‘মূল্যস্ফীতি সাধারণের জীবন আরও অসহনীয় করে তুলবে’
ড. এ বি মির্জ্জা মো. আজিজুল ইসলাম। বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ। ১৯৬২ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন। পরবর্তীসময়ে ১৯৬৪ সালে পাকিস্তান সিভিল সার্ভিসে ‘সিএসপি’ কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ পান। ১৯৮২ সালে যোগ দেন জাতিসংঘে। ২০০৭-০৮ সালের নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় অর্থ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করেন। বর্তমানে বেসরকারি ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা করছেন।
মূল্যস্ফীতির প্রসঙ্গ নিয়ে জাগো নিউজের সঙ্গে কথা বলেছেন। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সায়েম সাবু।
জাগো নিউজ: মূল্যস্ফীতি গত ১২ বছরের মধ্যে রেকর্ড গড়েছে। এমন পরিস্থিতি হতে পারে বলে আপনি আগেই ইঙ্গিত দিয়েছিলেন। কী বলবেন এই পরিস্থিতি নিয়ে?
মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম: মূল্যস্ফীতির বর্তমান যে চিত্র তা ধারাবাহিকভাবে রূপ পেয়েছে। একদিনেই এ অবস্থা দাঁড়ায়নি। আর কী কী কারণে এই পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে তাও অনেকের জানা।
আরও পড়ুন>> নিত্যপণ্যে আগুন, দেশে ১২ বছরে সর্বোচ্চ মূল্যস্ফীতি
চাহিদার তুলনায় উৎপাদন বাড়ানো সম্ভব হয়নি। এখন সীমাহীন লোডশেডিং চলছে। এতে উৎপাদন আরও ব্যাহত হচ্ছে। আবার ব্যবসায়ীদের মধ্যকার সিন্ডিকেট এই মূল্যস্ফীতি আরও অসহনীয় করে তুলছে।
জাগো নিউজ: সরকার তো চলমান মূল্যস্ফীতির জন্য বিশ্ববাজারকে দায়ী করছে।
মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম: বিশ্ববাজার সব সময় সামনে এনে দায় এড়ানো যায় না। বিশ্ববাজারের পণ্যের দাম বেড়েছিল। তখন বাংলাদেশেও বেড়েছিল। এখন তো বিশ্ববাজারে অনেক পণ্যের দাম কমতে শুরু করেছে। বাংলাদেশে কমছে না কেন? ডলার ক্রাইসিস সংকটের আরেকটি কারণ। কিন্তু এর পেছনেও সরকারের অব্যবস্থাপনা দায়ী অনেকাংশে।
জাগো নিউজ: মূল্যস্ফীতি কমাতে সরকার এখন কী করতে পারে?
মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম: সরকার দ্রুত সামাল দিতে পারবে বলে মনে করি না। কারণ সরকারের হাতে তেমন আর করার কিছু নেই। তবে চেষ্টাটা থাকতে হবে।
সরকার বিশ্ববাজার থেকে আমদানি করে ব্যালেন্স করতে পারে। তবে এক্ষেত্রে ব্যবসায়ীরা যেন মেন্যুপুলেশন করতে না পারে তার জন্য সজাগ থাকতে হবে। মূলত ব্যবসায়ীরাই বাজার পরিস্থিতি অস্থির করে তোলেন এবং সেখানে সরকারের মনিটরিং না থাকার কারণেই হয়।
আরও পড়ুন>> ‘চোখ-কান খোলা রাখলেই গরিবের কান্না দেখতে পাওয়া যায়’
দ্বিতীয়ত, সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী আরও জোরদার করতে হবে। সামাজিক নিরাপত্তার জন্য সরকার যে বরাদ্দ রেখেছে, তা অপ্রতুল বলে মনে করি। গরিব মানুষের কাছে নগদ টাকা থাকার ব্যবস্থা করতে হবে।
নিম্নমধ্যবিত্ত ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জীবনযাপনের মান অনেক নিচে নেমে যাচ্ছে। সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী ভেঙে পড়লে অস্থিরতা আরও বাড়বে।
জাগো নিউজ: দেশের বাজার নিয়ন্ত্রণ না করে বা সিন্ডিকেট না ভেঙে সরাসরি আমদানি করে ব্যালেন্স করতে চাইলে কৃষক বা উৎপাদনকারী ক্ষতিগ্রস্ত হবে কি না?
মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম: মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধি বা বাজার মেন্যুপুলেশনের জন্য সাধারণত কৃষক বা উৎপাদনকারী দায়ী নয়। তারা নির্দিষ্ট লভ্যাংশ পায় কি না সেটা বিবেচ্য। বাজার নিয়ন্ত্রণ করে ব্যবসায়িক শ্রেণি। সিন্ডিকেট তারাই করেন। কৃষক করেন না। কৃষক উৎপাদন করে ঘরে আটকেও রাখেন না। মধ্যস্বত্বভোগীদের কারণেই কৃষক বা সাধারণ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয় বেশি।
জাগো নিউজ: কী ঘটবে সামনে? মূল্যস্ফীতি বাড়বে কি না আরও?
মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম: সেটা নির্দিষ্ট করে বলা যাবে না। তবে মূল্যস্ফীতি আর বাড়ানো ঠিক হবে না। এখনই নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। বিশ্ব পরিস্থিতি অনেকটাই সহনীয় অবস্থায় আছে। পৃথিবীর অনেক দেশের মূল্যস্ফীতিই কমে আসতে শুরু করেছে।
জাগো নিউজ: সরকারের পক্ষ থেকে আগামী অর্থবছর মূল্যস্ফীতি ৬ শতাংশের আশাবাদ ব্যক্ত করা হয়েছে। আদৌ সম্ভব?
মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম: মূল্যস্ফীতি ৬ শতাংশের লক্ষ্যমাত্রা দিবাস্বপ্ন। রাজনৈতিক ভাষায় অনেক কিছুই বলতে হয়। এটি কোনোভাবেই সম্ভব নয়। ৭ শতাংশে আনতে পারলেও সরকার বিশেষ বাহবা পাবে বলে আমি মনে করি।
জাগো নিউজ: সাধারণ মানুষ বাঁচবে কীভাবে?
আরও পড়ুন>> ‘ব্যবসায়ীরা দাম বাড়ানো শিখছে রাষ্ট্রের কাছ থেকে’
মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম: এটি বলা মুশকিল। মূল্যস্ফীতি সাধারণের জীবন আরও অসহনীয় করে তুলছে। গরিব মানুষের কাছে কোনো সঞ্চয় থাকে না। দিন আনে দিন খায়। হঠাৎ পণ্যের দাম বেড়ে গেলে তাদের ক্রয়ক্ষমতা কমে যায়। না খেয়ে দিন পার করতে হয়।
জাগো নিউজ: প্রায় ব্যর্থ রাষ্ট্র থেকে শ্রীলঙ্কা ঘুরে দাঁড়াচ্ছে। পাকিস্তানও তাই। বাংলাদেশের পরিস্থিতিও স্বাভাবিক হবে, এমনটি আশা করা যায়?
মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম: এখানে সরকারগুলোর কমিটমেন্ট অনেকাংশে প্রভাব ফেলে। রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশে সামনে কী ঘটবে তার জন্য অপেক্ষা করতে হবে।
আন্তর্জাতিক বাজার স্থির হতে শুরু করেছে। তার এক প্রকার সুফল তো আমরা পাবো। অন্তত এমন আশাবাদ ব্যক্ত করতেই পারি।
এএসএস/এএসএ/জেআইএম