কর্মসংস্থান কমলেও জিডিপিতে বেড়েছে শিল্পের অবদান, কৃষিতে উল্টো

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৯:৩২ পিএম, ২২ জুন ২০২৩

২০১৭ সালের তুলনায় ২০২২ সালে শিল্প খাতে সাড়ে ৩ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান কমেছে। কর্মসংস্থান কমলেও মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) শিল্প খাতের অবদান বেড়েছে ৪ শতাংশের ওপরে। অপরদিকে কৃষি খাতে কর্মংস্থান বাড়লেও জিডিপিতে এ খাতের অবদান কমেছে। রিসার্চ অ্যান্ড পলিসি ইন্টিগ্রেশন ফর ডেভেলপমেন্টের (র‌্যাপিড) এক প্রতিবেদনে এ তথ্য তুলে ধরা হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (২২ জুন) ‘জাতীয় কর্মসংস্থান নীতিমালা এবং বাংলাদেশের শ্রম বাজারে কর্মসংস্থানের চ্যালেঞ্জ’ শীর্ষক কৌশলগত সংলাপে এ প্রতিবেদনের তথ্য তুলে ধরা হয়। রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে যৌথভাবে এ সংলাপের আয়োজন করে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় এবং আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা- আইএলও।

এতে প্রধান অতিথি ছিলেন শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী বেগম মন্নুজান সুফিয়ান। সংলাপে জাতীয় কর্মসংস্থান নীতিমালা এবং বাংলাদেশের শ্রমবাজারে কর্মসংস্থানের চ্যালেঞ্জ বিষয়ে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন র‌্যাপিড চেয়ারম্যান ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. তাসনিম আরেফা সিদ্দিকী।

আরও পড়ুন: জিডিপি অর্জনে সৌদি-জাপান-যুক্তরাষ্ট্রকে পেছনে ফেলবে বাংলাদেশ

মূল প্রবন্ধ উপস্থানকালে ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ২০১৭ সালে জিডিপিতে শিল্প খাতের অবদান ছিল ৩২ দমমিক ৫০ শতাংশ। ২০২২ সালে তা বেড়ে ৩৬ দশমিক ৯০ শতাংশ হয়েছে। তবে এই সময়ের মধ্যে শিল্প খাতে সাড়ে ৩ লাখ মানুষের কর্মংস্থান কমেছে। এতে কর্মসংস্থানে শিল্প খাতের অবদান দাঁড়িয়েছে ১৭ শতাংশ, যা ২০১৭ সালে ছিল ২০ দশমিক ৪০ শতাংশ।

অপরদিকে ২০১৭ সালে কর্মংস্থানে কৃষি খাতের অবদান ছিল ৪০ দশমিক ৬০ শতাংশ। ২০২২ সালে তা বেড়ে হয়েছে ৪৫ দশমিক ৩০ শতাংশ। কর্মংস্থান বাড়লেও ডিজিপিতে কৃষি খাতের অবদান কমেছে। ২০২২ সালে জিডিপিতে কৃষি খাতের অবদান দাঁড়িয়েছে ১১ দশমিক ৬০ শতাংশ, যা ২০১৭ সালে ছিল ১৪ দশমিক ১০ শতাংশ।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী বেগম মন্নুজান সুফিয়ান বলেন, দেশের অভ্যন্তরে কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ কার্যক্রমের মাধ্যমে দক্ষ জনবল গড়ে তোলা হবে। এ লক্ষ্যে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের অধীনে কর্মসংস্থান অধিদপ্তর গঠনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

তিনি বলেন, কর্মসংস্থান সম্পর্কিত কার্যক্রম সুচারুভাবে সম্পাদন, কর্মসংস্থান সেবা দান এবং কর্মসংস্থানের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সব মন্ত্রণালয়, বিভাগ, দপ্তর, সংস্থার কার্যক্রমের মধ্যে সমন্বয় সাধনে জাতীয় কর্মসংস্থান নীতিমালা প্রণয়ন করা হয়েছে।

