ইডিএফ-ব্যাংক থেকে নেওয়া অর্থ পাচার হচ্ছে: আমীর খসরু

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৪:৪৯ পিএম, ১৮ জুন ২০২৩

ব্যাংক ঋণের বেশিরভাগ রাজনৈতিক নির্দেশনায় দেওয়া হচ্ছে মন্তব্য করে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, এক্সপোর্ট ডেভেলপমেন্ট ফান্ড (ইডিএফ) থেকে নেওয়া অর্থ ও ব্যাংক থেকে নেওয়া ঋণ পাচার হয়ে যাচ্ছে।

তিনি বলেন, অনেকে বলছেন- এ বাজেট (২০২৩-২৪) একটা নির্বাচনী বাজেট হতে পারতো। নির্বাচনের বছরে নির্বাচনের বাজেট হতে পারতো। কিসের নির্বাচন, নির্বাচনে বিশ্বাস করলে তো আপনি নির্বাচনী বাজেট দেবেন। ইউ ডোন্ট বিলিভ ইন নির্বাচন। আপনি তো আবার ক্ষমতা দখল করবেন। জনগণকে বাইরে রেখে জোর করে ক্ষমতা দখল করবেন। কোনো ভোট হবে না। এ প্রক্রিয়া তো চলছে।

রোববার (১৮ জুন) বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) আয়োজিত বাজেট আলোচনায় তিনি এ কথা বলেন।

আমীর খসরু বলেন, বাজেট আসলে কে দিচ্ছে? কারা দিচ্ছে? তারা কি জনগণের কাছে জবাবদিহি কোনো সরকার? তারা কি নির্বাচিত কোনো সরকার? তারা যদি নির্বাচিত না হয়ে থাকে, তাহলে তো জবাবদিহিতার কোনো প্রয়োজন নেই।

তিনি বলেন, রাশেদা (সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধুরী) আপা বলেছেন, ট্যাক্স কালেকশনের জন্য ব্রোকার সৃষ্টি করার দরকার কি? ব্রোকার সৃষ্টি করতে হবে তো। আমার মতে, আপনি যখন অনির্বাচিত থাকবেন, আপনার জনগণের কাছে কোনো দায়বদ্ধতা থাকবে না। তখন আপনার ইকোনমিক মডেলিং রিফ্লেক্ট করবে অটোমেটিকলি, আমরা তো আর কমিউনিস্ট কান্ট্রি না। আমরা একটা ডেমোক্রেসি, একটা ফ্রি মার্কেটের কথা বলে আসছি। সেই জায়গায় অনির্বাচিত সরকারের দায়বদ্ধতা থাকে না। তখন অর্থনৈতিক মডেলে রিফ্লেকশন হয়।

সাবেক এ মন্ত্রী বলেন, ‘পেট্রোল টাইম রিলেশশিপ অর্থাৎ পৃষ্ঠপোষকদের রাজনীতি, পৃষ্ঠপোষকতার অর্থনীতি। যারা তাদের ক্ষমতায় রাখার জন্য সাহায্য করে, সহযোগিতা করে, বাঁচার জন্য সহযোগিতা করে, দে হ্যাভ পেট্রোনাইজ দিজ পিপলস। দিজ ইজ এ রেন সিকিং ইকোনমি। রেন সিকিং। তার কমিশন দরকার, তার ভাড়া দরকার, তার চাঁদা দরকার। সামবডি ইজ টু পে, এ টাকাগুলো।’

তিনি বলেন, ‘ইনস্টিটিউটগুলো মিডিয়াম অব করাপশন, মিডিয়াম অব দুর্নীতি, তারাও কিন্তু ইনভল্ব হয়। অবশ্য তারা বেনিফিটেড হয়। দ্যা গেট শেয়ার অব দ্যা পাই, ফরম দ্যাট কাইন্ড অব ট্রানজেকশন অ্যান্ড করাপশন।’

তিনি আরও বলেন, মেগা প্রজেক্ট থেকে শুরু করে আপনি যেখানেই যাবেন, সেখানেই তিনটি জিনিস রিফ্লেক্ট করবে। একটা পেট্রোল টাইম রিলেশনশিপ, রেন সেকিং এবং অ্যাক্টিভ ইনস্টিটিউশন। এ তিনটা হচ্ছে একেবারে মেইন ফ্রেমওয়ার্ক অব কারেন্ট ইকোনমিক অ্যাক্টিভিটি অ্যান্ড মডেল অব বাংলাদেশ ইকোনমি।

গত ৩০ বছর ধরে আমরা যে ম্যাক্রো ইকোনমিক স্টাবিলিটি ডেভলপ করেছি বাংলাদেশে, ইকোনমিক ইনডিকেটরগুলো এত ভালো জায়গায় চলে এসেছিল, আমরা যখন ক্ষমতা ত্যাগ করি, তখন গ্রোথ রেট ছিল ৭ দশমিক শূন্য ৬। অল দ্যা ইকোনমিক ইনডিকেটর ওয়াজ গুড। তখন সবাই প্রয়োজনীয় এলসি খুলেছে, কোনো সময় এগুলো বন্ধ করার প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়নি।

