আদানি গ্রুপ
বিদেশি যোগসূত্র থাকার অভিযোগ প্রমাণে ব্যর্থ নিয়ন্ত্রক সংস্থা
ভারতীয় নিয়ন্ত্রক সংস্থা আদানি গ্রুপে বিদেশি কোনো লিংক বা যোগসূত্র থাকার অভিযোগ প্রমাণে ব্যর্থ হয়েছে। অর্থাৎ আদানি গ্রুপে বিদেশি বিনিয়োগে নিয়ম লঙ্ঘন নিয়ে যে সন্দেহ দেখা দিয়েছিল সেটি তদন্ত করতে গিয়ে প্রমাণ করার মতো কিছু পায়নি তদন্তকারীরা। সেজন্য এরকম অভিযোগ তদন্ত করাকে ‘গন্তব্যবিহীন যাত্রা’ বলে উল্লেখ করেছে আদালতের নিযুক্ত একটি প্যানেল। আদানি গ্রুপের বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠার পরিপ্রেক্ষিতে ভারতীয় সুপ্রিম কোর্ট এ প্যানেল গঠন করেছিল।
এদিকে তদন্তে অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ার খবর প্রকাশ হতেই ১৯ মে শুক্রবার লেনদেনের শেষ দিকে ভারতের পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত আদানি গ্রুপের কোম্পানিগুলোর শেয়ারের দাম ১ দশমিক ২ শতাংশ থেকে ৭ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে।
চলতি বছরের গোড়ার দিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক হিন্ডেনবার্গ রিসার্চের প্রতিবেদন প্রকাশের জেরে ভারতের শেয়ারবাজারে আদানি গ্রুপের তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর শেয়ারদরে ব্যাপক পতন ঘটে। দেশটির শীর্ষস্থানীয় ধনকুবের গৌতম আদানির মালিকানাধীন কোম্পানিগুলো তখন ১০ হাজার কোটি মার্কিন ডলারেরও বেশি বাজারমূল্য হারায়। হিন্ডেনবার্গ রিসার্চের প্রতিবেদনে আদানি গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে শেয়ারবাজারে কারসাজি করার অভিযোগ তোলে। তবে আদানি গ্রুপ হিন্ডেনবার্গের তোলা কারসাজির অভিযোগ নাকচ করে দেয়। এ নিয়ে ভারতের ক্ষমতাসীন ও বিরোধী দল রাজনৈতিক বিতর্কে জড়িয়ে পড়ে। তখন বিরোধিদলগুলো আদানি গ্রুপের বিরুদ্ধে সংসদীয় তদন্ত দাবি করে।
আরও পড়ুন>>> ভারতের পতাকায় শরীর ঢেকে দেশ লুট করছেন আদানি
এক পর্যায়ে ভারতীয় সুপ্রিম কোর্ট বাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ বোর্ড অব ইন্ডিয়াকে (সেবি) কিছু অভিযোগ তদন্তের নির্দেশ দেয় এবং আদালতের গঠিত ছয় সদস্যের প্যানেলের কাছে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলে। মার্চ মাসে গঠিত ওই প্যানেলে একজন অবসরপ্রাপ্ত বিচারকসহ অভিজ্ঞ ব্যাংকারদের রাখা হয়।
আদালতের গঠিত প্যানেল এক প্রতিবেদনে বলেছে, সেবির সন্দেহের ভিত্তি হচ্ছে আদানি গ্রুপে বিদেশি সংস্থাগুলোর মালিকানা সংক্রান্ত। সে অনুযায়ী তদন্ত পরিচালিত হয়েছে। তদন্তের লক্ষ্য ছিল, আদানি গ্রুপে একটি ‘অস্বচ্ছ’ কাঠামো রয়েছে। প্যানেল গত ৬ মে প্রতিবেদনটি পেশ করে, যা বার্তা সংস্থা রয়টার্স শুক্রবার দেখেছে৷
প্যানেলের প্রতিবেদনে বলা হয়, আদানি গ্রুপে ১৩টির বেশি বিদেশি কোম্পানির মালিকানা থাকার বিষয়টি স্পষ্ট নয়।
আদালতের গঠিত প্যানেলের দেওয়া প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আদানি গ্রুপ নিয়ে সেবি বিভিন্ন দেশে তদন্ত করেছে। তদন্তর সময় বিভিন্ন ভারতীয় ও বিদেশি সংস্থাগুলোর সঙ্গে কথা বলেছে তারা। তা সত্ত্বেও সেবি তদন্তে অভিযোগ প্রমাণে ব্যর্থ হয়েছে। আদানি গ্রুপে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের মধ্যে কে বিনিয়োগ করেছে তা প্রমাণের চেষ্টা করা একটি কঠিন কাজ হয়ে দাঁড়াতে পারে।
