ডলারের দাম নিয়ে আইএমএফের ক্ষোভ

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৮:৪৩ পিএম, ০৫ অক্টোবর ২০২৩

চরম সংকটের মধ্যেই দেশে হ-য-ব-র-ল অবস্থায় ডলার বাজার। এরই মধ্যে নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে মার্কিন মুদ্রাটির দর। সুযোগ বুঝে ইচ্ছেমতো দাম বাগিয়ে নিচ্ছে অনেক ব্যাংক। এ নিয়ে কয়েকটি ব্যাংককে জরিমানাও করা হয়েছে। তবুও নিয়ন্ত্রণে আসছে না বাজার। এমন পারিস্থিতির মধ্যেই ঢাকা সফর করছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) প্রতিনিধিদল। বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে বৈঠকে ডলারের দাম নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন তারা।

মূলত বাজার ভিত্তিক ডলার রেটের শর্ত পূরণ না করায় চরম ক্ষোভ প্রকাশ করেছে আইএমএফ প্রতিনিধিদল। বিশেষ করে রেমিট্যান্স, রপ্তানি ও আমদানিকারকদের জন্য ভিন্ন দর বেঁধে দেওয়াকে অবাস্তব হিসেবে দেখছেন তারা। এমনকি বাংলাদেশ ব্যাংক রিজার্ভ থেকে বাণিজ্যিক ব্যাংকের কাছে যে দরে ডলার বিক্রি করে সেটিও বাজার ভিত্তিক নয় বলে মনে করে আইএমএফ।

আরও পড়ুন: একদিনের ব্যবধানে ফের বাড়লো ঋণের সুদহার

বাজার ভিত্তিক ডলার রেট না করায় রিজার্ভ আশঙ্কাজনক হারে কমছে বলে মনে করে আইএমএফ প্রতিনিধিদল। পাশাপাশি বাংলাদেশ ফরেন একচেঞ্জ ডিলার অ্যাসোসিয়েশন (বাফেদা) কর্তৃক ডলারের দাম নির্ধারণ বিষয়ে বিস্তারিত জানতে চান তারা। এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তাদের নানা প্রশ্ন করেন তারা। তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কোনো জবাবে সন্তাষ প্রকাশ করেনি আইএমএফ। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

বৃহস্পতিবার (৫ অক্টোবর) ডলার বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও আইএমএফের মধ্যে এসব আলোচনা হয়। এদিন সকালে আইএমএফকে দেওয়া প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী আবারও ঋণের সুদহার বাড়ায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। মাত্র একদিনের ব্যবধানে ঋণের সুদহার বাড়ানোর এমন সিদ্ধান্ত নিলো আর্থিক খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা। মূল্যস্ফীতি সামাল দিতেই এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। নতুন সিদ্ধান্তে সিক্স মান্থ মুভিং এভারেজ রেট বা স্মার্ট (SMART) এর সঙ্গে মার্জিন বাড়িয়ে সাড়ে ৩ শতাংশে উন্নীত করা হয়েছে। একই সঙ্গে প্রি-শিপমেন্ট রপ্তানি ঋণের সুদহারও নির্ধারণ করা হয়েছে। এক্ষেত্রে স্মার্ট- এর সঙ্গে সর্বোচ্চ ২ শতাংশের বদলে সর্বোচ্চ ২ দশমিক ৫ শতাংশ মার্জিন যোগ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

আরও পড়ুন: ঋণের শর্ত পূরণে কতটা অগ্রগতি, আইএমএফকে জানাবে এনবিআর

সূত্র জানায়, তারল্য সংকট এবং আন্তর্জাতিক বাণিজ্য ঘাটতি নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে দেশের ব্যাংক ব্যবস্থপনায়। যা রিজার্ভ কমাতে সরাসরি প্রভাবক হিসেবে কাজ করছে। আইএমএফ জানিয়েছে, রিজার্ভ থেকে বাণিজ্যিক ব্যাংকের কাছে যে ডলার বিক্রি করে বাজার স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা চলছে- তা বাজার ভিত্তিক নয়। রেমিট্যান্স, রপ্তানি ও আমদানিকারকদের জন্য বেঁধে দেওয়া দরকেও অবাস্তব হিসেবে দেখছে প্রতিনিধিদলটি।

এদিকে, ঋণের সুদহার নিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বৃহস্পতিবারের নির্দেশনায় বলা হয়, বৈশ্বিক অর্থনৈতিক অবস্থার প্রেক্ষাপটে দেশের অর্থনীতিতে মূল্যস্ফীতির ওপর বিরূপ প্রভাব পড়ছে। এ অবস্থায় মূল্যস্ফীতি পর্যায়ক্রমে হ্রাস করার লক্ষ্যে ঋণের সুদহার নির্ধারণের ক্ষেত্রে স্মার্ট এর সঙ্গে সর্বোচ্চ ৩ শতাংশের স্থলে সর্বোচ্চ ৩ দশমিক ৫ শতাংশ মার্জিন যোগ করে সুদহার নির্ধারণ করতে হবে। এছাড়া প্রি-শিপমেন্ট রপ্তানি ঋণের সুদহার নির্ধারণের ক্ষেত্রে স্মার্ট এর সঙ্গে সর্বোচ্চ ২ শতাংশের স্থলে সর্বোচ্চ ২ দশমিক ৫ শতাংশ মার্জিন যোগ করে সুদহার নির্ধারণ হবে। তবে কৃষি ও পল্লি ঋণের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ মার্জিন ২ শতাংশ অপরিবর্তিত থাকবে।

মূল্যস্ফীতি বাড়ার কারণ হিসেবে এতদিন মূলত ডলারের মূল্যবৃদ্ধিকে দায়ী করে আসছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। সেটা থেকে বেরিয়ে এসে এখন সুদহার বাড়িয়ে মূল্যস্ফীতি কমানোর চেষ্টা করছে। সাধারণত সুদের হার বাড়লে মানুষ ব্যাংকে আমানত রাখতে উৎসাহিত হন।

আরও পড়ুন: মূল্যস্ফীতি কমাতে সুদহার বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত

সবশেষ সেপ্টেম্বর মাসে দেশে সার্বিক মূল্যস্ফীতি কিছুটা কমেছে। মাসটিতে সার্বিক মূল্যস্ফীতি কমে ৯ দশমিক ৬৩ শতাংশে নেমেছে, যা আগের মাস আগস্টে ছিল ৯ দশমিক ৯২ শতাংশ। তবে সেপ্টেম্বরে খাদ্য মূল্যস্ফীতি ১২ শতাংশের ওপরেই ছিল। আগের মাস আগস্টে যা ১২ দশমিক ৫৪ শতাংশে ওঠে।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) গত মঙ্গলবার মূল্যস্ফীতির তথ্য প্রকাশ করেছে। এতে দেখা যায়, সেপ্টেম্বর মাসে গ্রামে সার্বিক মূল্যস্ফীতি সামান্য কমে ৯ দশমিক ৭৫ শতাংশ হয়েছে। আগের মাস আগস্টে যা ছিল ৯ দশমিক ৯৮ শতাংশ। অন্যদিকে সেপ্টেম্বর মাসে শহরে সার্বিক মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৯ দশমিক ২৪ শতাংশ, আগস্টে যা ছিল ৯ দশমিক ৬৩ শতাংশ।

ইএআর/কেএসআর/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।