প্রিমিয়ামের চারগুণ দাবি, প্রতিবন্ধীদের বিমার ভবিষ্যৎ কী?
স্বাস্থ্য ও জীবনঝুঁকির ক্ষতি মোকাবিলায় অটিজম এবং নিউরো-ডেভেলপমেন্টাল প্রতিবন্ধীদের (এনডিডি) জন্য চালু হয়েছে ‘নিউরো-ডেভেলপমেন্টাল প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য বঙ্গবন্ধু সুরক্ষা বিমা’। এরইমধ্যে বিমা পরিকল্পটির পাইলটিং শেষ হয়েছে।
পাইলটিংয়ের এক বছরে এই বিমা পরিকল্পের আওতায় আনা হয় ৫০৪ জনকে। এই বিমার পলিসি ইস্যুর দায়িত্বে থাকা সাধারণ বিমা করপোরেশন জনপ্রতি ৬০০ টাকা হিসেবে মোট প্রিমিয়াম পায় ৩ লাখ ২ হাজার ৪০০ টাকা। এর বিপরীতে বিমা দাবি উত্থাপন হয়েছে ১১ লাখ ১৫ হাজার ৮১ টাকা। অর্থাৎ প্রিমিয়ামের প্রায় চারগুণ বিমা দাবি উত্থাপিত হয়েছে।
এতে এই বিমা পরিকল্পটির ভবিষ্যৎ নিয়ে এক ধরনের শঙ্কা সৃষ্টি হয়েছে। তবে দায়িত্বশীলরা জানিয়েছেন, প্রিমিয়ামের তুলনায় অধিক হারে দাবি উত্থাপিত হলেও বিমা পরিকল্পটি বন্ধ হবে না। পাইলটিংয়ের অভিজ্ঞতার আলোকে পরিমার্জিতভাবে বিমাটি অব্যাহত রাখা হবে।
আরও পড়ুন: পদ্মা সেতু-মেট্রোরেল প্রকল্পের অবৈধ বিমা
এ জন্য একটি টেকনিক্যাল কমিটি গঠন করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের (আইডিআরএ) সদস্যকে (নন লাইফ) সভাপতি এবং পরিচালককে (গবেষণা ও উন্নয়ন) সদস্য সচিব করে এই টেকনিক্যাল কমিটি করা হবে। কমিটিতে বিমা পেশার সর্বোচ্চ ডিগ্রিধারী একচ্যুয়ারি ড. মোহাম্মদ সোহরাব উদ্দীনের সঙ্গে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ, সাধারণ বিমা করপোরেশন, আইডিআরএ’র নন-লাইফ ও উন্নয়ন শাখার সহকারী পরিচালক থাকবেন।
কমিটি এক মাসের মধ্যে পরিকল্পটি চূড়ান্তভাবে বাজারজাত করার জন্য প্রয়োজনীয় সংযোজন, বিয়োজন, পরিমার্জন, পরিবর্তন করে আইডিআএ’র কাছে উপস্থাপন করবে। তারপর আইডিআরএ সংশ্লিষ্ট স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে বিধি-বিধান মোতাবেক পরিকল্পটি বাস্তবায়নের উদ্যোগ গ্রহণ করবে।
আরও পড়ুন: যানবাহনের বিমা ফের বাধ্যতামূলক করার উদ্যোগ
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জনা গেছে, স্বাস্থ্য ও জীবনঝুঁকির ক্ষতি মোকাবিলায় অটিজম ও নিউরো-ডেভেলপমেন্টাল প্রতিবন্ধীদের বিমার আওতায় আনতে ২০১৯ সালের জুলাই মাসে উদ্যোগ নেয় সরকার। এই বিমা পরিকল্পটি পাইলটিং প্রকল্প হিসেবে বাস্তবায়নে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ, আইডিআরএ এবং সাধারণ বীমা করপোরেশনকে দায়িত্ব দেওয়া হয়।
গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে ‘নিউরো-ডেভেলপমেন্টাল প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য বঙ্গবন্ধু সুরাক্ষা বিমা’ নামে চালু করা হয় এই বিমা পরিকল্পটি। রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান সাধারণ বীমা করপোরেশন ও নিউরো-ডেভেলপমেন্টাল প্রতিবন্ধী সুরক্ষা ট্রাস্টের মধ্যে একটি সমঝোতা চুক্তি (এমওইউ) সইয়ের মাধ্যমে যাত্রা শুরু করে বিমা পরিকল্পটি।
আরও পড়ুন: বিমা করার আগে যেসব বিষয় জানা জরুরি
এই বিমার পলিসি ইস্যু সংক্রান্ত যাবতীয় কার্যক্রম পরিচালনার দায়িত্ব দেওয়া হয় রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান সাধারণ বীমা করপোরেশনকে। পাইলটিং মেয়াদকালে এক বছরে ৫০৪ জনকে বিমার আওতায় আনা হয়। জনপ্রতি প্রিমিয়াম নির্ধারণ করা হয় ৬০০ টাকা। এতে সাধারণ বিমা করপোরেশন মোট প্রিমিয়াম পায় ৩ লাখ ২ হাজার ৪০০ টাকা। এর বিপরীতে এনডিডি সুরক্ষা ট্রাস্ট ৩৮ জনের বিমা দাবি বাবদ ১১ লাখ ১৫ হাজার ৮১ টাকার দাবি উত্থাপন করে।
