ঘোষিত মূল্যের চেয়ে বেশি দামে সিগারেট বিক্রি

৫৬৬০ কোটি টাকার রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার

জাগো নিউজ ডেস্ক
জাগো নিউজ ডেস্ক জাগো নিউজ ডেস্ক
প্রকাশিত: ১২:৪৪ পিএম, ১২ মে ২০২৩

বর্তমান কর কাঠামো অনুযায়ী চারটি স্তরের সিগারেট বিক্রি হয়ে থাকে, তার প্রতিটির জন্য একটি ন্যূনতম ঘোষিত খুচরা মূল্য নির্ধারণ করা আছে। ঘোষিত মূল্য অনুযায়ী প্রতি শলাকা বা প্রতি প্যাকেট সিগারেট যত দামে বিক্রি হওয়ার কথা, বিক্রি হচ্ছে তার চেয়ে বেশি দামে। যদিও সিগারেট কোম্পানিগুলো ঘোষিত মূল্যের ওপরই সরকারকে কর পরিশোধ করছে, যার ফলশ্রুতিতে সিগারেট সেবনকারীরা বাড়তি দামে সিগারেট কিনলেও সরকার এই বাড়তি ব্যয়ের ওপর কোনো রাজস্ব পাচ্ছে না।

বৃহস্পতিবার (১১ মে) ঢাকায় বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান উন্নয়ন সমন্বয়ের আয়োজনে ‘রাজস্ব আয় সিগারেটের ঘোষিত মূল্য ও বাজার মূল্যের পার্থক্যের প্রভাব’ শীর্ষক ভার্চুয়াল মতবিনিময় সভায়, উন্নয়ন সমন্বয় কর্তৃক ক্ষুদ্র পরিসরে পরিচালিত বাজার গবেষণার ফলাফল পর্যালোচনায় এসব তথ্য উঠে এসেছে।

ভার্চুয়াল আলোচনায় প্যানেলিস্ট হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) সিনিয়র রিসার্চ ফেলো ড. এস. এম. জুলফিকার আলী, সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম, একাত্তর টিভির চিফ বিজনেস রিপোর্টার সুশান্ত কে. সিনহা।

jagonews24

আলোচনায় বাজার গবেষণার ফলাফল উপস্থাপন করেন উন্নয়ন সমন্বয়ের লিড ইকোনোমিস্ট রবার্ট শুভ্র গুদা। তিনি বলেন, ‘সিগারেটের প্যাকেটে উল্লিখিত মূল্যের তুলনায় বাজারে বেশি দামে বিক্রি হওয়াতে সরকার প্রায় পাঁচ হাজার ৬৬০ কোটি টাকার রাজস্ব হারাচ্ছে। আমরা মূলত ঢাকা, রাজশাহী এবং সিরাজগঞ্জের পৌরসভা এলাকার সিগারেট বিক্রেতাদের কাছ থেকে তথ্য সংগ্রহ করেছি।’

জরিপের ফলাফল তুলে ধরতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘নিম্নস্তরের সিগারেটের ক্ষেত্রে ২০ শলাকার প্যাকেট নির্ধারিত মূল্যের থেকে গড়ে প্রায় ১১ টাকা, মধ্যমস্তরের সিগারেটের ক্ষেত্রে প্রায় সাড়ে ১৫ টাকা এবং উচ্চস্তরের সিগারেট প্যাকেটের ক্ষেত্রে গড়ে সাড়ে ১০ টাকা বেশি দাম নেওয়া হয়ে থাকে। তবে নির্ধারিত মূল্যের সঙ্গে বিক্রিত মূল্যের সবচেয়ে বেশি পার্থক্য দেখা যায় প্রিমিয়াম স্তরের সিগারেটের ক্ষেত্রে, যেখানে প্যাকেট প্রতি বিক্রিত মূল্য নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে প্রায় ২৪ টাকা বেশি। দামের এমন পার্থক্যের কারণে সরকার তার প্রাপ্য রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।’

