বাজেটে চার প্রস্তাব পুনর্বিবেচনার দাবি ডিএসইর
নতুন অর্থবছরের (২০২৩-২৪) প্রস্তাবিত বাজেটকে অভিনন্দন জানিয়ে চারটি প্রস্তাব পুনর্বিবেচনার দাবি জানিয়েছে প্রধান শেয়ার বাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) কর্তৃপক্ষ। পুনর্বিবেচনার দাবি জানানো প্রস্তাব চারটি বাজেট প্রস্তাবের আগে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে (এনবিআর) জমা দেয় ডিএসই।
শনিবার (৩ মে) ডিএসই থেকে গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেট প্রস্তাবনাকে অভিনন্দন জানিয়ে প্রস্তাব চারটি পুনর্বিবেচনার দাবি জানানো হয়।
এতে বলা হয়, ‘উন্নয়নের অভিযাত্রার দেড় দশক পেরিয়ে স্মার্ট বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা’ শিরোনামে বাংলাদেশ সরকারের অতীতের অর্জন এবং উদ্ভুত বর্তমান পরিস্থিতির সমন্বয়ে অর্থনীতিকে গতিশীল করতে যে সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা নিয়ে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল জাতীয় সংসদে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জন্য ৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকার বাজেট পেশ করেছেন, তার জন্য ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ লিমিটেড-এর পক্ষে চেয়ারম্যান অধ্যাপক হাফিজ মুহম্মদ হাসান বাবু আন্তরিক অভিনন্দন জানাচ্ছে৷
এ বাজেট হচ্ছে স্বাধীন বাংলাদেশের ৫২তম বাজেট ও অর্থমন্ত্রী মুস্তফা কামালের পঞ্চম বাজেট ঘোষণা এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের টানা তৃতীয় মেয়াদের শেষ বাজেট৷
বাজেটে মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ধরে রাখাসহ অর্থনৈতিক ভারসাম্য রক্ষায় সরকারের কৌশল এবং বিভিন্ন সংস্কারের ঘোঘণা দেওয়া হয়েছে এবং ২০৪১ সালের মধ্যে সুখী-সমৃদ্ধ উন্নত স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণসহ বর্তমান সরকার বাংলাদেশের টেকসই উন্নয়নের ভিত্তি স্থাপন করেছেন-বলে বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়।
এতে বলা হয়, প্রধানমন্ত্রীর চিন্তাপ্রসূত স্মার্ট বাংলাদেশ গঠনের ৪টি মূল স্তম্ভ-স্মার্ট সিটিজেন, স্মার্ট গভর্নমেন্ট, স্মার্ট সোসাইটি এবং স্মার্ট ইকোনমি গঠনের প্রস্তাবনা তুলে ধরা হয়েছে। ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটটি স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের পথে প্রথম বাজেট। যা দেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক উন্নয়নের সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনারই বহিঃপ্রকাশ হিসেবে এবারের বাজেটে সঙ্গত কারণেই স্বাস্থ্য, কৃষি, খাদ্য উৎপাদন ও ব্যবস্থাপনাকে অধিক গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।
ডিএসই মনে করে যে, উন্নয়ন ও উৎপাদনমুখী কার্যক্রমের মাধ্যমে অর্থনীতিকে গতিশীল করার কৌশল নিয়ে বাজেট প্রণয়ন করা হয়েছে৷ ২০২৩-২৪ অর্থবছরে প্রস্তাবিত বাজেটে ২০৪১ সালের মধ্যে সুখী-সমৃদ্ধ উন্নত স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণ, উন্নয়ন ও উৎপাদনমুখী যে তা পরিকল্পিত কর্মপন্থা ও ব্যবস্থাপনা কৌশল বাজেটে প্রস্তাব করা হয়েছে। সেজন্য ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের চেয়ারম্যান হাফিজ মুহম্মদ হাসান বাবু বাজেট প্রস্তাবনাকে অভিনন্দন জানাচ্ছে৷
