পোশাক শিল্প

অপ্রচলিত বাজারে রপ্তানি বাড়াতে মরিয়া ব্যবসায়ীরা

ইয়াসির আরাফাত রিপন
ইয়াসির আরাফাত রিপন ইয়াসির আরাফাত রিপন
প্রকাশিত: ০৯:২৫ এএম, ৩১ জুলাই ২০২৩
ছবি: সংগৃহীত

দেশের রপ্তানি আয়ের সিংহভাগই আসে তৈরি পোশাকখাত থেকে। এ খাতে বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের পরিমাণ প্রায় ৮২ শতাংশ। সম্প্রতি নানা সমস্যায় ইউরোপের প্রধান কয়েকটি বাজারে রপ্তানি কিছুটা নিম্নমুখী। এতেই নড়েচড়ে বসেছেন পোশাকখাতের উদ্যোক্তারা। তারা প্রতিষ্ঠিত বাজারের সঙ্গে অপ্রচলিত বাজার ধরতে মরিয়া। বিশেষ করে অস্ট্রেলিয়া-জাপানের মতো বাজারগুলো।

অপ্রচলিত রপ্তানি বাড়াতে ব্যবসায়ী পর্যায়ে নিয়মিত আলোচনা হচ্ছে। সরকারও বিভিন্নভাবে সব পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রেই অপ্রচলিত বাজার খুঁজতে তাগাদা দিচ্ছে। সফলতাও আসতে শুরু করেছে। ২০৩২ সাল পর্যন্ত অস্ট্রেলিয়ার বাজারে শুল্কমুক্ত সুবিধা পাবে বাংলাদেশ। এ সিদ্ধান্তে দুই দেশই লাভবান হবে বলে মনে করেন পোশাকখাতের উদ্যোক্তারা। অন্যদিকে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিআইও পরিবর্তিত বৈশ্বিক পরিস্থিতিতে অপ্রচলিত বাজারগুলো ধরতে বাণিজ্যিক কার্যক্রম জোরদারের কথা বলছে।

আরও পড়ুন>> রপ্তানি আয়ে রেকর্ড, তৈরি পোশাক থেকেই এলো ৮২ শতাংশ 

বিজিএমইএ ও ইপিবি সূত্র জানায়, ইউরোপের কয়েকটি বড় বাজারে পোশাক রপ্তানি কমলেও অপ্রচলিত বাজারে ভালো প্রবৃদ্ধি ধরে রেখেছে পোশাকখাত। অপ্রচলিত বাজারে দেশের পোশাক রপ্তানি ৩১ দশমিক ৩৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে। প্রধান অপ্রচলিত বাজারের মধ্যে জাপান, অস্ট্রেলিয়া ও ভারতে রপ্তানি অতিক্রম করেছে এক বিলিয়ন ডলারের মাইলফলক। মোট পোশাক রপ্তানিতে অপ্রচলিত বাজারের অংশ ২০২২-২৩ অর্থবছরে ১৭ দশমিক ৮২ শতাংশ বেড়েছে। ২০২১-২২ অর্থবছরে এ প্রবৃদ্ধির হার ছিল ১৪ দশমিক ৯৬ শতাংশ।

এ বিষয়ে ডেনিম এক্সপার্ট লিমিটেডের অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক মহিউদ্দিন রুবেল জাগো নিউজকে বলেন, সদ্য বিদায়ী অর্থবছরের ইউরোপে পোশাক রপ্তানি ২০২১-২২ অর্থবছরের তুলনায় ৯ দশমিক ৯৩ শতাংশ বেড়ে ২০২২-২৩ অর্থবছরে ২৩ দশমিক ৫২ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হয়েছে। এসময়ে ইউরোপের কয়েকটি বড় বাজারে পোশাক রপ্তানি কমেছে। ইতিবাচক ধারা অপ্রচলিত বাজারে। বিশেষ করে জাপান, অস্ট্রেলিয়া ও ভারতের মতো অপ্রচলিত বাজারে রপ্তানি এখন বাড়ছে।

jagonews24

নতুন নতুন বাজার ধরতে তৈরি পোশাক শিল্পের উদ্যোক্তারা নিয়মিত কাজ করছেন। তৈরি পোশাকের অন্যতম অপ্রচলিত বাজার অস্ট্রেলিয়ায় রপ্তানি বাড়াতে দেশটিতে রয়েছে বিজিএমইএ প্রতিনিধিদল। ২০৩২ সাল পর্যন্ত দেশটিতে পণ্য রপ্তানিতে শুল্কমুক্ত সুবিধা পাবে বাংলাদেশ। অর্থাৎ, স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) কাতার থেকে উত্তরণের পরও ছয় বছর রপ্তানি সুবিধা অব্যাহত থাকবে।

আরও পড়ুন>> জুনে ৪ দশমিক ৩৬ বিলিয়ন ডলারের পোশাক রপ্তানি 

বিজিএমইএ বলছে, পণ্য রপ্তানিতে শুল্কমুক্ত সুবিধা দিতে অস্ট্রেলিয়া সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সম্প্রতি বিজিএমইএ নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে এ সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছেন অস্ট্রেলিয়ার পার্লামেন্টের স্পিকার এবং দেশটির মন্ত্রী।

তৈরি পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকার সমিতি বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান জাগো নিউজকে বলেন, বাংলাদেশ অনুদাননির্ভর অর্থনীতি থেকে বাণিজ্যনির্ভর অর্থনীতিতে রূপান্তরিত হয়েছে। বিদেশি ব্যবসায়ী ও বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে অংশীদারত্ব জোরদারের মাধ্যমে বাণিজ্য দিগন্ত প্রসারিত করার জন্য সক্রিয়ভাবে কাজ করছে। অস্ট্রেলিয়ার ক্রেতাদের বাংলাদেশের পোশাক, বিশেষ করে হাই-অ্যান্ড সেগমেন্ট থেকে পোশাকের সোর্সিং বাড়ানোর জন্য আহ্বান জানিয়েছি।

অপ্রচলিত বাজারগুলোতে বাণিজ্য বাড়ানোর বিষয়ে কথা বলেছে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইও। সম্প্রতি এক সেমিনারে সংগঠনটির সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন বলেন, পরিবর্তিত বৈশ্বিক পরিস্থিতিতে অপ্রচলিত বাজারগুলো ধরতে বাণিজ্যিক কার্যক্রম জোরদার সময়োচিত ও গুরুত্বপূর্ণ। ইউরোপ-আমেরিকার প্রচলিত বাজারের বাইরে বিশ্বের অন্য অঞ্চলগুলোতে বাণিজ্য প্রসারের ক্ষেত্রে আমরা পিছিয়ে।

‘মধ্যপ্রাচ্য, আফ্রিকা, এশিয়াসহ বিশ্বের অপ্রচলিত বাজার ধরতে এখন থেকে উদ্যোগ নিতে হবে। বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে ক্রেতারা একক বাজার নির্ভরশীলতা থেকে সরে আসায় তা বাংলাদেশের জন্য সম্ভাবনার দুয়ার খুলেছে। এই সম্ভাবনা কাজে লাগাতে হবে।’

ইএআর/এএসএ/জিকেএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।