আরও পড়ুন>সিগারেট পেপার আমদানি নিয়ন্ত্রণে মন্ত্রণালয়ের দ্বারস্থ এনবিআর

ক্ষুদ্র পরিসরের জরিপ থেকে প্রাপ্ত তথ্যের বিশ্লেষণের ওপর ভিত্তি করে কর নীতির জন্য কিছু বিষয় সুপারিশ করা হয়। এগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে- বাজারের অবস্থা বিবেচনা করে, ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জন্য ঘোষিত খুচরা মূল্য চলমান বাজারমূল্য থেকে বেশি নির্ধারণ করা, নিম্ন ও মধ্যমস্তরের সিগারেটে ভিন্ন ভিন্ন দামের ব্র্যান্ডগুলো একই মূল্যে নিয়ে আসা এবং সিগারেটের ক্ষেত্রে চার স্তরের পরিবর্তে দুই স্তরের কর কাঠামো করা। এর ফলে জনগণকে ধূমপানে নিরুৎসাহিত করার পাশাপাশি সরকারেরও তামাকপণ্য থেকে প্রত্যাশিত রাজস্ব আয় নিশ্চিত করা সম্ভব।

jagonews24

সভার প্যানেলিস্ট ড. গোলাম মোয়াজ্জেম উন্নয়ন সমন্বয় এবং অন্যান্য তামাকবিরোধী আন্দোলনের সঙ্গে জড়িত সংগঠনের প্রশংসা করেন এবং তামাকপণ্যে করারোপের পাশাপাশি এই পণ্যে ভোগ কমাতে উৎপাদন এবং বিপর্যয় নতুনভাবে চিন্তা করতে হবে।

আলোচনায় মোস্তাফিজুর রহমান (লিড পলিসি অ্যাডভাইজার, সিটিএফকে) বলেন, ‘নিম্নস্তরের সিগারেটের বিক্রয়মূল্য বাড়ছে নিম্ন আয়ের মানুষের ওপর ব্যয়ের চাপ বাড়বে এবং তামাক পণ্যের ভোগ কমবে।’

সুশান্ত সিনহা বলেন, সকল প্রস্তাবনাই যেন আইনকে আরও শক্তিশালী করে সে ব্যাপারে খেয়াল রাখতে হবে। ন্যূনতম খুচরামূল্যের চেয়ে বাড়তি দামে বিক্রি করলে তার ওপর অবশ্যই ভ্যাট, ট্যাক্স পরিশোধ করতে হবে এবং এ বিষয়ে কর আইনকে শক্তিশালী করতে হবে।

jagonews24

বিআইডিএসের সিনিয়র ফেলো ড. এস. এম. জুলফিকার আলী তার বক্তব্যে বলেন, ‘এটি একটি সম্মিলিত যুদ্ধ, করের মতো একটি মাত্র ইনস্ট্রুমেন্ট দিয়ে তামাক জাতীয় পণ্যের বিক্রি বা সেবন বন্ধ হবে না। সিগারেট বা যে কোনো তামাকজাত পণ্য নেশাজাতীয়দ্রব্য যার প্রাইস ইলাস্টিসিটি কম, যে কারণে এটির দাম বাড়াতে হলে অনেক বেশি বাড়াতে হবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘তামাকজাতীয় পণ্যের দাম যথেষ্ট পরিমাণে বাড়ালে সেটি স্বল্পমেয়াদে এনবিআরের রাজস্ব আয়ে খুব একটি প্রভাব বিস্তার করবে না।’

উন্মুক্ত আলোচনায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যুরো অব ইকোনমিক রিসার্চ, ঢাকা আহসানিয়া মিশন এবং ওয়ার্ক ফর বেটার বাংলাদেশের প্রতিনিধিরা মতামত ব্যক্ত করেন। এ ছাড়াও সাংবাদিকসহ তামাকবিরোধী বিভিন্ন সংগঠনের প্রতিনিধিরা অংশ নেন।

এসএনআর/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।