আরও পড়ুন: জিডিপিতে অবদান মাত্র ২ শতাংশ, ৬ চ্যালেঞ্জে কৃষি প্রক্রিয়াকরণ খাত

বেগম মন্নুজান সুফিয়ান আরও বলেন, নতুন নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টির পাশাপাশি আমাদের অবশ্যই শোভন কর্মপরিবেশ, শ্রমিকদের জীবনমানের উন্নয়ন এবং তাদের আর্থসামাজিক উন্নয়ন নিশ্চিত করতে হবে। ২০৩০ সালের মধ্যে ৩ কোটি মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টির মাধ্যমে বেকারত্বের অবসান ঘটানো, টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট ৮ অনুযায়ী শোভন কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করা এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনে শ্রম মন্ত্রণালয় কাজ করছে।

প্রতিমন্ত্রী বলেন, জাতীয় কর্মসংস্থান নীতিমালার ওপর সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, দপ্তর সংস্থা, সামাজিক সংগঠন, বেসরকারি সংস্থা, সিভিল সোসাইটি এবং আন্তর্জাতিক অংশীদারদের নিয়ে আরও কৌশলগত সংলাপ এবং অংশগ্রহণমূলক আলোচনার আয়োজন করা হবে।

শ্রম মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. এহছানে এলাহীর সভাপতিত্বে সংলাপে পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য ড. মো. কাউসার আহাম্মদ, পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব ড. শাহনাজ আরেফিন, অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সচিব শরিফা খান বক্তব্য রাখেন।

এতে র‌্যাপিড চেয়ারম্যান ড. এম এ রাজ্জাক বাংলাদেশের কর্মসংস্থান নীতি, প্রেক্ষাপট এবং শ্রমবাজারের চ্যালেঞ্জের ওপর একটি পর্যালোচনা উপস্থাপন করেন। তিনি প্রধানত শ্রম মন্ত্রণালয়ের প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতার ভিত্তিতে কর্মসংস্থান নীতির যথাযথ বাস্তবায়নের ওপর জোর দেন। পাশাপাশি অনানুষ্ঠানিক অর্থনীতিতে শ্রমিকদের সামাজিক সুরক্ষার ওপর দৃষ্টি আর্কষণ করেন। একই সঙ্গে কর্মসংস্থানের জন্য উচ্চ সম্ভাবনাময় খাতের চাহিদা-সরবরাহের ব্যবধান বিশ্লেষণ এবং বেকারত্বের মতোই কর্মহীনতাকে সমান গুরুত্ব দিয়ে দেখার ওপর জোর দেন।

আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার বাংলাদেশে নিযুক্ত কান্ট্রি ডিরেক্টর তোমো পুটিআইনেন জানান, আইএলও চতুর্থ ডিসেন্ট ওয়ার্ক কান্ট্রি প্রোগ্রামের বাস্তবায়নের মাধ্যমে এলডিসি গ্র্যাজুয়েশন এবং ভিশন ২০৪১ অর্জনে বাংলাদেশ সরকারকে সবধরনের সহায়তা অব্যাহত রাখবে।

কর্মসংস্থান কমলেও জিডিপিতে বেড়েছে শিল্পের অবদান, কৃষিতে উল্টো

তিনি বলেন, এটা স্পষ্ট যে বাংলাদেশ সরকারের লক্ষ্য অর্জনের জন্য কর্মসংস্থান সৃষ্টি, সামাজিক নিরাপত্তা, কর্মসংস্থানের মান এবং আন্তর্জাতিক বাণিজ্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তবে জাতীয় কর্মসংস্থান নীতি এবং কর্মসংস্থান এজেন্ডা কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে যাওয়ার জন্য প্রধান হাতিয়ার হতে পারে।

তোমো পুটিআইনেন আরও বলেন, পূর্ণ ও উৎপাদনশীল কর্মসংস্থান সৃষ্টি বাংলাদেশে আইএলও’র কাজের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। এর কারণ হলো শোভন কর্মসংস্থান শুধু কোনো চাকরি নয় বরং শান্তি, সামাজিক ন্যায়বিচার, সামাজিক অন্তর্ভুক্তি, অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং ব্যক্তিগত লক্ষ্য পূরণের ভিত্তি।

আরও পড়ুন: বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধির মডেল কি থমকে যাচ্ছে?

