আদা উঠেছে ৪০০ টাকায়, জিরার দাম কেজিতে বেড়েছে ৩০০
তেল ও চিনির দাম গত কয়েক মাসে দফায় দফায় বেড়ে রেকর্ড ছুঁয়েছে। কমছে না সবজি, মাছ-মাংস কিংবা মসলার দামও। বিভিন্ন পদের মসলা ও মাছের অতিরিক্ত দামে এরই মধ্যে নাজেহাল সাধারণত ক্রেতারা। বিশেষত আদা ও জিরার দাম বেড়েছে অস্বাভাবিক মাত্রায়। শুক্রবার (১৯ মে) সকালে রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, পেঁয়াজ, আদা ও রসুনের মতো নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম গত সপ্তাহের চেয়েও বেড়েছে। সাধ্যের মধ্যে মিলছে না মাছ।
বাজার বিশ্লেষণে দেখা গেছে, মাত্র একদিনের ব্যবধানে বাজারে প্রতি কেজি পেঁয়াজের দাম ১০ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকায়। ৩০০ টাকা কেজির কমে মিলছে না আদা। চীন থেকে আমদানি করা ভালোমানের আদার দাম উঠেছে কেজিপ্রতি ৪০০ টাকায়। অথচ মাত্র কয়েক সপ্তাহ আগেই এ পেঁয়াজ ও আদার দাম ছিল বর্তমান দামের অর্ধেক। রমজানের ঈদের আগে বাজারে প্রতি কেজি পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৩৫ টাকায় এবং আদা ১৮০ টাকায়। অন্যদিকে এসময়ের ব্যবধানে আমদানি করা রসুনের দাম কেজিপ্রতি ৪০ টাকা বেড়ে এখন বিক্রি হচ্ছে ১৬০ টাকায়।
আরও পড়ুন: পেঁয়াজের দাম না কমলে ভারত থেকে আমদানি করা হবে
মসলার বাজারে কাঁচামরিচের দামও এখন আকাশছোঁয়া। বাজারে কাঁচামরিচের কেজি এখন ২০০ থেকে ২২০ টাকা। কয়েকদিনের ব্যবধানে জিরার দাম কেজিপ্রতি ৩০০ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৮০০ থেকে ৯০০ টাকায়।
বিক্রেতারা এসব পণ্যের দাম বৃদ্ধির কারণ হিসেবে আমদানি বন্ধ ও নানা ধরনের সংকটের কথা বললেও ক্রেতারা তা মেনে নিতে নারাজ। ক্রেতারা বলছেন, মাছ-মাংস, মসলা ও শাক-সবজিসহ প্রায় সব ধরনের নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের চড়া দামে দারুণ বিপাকে সাধারণ মানুষ। বিশেষত নিম্ন ও মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষ বেশি বেকায়দায় পড়েছেন। সংসার চালাতে তাদের হিমশিম খেতে হচ্ছে। আমদানি বন্ধের অজুহাতে বাজার সিন্ডিকেট ইচ্ছামতো পণ্যের দাম বাড়াচ্ছে।
আরও পড়ুন: তেল-চিনির বেশি দাম নেওয়া ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থার নির্দেশ
সকালে রামপুরা কাঁচাবাজারে নিত্যপণ্য কিনতে আসা আহসানুল হক নামের ওষুধ কোম্পানির একজন বিক্রয় কর্মকর্তা জাগো নিউজকে বলেন, এখন বাজারে যে পণ্যের চাহিদা তৈরি হয়, তা আগে থেকেই সিন্ডিকেট করেন এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী। সামনে কোরবানির ঈদ, সেজন্য এখন মসলা ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে দাম বাড়াতে শুরু করেছেন। তা না হলে দেখতে দেখতে মসলার দাম দ্বিগুণ হয়ে যায় কী করে?
