ব্যয় ১৬ কোটি
সরকারি কর্মকর্তাদের ফিটনেস ঠিক রাখতে ভবনের ছাদে হবে সুইমিংপুল
সরকারের কর্মকর্তাদের বডি ফিটনেস বা শারীরিক গঠন ঠিক রাখতে ভবনের ছাদে নির্মাণ করা হবে সুইমিংপুল। এজন্য চলমান একটি প্রকল্প সংশোধন করা হয়েছে। যেখানে সুইমিংপুল নির্মাণ বাবদ ব্যয় ধরা হয়েছে ১৬ কোটি টাকার বেশি। তবে চলমান বৈশ্বিক সংকটে এত টাকা খরচ করে ভবনের ছাদে সুইমিংপুল নির্মাণ কতটা যৌক্তিক, এ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। যদিও প্রকল্পটির সংশোধন নিয়ে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান সাংবাদিকদের বলেছেন, ছাদে সুইমিংপুল হবে, খুব বাতাস পাওয়া যাবে।
‘জাতীয় উন্নয়ন প্রশাসন একাডেমি প্রতিষ্ঠান প্রকল্পে’ এ সুইমিংপুল নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়। শুরুতে প্রকল্পের আওতায় ভবনের ৯ম ও ১০ম তলায় ১০ হাজার বর্গ মিটারের দুটি সুইমিংপুল নির্মাণের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছিল। পরে সংশোধিত প্রকল্পে সেটি স্থানান্তর করা হয় ভবনের ছাদে। যেখানে গ্যাস প্ল্যান্ট স্থাপন, সুইমিংপুল টাইলস, অ্যালুমিনিয়ামসহ অন্যান্য কাজে ব্যয় হবে ১৬ কোটি ৪ লাখ টাকা।
প্রকল্পটিতে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ২৩৭ কোটি কোটি ৩৮ লাখ টাকা। এটি বাস্তবায়ন করছে বাংলাদেশ সচিবালয়। রাজধানীর রূপনগর মিরপুর, প্লট নং ১/এ এলাকায় শূন্য দশমিক ৯১ একর জমিতে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।
অক্টোবর ২০০৯ সালে প্রকল্পের কাজ শুরু হয়ে জুন ২০১২ সালে শেষ করার পরিকল্পনা ছিল সরকারের। একনেক সভায় নতুন করে প্রকল্পের মেয়াদ জুন ২০২৪ সাল নাগাদ বাড়ানো হয়েছে। মেয়াদ বাড়ানোর কারণ হিসেবে সুইমিংপুলসহ আনুষঙ্গিক কাজ বাস্তবায়নের বিষয়গুলো সামনে আনা হয়েছে।
ভবনের সুইমিংপুল ৯ম ও ১০ম তলা থেকে ছাদে স্থানান্তর করায় দুটি ফ্লোরে প্রায় ১০ হাজার বর্গফুট এরিয়া বেড়েছে। এতে অতিরিক্ত সিভিল ও ইলেকট্রিক্যাল কাজ এবং টাইলস ও বুফটপে থার্মাল টাইলসের কাজসহ বিভিন্ন ফ্লোরে অ্যালুমিনিয়াম স্লাইডিং ডোর ও ক্যাসমেন্ট উইন্ডো ও তিতাস গ্যাস সংযোগ না পাওয়ায় এলপিজি গ্যাস প্ল্যান্ট স্থাপন করার প্রয়োজন হবে, যা চলমান টেন্ডার আইটেমে ছিল না। এছাড়া অডিটরিয়ামের অ্যাকোস্টিক ও ইন্টোরিয়র কাজ এবং ডরমেটরি রুমগুলোতে কেবিনেট কাজ করা হবে।
এছাড়াও সংশোধিত প্রকল্পের আওতায় সুইমিং পুলের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ, পানি বিশুদ্ধকরণ, পানির লেভেল ইন্ডিকেটর ও পর্যাপ্ত পানি সরবরাহ ইত্যাদি সম্পাদনের জন্য সুইমিংপুলের অতিরিক্ত ইলেকট্রো মেকানিক্যাল কাজ করা হবে। নির্মাণাধীন ভবনের দুটি বেইসমেন্টে অবাধ বায়ু চলাচলের জন্য ফোর্স ভেন্টিলেশন সিস্টেম বাবদ ব্যয় প্রস্তাব করা হয়। কনফারেন্স ও সেমিনার হলের জন্য স্পেশাল লাইট ফিটিংস ও সাউন্ড সিস্টেম এবং অডিটরিয়াম হলের জন্য প্রজেকটর, স্টেজ লাইটিং ও স্পেশাল সাউন্ড সিস্টেম বাবদ ব্যয় প্রস্তাব করা হয়।
মঙ্গলবার (৬ জুন) এ প্রকল্পসহ জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক) প্রায় ১১ হাজার ৩৮৭ কোটি ৯১ লাখ টাকা ব্যয়ে ১৮টি প্রকল্প অনুমোদন করেছে। এর মধ্যে সরকারি অর্থায়ন ৭ হাজার ৪৪০ কোটি ৩৪ লাখ টাকা। এছাড়া বৈদেশিক অর্থায়ন ৩ হাজার ৮৬১ কোটি ৭২ লাখ এবং সংস্থার নিজস্ব অর্থায়ন থাকবে ৮০ কোটি ৮ লাখ টাকা।
শেরেবাংলা নগরে এনইসি সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত একনেক সভায় সভাপতিত্ব করেন একনেক চেয়ারপারসন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সভা শেষে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন।
এদিকে চলমান বৈশ্বিক সংকটে ১৬ কোটি টাকা ব্যয়ে ভবনের ছাদে সুইমিংপুল নির্মাণ কতটা যৌক্তিক, এমন প্রশ্নের জবাবে পরিকল্পনা কমিশনের আর্থ-সামাজিক অবকাঠামো বিভাগের সদস্য (সিনিয়র সচিব) মোসাম্মৎ নাসিমা বেগম বলেছেন, কর্মকর্তারা সংকটকালীনও কাজ করেন। তাদের জন্য কোনো খেলার মাঠ নেই। বডি ফিটনেস রাখার জন্য সুইমিংপুল নির্মাণের যৌক্তিকতা আছে।
পরিকল্পনা কমিশন জানায়, প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে উন্নয়ন প্রশাসন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা এবং উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে সম্পৃক্ত জনবলকে যথাযথ প্রশিক্ষণের মাধ্যমে তাদের পেশাদার মনোভাব এবং দক্ষতা উন্নয়নের পাশাপাশি সরকারি বিনিয়োগের ভ্যালু ফর মানি নিশ্চিত হবে। সার্বিক বিবেচনায় প্রশিক্ষণ একাডেমি প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে সরকারি কর্মকর্তাদের সক্ষমতা বাড়াতে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে।
বিসিএস ইকনমিক ক্যাডার প্রশাসন ক্যাডারের সঙ্গে একীভূত হওয়ায় নির্মাণাধীন প্রশিক্ষণ একাডেমির প্রত্যক্ষ ব্যবহারকারীর সংখ্যা প্রায় ৫৫০ জন থেকে ৬ হাজার জনে বৃদ্ধি পাওয়ার বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে অবকাঠামো সুবিধা পুনর্নির্ধারণ করা হয়েছে। প্রশিক্ষণ একাডেমিটিকে আন্তর্জাতিক ও আধুনিক মানে উন্নীত করতে ভবনের অভ্যন্তরীণ সুবিধাদি বাড়ানো হবে।
এমওএস/এমকেআর/এএসএম