নিম্নবিত্তের নাগালের বাইরে সবজির দাম, মুলার কেজিও ৮০
বাজারে এখন সবচেয়ে কম দামের সবজি আলু। কয়েক সপ্তাহের ব্যবধানে আলুর দামও কেজিতে ১০ টাকা বেড়েছে। এক কেজি আলু কিনতে ক্রেতাকে গুনতে হচ্ছে ৩৫ টাকা। আলু ছাড়া বাজারে কেজিপ্রতি ৬০ টাকার নিচে কোনো সবজিই মিলছে না। সহজলভ্য বলে পরিচিত কাঁচা পেঁপের কেজিও ৮০ টাকা ছুঁয়েছে, যা নিম্নআয়ের ক্রেতার জন্য অস্বাভাবিক দাম। এক কথায়- সাধারণ ক্রেতাদের জন্য সবজির বাজার এখন দারুণ অস্বস্তির।
সবজির এমন দাম বাড়ার প্রবণতা চলছে বেশ কয়েকমাস ধরেই। খোদ বিক্রেতারা বলছেন, এত দীর্ঘসময় সব ধরনের সবজির এমন চড়া দাম আগে কখনোই ছিল না। এ বছর রেকর্ড দামে বিক্রি হচ্ছে সবজি। মঙ্গলবার (৯ মে) রাজধানীর সিপাহীবাগ, রামপুরা, তালতলা ও বাড্ডা এলাকার কয়েকটি কাঁচাবাজার ঘুরে ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে এমন তথ্য জানা গেছে।
বিক্রেতারা জানান, গত দু-তিনদিনের ব্যবধানে সবজির দাম আরেক দফা বেড়েছে। তাতে এখন বাজারে প্রতি কেজি বেগুন, পটল, মুলা বিক্রি হচ্ছে ৬০-৮০ টাকা। ঝিঙে, ধুন্দল, করলা, কাকরোল, বরবটি, চিচিংগা ৮০-১০০ টাকা এবং সজিনা ১২০-১৪০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
এক কেজি ধনে পাতার দাম উঠেছে ৩০০ টাকা পর্যন্ত। বাজারে বিক্রেতারা আগে ১০ টাকায় এক মুঠো ধনে পাতা দিতেন, যা এখন নেওয়া হচ্ছে ২০ টাকা। অন্যদিকে কাঁচামরিচের কেজি বিক্রি হচ্ছে ২০০ টাকা, যা গত সপ্তাহেও প্রায় কেজিপ্রতি ৬০ টাকা কম ছিল।
আরও পড়ুন>> সবজিসহ ৮ পণ্যে বড় অস্বস্তি
এদিকে, শাক-সবজির এমন চড়া দামে চরম বিপাকে পড়েছেন ক্রেতারা। বেশি বেকায়দায় পড়েছেন নিম্ন ও মধ্যবিত্ত শ্রেণির লোকজন। বাধ্য হয়ে তারা সবজি খাওয়া কমিয়ে দিচ্ছেন। তাতে চাপ পড়ছে পরিবারের পুষ্টির জোগানে, যা উদ্বেগজনক।
রাজধানীর সিপাহীবাগের রিয়াজবাগ এলাকায় দরিদ্র মানুষের বসবাস বেশি। এ এলাকার বাসিন্দা পরিচ্ছন্নতাকর্মী শখেন দাস। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমরা গরিব মানুষ। এত টাকা দিয়া সবজি কিনমু কেমনে? যা বেতন পাই, তার সবই যায় ঘরভাড়া দিতে। এরপর চাল, ডাল তেলের দাম সাধ্যের বাইরে। আমাগোর টিকে থাকাই মুশকিল।’
বাজারে এসে কিছু নিত্যপণ্য কেনার পর তার কাছে আর ৫০ টাকা অবশিষ্ট আছে বলে জানান। যা দিয়ে কিছু শাক-সবজি কিনতে চেয়েছিলেন। কিন্তু বাজার ঘুরে সস্তায় কোনো সবজি কিনতে পারেননি তিনি।
আরও পড়ুন>> লিটারে ১২ টাকা বেড়ে সয়াবিনের দাম হলো ১৯৯
শখেন দাস আরও বলেন, ‘ভাবছি পেঁপে কিনমু। তার দামও ৬০ টাকা চাচ্ছেন বিক্রেতারা। লাউয়ের দাম আরও বেশি। সবজির এত বেশি দাম আগে দেখিনি। কী খেয়ে বাঁচমু আমরা?’
