সিএমএসএফ
অবণ্টিত লভ্যাংশ ৩০ জুনের মধ্যে না দিলে ২ শতাংশ সার্চ চার্জ
তালিকাভুক্ত যেসব কোম্পানি গত ৩০ জুনের মধ্যে অবণ্টিত লভ্যাংশ পুঁজিবাজার স্থিতিশীল তহবিল বা ক্যাপিটাল মার্কেট স্ট্যাবিলাইজেশন ফান্ডে (সিএমএসএফ) জমা দেয়নি তাদের অতিরিক্ত ২ শতাংশ সার্চ চার্জ দিতে হবে বলে জানিয়েছেন সিএমএসএফ চেয়ারম্যান এবং প্রধানমন্ত্রীর সাবেক মুখ্য সচিব মো. নজিবুর রহমান।
রোববার (৩০ জুলাই) সিএমজেএফ আয়োজিত ‘সিএমজেএফ টক’-এ তিনি এ কথা বলেন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সিএমজেএফ সভাপতি জিয়াউর রহমান এবং সঞ্চালনায় ছিলেন সাধারণ সম্পাদক আবু আলী।
এতে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন নজিবুর রহমান। অবণ্টিত লভ্যাংশ প্রত্যাশা অনুযায়ী সিএমএসএফে জমা না হওয়া নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সাবেক এ চেয়ারম্যান বলেন, বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) আমাদের একটি নির্দেশনা দিয়েছিল এবং আমরা প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছি। আমরা পর্যায়ক্রমে প্রতিটি কোম্পানি অডিট করবো। এটি বিএসইসির বিশেষ পদক্ষেপ।
আরও পড়ুন: অবণ্টিত লভ্যাংশ অপব্যবহারকারীদের কঠোর শাস্তি দেওয়া হবে
তিনি বলেন, ৩০ জুনের মধ্যে যদি অবণ্টিত লভ্যাংশ দিয়ে দেয় কোনো সমস্যা হবে না। ৩০ জুনের পরে গেলে তাদের ২ শতাংশ করে সার্চ চার্জ প্রযোজ্য হবে। এ সার্চ চার্জসহ অবণ্টিত লভ্যাংশ ক্যাপিটাল মার্কেট স্ট্যাবিলাইজেশন ফান্ডে জমা দিতে হবে। সে প্রক্রিয়ার মধ্যে আমরা আছি।
ক্যাপিটাল মার্কেট স্ট্যাবিলাইজেশন ফান্ডের আকার সম্পর্কে অপর এক প্রশ্নে তিনি বলেন, প্রায় ১ হাজার ২৭০ কোটি টাকার মতো আমাদের তহবিল। এরমধ্যে নগদ প্রায় ৫৬০ কোটি টাকা এবং যে শেয়ার আছে তার বাজারমূল্য প্রায় ৭১০ কোটি টাকা।
সিএমএসএফের অর্থ ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশে (আইসিবি) এফডিআর করার কারণ কী? জানতে চাইলে নজিবুর রহমান বলেন, আইসিবির সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক জন্মের আগে থেকেই। বিএসইসি যখন এ ধারণাটা (সিএমএসএফ) নিয়ে এগোচ্ছিল এবং যখন রুলস তৈরি হচ্ছিল, তখন তাৎক্ষণিকভাবে বেশ কিছু কোম্পানি সাড়া দেয়। তারা তাদের ফেরৎযোগ্য শেয়ার আইসিবির বিও হিসাবে জমা দেয়।
‘আইসিবিকে আমরা যে টাকাটা দিচ্ছি, সেটা একটা এফডিআর ফরমেটে দিচ্ছি। এফডিআরের জন্য যে ইন্টারেস্ট, আইসিবি সেটা দেবে। আমাদের বোর্ড মনে করে আমাদের প্রথম দায়িত্ব হচ্ছে তহবিল সুরক্ষা করা। সেজন্য আমরা ঝুঁকি নির্ণয় না করে সরাসরি ক্যাপিটাল মার্কেটে যাওয়াটা সমীচীন মনে করিনি’- বলেন সিএমএসএফ চেয়ারম্যান।
আরও পড়ুন: সিএমএসএফে ব্যাংকগুলো কত টাকা দিয়েছে জানতে চিঠি
তিনি বলেন, আমরা যখন গোল্ডেন জুবিলি মিউচ্যুয়াল ফান্ড কারার প্রক্রিয়া শুরু করলাম, তখন ব্যক্তিখাতের বেশ কিছু অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট আমাদের সঙ্গে পার্টনারশিপ করতে চেয়েছিল। আমার সবাই মিলে চেয়েছিলাম আইসিবিই হোক প্রথম উদ্যোগের পার্টনারশিপ। এ কারণে আমরা আইসিবি অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানিকে অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট হিসেবে নিয়োগ দেই।