আরও পড়ুন>>> আদানির বিরুদ্ধে জালিয়াতির অভিযোগ ‘ভারতের ওপর আক্রমণ’
প্রতিবেদন মতে, এটা স্পষ্ট যে এ ধরনের তদন্ত একটি বিশাল কর্মযজ্ঞ হতে পারে, কিন্তু সম্ভাবনা বা কার্যকারিতার দিক থেকে এটি একটি গন্তব্যহীন যাত্রাই বৈকি। কারণ চূড়ান্তভাবে উপকৃত মালিককে তো খুঁজে বের করা একটি বিশাল কাজই বটে।
এ ব্যাপারে আদানি গ্রুপের কর্ণধার গৌতম আদানি ও সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ বোর্ড অব ইন্ডিয়ার (সেবি) কাছ থেকে প্রতিক্রিয়া জানতে বার্তা সংস্থা রয়টার্স অনুরোধ জানালেও তারা তাৎক্ষণিকভাবে সাড়া দেয়নি।
আদালত ঘটনা তদন্তে ভারতের পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ বোর্ড অব ইন্ডিয়াকে (সেবি) অতিরিক্ত সময় দিয়েছে। গত বুধবার আদালত তদন্তের জন্য আগামী ১৪ আগস্ট পর্যন্ত বাড়তি সময় মঞ্জুর করেছে। সে অনুযায়ী আদানি গোষ্ঠী সিকিউরিটিজ আইন এবং তথ্য প্রকাশের বাধ্যবাধকতা লঙ্ঘন করেছে কি না সেই তদন্ত সেবিকে অতিরিক্ত এ সময়সীমার মধ্যে শেষ করতে হবে। আদালত প্রথমে ২ মের মধ্যে তদন্তের কাজ শেষ করতে চেয়েছিলেন।
আদানি গ্রুপের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন পক্ষ লেনদেনের নিয়ম ও পাবলিক শেয়ারহোল্ডিংয়ের নিয়ম তথা শেয়ার ধারণের রীতিনীতি লঙ্ঘন এবং শেয়ারের দাম নিয়ে কারসাজি করেছে কি না সেই অভিযোগ তদন্ত করছে।
যখন পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোনো কোম্পানি অন্য পক্ষের সঙ্গে কোনো লেনদেনে জড়িত হয় তখন সেটিকে সংশ্লিষ্ট পক্ষ বা পক্ষগুলোর সঙ্গে লেনদেনের প্রচলিত নিয়মগুলো অনুসরণ করে চলতে হয়। সে সঙ্গে পাবলিক শেয়ারহোল্ডিংয়ের নিয়ম বা তালিকাভুক্ত একটি কোম্পানিতে শেয়ার ধারনের নিয়ম অনুযায়ী পাবলিত তথা সাধারণ শেয়ারহোল্ডারেদর জন্য ন্যূনতম শেয়ার বরাদ্দ রাখার নিয়ম মানতে হয়
যাই হোক, আদানি গ্রুপের ফ্ল্যাগশিপ কোম্পানি আদানি এন্টারপ্রাইজের পাশাপাশি আরও যেসব কোম্পানি রয়েছে সেগুলো হচ্ছে-ভোজ্যতেলের ব্যবসা আদানি উইলমার, আদানি পোর্টস, আদানি গ্রিন এনার্জি, আদানি ট্রান্সমিশন, আদানি টোটাল গ্যাস, আদানি পাওয়ার, ব্রডকাস্টার বা সম্প্রসার মাধ্যম এনডিটিভি এবং সিমেন্ট ইউনিট এসিসি লিমিটেড ও অ্যামবুজা সিমেন্টস।
গত ২৪ জানুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের হিন্ডেনবার্গ রিসার্চ আদানি গ্রুপের বিরুদ্ধে শেয়ারের দামে কারসাজির অভিযোগ তোলার পর থেকে এ পর্যন্ত আদানি গ্রুপের এসব কোম্পানির শেয়ারের দাম ১০ শতাংশ থেকে ৮২ শতাংশ কমেছে।
আরও পড়ুন>>> একদিনে সম্পদ কমলো পাঁচ হাজার কোটি ডলার
রাইট রিসার্চ নামক গবেষণা সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা সোনম শ্রীবাস্তব বলেছেন, আদালতের গঠিত প্যানেল প্রতিবেদন দেওয়ার পর প্রাথমিকভাবে আদানি গ্রুপের কোম্পানিগুলোর শেয়ারের দাম এবং বিনিয়োগকারীদের আস্থা বেড়েছে বটে। তবে চলমান অনিশ্চয়তা এবং বর্ধিত সময়ে সেবির তদন্ত থেকে আরও কোনো কিছু উদ্ঘাটনের সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যায় না। সে ক্ষেত্রে বাজারে আদানি গ্রুপের পারফরম্যান্সে প্রভাব পড়তে পারে।
সেবিকে উদ্ধৃত করে প্যানেল বলেছে, হিন্ডেনবার্গ রিপোর্টের আগে আদানি গ্রুপের শেয়ারগুলোর সংক্ষিপ্ত অবস্থানে উত্থানের প্রবণতা এবং পরে মুনাফা নেওয়ার প্রমাণ রয়েছে।
আইএইচআর/এমআইএইচএস/এএসএম