খাতুনগঞ্জে চিনির বাজার চড়া
টানা ছুটির ফাঁদে পড়ে অনেকটা সুনসান খাতুনগঞ্জ। দেশে ভোগ্যপণ্যের দ্বিতীয় বৃহৎ পাইকারি বাজারটিতে কমেছে ক্রেতা-বিক্রেতার আনাগোনা। তবে বেচাকেনা অব্যাহত আছে চিনি ও পেঁয়াজ-রসুনের। বাজারজুড়ে উত্তাপ ছড়াচ্ছে চিনি। সকালে প্রতিমণ রেডি চিনি বিক্রি হয়েছে চার হাজার ৪২০ টাকায়। রোজার আগে যা ছিল মণপ্রতি চার হাজার টাকারও নিচে।
বৃহস্পতিবার (২০ এপ্রিল) সরেজমিনে খাতুনগঞ্জ ঘুরে এ চিত্র পাওয়া যায়। বর্তমানে সরকারি নির্দেশনা অনুসারে পরিশোধিত খোলা চিনির সর্বোচ্চ খুচরামূল্য কেজিতে ১০৪ টাকা, আর পরিশোধিত প্যাকেটজাত চিনির দাম নির্ধারণ কেজিতে ১০৯ টাকা।
আরও পড়ুন>> দুধ-চিনি-সেমাই-সুগন্ধি চালে গুনতে হবে বাড়তি দাম
এদিন খাতুনগঞ্জের বাজারদর অনুযায়ী, মিলগেটে প্রতি কেজি চিনির দাম পড়ছে ১১৮ টাকা ৪৩ পয়সা। পরিবহন খরচ ও অন্য ব্যয় হিসাব করতে গেলে এক কেজি চিনির ক্রয়মূল্য পড়ছে ১২০ টাকার মতো। অভিযোগ রয়েছে, আমদানিকারক মিলার ও মধ্যস্বত্বভোগী সিন্ডিকেটের কারসাজির কারণে চিনির বাজারে অস্থিরতা তৈরি হয়েছে। তবে রোষানলে পড়ে ব্যবসায়িকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার ভয়ে সংশ্লিষ্টরা মুখ খুলতে রাজি হননি।
খাতুনগঞ্জে চিনি ও পাম অয়েল ব্যবসায় জড়িত এক ডিও ব্যবসায়ী বলেন, ‘খাতুনগঞ্জে গুটিকয়েক ব্যক্তির মাধ্যমে তেল-চিনি বিক্রি হয়। মধ্যস্বত্বভোগী বড় ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট মিলারদের কাছ থেকে আগেভাগে ডিও কিনে নেন। পরে সংকট তৈরি হলে বেশি দামে বাজারে ছাড়েন।’
বর্তমানে সিটি গ্রুপের চিনি নিতেও লম্বা সময়ের সিরিয়াল দিতে হয় বলে জানান এ ব্যবসায়ী। তিনি বলেন, বুধবার রেডি চিনি চার হাজার ৩৬০ টাকায় বিক্রি হলেও বৃহস্পতিবার সকালে তা বেড়ে চার হাজার ৪২০ হয়ে গেছে।’
আরও পড়ুন>> ঈদে সুগন্ধি চালেও বাড়তি খরচ
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরেক ডিও ব্যবসায়ী বলেন, ‘চট্টগ্রামে এস আলম চিনি কিনতে গেলে তাদের নির্ধারিত দুটি ট্রান্সপোর্ট ব্যবহার করতে হয়। যারা এসব ট্রান্সপোর্টের লোকদের ম্যানেজ করতে পারেন তারা আগে সিরিয়াল পান। এখানেও তাদের নির্ধারিত ট্রান্সপোর্ট দুটি বাজারের অন্য ট্রান্সপোর্ট থেকে বাড়তি ভাড়া আদায় করে চিনির ক্রেতাদের কাছ থেকে।’
