এনবিআরে বিপিসির বকেয়া জেনে ‘অবাক’ আইএমএফ

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৬:০৬ এএম, ২৭ এপ্রিল ২০২৩

দেশের মোট রাজস্বের ৮০ শতাংশের বেশি আদায় করে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। যার মধ্যে পেট্রোলিয়ামজাতীয় পণ্য খাত থেকে আদায় হয় প্রায় ১০ শতাংশ রাজস্ব। রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন বাংলাদেশ তেল, গ্যাস ও খনিজসম্পদ করপোরেশন (পেট্রোবাংলা) ও বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি) থেকে এই রাজস্ব আদায় হয়ে থাকে।

তবে এই দুই প্রতিষ্ঠানের কাছে আয়কর, ভ্যাট ও কাস্টমস বিভাগে বকেয়া রাজস্ব দাঁড়িয়েছে কয়েক হাজার কোটি টাকা। বিপিসির দীর্ঘদিনের বকেয়ার পরিমাণ, বকেয়া আদায়ে এনবিআরের নির্লিপ্ততা জেনে অবাক আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)।

বাংলাদেশকে দেওয়া ৪৭০ কোটি মার্কিন ডলার ঋণসহায়তার শর্ত পূরণের অগ্রগতি নিয়ে আলোচনার জন্য ঢাকায় এসেছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) স্টাফ কনসালটেশন মিশন। আইএমএফের এই মিশনের নেতৃত্বে দিচ্ছেন সংস্থাটির এশিয়া ও প্যাসিফিক বিভাগের প্রধান রাহুল আনন্দ।

আরও পড়ুন: ব্যাংকসহ সব আর্থিক প্রতিষ্ঠানের তথ্য চায় আইএমএফ

বুধবার (২৬ এপ্রিল) রাজধানীর আগারগাঁওয়ে এনবিআর সম্মেলন কক্ষে আয়কর, ভ্যাট ও কাস্টমস বিভাগের সঙ্গে পৃথক বৈঠক করে আইএমএফ প্রতিনিধি দল।

বৈঠক সূত্রে জানা যায়, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান আবু হেনা রহমাতুল মুনিম প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গী হয়ে জাপান থাকায় বৈঠকে অংশ নেননি। তবে বৈঠকে তিন বিভাগের শীর্ষ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

বৈঠকে বিপিসির কাছ থেকে আট হাজার কোটি টাকা না পাওয়ার বিষয় আইএমএফকে জানিয়েছে এনবিআর। বিষয়টি জেনে অবাক হয়েছেন আইএমএফের প্রতিনিধিরা। তারা জানতে চেয়েছেন, বিপিসি টাকা কেন দিচ্ছে না। এখানে মামলা বা অন্য কোনো সমস্যা আছে কি না তাও জানতে চেয়েছে আইএমএফ।

রাজস্ব বোর্ড থেকে আইএমএফ প্রতিনিধি দলকে বলা হয়েছে, বকেয়া আদায়ে কোনো ব্যবস্থা নিলে বাংলাদেশে তেল সরবরাহ বন্ধ হয়ে যাবে।

আরও পড়ুন: রিজার্ভ গণনা ছাড়া আইএমএফের সব শর্ত বাস্তবায়ন জুনে

সরকার তেল বিক্রি করে পাম্প থেকে টাকা নিচ্ছে। সেই টাকা দিয়ে যার কাছ থেকে তেল নিচ্ছে তাকেও বিল দিয়ে দিচ্ছে। সেখানে রাজস্ব দিচ্ছে না কেন? এটা যদি সাধারণ আমদানিকারক হতো তাহলে অনেক আগেই আমদানি বন্ধ হয়ে যেতো। এসব বিষয় উঠে এসেছে বৈঠকে। এ বিষয়ে আইএমএফকে জানানো হয়ে, দেশে যদি তেল না আসে তাহলে দেশ অস্থিতিশীল হয়ে যাবে। জ্বালানি মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিলে তারা গুরুত্ব দেয় না বলেও আইএমএফকে জানিয়েছে এনবিআর।

রাজস্ব বোর্ডের এক কর্মকর্তা বলেন, আমরা মনে করেছি এই বিষয়গুলো আইএমএফের জানা উচিত। আজ আমরা কাস্টমসের বকেয়া ইস্যু প্রথমবারের মতো ওদের সামনে তুললাম। একই সঙ্গে দেখালাম এই টাকা পেলেই আমাদের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হতো।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই কর্মকর্তা জাগো নিউজকে জানান, আমদানি শুল্ক, বিপিসির পরিচালন ব্যয়, কর্মচারীদের বেতন- সবকিছু হিসাব করেই প্রতিষ্ঠানটি তেল বিক্রি করে। বিপিসির ভর্তুকি নিয়ে প্রশ্ন উঠলে বৈঠকে জানানো হয়, যদি ১০০ টাকার তেল বিক্রি করে ৫ টাকা ভর্তুকি আসে তখন তাকে (বিপিসি বা জ্বালানি মন্ত্রণালয়কে) যাচাই করতে হবে এটা আসলে কোন অংশের ভর্তুকি।

