প্রচার ও জনবলের অভাবে এনবিআরের ই-টিডিএস কার্যক্রমে ধীরগতি

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৮:৫১ পিএম, ১২ আগস্ট ২০২৩
ফাইল ছবি

প্রতিষ্ঠানের উৎসে কর দেওয়া স্বয়ংক্রিয় করতে ২০২১ সালের অক্টোবরে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) চালু করে সম্পূর্ণ স্বয়ংক্রিয় ইলেকট্রনিক ট্যাক্স অ্যাট সোর্স (ই-টিডিএস)। কর দাতাদের ঝামেলা কমাতে ই-টিডিএস সহায়তা করলেও ব্যবস্থাটি এখনো দেশে ব্যবসা পরিচালনা ও সেবা প্রদানকারী বিপুল সংখ্যক সংস্থাকে আকৃষ্ট করতে পারেনি। চালুর ৫ মাসে অর্থাৎ গত বছরের মার্চে ই-টিডিএসে নিবন্ধন নেয় ৩ হাজার ৬৮৫ প্রতিষ্ঠান। একই সময়ে মোট ২৫৯ কোটি টাকার উৎসে কর জমা পড়ে।

এ ব্যবস্থার আওতায় সদ্য সমাপ্ত ২০২২-২৩ অর্থবছরে ৩৯ হাজার ৭৩৬টি চালানের মাধ্যমে সরকার ১ হাজার ৪২১ কোটি টাকা রাজস্ব আদায় করেছে। তবে গত অর্থবছরে ই-টিডিএসের মাধ্যমে উৎস কর বাবদ ১০ হাজার কোটি টাকা আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছিল রাজস্ব বোর্ড। বর্তমানে ব্যাংক, বহুজাতিক কোম্পানি, বিশ্ববিদ্যালয়সহ সব মিলিয়ে ৫৩টি খাত থেকে উৎসে কর আদায় করা হয়।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সারাদেশে প্রায় তিন লাখ সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান এখন মেনুয়াল পদ্ধতিতে উৎস কর জাতীয় কোষাগারে জমা দিচ্ছে। তবে ডিজিটাল সিস্টেমের জন্য প্রচারমূলক প্রচারণার অভাব রয়েছে। পাশাপাশি যথাযথ প্রশিক্ষণের অভাবে অনেক প্রতিষ্ঠানই ই-টিডিএস ব্যবহারে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করছে না।

এনবিআর সংশ্লিষ্টরা বলছেন, রাজস্ব আহরণ বৃদ্ধি এবং কর ফাঁকি রোধে সক্ষম হওয়ায় তারা কর জমা দেওয়ার ব্যবস্থা ডিজিটাল করার জন্য কাজ করছেন। অনিবন্ধিত সংস্থাগুলি ম্যানুয়ালি সোর্স ট্যাক্স প্রদান করে এবং তাদের বেশিরভাগই নিজেরাই তাদের উইথহোল্ডিং ট্যাক্স নির্ধারণ করে থাকে। জনবল সংকটের কারণে এনবিআর সঠিকভাবে নিরীক্ষা করতে ব্যর্থ হয়। কর কর্মকর্তারা ই-টিডিএসকে জনপ্রিয় করার চেষ্টা করছেন, সেমিনার, ওয়েবিনার এবং ব্যবসায়ী সম্প্রদায় এবং ব্যবসায়ী সংগঠনের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে ই-টিডিএসকে জনপ্রিয় করার চেষ্টা করছেন।

২০২১ সালে যখন ইটিডিএস পদ্ধতি চালু হয় কর্মকর্তারা জানিয়েছিল, এ পদ্ধতি চালু পুরোদমে চালু হলে সোর্স ট্যাক্স বিদ্যমান ৬০ শতাংশ থেকে বেড়ে ৮৫ শতাংশে উন্নীত হবে। যেসব প্রতিষ্ঠান রিটার্ন দেয় সেইসব কোম্পানিকে ই-টিডিএসে আনা হলে প্রতিবছর ১০-১২ হাজার কোটি টাকা বাড়তি আয়কর আসবে। পাশাপাশি মূল্যায়ন এবং নিরীক্ষার মাধ্যমে কর ফাঁকি শনাক্ত করা সহজ হবে।

জানা গেছে, বর্তমানে ব্যাংক, নন-ব্যাংকিং আর্থিক প্রতিষ্ঠান এবং বহুজাতিক করপোরেশনসহ প্রধানত বেসরকারি কোম্পানিসহ ৭ হাজার ৩১০টি প্রতিষ্ঠান ই-টিডিএস পদ্ধতিতে নিবন্ধিত।

বর্তমানে প্রায় তিন লাখ সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান উৎসে কর দিচ্ছে। এর মধ্যে ১ লাখ ২০ হাজার সরকারি ও ১ লাখ ৮০ হাজার বেসরকারি প্রতিষ্ঠান। গত অর্থবছরে আয়কর আদায় করেছে ১ লাখ ১৩ হাজার ৩৪৬ কোটি টাকা। যার মধ্যে উৎস কর ছিল ৭৭ হাজার ৭৩৮ কোটি টাকা বা মোট আয়ের ৬৮ দশমিক ৫৮ শতাংশ।

জানতে চাইলে পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর বলেন,
এনবিআর উৎস করের ওপর যথাযথ মনোযোগ দেয় না। অনেক প্রতিষ্ঠান রিটার্ন জমা দেয় না, কারণ তারা উৎস করকে তাদের আয়কর হিসাবে বিবেচনা করে। অনেক প্রতিষ্ঠান মজুরির ওপর ট্যাক্সও কাটে না।

তিনি আরও বলেন, রাজস্ব বোর্ডের উৎস কর সম্পর্কিত একটি পৃথক বিভাগ প্রয়োজন, যা কর ফাঁকির কোনো সম্ভাবনা নির্ধারণের জন্য তথ্য সংগ্রহ এবং বিশ্লেষণ পরিচালনা করবে। এনবিআরেরও হালনাগাদ আইটি ও ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম প্রয়োজন।

এসএম/এমআইএইচএস/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।