সিআইপি হলেন ৪৪ ব্যক্তি
বেসরকারি খাতে শিল্প স্থাপন, পণ্য উৎপাদন, কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও জাতীয় আয় বৃদ্ধিসহ দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখার স্বীকৃতিস্বরূপ বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে ৪৪ জনকে বাণিজ্যিক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি (সিআইপি) সম্মাননা দিয়েছে সরকার। সিআইপি (শিল্প) নীতিমালা-২০১৪ অনুযায়ী ২০২১ সালের অবদানের জন্য তাদের সিআইপি সম্মাননা দিয়েছে শিল্প মন্ত্রণালয়। এরমধ্যে তিনজন রয়েছেন দেশের শীর্ষস্থানীয় শিল্পপ্রতিষ্ঠান প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের।
সোমবার (২২ মে) বিকেলে রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে আনুষ্ঠানিকভাবে এ সম্মাননা তুলে দেওয়া হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন, শিল্প প্রতিমন্ত্রী কামাল আহমেদ মজুমদার, মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুর হোসেন, এফবিসিসিআই সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন শিল্পসচিব জাকিয়া সুলতানা।
এ বছর প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের তিনজন উদ্যোক্তা সিআইপি হয়েছেন। তারা হলেন, বৃহৎ শিল্প (উৎপাদন) ক্যাটাগরিতে প্রাণ ডেইরির চেয়ারম্যান মো. ইলিয়াছ মৃধা ও ডিউরেবল প্লাস্টিকের পরিচালক উজমা চৌধুরী এবং ক্ষুদ্র শিল্প (উৎপাদন) ক্যাটাগরিতে রংপুর ফাউন্ড্রী লিমিটেডের পরিচালক চৌধুরী কামরুজ্জামান।
সিআইপি (শিল্প) ২০২১ হিসেবে নির্বাচিতদের তালিকা-
ক্যাটাগরি এনসিআইডি:
এ ক্যাটাগরিতে সিআইপি হয়েছেন দেশের বিভিন্ন ব্যবসায়ী সংগঠনের ছয় ব্যক্তি। তারা হলেন- এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি শেখ ফজলে ফাহিম, বাংলাদেশ এমপ্লয়ার্স ফেডারেশনের সভাপতি কামরান তানভিরুর রহমান, বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মোহাম্মদ আলী খোকন, ফরেন ইনভেস্টরস চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি রূপালী হক চৌধুরী, বিকেএমইএ সভাপতি এ কে এম সেলিম ওসমান ও বাংলাদেশ চেম্বার অব ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি আনোয়ার উল আলম চৌধুরী।
বৃহৎ শিল্প (উৎপাদন):
এ ক্যাটাগরিতে সিআইপি হওয়া ২০ ব্যক্তির মধ্যে রয়েছেন- স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালসের ব্যবস্থাপনা অংশীদার এরিক এস চৌধুরী, বিএসআরএম স্টিলসের চেয়ারম্যান আলী হুসাইন আকবর আলী, প্রাণ ডেইরির চেয়ারম্যান মো. ইলিয়াছ মৃধা, ডিউরেবল প্লাস্টিকের পরিচালক উজমা চৌধুরী, অলিম্পিক ইন্ডাস্ট্রিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মোবারক আলী, জাবের অ্যান্ড জুবায়ের ফেব্রিক্সের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ আবদুল্লাহ জাবের, এসিআইয়ের এমডি ড. আরিফ দৌলা, পপুলার ফার্মাসিউটিক্যালসের এমডি ডা. মোস্তাফিজুর রহমান, আবদুল মোনেম লিমিটেডের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক এ এস এম মাঈনউদ্দিন মোনেম, ফারিহা নিট টেক্সের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মামুন ভূঁইয়া, স্কয়ার ফুড অ্যান্ড বেভারেজের এমডি অঞ্জন চৌধুরী, হ্যামস গার্মেন্টসের এমডি মো. সফিকুর রহমান, বাদশা টেক্সটাইলসের উদ্যোক্তা পরিচালক কামাল উদ্দিন আহাম্মদ, মীর সিরামিকের পরিচালক মাহরীন নাসির, রানার অটোমোবাইলসের চেয়ারম্যান হাফিজুর রহমান খান, উইনার স্টেইনলেস স্টিল মিলসের চেয়ারম্যান মো. সোহেল রানা, তাসনিয়া ফেব্রিক্সের উদ্যোক্তা পরিচালক আহমেদ আরিফ বিল্লাহ, সোহাগপুর টেক্সটাইল মিলসের চেয়ারম্যান আবদুল হাই সরকার, এনভয় টেক্সটাইলসের চেয়ারম্যান কুতুবউদ্দিন আহমেদ ও কনফিডেন্স পাওয়ার হোল্ডিংসের ভাইস চেয়ারম্যান ইমরান করিম।
বৃহৎ শিল্প (সেবা):