আইএমএফের ঋণসহায়তার অর্থ গত জানুয়ারিতে পৌঁছানোর আগে সংস্থাটির পক্ষ থেকে বিভিন্ন শর্ত দেওয়া হয়েছিল এনবিআরকে। সংস্থাটির শর্ত মেনে আগামী অর্থবছরে নিয়মিত শুল্ক-কর আদায়ের অতিরিক্ত ৩০ হাজার কোটি টাকার মতো সংগ্রহ করতে হবে। কমাতে হবে কর ছাড়।

বৈঠকের আলোচনা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এনবিআরের আরেক কর্মকর্তা জানান, আইএমএফের সঙ্গে যা হয়েছে তা তাত্ত্বিক আলোচনা। সংস্থাটি এদেশের কর সংস্কৃতি সম্পর্কে জানে না। মূলত আজকের আলোচনাটা হয়েছে আমাদের পরিবেশ সম্পর্কে ওদের জানানো। দেশের বাইরে থেকে ওরা বিভিন্ন পদক্ষেপ সম্পর্কে জানতে চান। এটা এত সরলরৈখিক না। আমার এখানকার সম্পর্কে বলতে গেলে এখানকার ট্যাক্স কালচার জানতে ও বুঝতে হবে।

আরও পড়ুন: মূল্যস্ফীতি নিয়ে ‘লুকোচুরির’ কারণ জানতে চেয়েছে আইএমএফ

তিনি বলেন, আগামী বছর কী পরিমাণ কর অব্যাহতি হতে পারে তার পরিমাণ জানতে চেয়েছে আইএমএফ। আমরা বলেছি, এটা এখনই বলা সম্ভব নয়। তেল এবং চালের ওপর যে ছাড় দেওয়া হয়েছে তা বছরের শুরুতে আমাদের জানা ছিল না। পণ্যগুলো মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে রাখতে এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সেক্ষেত্রে আগামী বছরে আমি কোন খাতে কত কর অব্যাহতি দেবো, সেটা আগেই বলার সুযোগ নেই।

ভ্যাট বিভাগের সঙ্গে বৈঠকে আইএমএফ প্রতিনিধি দল ইলেকট্রনিক ফিসক্যাল ডিভাইস (ইএফডি) মেশিন, অটোমেশনসহ বিভিন্ন বিষয়ে অগ্রগতি সম্পর্কে জানতে চেয়েছে। এক্ষেত্রে এনবিআরের পক্ষ থেকে জানানো হয়, বিষয়টির প্রবৃদ্ধি ইতিবাচক। অটোমেশনের কাজও দ্রুততার সঙ্গে এগিয়ে নেওয়া হচ্ছে।

আয়কর বিভাগের সঙ্গে বৈঠকে করজাল বাড়ানোর ক্ষেত্রে এনবিআর কীভাবে কাজ করছে তা জানতে চেয়েছে আইএমএফ। সংস্থাটিকে জানানো হয়েছে, কোন খাতে কত কর ছাড় আছে, কোনটি বাদ দেওয়া যেতে পারে, তা নিয়ে কাজ শুরু হয়েছে।

ঋণ অনুমোদনের প্রায় তিন মাস পর ঋণের শর্তের অগ্রগতি নিয়ে আলোচনার জন্য ঢাকায় এসেছে আইএমএফ প্রতিনিধি দল। ২০২৬ সাল পর্যন্ত মোট ৭ কিস্তিতে এই ঋণ বিতরণ করবে আইএমএফ। এই ঋণের প্রথম কিস্তি হিসেবে ৪৭৬ দশমিক ২ মিলিয়ন ডলার গত ৩০ জানুয়ারি ছাড় করা হয়। আগামী নভেম্বরে ছাড় দেওয়া হবে ঋণের দ্বিতীয় কিস্তি। দ্বিতীয় কিস্তির ঋণ পেতে মানতে হবে কিছু শর্ত। একই সঙ্গে আগামী জুনে প্রস্তাবিত ২০২৩-২৪ অর্থবছরের নতুন বাজেটেও কিছু প্রতিশ্রুতি বা শর্ত থাকার কথা রয়েছে। এসব শর্তের অগ্রগতি কতটুকু হলো, তা জানতে আইএমএফের প্রতিনিধি দল বর্তমানে ঢাকায় রয়েছে।

এসএম/কেএসআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।