আইএমএফের উদ্বেগ

বাংলাদেশ ব্যাংকের ‘পরিদর্শন দুর্বলতায়’ বেড়েছে খেলাপি

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৪:১৩ এএম, ০৯ অক্টোবর ২০২৩

বিশেষ সুবিধা দেওয়ার পরও কমেনি খেলাপি ঋণ। বিপরীতে বেড়েছে ব্যাংক খাতের প্রধান সমস্যা খেলাপি ঋণের পরিমাণ। কোনো প্রান্তিকে কিছুটা কমছে তো পরের প্রান্তিকে আবার রেকর্ড গড়ছে। সবশেষ প্রান্তিকে অতীতের সব রেকর্ড ভেঙেছে খেলাপি ঋণ। দেশের ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ এখন এক লাখ ৫৬ হাজার ৩৯ কোটি টাকা। খেলাপি বেড়ে যাওয়ায় প্রভিশন (নিরাপত্তা সঞ্চিতি) সংরক্ষণ করতে পারছে না অনেক ব্যাংক। বড় ধরনের প্রভিশন ঘাটতিতে পড়েছে দেশের ৮ বাণিজ্যিক ব্যাংক।

খেলাপি বেড়ে যাওয়ার কারণ হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিদর্শনে দুর্বলতাকে দুষছে আইএমএফ। ঢাকায় সফররত আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) প্রতিনিধিদল সরাসরি এ বিষয়ে ইঙ্গিত করেছে।

আরও পড়ুন: ডলারের দাম নিয়ে আইএমএফের ক্ষোভ

সংস্থাটির মতে, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিদর্শন দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে ব্যাংকগুলো নিয়ম ভঙ্গ করে ঋণ দিচ্ছে। বিশেষ গোষ্ঠীকে ঋণ দেওয়ায় তাদের একটা বড় অংশ নিয়মের মারপ্যাঁচে ইচ্ছাকৃত খেলাপি হচ্ছে। এতে সংকটে পড়ছে ব্যাংক।

ঋণ খেলাপি বাড়লেও খেলাপিদের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ ব্যাংকের শক্ত অবস্থান অতটা দৃশ্যমান নয়। আবার কাগজে-কলমে পরিদর্শন নিয়েও সন্দেহ পোষণ করেছে আইএমএফ। এ অবস্থায় দেশের ব্যাংক ব্যবস্থায় খেলাপি ঋণ কমাতে সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ চায় সংস্থাটি। যার মাধ্যমে ঋণের অনিয়ম দৃশ্যমান হবে।

রোববার (৮ অক্টোবর) বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে আইএমএফ প্রতিনিধিদল এসব বিষয় তুলে ধরে। বৈঠকে স্থান পায় উচ্চ খেলাপি ঋণ, বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিদর্শন ব্যবস্থাপনা ও বাংলাদেশ ব্যাংকের পদক্ষেপ সংক্রান্ত বিষয়। আলোচনায় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তা ও আইএমএফ প্রতিনিধিরা অংশ নেন।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, দেশের ব্যাংক ব্যবস্থায় আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে খেলাপি ঋণ। এই অতিমাত্রার খেলাপি ঋণ নিয়ে উদ্বিগ্ন আইএমএফ। বৈঠকে খেলাপি নিয়ে আইএমএফের প্রতিনিধিদলের প্রশ্নের জবাবে বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষে বলা হয়, ‘ইচ্ছাকৃত ঋণ খেলাপির কারণেই রেকর্ড খেলাপি সৃষ্টি হয়েছে। ব্যাংকে ঋণ খেলাপি কমাতে ইচ্ছাকৃত খেলাপিদের তালিকা প্রস্তুত করা হবে। ইচ্ছাকৃত খেলাপির বিষয়ে জিরো টলারেন্স নীতি মেনে চলা হবে। এর অংশ হিসেবে সংশোধন করা হয়েছে ব্যাংক কোম্পানি আইন।’

আরও পড়ুন: রাজস্ব আদায়ে ব্যর্থতা ও অটোমেশনের ধীরগতিতে ‘অসন্তোষ’ আইএমএফের

খেলাপি ঋণ কমাতে ব্যাংক পরিদর্শনে নতুনত্ব আনার কথাও জানিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। অনিয়ম পাওয়া গেলে শাস্তির আওতায় আনা হবে। ইচ্ছাকৃত খেলাপিদের নতুন ঋণ অনুমোদন বন্ধ ও বিদেশ ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা আরোপের কথাও জানানো হয় আইএমএফ প্রতিনিধিদলকে।

বৈঠকের অংশ নেওয়া কয়েকজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, আইএমএফের প্রতিনিধিদলের সদস্যরা বেসরকারি খাতের ঋণ, চলতি অর্থবছরের আর্থিক ব্যবস্থাপনা, বৈদেশিক ঋণ, বাণিজ্য ঘাটতি বিষয়ে জানতে চান। তারা বৈদেশিক মুদ্রার মজুত, ব্যাংকের তারল্য ব্যবস্থাপনা, ব্যাংকের ভর্তুকি, আইএমএফের অতীত পরামর্শ পর্যালোচনা, খেলাপি ঋণের শ্রেণি বিভাগ, অপলোন করা ঋণের হালনাগাদ অবস্থা ও উচ্চ মূল্যস্ফীতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন।

এসব বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক মো. মেজবাউল হক বলেন, আইএমএফের সঙ্গে সব বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। বৈঠকে আইএমএফের অতীত পরামর্শ বাস্তবায়ন ও অগ্রগতি নিয়েও আলোচনা হয়। আগামী ১৯ অক্টোবর পর্যন্ত এসব বিষয়ে প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বিশদ আলোচনা হবে।

আরও পড়ুন: আর্থিক প্রতিষ্ঠানেও সুদহার বাড়লো

দেশে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ এখন ২৬ দশমিক ৮১ বিলিয়ন ডলার। ইডিএফের বিল বাদ দিয়ে আইএমএফের হিসাবে রিজার্ভ ২১ দশমিক শূন্য ৩ বিলিয়ন ডলার।

ঋণ দেওয়ার শর্ত হিসেবে আইএমএফ বাংলাদেশের ব্যাংক, রাজস্ব ও শেয়ারবাজার সংক্রান্ত মোট ৪৭টি সংস্কার প্রস্তাব দেয়। সংস্কার প্রস্তাবের দাবিগুলো ধাপে ধাপে বাস্তবায়নের প্রতিশ্রুতি দেওয়ার পর ৪৭০ কোটি ডলারের ঋণ অনুমোদন করে আইএমএফ। যার প্রথম কিস্তির অর্থ ছাড় করে গত ফেব্রুয়ারিতে। সককিছু সন্তোষজনক হলে ঋণের দ্বিতীয় কিস্তির অর্থ মিলতে পারে নভেম্বরে।

ইএআর/কেএসআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।