সিএমএসএফ থেকে কতজন বিনিয়োগকারীকে দাবি করা লভ্যাংশের অর্থ ফেরত দেওয়া সম্ভব হয়েছে, এমন প্রশ্নের উত্তরে নজিবুর রহমান বলেন, আমরা প্রায় ১ হাজার ১৭০ জন বিনিয়োগকারীকে সেবা (লভ্যাংশের অর্থ ফেরত দেওয়া) দিতে পেরেছি। এরমধ্যে নগদ ক্লেমই বেশি, প্রায় ৭৫৫ জন। বোনাস শেয়ারের ক্লেম আছে ৩৯১ জনের মতো। বেশিরভাগ আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন। সবাই যে টাকা বা শেয়ার নিতে চায় তা নয়। তাদের যে প্রতিক্রিয়া আমরা সেটিকে তাদের আস্থা হিসেবে দেখছি। তারা মনে করছেন, তাদের টাকা বা শেয়ার এ তহবিলে সুরক্ষিত থাকবে।
ব্যাংক কোম্পানির অবণ্টিত লভ্যাংশ সিএমএসএফে দেওয়ার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংক আপত্তি তুলেছিল। বিষয়টি এখন কী পর্যায়ে আছে? সাংবাদিকদের এ প্রশ্নের উত্তরে প্রধানমন্ত্রীর সাবেক এ মুখ্য সচিব বলেন, আমি সচিব মহোদয়কে চিঠি দিয়েছিলাম, আপনার মন্ত্রণালয়ের এই প্রতিষ্ঠান পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত আছে। তাদের কাছে সিএমএসএফের এ টাকাগুলো বা শেয়ারগুলো আছে ফেরত দেন। তার পরেই তারা কোম্পানিগুলোকে নির্দেশনা দেন। কোম্পানিগুলো সরাসরি এসে প্রত্যেকেই সেই শেয়ার ও টাকা ফেরত দেন।
তিনি বলেন, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ তার প্রতিষ্ঠানগুলোকে বলেছে- সিএমএসএফের রুলস ও নিয়মানুযায়ী তাদের হাতে শেয়ার এবং ক্যাশ দেন। রূপালী ব্যাংক এবং আইসিবিকে তারা নির্দেশ দেন। এটি হচ্ছে সিএমএসএফের কার্যকারিতা এবং বাস্তবতার প্রতি সরকারের সমর্থন।
আরও পড়ুন: সিএমএসএফে অর্থ-শেয়ার জমা নিয়ে অডিট কমিটির অসন্তোষ
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশে ব্যাংক একটা অবস্থান নিয়েছিল, এটা আমরা সবাই জানি। বাংলাদেশ ব্যাংক মানি মার্কেটের রেগুলেটর এবং বিএসইসি ক্যাপিটাল মার্কেটের রেগুলেটর। তারা এ বিষয়ে নিরন্তন আলাপ-আলোচনা করছেন। আমার ধারণা দুটি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ভালো অগ্রগতি হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক কনসার্ন (সচেতন) ছিল যেন আমানতকারীদের কোনো ফান্ড এদিকে না আসে এবং বিএসইসির কনসার্ন ছিল বিনিয়োগকারীদের কোনো ফান্ড যেন ঝুলন্ত অবস্থায় না থাকে। বিষয়টি নিয়ে অগ্রগতি হচ্ছে।
নজিবুর রহমান বলেন, সিএমএসএফের বর্তমান যে আইনি কাঠামো আছে, তার আলোকে আমরা কাজ করছি। সেই কাজে কেউ বাধা দিচ্ছে না। সবাই বলছেন- এই ফান্ডটা খুবই দরকার। বাংলাদেশ ব্যাংক এবং বিএসইসির মধ্যে নিয়মিতভাবে আলাপ-আলোচনা হচ্ছে, পুরো পুঁজিবাজারের মঙ্গলের জন্য। নতুন গভর্নর দায়িত্ব নেওয়ার পর তার ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গির দ্বারা আমরা অনুপ্রাণিত হচ্ছি। আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সবকিছু হবে।
দেশের শেয়ারবাজারে এক যুগের বেশি সময় ধরে মিউচ্যুয়াল ফান্ডগুলো খারাপ অবস্থায় রয়েছে। এমন বাজারে সিএমএসএফের উদ্যোগে নতুন মিউচ্যুয়াল ফান্ড নিয়ে আসার উদ্দেশ্য কী এবং সে উদ্দেশ্য কতটা সফল হয়েছে? এমন এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, বর্তমানে বিভিন্ন সমস্যা থাকবে, আপনি হতাশ হবে না। আপনাকে আগামীদিনের সম্ভাবনার জন্য কাজ করতে হবে। সবদিক বিবেচনায় আমরা বলতে পারি বাংলাদেশের ক্যাপিটাল মার্কেটের অনেক সম্ভাবনা আছে। বিএসইসি চাচ্ছে একটি পরিপূর্ণ পুঁজিবাজার গড়ে তোলার জন্য। এজন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। নতুন নতুন পণ্য তারা নিয়ে আসছেন। এর সঙ্গে মিউচ্যুয়াল ফান্ড জনপ্রিয় করার একটা বিষয়ও আছে।
এমএএস/এমকেআর/জিকেএস