পূজার মৌসুমে ক্রেতা সংকট কেরানীগঞ্জে, শঙ্কায় ব্যবসায়ীরা
দুর্গাপূজার মৌসুমে বেচাকেনা নেই কেরানীগঞ্জের পোশাক মার্কেটগুলোতে। অলস সময় কাটাচ্ছেন দেশের বৃহৎ এ পোশাকপল্লির দোকানিরা। ঈদসহ বিভিন্ন উৎসব কেন্দ্র করে যে বেচাকেনা হতো সেটি এখন অনেকটাই কমে গেছে। আসন্ন পূজা উপলক্ষেও বেচাকেনা মন্দ চলছে। তাদের অভিযোগ দেশের চলমান অর্থনৈতিক সংকট ও নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের বৃদ্ধির প্রভাব পড়েছে পোশাক মার্কেটে।
রোববার (৮ অক্টোবর) সরেজমিনে দেখা গেছে, ঢাকার কেরানীগঞ্জের মাহবুব আলম শপিং কমপ্লেক্স, জেলা পরিষদ মার্কেট, আলম টাওয়ারসহ আশপাশের পাইকারি মার্কেটগুলোতে নেই বিক্রির ব্যস্ততা। পূজা উপলক্ষেও অন্যবারের মতো ভিড় নেই মার্কেটে। দোকানে দোকানে প্যান্ট, শার্ট, পাঞ্জাবি, মেয়েদের থ্রি-পিস, শিশুদের পোশাক সারিসারি করে সাজানো। ক্রেতাদের আনাগোনা না থাকায় অলস সময় কাটাচ্ছেন দোকানের কর্মচারীরা। কিছু দোকানে বেচাবিক্রি হলেও ব্যবসায়ীদের চাহিদার তুলনায় তা খুবই অল্প বলে জানিয়েছেন ক্রেতারা।
কালীগঞ্জের মাহবুব আলম মার্কেটের দোকানি কমল সরকার বলেন, পূজায় যে বেচাকেনা হওয়ার কথা, সেটি একদম নেই। গত সপ্তাহে কিছু বেচাকেনা হয়েছিল। এ সপ্তাহে মন্দা যাচ্ছে। অন্যদিকে টানা তিনদিন ছিল বৃষ্টি, ক্রেতা আসেনি। শীত ছাড়া বেচাকেনা হবে না। না হয় রমজানের জন্য অপেক্ষা করতে হবে।
আগানগর আলম মার্কেটের ছোটদের লেহেঙ্গা, থ্রি-পিসসহ চাইনিজ পোশাক বিক্রি করেন কামরুল ইসলাম। তিনি জানান, গত কোরবানি ঈদের পর থেকে বেচাকেনা মন্দা যাচ্ছে। হঠাৎ বৃষ্টি, উত্তরবঙ্গে বন্যা, কাস্টমার নেই। টেনেটুনে ব্যবসা চালাচ্ছি। সকাল থেকে দুই ঘণ্টা হয়েছে এখনো যাত্রা করতে পারিনি।
তিনি বলেন, নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের যে দাম, মানুষের তিনবেলা খেতে কষ্ট। এরপর পোশাকের চিন্তা করবে। এমন অবস্থা আমি নিজেও খুব জরুরি ছাড়া পোশাক কিনি না।
একই মার্কেটের মডার্ন হোসিয়ারির কর্মচারী হাসান বলেন, এবার পূজায় বেচাকেনা একদম কম। অন্যান্য সময় যদি ২০ লাখ ২৫ লাখ টার্গেট ধরে বিক্রি করতাম এবার টার্গেট ১০ লাখ টাকা।
এ কে জি গার্মেন্টসের স্বত্ত্বাধিকারী আজাদ হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, প্যান্ট, শার্ট, গেঞ্জি সব বিক্রি করি। কিন্তু ব্যবসায় এমন ধস নামছে সারাদিন শুয়েবসে থাকতে হয়। দেশের অর্থনীতিই তো ভালো নেই, বেচাকেনা হবে কীভাবে। মানুষের হাতে টাকা নাই। এখন শীতের আশায় আছি। আর না হয় রমজানের অপেক্ষা করতে হবে।
ক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পূজা উপলক্ষে গ্রামগঞ্জে বিক্রি কম। বেচাকেনা হলেই পাইকারদের থেকে এসে মাল নিয়ে যান। আগে একসঙ্গে চার থেকে পাঁচ লাখ টাকার মাল নিলেও এখন নিচ্ছেন সর্বোচ্চ এক থেকে দুই লাখ টাকার মালামাল। সামনে শীত ও ঈদের জন্য প্রস্ততি নিচ্ছেন তারা।
কেরানীগঞ্জ গার্মেন্টস মালিক সমিতির অফিস সেক্রেটারি সাইফুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, সাধারণত করোনার আগে সব উৎসবে বেচাকেনা হতো। করোনার পর থেকে কিছুটা উন্নতি হলেও বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দা পরিস্থিতিতে ঈদ ছাড়া এখন অন্যান্য উৎসবে তেমন জমজমাট বেচাকেনা হয় না। ঈদ ছাড়া বাকি মাসগুলোতে ব্যবসায়ীরা টেনেটুনে বছর পার করে। ডলার সংকট, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্যবৃদ্ধি সবকিছু প্রভাব পড়েছে মার্কেটে।
আরএ/এমআইএইচএস/জিকেএস