বুধবার বিকেল ও বৃহস্পতিবার সকালে খাতুনগঞ্জ ঘুরে দেখা যায়, পুরো বাজারে ঈদের প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। বুধবার সরকারি ছুটির কারণে ব্যাংক বন্ধ থাকায় খাতুনগঞ্জের বড় বড় ব্যবসায়ীদের দাপ্তরিক কার্যক্রমও বন্ধ ছিল। খাতুনগঞ্জের পণ্য আনা-নেওয়া, লোড-আনলোড শ্রমিকদেরও কমেছে ব্যস্ততা। অনেকে ঈদের আগেভাগে চলে গেছে দেশের বাড়িতে। অনেকে বৃহস্পতিবার রাতেই নিজ গন্তব্যের বাস ধরার প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছেন।
ঠেলাগাড়ি শ্রমিক আলী হোসেন বলেন, ‘শবে কদরের কারণে অনেক আড়ত বন্ধ। যে কারণে মালামাল কেনাবেচা অনেক কম। এতে আমাদের কাজও কমেছে। খাতুনগঞ্জ চাক্তাইয়ে কাজ করা অনেক শ্রমিক বছরে একবার ঈদে বাড়ি যান। তাদের একটি অংশ মঙ্গলবার রাতেই বাড়িতে চলে গেছেন। কেউ কেউ বুধবার এবং বৃহস্পতিবার রাতে বাড়িতে যাবেন।’
আরও পড়ুন>>> দাম বাড়লো, শুল্ক কমলো: তারপরও চিনির সংকট
বুধবারের একই চিত্র বৃহস্পতিবারও। নির্বাহী আদেশে বৃহস্পতিবার সরকারি ছুটি থাকলেও খাতুনগঞ্জের কিছু ব্যাংকে লেনদেন হয়েছে। কিন্তু পণ্যের তেমন বেচাকেনা নেই। তবে ফোনে বেচাকেনা চলে তেল-চিনির। তাছাড়া বিভিন্ন জেলা ও স্থলবন্দর থেকে পণ্য নিয়ে আসা কিছু ট্রাক থেকে মালামাল ওঠানামা চললেও নেই নিত্যদিনের ব্যস্ততা। ব্যস্ত খাতুনগঞ্জ এদিন কিছুটা নীরব হলেও রসুন-পেঁয়াজের আড়তগুলোতে শেষ মুহূর্তের বেচাবিক্রি চলছে। মধ্য চাক্তাইয়ের বশর অ্যান্ড সন্সের হাজি আবুল বশর জাগো নিউজকে বলেন, গত ১৬ মার্চ থেকে ভারতীয় পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ রয়েছে। দেশীয় কৃষকদের উৎসাহিত করতে আমদানি বন্ধ। এতে দেশের বাজার কিছুটা বাড়লেও তা স্বাভাবিক রয়েছে। বৃহস্পতিবার খাতুনগঞ্জের বাজারে মানভেদে ২৮ থেকে ৩৮ টাকা দরে পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে।
আমদানিকারক ব্যবসায়ী ও চাক্তাই-খাতুনগঞ্জ আড়তদার সাধারণ ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. মহিউদ্দিন জাগো নিউজকে বলেন, শবে কদরের কারণে সরকারি ছুটি থাকায় বুধবার খাতুনগঞ্জের বড় বড় প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ ছিল। বৃহস্পতিবার ব্যাংকে লেনদেন থাকলেও অনেক প্রতিষ্ঠান বন্ধ। বেচাবিক্রিও তেমন নেই। তবে ঈদ সামনে রেখে শেষ মুহূর্তে রসুন-পেঁয়াজের মতো কিছু পচনশীল পণ্য বেচাকেনা হচ্ছে।
তিনি বলেন, খাতুনগঞ্জে হঠাৎ করে চিনির দাম বাড়ছে। অনেক মিলে সরবরাহ বন্ধ। তবে খাতুনগঞ্জের কিছু ব্যবসায়ী এরই মধ্যে পরিশোধিত চিনি আমদানির এলসি খুলেছেন। দুয়েকজনের চিনির চালান বন্দরে পৌঁছেছে। আশা করছি বাজার আবার কমে যাবে।
এমডিআইএইচ/এএসএ/জেআইএম