আলকাতরার গন্ধে বন্ধ কারখানা
বছরে ৩০০ কোটি টাকার রপ্তানি ব্যাহত, দাবি মালিকের
আলকাতরা ও ন্যাপথলিনের গন্ধের কারণে রাজধানীর তেজগাঁও শিল্প এলাকায় দুটি পোশাক কারখানা বন্ধ রয়েছে বলে দাবি করেছেন এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ইকবাল হোসেন। স্টিচওয়েল ডিজাইন্স এবং অ্যাপারেল স্টিচ নামে কারখানা দুটির এমডির দাবি, তিন বছর ধরে বন্ধ থাকায় ব্যাপক লোকসানে পড়েছেন। এতে বছরে প্রায় ৩০০ কোটি টাকার রপ্তানি ব্যাহত হচ্ছে। ক্ষতির মুখে পড়েছেন প্রায় আড়াই হাজার শ্রমিক। নষ্ট হচ্ছে কারখানার মূল্যবান যন্ত্রপাতি।
শনিবার (২৩ সেপ্টেম্বর) তেজগাঁওয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব দাবি করেন।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে ইকবাল হোসেন বলেন, আমাদের কারখানা দুটি অনেক ভালো চলছিল। ২০১৪ সাল হতে কিছু বায়ার বিভিন্ন সময় আমাদের মৌখিকভাবে জানিয়েছিলেন, ‘আমাদের উৎপাদিত পণ্যে ন্যাপথলিন, আলকাতরাসহ বিভিন্ন রাসয়নিক দ্রব্যের গন্ধ পাওয়া যায়।’ ২০১৫ সালে সর্বপ্রথম বায়ার আমাদের ই-মেইলের মাধ্যমে জানান, আমাদের উৎপাদিত পণ্যে রাসয়নিক পদার্থের গন্ধ রয়েছে। তারা জানান, কেমিক্যালের উপস্থিতি পাওয়ায় বায়ার আমাদের পরবর্তী অর্ডারগুলো অন্য প্রতিষ্ঠানে স্থানান্তর করতে উদ্যোগ গ্রহণ করবে যদি না এই গন্ধের ব্যাপারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা গ্রহণ না করা হয়। ওই মেইলের মাধ্যমে আমার পরিচালনা পর্ষদ শঙ্কিত হয়ে পড়ি। বুঝে উঠতে পারছিলাম না কিছুই। পরে সবার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আমি নজরুল অ্যান্ড ব্রার্দাসের এমডি মো. নজরুল ইসলামের সঙ্গে বার বার যোগাযোগ করার চেষ্টা করি। কিন্তু উনি কোনোরকম গ্রাহ্য করেনি। ২০১৫ সালের ২ নভেম্বর আমার বায়ারের মেইল সংক্রান্ত বিষয়টি লিখিতভাবে জানাই। অনুরোধ করি আলকাতরা ও ন্যাপথলিনের গন্ধ বন্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য, উনি তাতেও কর্ণপাত করেননি।
ইকবাল হোসেন বলেন, নজরুল অ্যান্ড ব্রার্দাসের যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ না করায় আমি পরিবেশ অধিদপ্তরে যাই। পরিবেশ অধিদপ্তরে ২০১৫-২০১৬ সালের বিভিন্ন সময়ে অসংখ্য লিখিত অভিযোগ জমা দেই। তবে আমি ব্যবসায়ী হিসেবে এতটা অভাগা যে পরিবেশ অধিদপ্তর আমার অসংখ্য লিখিত অভিযোগ পাওয়া সত্যেও কোনো কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। পরে বিজিএমইএ’র তৎকালীন সভাপতি সিদ্দিকুর রহমানের দ্বারস্থ হই এবং উনি আমার সব ঘটনা শুনে ২০১৬ সালের ২২ অক্টোবর বিজিএমইএ লিখিতভাবে পরিবেশ অধিদপ্তর নজরুল অ্যান্ড ব্রার্দাসের আলকাতরা ফ্যাক্টরির ব্যাপারে ব্যবস্থা গ্রহণে লিখিত অভিযোগ প্রদান করে।
পরিবেশ অধিদপ্তর ওই বছরের ৯ ও ২২ নভেম্বর নজরুল অ্যান্ড ব্রাদার্স এবং আমার প্রতিষ্ঠান সরজমিনে পরিদর্শন করে এবং আমার দীর্ঘদিনের লিখিত অভিযোগের সত্যতা পায়। ২২ ডিসেম্বর পরিবেশ অধিদপ্তর একটি প্রজ্ঞাপন জারি করে এবং ২০১৭ সালের ১০ জানুয়ারির মধ্যে নজরুল অ্যান্ড ব্রার্দাস আলকাতরার গন্ধ নির্গমনে কী পদক্ষেপ গ্রহণ করবে তা লিখিতভাবে জানতে চায়। এরপরও অজানা কারণে পরিবেশ অধিদপ্তরের ব্যবস্থা গ্রহণ সংক্রান্ত সব কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়।