ওই বাজারের সবজি ব্যবসায়ীরা বলছেন, সবজির দাম মাঝেমধ্যেই ওঠা-নামা করে। এবার শীতের শুরু থেকেই সবজির সরবরাহ তুলনামূলক কম, দাম খুব চড়া। এরপর গরমেও সবজির দাম কমেনি, আরও বেড়েছে। এত দীর্ঘসময় সবজির চড়া দাম আগে কখনো দেখা যায়নি।
সবজি বিক্রেতা ওয়াজেদ মিয়া জাগো নিউজকে বলেন, ‘বিক্রেতারা সবজির দাম বেশি রাখছেন- ব্যাপারটা এমন নয়। আড়ত থেকেই বেশি দামে সবজি কিনতে হচ্ছে। তাই বিক্রিও করতে হচ্ছে বেশি দামে।’
তিনি বলেন, ‘এখন কারওয়ান বাজারে ভোরে সবজি নিয়ে টানাটানি লাগে। চাহিদার তুলনায় সরবরাহ থাকে অর্ধেক। সকালে গেলে সবজি মেলে না। আগে সকাল ৭-৮টায়ও সবজি ভরা থাকতো। এখন ভোর ৫টার পরে আর সবজি থাকে না।’
আরও পড়ুন>> চিনির দামে রেকর্ড, কেজি ১৪০ টাকা
ব্যবসায়ীদের এমন কথার সঙ্গে একমত নন ক্রেতারা। তারা বলছেন, বিভিন্ন অজুহাতে নিত্যপণ্যের দাম বাড়িয়ে দিচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। এখনো তাই করছেন তারা। বাজার দেখে মনে হয় না সবজির সরবরাহ কম। কোথাও কোনো সবজির কমতি নেই। তাদের এ অজুহাত বিশ্বাসযোগ্য নয়। বিক্রেতারা ইচ্ছা করেই দাম বাড়িয়ে দিচ্ছেন। প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনো ধরনের উদ্যোগ বা ঠিকমতো বাজার মনিটরিং না করায় বাজারের এমন অবস্থা বলে দাবি তাদের।
রামপুরা বাজারে স্কুলশিক্ষক ফরিদ হোসেন বলেন, বাজারে অজুহাতের শেষ নেই। একটু খারাপ অবস্থা হলেই সেটাকে বিশাল বানিয়ে সিন্ডিকেট করা হয়। এখন সব পণ্যের ব্যবসায়ীরা সেটা করছেন। সবজি ব্যবসায়ীরাও পিছিয়ে নেই। তারাও সিন্ডিকেট করতে শিখে গেছেন।
কারওয়ান বাজারে সবজির আড়তদার খালেকুজ্জামান বলেন, প্রচণ্ড গরমের কারণে সবজির ফলন ও উৎপাদন খরচ বেড়েছে। যে কারণে কম দামে গ্রামগঞ্জের মোকামে সবজি বিক্রি হচ্ছে না। সার ও জ্বালানি তেলের দাম বাড়ায় সেচ খরচসহ অন্যান্য খরচ বেড়েছে। বৃষ্টি না থাকায় ক্ষেতে প্রচুর পানি দিতে হচ্ছে, খরচও বাড়ছে। সেজন্য দাম বেশি।
তিনি আরও বলেন, বাজারে মাছ-মাংসের দাম খুব বেশি হওয়ায় সবজির চাহিদা বেড়েছে। কিন্তু সেই তুলনায় জোগান কম। অন্যদিকে বিভিন্ন পণ্যের দাম বাড়ার একটি বড় প্রভাবও রয়েছে। সব মিলিয়ে এমন অবস্থা।
স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় এখন অন্তত ৩০ শতাংশ সবজির ট্রাক কম আসছে উল্লেখ করে বাংলাদেশ কাঁচামাল আড়ত মালিক সমিতির সভাপতি মো. ইমরান মাস্টার বলেন, ‘সবজির জন্য এখন আবহাওয়া খুব বৈরী। আগে কারওয়ান বাজারে যে পরিমাণ সবজির ট্রাক আসতো, এখন তার ৭০ শতাংশও আসে না। গ্রামগঞ্জের মোকামেই সবজির টান পড়েছে। তাতে দামও বাড়তি। আবার উৎপাদন খরচও বেশি।’
এনএইচ/এএএইচ/জিকেএস