মুদ্রানীতি

কমছে বেসরকারি ঋণ প্রবৃদ্ধি, কর্মসংস্থান কমার আশঙ্কা

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৭:২৮ পিএম, ১৮ জুন ২০২৩

দেশে বেসরকারি খাতের ঋণ প্রবৃদ্ধি কমিয়ে ১০ দশমিক ৯ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে। গত ছয় মাস আগেও এটি ছিল ১৪ দশমিক ১ শতাংশ। পাশাপাশি কমানো হয়েছে সরকারি ঋণের প্রবৃদ্ধিও। সরকারি ঋণের প্রবৃদ্ধি নির্ধারণ করা হয়েছে ৪৩ শতাংশ, যা ছয় মাস আগেও ছিল ৪০ শতাংশ।

রোববার (১৮ জুন) ২০২৩-২৪ অর্থবছরের ষাণ্মাসিক (জুলাই-ডিসেম্বর) বা ছয় মাস সময়ের জন্য মুদ্রানীতি ঘোষণায় শর্ট টার্ম মুভিং অ্যাভারেজ রেট (স্মার্ট) রাখা হয়। আগামী ১ জুলাই থেকে এটি কার্যকর হবে। এদিন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার এ মুদ্রানীতি ঘোষণা করেন।

আরও পড়ুন: চালু হবে টাকার পে-কার্ড, খরচ করা যাবে রুপিতেও

এদিকে বেসরকারি খাতের ঋণ প্রবৃদ্ধি কমিয়ে দেওয়ায় বাধাগ্রস্ত হতে পারে নতুন বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান, এমন আশঙ্কার কথা জানিয়েছেন বিশিষ্টজনরা। পাশাপাশি সুদহার বাজারভিত্তিক করা নিয়ে আবারও আইএমএফের সঙ্গে আলোচনার পরামর্শ তাদের।

২০২৩-২৪ অর্থবছরের জুলাই-ডিসেম্বর সময়ের জন্য ঘোষিত মুদ্রানীতিতে সরকারি ঋণের প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছে ৪৩ শতাংশ, গত অর্থবছরের একই সময়ের মুদ্রানীতিতে যা ছিল ৩৭ দশমিক ৭ শতাংশ। এবার বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছে ১০ দশমিক ৯ শতাংশ, গত বছর যা ছিল ১৪ দশমিক ১ শতাংশ। সব মিলিয়ে এবার মোট অভ্যন্তরীণ ঋণের প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছে ১৬ দশমিক ৯ শতাংশ, গতবার যা ছিল ১৬ দশমিক ৯ শতাংশ।

আরও পড়ুন: ঋণ বিতরণে সীমাবদ্ধতা তুলে নতুন নিয়ম চালু

নতুন মুদ্রানীতিতে বেসরকারি ঋণের প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয় ১৪ দশমিক ১ শতাংশ। ২০২১-২২ অর্থবছরে প্রাক্কলন করেছিল ১৪ দশমিক ৮০ শতাংশ। যদিও প্রাক্কলিত হারের চেয়ে লক্ষ্যমাত্রার অর্জন কম ছিল। চলতি বছরের এপ্রিলে বেসরকারি খাতের ঋণ প্রবৃদ্ধির হার ১১ দশমিক ২৮ শতাংশে নেমেছে।

ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) সভাপতি ব্যারিস্টার মো. সামীর সাত্তার বলেন, বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহ বাড়াতে সরকারের ঋণ হ্রাস করা প্রয়োজন।

এ বিষয়ে বেরসরকারি ঋণের প্রবৃদ্ধি কমানো নিয়ে রোববার সন্ধ্যায় কথা হয় অর্থনীতিবিদ এবং সাবেক তত্ত্বাবধারক সরকারের উপদেষ্টা ড. মিজ্জা আজিজুল ইসলামের সঙ্গে। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, গত ছয় মাসে বেসরকারি ঋণের লক্ষ্যমাত্রা পুরোপুরি অর্জিত হয়নি। এ কারণেই হয়তো প্রবৃদ্ধি কমানো হয়েছে। তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক একটু বেশি কমিয়েছে এবার। কেননা আমাদের দেশের বিনিয়োগ হয় ব্যাংক খাতের মাধ্যমে। নতুন বিনিয়োগ মানেই কর্মসংস্থান সৃষ্টি। লক্ষ্যমাত্রা কমানোর ফলে এটি বিঘ্নিত হতে পারে। বিনিয়োগের অগ্রগতি স্তিমিত হতে পারে, নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে কর্মসংস্থানে। এছাড়া সরকার ব্যাংক খাত থেকে ঋণ বেশি নেওয়ার কারণে হয়তো কমানো হয়েছে। একই সঙ্গে তারল্য সংকট মোকাবিলায় এটি করা হয়েছে, যদিও এতে তারল্য কমবে না। এটি গ্রহণযোগ্য হতে পারে না।

