করব্যবস্থা সহজ ও ব্যবসাবান্ধব করার সুপারিশ
আগামী অর্থবছরের (২০২৩-২৪) বাজেট সামনে রেখে দেশের করব্যবস্থা আরও সহজ ও ব্যবসাবান্ধব করার সুপারিশ করা হয়েছে। প্রাক-বাজেট আলোচনায় বক্তারা এ সুপারিশ তুলে ধরেন।
আলোচকদের অনেকই বলেন, করব্যবস্থা পুরোপুরি স্বয়ংক্রিয় ও ডিজিটালাইজড করতে হবে। তারা বর্তমান বৈশ্বিক সংকট ও বাংলাদেশে তার প্রভাব এবং এলডিসি থেকে উত্তরণের বিষয়টি বিশেষ গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনায় নিয়ে আগামী অর্থবছরের বাজেট প্রণয়নের পরামর্শ দিয়েছেন।
বুধবার (২ মার্চ) রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে বঙ্গবন্ধু আর্ন্তজাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ‘প্রাক-বাজেট আলোচনা ২০২৩-২৪: বেসরকারি খাতের প্রত্যাশা’ শিরোনামের ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই), দৈনিক সমকাল এবং চ্যানেল টোয়েন্টিফোর যৌথভাবে এ আলোচনার আয়োজন করে।
এতে প্রধান অতিথি ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান। বিশেষ অতিথি ছিলেন পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম। সম্মানিত অতিথি হিসেবে আলোচনায় অংশ নেন এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি সফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন এমপি, বর্তমান সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন এবং এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি ও হা-মীম গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ. কে. আজাদ। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন ঢাকা চেম্বারের সভাপতি ব্যারিস্টার সামীর সাত্তার। সমাপনী বক্তব্য দেন সমকাল সম্পাদক মোজাম্মেল হোসেন।
এসময় সালমান এফ রহমান বলেন, যাদের আয় করযোগ্য, তাদের সবাইকে কর দিতে হবে। ব্যবসায়ী সংগঠনগুলোর উচিত এ কাজে এনবিআরকে সহযোগিতা করা। তিনি মনে করেন, করব্যবস্থা অবশ্যই স্বয়ংক্রিয় হতে হবে এবং অনেক ক্ষেত্রে যৌক্তিকীকরণ করতে হবে। তবে কর অব্যাহতি এবং ছাড় কমিয়ে আনতে হবে। তা না হলে রাজস্ব আয় বাড়ানো যাবে না।
নির্ধারিত বিষয়ের ওপর আলোচনায় প্রাণ গ্রুপের চেয়ারম্যান আহসান খান চৌধুরী বলেন, সামগ্রিক কর ব্যবস্থা সহজ করতে হবে। যৌক্তিক করতে হবে। নতুন কোনো কর আরোপ না করে উদারভাবে চিন্তা করতে হবে। রপ্তানি বহুমুখীকরণ করতে হবে। সব রপ্তানি খাতকে বন্ডেড ওয়্যারহাউজ সুবিধা দিতে হবে।
পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী বলেন, এখন অবশ্যই চ্যালেঞ্জিং সময়। কোভিডের সংকট সরকার সামাল দিয়েছে। বিশ্বে এখন আরেক সংকট চলছে। যুক্তরাষ্ট্রের মতো উন্নত দেশেও ব্যাংক বসে যাচ্ছে। এ কারণে আমাদের আত্মতুষ্টির কোনো সুযোগ নেই। তিনি উল্লেখ করেন, আগামী অর্থবছরে উচ্চাকাঙ্ক্ষি বাজেট করার সুযোগ নেই। আবার বেসরকারি খাতের বিনিয়োগ যাতে বাধাগ্রস্ত না হয়, সেদিকেও খেয়াল রাখতে হবে।
সফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন বলেন, আজকের অনুষ্ঠানে এনবিআরের ঊর্ধ্বতনদের কেউ নেই। এনবিআরকে ব্যবসায়ীদের কথা শুনতে হবে। প্রতিষ্ঠানটির মনোভাবে পরিবর্তন আনতে হবে। বিতর্কের মাধ্যমেই সামনে এগিয়ে যাওয়া যায়। তিনি বিদ্যুৎ ও গ্যাসের নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহ রাখার সুপারিশ করেন।
আরও পড়ুন>> বাজেটে রাজস্ব ব্যবস্থার অটোমেশন চায় বেসরকারি খাত
এফবিসিসিআই সভাপতি বলেন, বর্তমান প্রেক্ষাপটে আগামী বাজেট খুবই গুরুত্বপূর্ণ। রাজস্ব আয় বাড়ানো দরকার, আবার ব্যবসা–বাণিজ্যও চালু রাখা দরকার। তিনি রপ্তানি বৈচিত্র্যকরণের ওপর জোর দেন। ঢাকা ও চট্টগ্রাম থেকে বেশিরভাগ কর আদায় হয় উল্লেখ করে দেশের অন্যান্য এলাকা থেকে কর আদায় বাড়ানোর পরামর্শ দেন। অন্যদিকে ব্যবসার ওপর অগ্রিম আয়করের চাপ কমানোর সুপারিশ করেন।
এ. কে. আজাদ বলেন, গ্যাসের নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহ না থাকলে বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান ঝুঁকিতে পড়বে। তিনি সাম্প্রতিক সময়ে উচ্চহারে গ্যাসের দাম বৃদ্ধির পরিসংখ্যান উল্লেখ করে বলেন, নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস সরবরাহের নিশ্চয়তা দিয়ে দাম বাড়ানো হয়েছিল। উদ্যোক্তারা তাতে রাজি ছিলেন। এখন বিশ্ববাজারে দাম অনেকটা কমে এসেছে। ফলে দেশে দাম সমন্বয় করা উচিত। তিনি রপ্তানি খাতে রিসাইকেল প্রক্রিয়ার উৎপাদন এবং বিদ্যুতের জন্য সোলার প্যানেলের জন্য বাজেটে সহায়তা থাকা উচিত বলে মন্তব্য করেন।
এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান নজিবুর রহমান, সাবেক সদস্য আলমগীর হোসেন, আনোয়ার গ্রুপের এমডি হোসেন খালেদ, ইউনিলিভার বাংলাদেশের সিইও জাভেদ আখতার, সানেমের নির্বাহী পরিচালক অর্থনীতিবিদ ড. সেলিম রায়হান, সিটি ব্যাংকের সিইও মাশরুর আরেফিন, বিটিএমএ সভাপতি মোহাম্মদ আলী খোকন, বিজিএমইএ’র পরিচালক আসিফ আশরাফ, আব্দুল মোনেম লিমিটেডের এমডি মাইনুদ্দিন মোনেম, নোকিয়ার কান্ট্রি হেড আরিফুল ইসলাম, আইসিএবির সাবেক সভাপতি হুমায়ুন কবির, কনফিডেন্স গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান ইমরান করিম এবং শান্তা অ্যাসেট ম্যানেজমেন্টের ভাইস চেয়ারম্যান আরিফ খান প্রমুখ আলোচনায় অংশ নেন।
আইসিসি বাংলাদেশের সভাপতি মাহবুবুর রহমান, ঢাকা চেম্বারের পরিচালনা পর্ষদের সদস্যরা এবং বিভিন্ন খাতের ব্যবসায়ীরা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
এমওএস/ইএ