রাষ্ট্রীয় পাটকল ইজারা নিয়ে টেক্সটাইল করার সুযোগ

নাজমুল হুসাইন
নাজমুল হুসাইন নাজমুল হুসাইন , নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ১০:৪১ এএম, ১৬ জুলাই ২০২৩
ছবি: সংগৃহীত

বছর ছয়েক আগে লোকসানের কারণে ২৫টি রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন পাটকল একযোগে বন্ধ করে দেয় সরকার। এরপর থেকে সেগুলো বেসরকারি খাতে ইজারা দেওয়া চেষ্টা চলছে। তবে ইজারা নিতে আগ্রহী হলেও ফের সেখানে পাটকল স্থাপনে আগ্রহ কম বেসরকারি উদ্যোক্তাদের। পরিস্থিতি বিবেচনায় এসব পাটকল ইজারা নিয়ে সেখানে টেক্সটাইল শিল্প স্থাপনের সুযোগ দিচ্ছে বাংলাদেশ জুট মিল করপোরেশন (বিজেএমসি)।

বিজেএমসি জানায়, এখন থেকে পাটকল ইজারা নিয়ে বেসরকারি খাতের উদ্যোক্তারা পাট, পাটজাত পণ্য অথবা টেক্সটাইল পণ্য উৎপাদন করতে পারবেন। পাট ও টেক্সটাইল দু’ক্ষেত্রেই তারা কাজ করতে পারবেন ফরোয়ার্ড ও ব্যাকওয়ার্ড লিঙ্কেজে। যদিও আগে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন পাটকলগুলোতে শুধু পাট বা পাটজাত পণ্য উৎপাদনের অনুমতি দিয়েছিল বিজেএমসি। এক্ষেত্রে ইজারার মেয়াদও ১০ বছর বাড়িয়ে ৩০ বছর করা হয়েছে।

আরও পড়ুন>> সোনালী আঁশের দেশে বন্ধ হলো পাটকল!

শুধু পাটকল করার শর্ত থাকার কারণে ২৫টি বন্ধ মিলের মধ্যে গত ছয় বছরে মাত্র ৯টি মিল ইজারা হয়েছে। চার দফা দরপত্র দিয়েও পাটকল করার জন্য আগ্রহী উদ্যোক্তা পাওয়া যায়নি।

এসব বিষয়ে সংস্থাটির মহাব্যবস্থাপক (প্রশাসন ও সা. সেবা) নাসিমুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, বারবার পাটকল বেসরকারি খাতে দেওয়ার চেষ্টা করেও সাড়া পাওয়া যায়নি উদ্যোক্তাদের। সে কারণে এখন টেক্সটাইল করারও সুযোগ দেওয়া হচ্ছে। এখন দেখা যাক, এবার বোঝা যাবে। নতুন করে দশটি মিলের ইজারার জন্য দরপত্র দেওয়া হয়েছে।

নাসিমুল ইসলাম বলেন, আগে যারা পাটকল হিসেবে মিল ইজারা নিয়েছে, তারা চাইলেও এখন সেগুলো টেক্সটাইলে রূপান্তর করতে পারবেন। এ বিষয়ক শর্তাবলি ও রেফারেন্সে প্রয়োজনীয় পরিবর্তন আনা হচ্ছে।

আরও পড়ুন>> ধূসর সময়ে পাটকলে সোনালী ছাঁটাই

জানা যায়, বন্ধ হয়ে যাওয়া পাটকলগুলো ইজারা দিলেও এখন পর্যন্ত বেসরকারি খাতে পুনরায় চালু করার প্রক্রিয়া মন্থর। দুই বছর আগে পাটকলগুলো ইজারা নিয়ে এখন পর্যন্ত মাত্র তিনটি পাটকলে উৎপাদন শুরু করেছেন বেসরকারি উদ্যোক্তারা। পুরোনো মিলগুলো চালু করতে নতুন যন্ত্রপাতির প্রয়োজন হলেও অর্থনৈতিক সংকট ও ডলার সংকটের কারণে সেগুলো আনা সম্ভব হচ্ছে না।

