শেয়ারবাজারে পতন ঠেকালো বিমা
নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য দায়ী বা জড়িত থাকার অভিযোগে বাংলাদেশি কিছু নাগরিকের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র ভিসানীতি বাস্তবায়ন শুরু করেছে এমন খবর ছড়িয়ে পড়ায় সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবস রোববার (২৪ সেপ্টেম্বর) দেশের শেয়ারবাজারে বড় দরপতন হয়। তবে, দ্বিতীয় কার্যদিবস সোমবার (২৫ সেপ্টেম্বর) পতন থেকে বেরিয়ে এসেছে শেয়ারবাজার। শেয়ারবাজারের এ পতন ঠেকাতে মুখ্য ভূমিকা পালন করেছে বিমা খাত।
এদিন লেনদেনের শুরু থেকেই বেশিরভাগ বিমা কোম্পানির শেয়ার দাম বাড়তে থাকে। লেনদেনের শেষপর্যায়েও দাম বাড়ার তালিকায় স্থান করে নিয়েছে বেশি সংখ্যক বিমা কোম্পানি। এতে প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) প্রধান মূল্যসূচক বেড়েছে। তবে, অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) সূচক কমেছে।
এর আগে শুক্রবার (২২ সেপ্টেম্বর) যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর থেকে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে ভিসানীতির বিষয়টি জানানো হয়। এতে কারও নামোল্লেখ করা না হলেও যাদের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে তাদের বিষয়ে বলা হয়- এরা বাংলাদেশের বর্তমান ও সাবেক কর্মকর্তা, ক্ষমতাসীন ও বিরোধী রাজনৈতিক দলের সদস্য, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য, বিচারবিভাগের সদস্য এবং নিরাপত্তা সংস্থার সদস্য।
এতে বলা হয়, আজ পররাষ্ট্র বিভাগ বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে ক্ষুণ্ন করেছে বা এর জন্য দায়ী কিছু বাংলাদেশি নাগরিকের ওপর ভিসানীতি দেওয়ার পদক্ষেপ নিচ্ছে। ভিসানীতির আওতায় রয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য, ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দল এবং রাজনৈতিক বিরোধীদল।
যাদের ওপর ভিসানীতি দেওয়া হচ্ছে সেসব ব্যক্তি তা তাদের পরিবারের সদস্যরা হয়তো যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের যোগ্য বলে বিবেচিত হবেন না বলে বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করে বলা হয়, ভবিষ্যতে আরও কোনো ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক নির্বাচনী প্রক্রিয়া ক্ষুণ্ন করা বা এর সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ পাওয়া গেলে তারাও একই ভিসানীতির আওতায় পড়তে পারেন।
যুক্তরাষ্ট্রের এ ভিসানীতি ঘোষণা আসার পর রোববার শেয়ারবাজারে প্রথম লেনদেন হয়। এ ভিসানীতির খবরে রোববার শেয়ারবাজারে বড় দরপতন হয়। ডিএসইতে দাম বাড়ার তালিকায় নাম লেখাতে পারে মাত্র ১২টি প্রতিষ্ঠান। এ বড় দরপতনের পর সোমবার লেনদেনের শুরু থেকেই বেশিরভাগ বিমা কোম্পানির শেয়ার দাম বাড়তে থাকে। যা লেনদেনের শেষপর্যন্ত অব্যাহত থাকে। এতে পতনের হাত থেকে রক্ষা পায় শেয়ারবাজার।
দিনের লেনদেন শেষে সবখাত মিলে ডিএসইতে ৮২টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট দাম বাড়ার তালিকায় নাম লিখিয়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ৬২টির এবং ১৫৬টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। অপরদিকে, বিমা খাতের ৩০টি কোম্পানির শেয়ার দাম বেড়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ১৬টি বিমা কোম্পানির শেয়ার দাম।
এতে ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স ১ পয়েন্ট বেড়ে ৬ হাজার ২৮২ পয়েন্টে অবস্থান করছে। অপর দুই সূচকের মধ্যে ডিএসই শরিয়াহ্ আগের দিনের তুলনায় দশমিক ৬৪ পয়েন্ট বেড়ে ১ হাজার ৩৫৯ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। আর বাছাই করা ভালো ৩০টি কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই-৩০ সূচক আগের দিনের তুলনায় ১ পয়েন্ট কমে ২ হাজার ১৩৫ পয়েন্টে অবস্থান করছে।
দিনভর ডিএসইতে লেনদেন হয়েছে ৪৪১ কোটি ২৭ লাখ টাকা। আগের দিন লেনদেন হয় ৫০০ কোটি ৭৪ লাখ টাকা। সে হিসেবে লেনদেন কমেছে ৫৯ কোটি ৪৭ লাখ টাকা।
টাকার অঙ্কে সব থেকে বেশি লেনদেন হয়েছে ইউনিয়ন ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার। কোম্পানিটির ২৮ কোটি ৬৬ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছ। দ্বিতীয় স্থানে থাকা বিডিকম অনলাইনের ২০ কোটি ৪১ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। ১৮ কোটি ১৪ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেনের মাধ্যমে তৃতীয় স্থানে রয়েছে ফু-ওয়াং ফুড।
এছাড়া ডিএসইতে লেনদেনের দিক থেকে শীর্ষ দশ প্রতিষ্ঠানের তালিকায় রয়েছে- খান ব্রাদার্স পিপি ওভেন ব্যাগ ইন্ডাস্ট্রিজ, জেমিনি সি ফুড, ক্রিস্টাল ইন্স্যুরেন্স, কর্ণফুলী ইন্স্যুরেন্স, প্রভাতী ইন্স্যুরেন্স, সোনালী পেপার এবং ইস্টার্ন হাউজিং।
অপর শেয়ারবাজার সিএসইর সার্বিক মূল্যসূচক সিএএসপিআই কমেছে ১৫ পয়েন্ট। বাজারটিতে লেনদেনে অংশ নেওয়া ১৬৭টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৩৭টির দাম বেড়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ৬৭টির এবং ৬৩টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। লেনদেন হয়েছে ১১ কোটি ৪৭ লাখ টাকা। আগের দিন লেনদেন হয় ৮ কোটি ১৫ লাখ টাকা।
এমএএস/এমএএইচ/এমএস