তিনি বলেন, বিজিএমই’র মাধ্যমে তৎকালীন পরিবেশ এবং বন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব প্রাপ্ত মন্ত্রী আনিসুল হক চৌধুরীকে বিষয়টি অবগত করি। মন্ত্রীর সাক্ষাতের ফলশ্রুতিতে তার সচিব পরিবেশ অধিদপ্তরকে দ্রুততম সময়ের মধ্যে নজরুল অ্যান্ড ব্রাদার্সের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে বলেন। এর ফলে ২০১৮ সালের ১১ জুন নজরুল অ্যান্ড ব্রাদার্সকে পরিবেশ অধিদপ্তর থেকে জানানো হয় যে, উপযুক্ত কার্যকরী প্রযুক্তি/সিস্টেম স্থাপন না করলে পরিবেশগত ছাড়পত্র নবায়ন করা হবে না। পরে নজরুল অ্যান্ড ব্রাদার্স ২০২১ সালের ২৯ ফেব্রুয়ারি এবং ২৬ ডিসেম্বর পুনরায় ছাড়পত্রের জন্য আবেদন করলে তা নাকচ করা হয়। কোন শক্তির ইশারায় এবং সরাসরি ভূমিকায় এখন পর্যন্ত নজরুল অ্যান্ড ব্রাদার্স পরিবেশগত ছাড়পত্র ছাড়া তাদের কার্যক্রম অর্থাৎ উৎপাদন পুরোদমে পরিচালনা করে আসছে? আমার পার্শ্ববর্তী ভাড়াটে প্রতিষ্ঠান ইউনিট্রেড ফ্যাশন লিমিটেড এই আলকাতরা ও ন্যাপথলিনের গন্ধের কারণে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের দ্বারে দ্বারে ঘুরে ক্লান্ত-পরিশ্রান্ত হয়ে আমার আগে শ্রমিকদের সব দেনা-পাওনা পরিশোধ করে লে-অফ ঘোষণা করেন।
আরও পড়ুন>> রুপিতে লেনদেনের অনুমতি পেল আরও দুই ব্যাংক
তিনি অভিযোগ করে বলেন, ২০১৪ সাল থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কাছে ঘুরছি, কিন্তু কোনো সরকারি প্রতিষ্ঠান আমার অভিযোগের ব্যাপারে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। এই সময়ের মধ্যে আমার সব বায়ার তাদের অর্ডার বাতিল করে দেন। অনেক বায়ার আমার শিপমেন্টকৃত পণ্যের ওপর মোটা অঙ্কের আর্থিক ক্লেইম করেন। এতে আমি আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হই। যখন সব দরজা বন্ধ হয়ে যায়, প্রতিষ্ঠান চালানোর ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও আমি ২০২০ সালের ১০ মার্চ ৪৫ কোটি টাকা ঋণ মাথায় রেখে ১৩ কোটি টাকা পুনরায় ঋণ করে সব কর্মকর্তা, কর্মচারী এবং শ্রমিকের দেনা-পাওনা পরিশোধ করে আমার সন্তানতুল্য প্রতিষ্ঠানকে বন্ধ ঘোষণা করি। আমি গত তিন বছর ধরে প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকা সত্ত্বেও ব্যাংক ঋণ ও সুদের মোটা অঙ্কের টাকা পরিশোধ করতে করতে প্রায় নিঃস্ব।
তিনি বলেন, ঋণখেলাপি হতে মুক্তি পেতে আমার সহধর্মিণী, অত্র প্রাতিষ্ঠানের চেয়ারম্যানের নামে ডিওএইচএসএ অবস্থিত বাড়িটিও ব্যাংকে বন্ধক রেখেছি। অন্য দুটি প্রতিষ্ঠান পরিচালনার স্বার্থে এরই মধ্যে গত ৬ মাস আগে আমি একটি নতুন ক্রেতাকে অনুনয়-বিনয় করে কিছু সাব কন্ট্রাকের কাজ নেই। রাসায়নিকের গন্ধে আমি কাজ করতে পারিনি। বিপরীতে লোকসান করে অন্য ফ্যাক্টরিতে করতে হয়। আমি কমপ্লায়েন্স, শ্রম আইন মেনে আবারও দুই হাজার ৫০০ শ্রমিকের রিজিকের ব্যবস্থা করতে চাই। বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে যেন সরকারকে সহযোগিতা করতে পারি সেজন্য আমি সবার সহযোগিতা চাই।
ইএআর/ইএ/জেআইএম