনের শেষদিকে শেয়ারের দাম কমার মাত্র কিছুটা কমে। এতে সূচকের পতনের মাত্রও কমে। তবে ক্রেতা না থাকায় দেখা দেয় লেনদেন খরা।
দিনের লেনদেন শেষে ডিএসইতে সব খাত মিলে ৪৪টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট দাম বাড়ার তালিকায় নাম লিখিয়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ১০৪টির এবং ১৭৯টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।
এতে ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স ৬ পয়েন্ট কমে ৬ হাজার ২৭৫ পয়েন্টে অবস্থান করছে। অপর দুই সূচকের মধ্যে ডিএসই শরিয়াহ্ আগের দিনের তুলনায় দশমিক ৫৫ পয়েন্ট কমে ১ হাজার ৩৬২ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। আর বাছাই করা ভালো ৩০টি কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই-৩০ সূচক আগের দিনের তুলনায় ২ পয়েন্ট কমে ২ হাজার ১৩৫ পয়েন্টে অবস্থান করছে।
দিনভর বাজারটিতে লেনদেন হয়েছে ৩৭৮ কোটি ১৫ লাখ টাকা। আগের দিন লেনদেন হয় ৪৭৮ কোটি ৮৩ লাখ টাকা। সে হিসেবে লেনদেন কমেছে ১০০ কোটি ৬৮ লাখ টাকা। এর মাধ্যমে ১০ অক্টোবরের পর ডিএসইতে সর্বনিম্ন লেনদেন হলো।
শেয়ারবাজারের এই পরিস্থিতি সম্পর্কে ডিএসইর এক সদস্য বলেন, শেয়ারবাজার খুবই স্পর্শকাতর। আগামী ২৮ অক্টোবরের সমাবেশ ঘিরে রাজনৈতিক অস্থিরতা সৃষ্টির আশঙ্কা সৃষ্টি হয়েছে। এ কারণে বিনিয়োগকারীরা সাইড লাইনে চলে গেছেন। ফলে বাজারে ক্রেতা সংকট দেখা গেছে। এ ক্রেতা সংকটের কারণেই একদিকে দরপতন হয়েছে, অন্যদিকে দাম কমেছে বেশি সংখ্যক প্রতিষ্ঠানের।
ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ডিবিএ) সভাপতি রিচার্ড ডি রোজারিও জগো নিউজকে বলেন, চারপাশের পরিস্থিতি দেখে মানুষ বিনিয়োগ করতে চায়। এ কারণেই আজকে ক্রেতা ও বিক্রেতার সক্রিয়তা কম ছিলো। বিনিয়োগকারীরা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে রয়েছেন।
আগামী ২৮ অক্টোবর রাজনৈতিক অস্থিরতা সৃষ্টির আশঙ্কায় কি শেয়ারবাজারে এমন লেনদেন খরা ও দরপতন? এমন প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, এটা (রাজনৈতিক অস্থিরতা) হবে কি হবে না, সেটা না। কিন্তু মানুষ দেখতে চাচ্ছে আদৌ কিছু হয় কিনা। যদি হয় এক কথা, না হলে হয় তো রোববার থেকে অন্যরকম আচরণ হবে।
এদিকে লেনদেন খরার বাজারে টাকার অঙ্কে সব থেকে বেশি লেনদেন হয়েছে এমারেল্ড অয়েলের শেয়ার। কোম্পানিটির ১৫ কোটি ৯৩ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছ। দ্বিতীয় স্থানে থাকা সোনালী আঁশের ১২ কোটি ৭৮ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। ১২ কোটি ২১ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেনের মাধ্যমে তৃতীয় স্থানে রয়েছে জেমিনি সি ফুড।
এছাড়া ডিএসইতে লেনদেনের দিক থেকে শীর্ষ ১০ প্রতিষ্ঠানের তালিকায় রয়েছে- বাংলাদেশ মনোস্পুল পেপার ম্যানুফ্যাকচারিং, ফু-ওয়াং ফুড, সি পার্ল বিচ রিসোর্ট, তসরিফা ইন্ডাস্ট্রিজ, মুন্নু এগ্রো, বিচ হ্যাচারি এবং প্রভাতী ইন্স্যুরেন্স।
অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক মূল্যসূচক সিএএসপিআই কমেছে ১৫ পয়েন্ট। বাজারটিতে লেনদেন অংশ নেওয়া ১৪৩টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ২৪টির দাম বেড়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ৫৬টির এবং ৬৩টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। লেনদেন হয়েছে ৫৩০ কোটি ২৯ লাখ টাকা।
এমএএস/এমকেআর/জিকেএস