এছাড়াও সরকার পুঁজিবাজারকে আন্তর্জাতিক করণের লক্ষ্যে নানাবিধ সংস্কারমূলক পদক্ষেপ গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করছে৷ বিনিয়োগকারীদের প্রত্যাশা অনুযায়ী প্রস্তাবিত বাজেটে বাংলাদেশের পুঁজিবাজারকে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য পুঁজিবাজারের সহায়ক ইকোসিস্টেম ও সার্বিক সুযোগ-সুবিধার উন্নয়ন করার জন্য আগের বছরের বাজেটের শেয়ারবাজারবান্ধব নীতি বলবত রাখা হয়েছে-বলেও বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ পুঁজিবাজারকে প্রাণবন্ত ও বিনিয়োগবান্ধব করার লক্ষ্যে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটে চারটি দাবি বিবেচনার দাবি জনিয়েছে। এই চার প্রস্তাব বাজেট পূর্ব সময়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে প্রস্তাবনা আকারে জমা দেওয়া হয়। এর মধ্যে রয়েছে-
বন্ড থেকে সুদের আয়ের ওপর কর অব্যাহতি
বর্তমানে করপোরেট বন্ডের বাজারের আকার খুবই ছোট, যা এটি পুঁজিবাজারের পাশাপাশি অর্থ বাজারেও বিভিন্ন সীমাবদ্ধতা তৈরি করে। একটি কার্যকরী বন্ড বাজার অর্থনীতিকে বিভিন্নভাবে সহায়তা করতে পারে। যদি সব ধরনের বন্ডের সুদ অব্যাহতির আওতায় আনা যায় তখন একটি শক্তিশালী বন্ড বাজার সৃষ্টিতে উৎসাহিত করবে।
লভ্যাংশ আয়ের ওপর উৎসে কর সম্পূর্ণ এবং চূড়ান্ত নিষ্পত্তি হিসেবে বিবেচনাকরণ
কোম্পানিগুলো কর-পরবর্তী মুনাফা থেকে লভ্যাংশ দিচ্ছে। প্রকৃতপক্ষে লভ্যাংশের ওপর কর এক ধরনের দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্তরের করারোপণ। লভ্যাংশের ওপর উৎসকর চূড়ান্ত কর হিসেবে বিবেচিত হলে বিনিয়োগকারীরা বিনিয়োগে উৎসাহিত হবে৷
স্টক এক্সচেঞ্জের ট্রেকহোল্ডারদের উৎসে কর হ্রাস
ডিএসইর ট্রেকহোল্ডার কোম্পানির প্রধান আয় (অর্থাৎ টার্নওভার) হচ্ছে কমিশন। যদি বেশি হারে কর নেওয়া হয় তবে ট্রেকহোল্ডার কোম্পানির পক্ষে টিকে থাকা এবং পুঁজিবাজারে অবদান রাখা কঠিন হবে।
এক্সচেঞ্জের এসএমই বোর্ডের অধীনে তালিকাভুক্ত এসএমই কোম্পানিগুলোর জন্য হ্রাসকৃত/ রেয়াতযোগ্য হারে কর আরোপ
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে তালিকাভুক্ত এসএমই কোম্পানিগুলোকে পর্যাপ্ত পরিমাণ কর প্রদান করতে হয়, যা কোম্পানিগুলোর তালিকাভুক্ত হওয়ার ক্ষেত্রে অন্যতম প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে এবং এসএমই কোম্পানিগুলো তালিকাভুক্ত হওয়ার জন্য উৎসাহ হারাচ্ছে। এর ফলে এ সমস্ত কোম্পানিগুলোর কাছ থেকে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ কর আদায় সম্ভব হচ্ছে না। যদি এ জাতীয় কোম্পানিগুলোকে হ্রাসকৃত হারে কর ছাড়ের অনুমতি দেওয়া হয়, তবে উক্ত কোম্পানিগুলো তালিকাভুক্তির জন্য উৎসাহিত হবে এবং দীর্ঘমেয়াদে সরকারের কর আদায় বৃদ্ধি পাবে।
২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটে এ প্রস্তাবগুলো অন্তর্ভুক্ত করো হলে বাজারে বিনিয়োগের অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি হবে এবং জাতীয় অর্থনীতি আরও গতিশীল হবে। এতে করে বেসরকারি খাত আরও শক্তিশালী ও বিকশিত হয়ে দেশে বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ সৃষ্টি হবে যা দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীদেরকে আরও বেশি আকৃষ্ট করবে-বলে মনে করছে ডিএসই।
এমএএস/এমআইএইচএস/এএসএম