দুবাইয়ে ৪৫৯ বাংলাদেশির সম্পদ অনুসন্ধান কোন পথে?

সাইফুল হক মিঠু
সাইফুল হক মিঠু সাইফুল হক মিঠু
প্রকাশিত: ০৩:০০ পিএম, ১০ এপ্রিল ২০২৩
দুবাই, সংগৃহীত ছবি

দুবাইয়ে অবস্থানরত ৪৫৯ বাংলাদেশি নাগরিকের সম্পদ ক্রয়ের অভিযোগ তদন্ত করতে গত ১৫ জানুয়ারি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক), বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ), জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ও পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগকে (সিআইডি) ৩০ দিনের মধ্যে তদন্ত করে অগ্রগতি প্রতিবেদন হাইকোর্টে দাখিল করতে বলা হয়। তবে ৩০ দিনের জায়গায় প্রায় তিন মাস পেরিয়ে দুদক জানিয়েছে, অভিযোগ অনুসন্ধানে নেমেছে তারা। অন্য তিনটি সংস্থা এখনো কোনো কাজ শুরু করেনি।

গত বছর আমেরিকার সেন্টার ফর অ্যাডভান্সড ডিফেন্স স্টাডিজ (সি৪এডিসি) তাদের গবেষণা প্রতিবেদনে জানায়, তথ্য গোপন করে ৪৫৯ জন বাংলাদেশি সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাইয়ে মোট ৯৭২টি আবাসন সম্পদের মালিক হয়েছেন। এজন্য তারা খরচ করেছেন প্রায় ৩১৫ মিলিয়ন ডলার। দেশটিতে কমপক্ষে চার থেকে পাঁচজন বাংলাদেশি প্রায় ৪৪ মিলিয়ন ডলারের সম্পত্তির মালিক।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, সম্পদের মধ্যে ৬৪টি দুবাইয়ের অভিজাত এলাকা দুবাই মেরিনা ও ১৯টি পাম জুমেইরাহতে অবস্থিত। যদিও প্রতিবেদনে কারো পরিচয় প্রকাশ করা হয়নি। এ বিষয়ে একটি বাংলা দৈনিকে প্রতিবেদন প্রকাশের পর গত ১৫ জানুয়ারি ওই চার সংস্থাকে তদন্তের আদেশ দেন হাইকোর্ট। এখন সংস্থাগুলো বলছে, আদালতের আদেশের লিখিত কপি না পাওয়ায় তারা তদন্ত শুরু করতে পারেনি।

জানতে চাইলে সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার (ফিন্যান্সিয়াল ক্রাইম) হুমায়ুন কবির জাগো নিউজকে বলেন, দুবাইয়ে ৪৫৯ বাংলাদেশির সম্পত্তির বিষয়ে হাইকোর্টের আদেশের কোনো চিঠি তারা পাননি। চিঠি পেলে নিয়ম অনুযায়ী কাজ করা হবে।

বিএফআইইউ থেকেও জানানো হয় একই ধরনের তথ্য।

হাইকোর্টের আদেশের পর গত ১৭ জানুয়ারি দুদক কমিশনার (তদন্ত) মো. জহুরুল হক গণমাধ্যমকে জানান, আমরা জেনেছি সুপ্রিম কোর্ট আমাদের তদন্ত করতে বলেছেন। আদেশটি এখনো হাতে পাইনি। আদেশ পেলে আমরা অবশ্যই তদন্ত করবো। তদন্ত করে পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে তথ্য-উপাত্ত যাচাই করা হবে। দেশ থেকে অর্থপাচার হয়ে থাকলে আমরা কাউকে ছাড় দেবো না।

সোমবার (১০ এপ্রিল) দুপুরে দুদকের সংশ্লিষ্ট একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জাগো নিউজকে জানিয়েছেন, দুবাইতে ৪৫৯ জন বাংলাদেশি নাগরিকের সম্পদ কেনার অভিযোগ অনুসন্ধানে নেমেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। হাইকোর্টের এ সংক্রান্ত নির্দেশনা অনুসরণ করে সংস্থাটির প্রধান কার্যালয় থেকে অনুসন্ধান বিষয়ে আনুষ্ঠানিক সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে তিন সদস্যের তদন্ত দল গঠন করা হয়েছে।