উত্থাপিত বিমা দাবির বিপরীতে সমঝোতা স্মারকের শর্ত অনুযায়ী, মোট প্রিমিয়ামের ১১০ শতাংশ বা ৩ লাখ ৩২ হাজার ৬৪০ টাকা চেক এনডিডি সুরক্ষা ট্রাস্ট বরাবর পাঠায় সাধারণ বীমা করপোরেশন। কারণ সমঝোতা স্মারকের শর্ত অনুযায়ী, কোনো কারণে মোট বিমা দাবির পরিমাণ মোট প্রিমিয়াম আয়ের চেয়ে বেশি হলে বা অতিক্রম করলে সাধারণ বিমা করপোরেশন মোট প্রিমিয়মের ১১০ শতাংশ পর্যন্ত ঝুঁকি গ্রহণ করবে।
সূত্রটি আরও জানিয়েছে, একজন বিমা পলিসি গ্রাহক সর্বোচ্চ ১ লাখ টাকা পর্যন্ত বিমা দাবি করতে পারবে। বিমা পলিসির আওতাধীন সবার চিকিৎসা প্রয়োজন হওয়ায় বিমা দাবির পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে। এসব বিমা পলিসির বিপরীতে আরও দাবি উত্থাপিত হয়েছে। সবকিছু মিলিয়ে সম্প্রতি এই বিমা পলিসিটি নিয়ে আইডিআরএ’র চেয়ারম্যানের সভাপতিত্বে সভা অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভায় বেশ কয়েকটি সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
আরও পড়ুন: অনিয়মে জড়াচ্ছে পদ্মা লাইফ, ঠিকমতো পরিশোধ করছে না বিমা দাবি
এদিকে এনডিডি সুরক্ষা ট্রাস্ট থেকে ৩৮ জনের বিমা দাবি বাবদ ১১ লাখ ১৫ হাজার ৮১ টাকা দাবি উত্থানের বিপরীতে সাধারণ বিমা করপোরেশন শর্তানুযায়ী ৩ লাখ ২ হাজার ৪০০ টাকা পরিশোধন করেছে। বঙ্গবন্ধুর নামে চালু করা বিমাটির গুরুত্ব বিবেচনায় বাকি ৮ লাখ ১২ হাজার ৬৮১ টাকা সাধারণ বীমা করপোরেশন সামাজিক দায়বদ্ধতা ফান্ড থেকে এনডিডি ট্রাস্টকে দেবে। এই ৩৮ জনের অতিরিক্ত বিমা দাবি উত্থাপিত হলে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতায় এনডিডি ট্রাস্ট সে সব বিমা দাবির অর্থ পরিশোধন করবে, বলে সভায় সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
সভায় আইডিআরএ’র চেয়ারম্যান মোহাম্মদ জয়নুল বারী বলেন, নিউরো-ডেভেলপমেন্টাল প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা প্রকৃতপক্ষ অসুস্থ থাকে এবং তাদের স্বাস্থ্য সেবায় একটি পরিবারকে অনেক সময় সর্বস্ব হারাতে হয়। একটি মানবিক উদ্যোগ হিসেবে এই বিমা পরিকল্পটি বাস্তবায়নে সবার অনেক আন্তরিক ও সচেষ্ট থাকতে হবে। সুতরাং এই বিমা পরিকল্পটি বাস্তবায়নে পলিসি এমন হতে হবে সেটি যেমন গ্রাহকের স্বাস্থ্য সংরক্ষণ করবে, তেমনি বিমা কোম্পানির যেন ক্ষতি না হয়।
আরও পড়ুন: টিকে থাকার চ্যালেঞ্জে ডায়মন্ড লাইফ
সাধারণ বীমা করপোরেশনের দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা বলেন, এই বিমা পরিকল্পটির মাধ্যমে সাধারণ বীমা করপোরেশনের কোনো লাভ নেই। বরং লোকসনই বেশি। যে কারণে সাধারণ বীমা করপোরেশন এই বিমা পলিসিটি চালু রাখতে খুব একটা আগ্রহী নয়। তবে যেহেতু বিমা পলিসি বঙ্গবন্ধুর নামে, তাই বিমা পরিকল্পে কিছু সংশোধন করে এটি চালু রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
যোগাযোগ করা হলে সাধারণ বীমা করপোরেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সৈয়দ বেলাল হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নামে এই বিমা পলিসি। এটাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে আমরা করবো। এখন নতুন যে পলিসি হবে, সেটাতে অনেক কিছু চেঞ্জ হবে। পলিসি রিভাইস করার জন্য আইডিআরএ কমিটি করে দিয়েছে। কী ধরনের পরিবর্তন আসবে এখনই বলা যাচ্ছে না।
এমএএস/এসএইচএস/এএসএম