তিনি বলেন, ডলারের বিনিময় হার কৃত্রিমভাবে অনেকদিন ধরে রেখেছে। কৃত্রিমভাবে ধরে রাখার অনেকগুলো কারণ আছে। কৃত্রিমভাবে ধরে রাখার ফলে যখন বর্তমান… আসলো তখন তা আর সাসটেন করতে পারেনি। কারণ আপনি কৃত্রিমভাবে যখন কোনো কিছু ধরে রাখবেন, এটার একটা সময় আছে, কিন্তু যখন বিপদটা আসবে সাসটেন করতে পারবেন না। এখন ১০৭, ১০৮, ১১০ এ চলে গেছে (ডলারের বিপরীতে টাকার বিনিময় হার)।

তিনি আরও বলেন, এটি আমদানিতে প্রভাব ফেলছে। অন্যদিকে বাংলাদেশ ব্যাংক ক্রমান্বয়ে টাকা ছাপিয়েই যাচ্ছে। ৭০ থেকে ৭৫ হাজার কোটি টাকার মতো ছাপিয়েছে। সেটা আবার মূল্যস্ফীতিকে পুশ করছে। যার ফলে প্রচণ্ড মূল্যস্ফীতি। কেন আপনি এলসি খুলতে পারবেন না, কেন রিজার্ভ নেই? এ ইন-ব্যালেন্স কেন হয়েছে? সেটা আজকে প্রশ্ন তুলতে হবে। রিজার্ভ হঠাৎ করে ফল করার পেছনে কারণটা কি? আবার যে রিজার্ভটা আজকে দেখাচ্ছে, সেটাও তো প্রশ্নবিদ্ধ। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) হিসাব অনুযায়ী ২০ থেকে ২১ বিলিয়ন ডলার। যদিও ২৭ বা ২৮ বিলিয়ন ডলার বলা হয়।

আপনি রিজার্ভ নিয়ে ইডিএফ ফান্ডে দিয়েছেন। ইডিএফ ফান্ডে যারা নিয়েছে, সবগুলোর টাকা বাইরে পাচার হয়েছে। মোস্ট অব দেম হ্যাব বিকাম ডিফল্টার। এগুলো সব ব্যাড লোন হয়ে গেছে। দিজ মানি ইজ আনলাইকলি টু ক্যাম ব্যাক। আবার অনেকগুলো প্রজেক্টে বিনিয়োগ করেছেন, যেখানে রিজার্ভ থেকে বিনিয়োগের কোনো সুযোগ নেই।

তিনি বলেন, শেষ কয়েক বছরে বৈদেশিক ঋণ ডাবল হয়েছে। এটার রিপেমেন্ট আছে, সুদ আছে এবং হাই রেট, কারণ ডলার ফল করে গেছে। বাংলাদেশ ব্যাংক কি অটোনোমাস রোল প্লে করতে পারছে। বাংলাদেশ ব্যাংক মনিটরি পলিসি দেবে, মূল্যস্ফীতি কন্ট্রোল করবে। এটা তাদের মেজর রোল। সত্যিকার অর্থে ফিন্যান্সিয়াল সেক্টরে তাদের কোনো কন্ট্রোল আছে?

বাংলাদেশ ব্যাংক অর্থ মন্ত্রণালয় দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয় এমন ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, অর্থ মন্ত্রণালয়ে আর্থিক বিভাগ বলে একটা বিভাগ ছিল। আমরা বিগত দিনে যখন ক্ষমতায় আসছিলাম বন্ধ করে দিয়েছি। কারণ অর্থ মন্ত্রণালয়ে আপনি যখন ব্যাংকিং ডিভিশন করবেন, ইট ইউল বিকাম দ্য ড্যাম অব করাপশন। আজকে যে এত বড় লোন, এর বেশিরভাগ রাজনৈতিক নির্দেশনার। এ যে টাকা পাচার করছে, লোনের টাকা পাচার করছে। এরা কেউ টাকা কামায়নি। এরা ব্যাংক থেকে লোন নিয়েছে, পয়সা ফেরত দিচ্ছে না। ইডিএফ থেকে লোন নিচ্ছে, ফেরত দিচ্ছে না। স্টক মার্কেট থেকে লুট করছে।

তিনি বলেন, ভোট চুরি করে যদি কোনো সরকার ক্ষমতায় আসে, ওরা জনগণের কাছে জবাবদিহি হওয়ার কোনো কারণ আছে? কোনো কারণ নেই। অনেকে বলছেন- এ বাজেট একটা নির্বাচনী বাজেট হতে পারতো। নির্বাচনের বছরে নির্বাচনের বাজেট হতে পারতো। কিসের নির্বাচন, নির্বাচনে বিশ্বাস করলে তো আপনি নির্বাচনী বাজেট দেবেন। ইউ ডোন্ট বিলিভ ইন নির্বাচন। আপনি তো আবার ক্ষমতা দখল করবেন। জনগণকে বাইরে রেখে জোর করে ক্ষমতা দখল করবেন। কোনো ভোট হবে না। এ প্রক্রিয়া তো চলছে।

আমি এটার নাম দিয়েছি ইলেকশন ভোট চুরির প্রকল্প। দুনিয়ার কোথাও পাবেন না, বাংলাদেশে কিন্তু ভোট চুরির প্রকল্প আছে। সেই প্রকল্পের অংশ হিসেবে জনগণকে জেলে যেতে হবে। বিরোধী দলের নেত্রীকে জেলে পাঠিয়ে দিতে হবে। ৪০ লাখ মিথ্যা মামলা দিতে হবে। গুম করতে হবে, খুন করতে হবে, পুলিশের কাস্টডিতে মরতে হবে, প্রত্যেক দিন গ্রেফতার করতে হবে, ভয়ভীতির পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে। সেই প্রজেক্ট এখন চলমান।

এমএএস/এমএএইচ/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।