আরও পড়ুন: রিজার্ভ নামবে ২৩ বিলিয়ন ডলারের ঘরে

এক অঙ্কে ঋণ বিতরণে সীমা তুলে নতুন নিয়ম চালু করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। যার নাম দেওয়া হয়েছে শর্ট টার্ম মুভিং অ্যাভারেজ রেট (স্মার্ট)। এ ঋণে গ্রাহক পর্যায়ে সুদহার হবে ১০ শতাংশ।

ঋণের ক্যাপ নিয়ে ড. মিজ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, ক্যাপ ওঠানো হয়নি, বরং এক অঙ্ক থেকে ১০ শতাংশ করা হয়েছে। আইএমএফের শর্ত ছিল সুদহার বাজারভিত্তিক করা, সেক্ষেত্রে আইএমএফের সঙ্গে নেগোসিয়েশন করতে হবে যে, এটি বাজারভিত্তিক হয় কি না। কেননা তাদের কাছ থেকে ৪ দশমিক ৭০ বিলিয়ন ডলার ঋণের দ্বিতীয় কিস্তি আসবে আগামীতে।

২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট বক্তব্যে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেছেন, আমরা আশা করছি আগামী অর্থবছরে সরকারি বিনিয়োগের পরিমাণ বেড়ে জিডিপির ৬ দশমিক ৩ শতাংশ হবে। আর বেসরকারি বিনিয়োগ বেড়ে হবে জিডিপির ২৭ দশমিক ৪ শতাংশ। যদিও পরিসংখ্যান ব্যুরোর হিসাবে, চলতি অর্থবছরে বেসরকারি বিনিয়োগ কমে ২৩ দশমিক ৬৪ শতাংশ হয়েছে।

মুদ্রানীতি ঘোষণায় বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. হাবিবুর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, নতুন সুদহার ব্যবস্থাটিই শর্ট টার্ম মুভিং অ্যাভারেজ রেট বা স্মার্ট। ১৮২ দিন মেয়াদি সরকারি ট্রেজারি বিলের ৬ মাসের গড় সুদহারের সঙ্গে সর্বোচ্চ ৩ শতাংশ করিডোর বা সীমা দেওয়া থাকবে। বর্তমানে ট্রেজারি বিলের গড় সুদহার ৭ দশমিক এক শতাংশ। অর্থাৎ গ্রাহক পর্যায়ে ঋণের সুদহার হবে ১০ দশমিক ১ শতাংশ।

আরও পড়ুন: ৫০ বছরে দেশের প্রবৃদ্ধি অর্জনের ধারাবাহিক তথ্য চেয়েছে আইএমএফ

ড. হাবিবুর জানান, এবারের মুদ্রানীতিতে রেপো ও রিভার্স রেপোর সুদহার বাড়ানোর ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। আগামী জুলাই মাস থেকে রেপো সুদহার ৬ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৬ দশমিক ৫০ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে। আর রিভার্স রেপো ৪ দশমিক ২৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৪ দশমিক ৫০ শতাংশ করা হয়েছে।

মুদ্রানীতি ঘোষণাকালে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার বলেছেন, দেশের অর্থনীতির প্রতিটি সূচকে আমরা এখন ফাইট করছি। হুন্ডির মহামারি চলছে। এরপরও আমাদের রেমিট্যান্স ইতিবাচক অবস্থায় রয়েছে। আমাদের রপ্তানিও এখন ভালো। কারণ, গত অর্থবছরের চেয়ে এবার ৭ বিলিয়ন ডলারের রপ্তানি বেড়েছে।

ইএআর/এমকেআর/এএসএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।