এ ক্যাটাগরিতে সিআইপি হয়েছেন পাঁচজন। তারা হলেন- এসটিএস হোল্ডিংয়ের এমডি খন্দকার মনির উদ্দীন, এসবি টেল এন্টারপ্রাইজের এমডি জাকারিয়া শাহিদ, দ্য সিভিল ইঞ্জিনিয়ার্সের এমডি মো. আতিকুর রহমান, কনকর্ড রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের চেয়ারম্যান এস এম কামাল উদ্দিন ও ইস্টার্ন হাউজিংয়ের চেয়ারম্যান মনজুরুল ইসলাম।
মাঝারি শিল্প (উৎপাদন):
এ ক্যাটাগরিতে সিআইপি হয়েছেন ১০ জন। তারা হলেন- বিশ্বাস পোল্ট্রি অ্যান্ড ফিশ ফিডস লিমিটেডের চেয়ারম্যান মাহবুবুর রহমান, ইনসেপ্টা ভ্যাকসিন লিমিটেডের ভাইস চেয়ারম্যান আক্তার জাহান হাসনিন মুক্তাদির, অকো-টেক্স লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আব্দুস সোবহান, জিন্নাত নিটওয়্যারস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আব্দুল জব্বার, রোমানিয়া ফুল অ্যান্ড বেভারেজ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হুমায়ূন কবির বাবলু, প্রমি অ্যাগ্রো ফুডস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এনামুল হাসান খান, মাসকো পিকাসো লিমিটেড পরিচালক ফাহিমা আক্তার, টর্ক ফ্যাশনস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মুহাম্মদ কামাল উদ্দিন, জিন্নাত অ্যাপারেলস লিমিটেডের চেয়ারম্যান আব্দুল ওয়াহেদ ও সিটাডেল অ্যাপারেলস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাহিদুল ইসলাম।
ক্ষুদ্র শিল্প (উৎপাদন):
এ ক্যাটাগরিতে সিআইপি হওয়া দুজন হলেন- রংপুর ফাউন্ড্রী লিমিটেডের পরিচালক চৌধুরী কামরুজ্জামান ও আরফান অ্যাগ্রো ফুড লিমিটেডের পরিচালক মাহবুব আলম। এছাড়া মাইক্রো শিল্প ক্যাটাগরিতে মাসকো ডেইরি এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী এম এ সবুর সিআইপি মর্যাদা পেয়েছেন।
বাংলাদেশ সরকার তথা শিল্প মন্ত্রণালয় কর্তৃক সিআইপি (শিল্প) সম্মাননা দেওয়ার ফলে এসব উদ্যোক্তা যেমন অনুপ্রাণিত হবেন, তেমনই তাদের সাফল্যে উজ্জীবিত হয়ে দেশে আরও অনেক নতুন উদ্যোক্তা তৈরি হবে। এটি জ্ঞানভিত্তিক শিল্পায়নের লক্ষ্য অর্জনে সহায়তা করবে।
যেসব সুবিধা পাবেন সিআইপিরা:
সিআইপি (শিল্প) হিসেবে নির্বাচিত ব্যক্তিদের শিল্প মন্ত্রণালয় থেকে একটি পরিচয়পত্র দেওয়া হবে। এর মাধ্যমে তারা আগামী এক বছরের জন্য জাতীয় ও সিটি করপোরেশনের অনুষ্ঠানে নাগরিক সংবর্ধনায় দাওয়াত, ব্যবসা সংক্রান্ত কাজে ভ্রমণের সময় বিমান, রেলপথ, সড়ক ও জলপথে সরকারি যানবাহনে আসন সংরক্ষণে অগ্রাধিকার পাবেন। বিমানবন্দরে ভিআইপি লাউঞ্জ ব্যবহারের সুবিধা পাবেন। স্ত্রী, সন্তান ও নিজের চিকিৎসার জন্য সরকারি হাসপাতালে বিশেষ সুবিধা পাবেন। এছাড়া সরকারের শিল্পবিষয়ক নীতিনির্ধারণী কমিটিতে তাদের অন্তর্ভুক্ত করা যাবে।
নীতিমালা অনুযায়ী, জাতীয় শিল্প উন্নয়ন পরিষদ (এনসিআইডি) কোটায় পদাধিকার বলে অনধিক ১০ জন এবং আট ক্যাটাগরিতে অনধিক ৫০ জনকে নির্বাচনের সংস্থান রয়েছে। সিআইপি (শিল্প) ২০২১ নির্বাচনের লক্ষ্যে উন্মুক্ত ক্যাটাগরিতে আবেদন সংগ্রহের নিমিত্ত চারটি জাতীয় দৈনিক পত্রিকায় (দুটি বাংলা এবং দুটি ইংরেজি) বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয় এবং এনসিআইডি কোটায় এনসিআইডি পদাধিকারী ১০ জন সদস্যের আবেদন সংগ্রহের নিমিত্ত সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোকে পত্র দেওয়া হয়।
প্রাথমিক যাচাই-বাছায়ের পর ১২৭ জন আবেদনকারী ও শিল্পপ্রতিষ্ঠানের ঋণ সংক্রান্ত তথ্যের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক, কর সম্পর্কিত তথ্যের জন্য জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বৈদেশিক ক্রেতা-বিক্রেতার সঙ্গে শিল্প বিরোধ সংক্রান্ত তথ্যের জন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, ফৌজদারি অপরাধ সংঘটন সংক্রান্ত তথ্যের জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং শেয়ার সংক্রান্ত তথ্যের জন্য বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনে পত্র পাঠানো হয়।
এনএইচ/এমকেআর/এএসএম