আরও পড়ুন: এক মাসের ব্যবধানে পেঁয়াজের দাম দ্বিগুণ
তিনি মনে করেন, সরকারের এ বিষয়গুলো নিয়ন্ত্রণে উদাসীনতা রয়েছে। তারা দেখেও দেখে না। বরং কিছু ক্ষেত্রে ব্যবসায়ীদের আরও বেপরোয়া হতে উৎসাহ জোগানো হয়।
সবজির বাজার ঘুরে দেখা গেছে, সপ্তাহের ব্যবধানে কোনো সবজির দাম কমেনি। বরং এ বছর চড়া দামের সবজির তালিকায় যোগ হয়েছে সচরাচর স্থিতিশীল থাকা আলুও। এখন অন্য যে কোনো সময়ের চেয়ে বাড়তি দামে আলু কিনতে হচ্ছে ক্রেতাদের।
বাজারে আলুর দাম আরও বেড়ে এখন প্রতি কেজি ৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। যা গত দুদিন আগেও ছিল ৩৫ টাকা। রোজার ঈদের পর থেকেই ধীরে ধীরে আলুর দাম বাড়তে শুরু করে। তখন এ পণ্যটির দাম ছিল প্রতি কেজি ২৫ টাকা। অর্থাৎ এক মাসেরও কম সময়ের ব্যবধানে আলুর দাম কেজিপ্রতি বেড়েছে ১৫ টাকা।
আরও পড়ুনর: বছরের ব্যবধানে আদার দাম বেড়েছে তিনগুণ
শুধু আলু নয়, বাজারে অস্থিতিশীল হয়ে ওঠেছে পেঁপের দামও। সারাবছর এ সবজিটি ৩০ থেকে ৪০ টাকা কেজি দরে কেনা গেলেও এখন বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৭০ টাকায়। গত কয়েক সপ্তাহ ধরে বাজারে অন্যান্য সবজিও প্রতি কেজি ৬০ টাকার ওপরে বিক্রি হচ্ছে।
আলুর দাম বাড়ার বিষয়টি উঠে এসেছে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্যেও। সংস্থাটি বলছে, বাজারে গত এক মাসের ব্যবধানে আলুর দাম ২৯ শতাংশ বেড়েছে। আর বছরের ব্যবধানে দাম বেড়েছে প্রায় ৭৪ শতাংশ। গত বছর এসময়ে প্রতি কেজি আলুর দাম ছিল ১৮ থেকে ২৫ টাকা। যা এখন ৩৫ থেকে ৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
আরও পড়ুন: কেজিতে আদার দাম বেড়েছে ১৮০ টাকা
সবজির পাশাপাশি উত্তাপ ছড়াচ্ছে মাছের বাজারও। হুট করে সব ধরনের মাছের দাম কেজিপ্রতি ৩০ থেকে ২০০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। ৬০০ টাকা কেজির কমে কেনা যাচ্ছে না টেংরা, কই, শিং ও চিংড়ি মাছ। চাষের রুই-কাতলা বিক্রি হচ্ছে ৩২০ টাকার বেশি দামে। দুই কেজি বা তারচেয়ে বড় হলে দাম কেজিতে আরও ১০০-২০০ টাকা বেশি গুনতে হচ্ছে। এমনকি ছোট আকারের পাঙাশ-তেলাপিয়া মাছের দামও এখন কেজিপ্রতি ২৪০-২৫০ টাকা। যা স্বাভাবিক সময়ে ২০০ টাকা কেজি বা তারও কমে পাওয়া যেতো।
বাজার ঘুরে দেখা গেছে, মুদি দোকানগুলোতে প্রতি লিটার সয়াবিন তেল ১৯০ টাকা ও চিনি ১৩০-১৪০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। বাজারে এখনো চিনির সংকট কাটেনি। অধিকাংশ দোকানে পাওয়া যাচ্ছে না প্যাকেটজাত চিনি।
এছাড়া ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ২২০ থেকে ২৩০ টাকা কেজি দরে। ফার্মের মুরগির ডিমের দাম বেড়ে হয়েছে ১৫০ টাকা ডজন। গরুর মাংসের দাম রমজানের পর থেকে দুই দফা বেড়ে এখন প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৮০০ টাকায়।
এনএইচ/এমকেআর/এমএস