রাষ্ট্রীয় পাটকল ইজারা নিয়ে টেক্সটাইল করার সুযোগ

বেসরকারি পাটকল লাভের মুখ দেখলেও বিজেএমসির পাটকলগুলো বছরের পর বছর লোকসান গুনছিল। লোকসানের বোঝা বইতে না পেরে ২৪ হাজার ৮৮৬ জন স্থায়ী শ্রমিককে স্বেচ্ছা অবসরে (গোল্ডেন হ্যান্ডশেক) পাঠানোর প্রক্রিয়া শুরু করে পাটকল বন্ধ করে দেয় সরকার।

এরপর ইজারা প্রক্রিয়া শুরু করার প্রথম দিকে আন্তর্জাতিক দরপত্র প্রণয়নের শুরুতে দেশের বড় প্রতিষ্ঠানগুলো রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন পাটকলের ইজারা নেওয়ার ইচ্ছা ব্যক্ত করে। এছাড়া ভারত ও যুক্তরাজ্যের কিছু উদ্যোক্তা পাটকলগুলোর ইজারা পেতে আগ্রহী ছিলেন। কিন্তু সরকারের নানা শর্ত ও মধ্যমেয়াদি ইজারার সময়ের কারণে পরে আগ্রহে ভাটা পড়ে অনেক প্রতিষ্ঠানের।

রাষ্ট্রায়াত্ত পাটকলে বেসরকারি উদ্যোক্তাদের অনাগ্রহের কারণ মিলগুলোর দুরবস্থা ও সরকারের নানা শর্তের বেড়াজাল বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ জুট মিল অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব আ. বারিক।

আরও পড়ুন>> পাটকল বন্ধের ঘোষণা ‘ন্যক্কারজনক’ বলছে বাম জোট

তিনি জাগো নিউজকে বলেন, বিজেএমসির সব মিল অত্যন্ত পুরোনো। এগুলোর উৎপাদন ক্ষমতা নতুন নতুন মেশিনের এক চতুর্থাংশ। শ্রমিক খরচ কয়েকগুণ। এছাড়া এসব মিলে কোনো উন্নয়নের উদ্যোগ কখনো নেওয়া হয়নি। তাদের (বিজেএমসির) মেশিনের খবর নেই, লিজ নিয়ে ব্যস্ত তারা।

রাষ্ট্রীয় পাটকল ইজারা নিয়ে টেক্সটাইল করার সুযোগ

তিনি বলেন, এছাড়া এ কারখানা নিয়ে ব্যাংক লোন নেওয়া যাবে না, এটা করা যাবে না ওটা করা যাবে না- এমন দুই ডজন শর্ত রয়েছে। যে বিনিয়োগ করবে তারা এত শর্ত দিয়ে কীভাবে অন্যের কারখানা চালাবে। আবার এত কম সময়ের জন্য এগুলো লিজ দেওয়া হচ্ছে। এত অল্প সময়ের জন্য কেন একজন উদ্যোক্তা এত বড় বিনিয়োগ করবেন।

আ. বারিক আরও বলেন, এখন পাটগুলো টেক্সটাইলে দিয়ে সম্পূর্ণ পাটখাতকে ধ্বংস করার পাঁয়তারা হচ্ছে। টেক্সটাইলগুলো বিদেশ থেকে তুলা এনে সুতা বানাবে। আর আমার দেশের পাটচাষিরা দাম না পেয়ে পাট উৎপাদন বন্ধ করে দেবে। এসব মিল পুনরায় চালু করে পাটের যে উন্নয়নের স্বপ্ন ছিল সেটা একদম শেষ হয়ে যাবে।

এনএইচ/এএসএ/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।