জেনারেল ইকোনমিক ডিভিশনের (জিইডি) সদস্য (সচিব) ডা. মো. কাওসার আহমেদ উল্লেখ করেন, সরকার শিল্পক্ষেত্র উপযোগী দক্ষতা প্রশিক্ষণ প্রদান, উদ্যোক্তা তৈরি এবং চাকরির সুযোগ তৈরির ওপর জোর দিচ্ছে। যা প্রতি বছর প্রায় ২০ লাখ তরুণকে শ্রমবাজারে প্রবেশ এবং ক্ষমতায়ন করতে সহায়তা করতে পারে।

তিনি বলেন, কর্মসংস্থানের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা সরকারের বিভিন্ন অগ্রাধিকারমূলক পরিকল্পনার ক্ষেত্রগুলির একটি। বাংলাদেশের জাতীয় কর্মসংস্থান নীতি হালনাগাদ করা, শ্রমবাজারের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রচার হতে পারে টেকসই উন্নয়নের চাবিকাঠি। সঠিক নীতি এবং হস্তক্ষেপের মাধ্যমে আমরা কার্যকরভাবে বেকারত্ব, দক্ষতার অভাব এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা মোকাবিলা করতে পারি।

অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সচিব শরীফা খান প্রতিযোগিতামূলক বাজারে নিজেদের অবস্থান বজায় রাখার জন্য এলডিসি-গ্র্যাজুয়েশন পরবর্তী সময়ে দক্ষ কর্মীর গুরুত্বের প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, এলডিসি গ্র্যাজুয়েশনের সঙ্গে শ্রমবাজার এবং কর্মসংস্থানের একটি নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে। দক্ষ কর্মীর মাধ্যমে জনশক্তি ও উচ্চমানের পণ্য ও পরিষেবা রপ্তানিতে প্রতিযোগিতার সক্ষমতা বাড়াতে এবং শ্রম উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি করতে কর্মসংস্থান নীতির কার্যকর বাস্তবায়নের বিকল্প নেই।

পরিসংখ্যান ও তথ্যবিজ্ঞান বিভাগের সচিব ড. শাহনাজ আরেফিন এনডিসি কর্মসংস্থান নীতি প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন এবং শ্রম বাজারের তথ্যের গুরুত্বের কথা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, কার্যকর কর্মসংস্থান নীতি প্রণয়ন ও বাস্তবায়নে শ্রম বাজারের বুদ্ধিমত্তা ও উপাত্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বাংলাদেশ যেহেতু ২০৩০ সালের মধ্যে এসডিজি অর্জনের এবং ২০২৬ সালের মধ্যে এলডিসি থেকে উত্তরণের চেষ্টা করছে, তাই একটি ব্যাপক শ্রমবাজার তথ্য ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা অপরিহার্য হয়ে উঠেছে। এর জন্য প্রয়োজন সম্পদ বরাদ্দ, আন্তঃসংস্থা সমন্বয়, বেসরকারি খাত নিয়োগ করা এবং এভিডেন্স-বেইজড সিদ্ধান্ত গ্রহণকে সমর্থন করার জন্য এবং কর্মসংস্থান উদ্যোগের সাফল্য নিশ্চিত করার জন্য একটি শক্তিশালী পর্যবেক্ষণ ব্যবস্থা।

এমএএস/কেএসআর/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।