আরও পড়ুন: গোলাপের মামলায় ব্যারিস্টার সুমনকে জবাব দাখিলের নির্দেশ 

অর্থপাচার প্রতিরোধে দায়িত্বপ্রাপ্ত রাজস্ব বোর্ডের ঊর্ধ্বতন একজন কর্মকর্তা জাগো নিউজকে জানান, চার সংস্থাকে প্রতিবেদন দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এককভাবে তো কাউকে দায়িত্ব দেওয়া হয়নি। হয়তো যৌথ কমিটি করা হয়েছে। এ বিষয়ে খুব একটা জানা নেই।

jagonews24দুবাইয়ের অভিজাত এলাকা, সংগৃহীত ছবি

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, রাজস্ব বোর্ড ট্রেড বেইজড মানি লন্ডারিং-এর তদন্ত করতে পারে। ওভার বা আন্ডার ইনভয়েসিং-এর মাধ্যমে আমদানি-রপ্তানি হিসাব জালিয়াতির মাধ্যমে অর্থপাচার হতে পারে। যেটাকে আমরা ট্রেড বেইজড মানি লন্ডারিং বলি। দুবাইয়ে বাংলাদেশিদের সম্পদ ক্রয়ের ক্ষেত্রে এমন কিছু হয়েছে কি না, সেটা এখনই বলতে পারছি না।

যদিও এর আগে বিভিন্ন সময় দেখা গেছে, হাইকোর্টের আদেশ না পেলেও গণমাধ্যমের সংবাদের ওপর ভিত্তি করে এসব সংস্থা তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। তবে দুবাইয়ের তদন্তের ক্ষেত্রে তাদের মধ্যে কোনো আগ্রহ দেখা যায়নি।

আরও পড়ুন: বেনাপোল ঘিরে জমজমাট হুন্ডি 

এ বিষয়ে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেন, আদালতের নির্দেশনার বাইরে সংস্থাগুলো নিজ উদ্যোগে তদন্ত শুরু করা উচিত ছিল। লিখিত আদেশ না পাওয়ায় তদন্ত শুরু হয়নি, এটি খুবই দুর্বল কারণ।

তিনি বলেন, আদালতের নির্দেশনার পরও সংস্থাগুলোর নির্লিপ্ততা এ বার্তাই দেয় যে, এই ধরনের অপরাধীরা দায়মুক্তির যোগ্য।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ব্যাংকের টাকা ও ঘুসের টাকায় দেশটিতে বাংলাদেশিদের এসব সম্পদ গড়ে উঠেছে। দুবাইয়ে অনেক প্রবাসী শ্রমিকদের আয় সহজেই কিনে নিয়েছেন তারা। এ কারণে দেশটি থেকে বৈধ পথে প্রবাসী আয় আসা কমেছে।

যদিও দুদক সংশ্লিষ্টরা বারবার বলছেন, বিদেশ থেকে অর্থ ফেরত আনার প্রক্রিয়া অত্যন্ত জটিল। এছাড়া অর্থপাচার রোধে দুদকের এখতিয়ারভুক্ত বিষয় খুব কম।

এ প্রসঙ্গে দুদকের ২০২২ সালের বার্ষিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিদেশ থেকে অর্থ ফেরতে দুদক আইন ২০০৪, মানিলন্ডারিং আইন ২০১২ এর বিধান মোতাবেক ২৭টি সম্পৃক্ত অপরাধের মধ্যে দুদক কেবল একটি সম্পৃক্ত অপরাধ ‘ঘুস ও দুর্নীতি’ লব্ধ অর্থের মানিলন্ডারিং তদন্তের জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত।

আরও পড়ুন: রপ্তানির আড়ালে ৩৮২ কোটি টাকা পাচার 

বিভিন্ন গবেষণা বা তথ্য উপাত্ত বিশ্লেষণ করে জানা যায়, বাংলাদেশ থেকে পাচার করা অর্থের ৮০ ভাগ আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের মাধ্যমে সংঘটিত হয়ে থাকে। যার তদন্তের দায়িত্ব সিআইডি ও এনবিআরের উপর ন্যস্ত রয়েছে।

দুদকের মানিলন্ডারিং অনুবিভাগ জানায়, মানিলন্ডারিং সংক্রান্ত এ পর্যন্ত মোট ১১৭টি মামলা হয়েছে। এরমধ্যে ৮৩টি মামলার তদন্ত চলছে। ৩২টি মামলায় চার্জশিট ও দুটি মামলায় ফাইনাল রিপোর্টসহ ৩৪টি মামলার তদন্ত শেষ হয়েছে। তদন্তাধীন ৮৩টি মামলায় গ্রেপ্তার হয়েছেন ১১ আসামি।

এসএম/এমএইচআর/জিকেএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।