খাতুনগঞ্জ
পাইকারিতেও চিনি-ছোলার বাড়তি দাম, রমজানে থাকবে না ‘সংকট’
# নতুন করে ঋণপত্র খুলেছেন বড় বড় ব্যবসায়ীরা
# রমজানে পণ্যের সংকট হবে না বলছেন ব্যবসায়ীরা
# এবার ভারতীয় ছোলার দাম ও চাহিদা বেশি
রমজান মাসে চিনি, ছোলাসহ কিছু খাদ্যপণ্যের অতিরিক্ত চাহিদা থাকে। এতে বেড়ে যায় দাম। ডলার সংকট, এলসি সমস্যা যোগ হওয়ায় এবার তাতে যোগ হয়েছে আরও বাড়তি চাপ। পণ্যের সরবরাহ নিয়ে চিন্তা কাটছে না। তবে পাইকারিতে দাম বাড়তি থাকলেও রমজানে পণ্যের সংকট হবে না বলে আশা ব্যবসায়ীদের।
দেশে ভোগ্যপণ্যের দ্বিতীয় বৃহৎ পাইকারি বাজার চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জ। এখানকার ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ডলার সংকটের কারণে আমদানি পরবর্তী কিছু ভোগ্যপণ্যের খালাস নিয়ে জটিলতা তৈরি হলেও এখন সরকারি নানান সিদ্ধান্তের কারণে তা কাটতে শুরু করেছে। বড় বড় আমদানিকারকরাও নতুন করে এলসি (ঋণপত্র) খুলেছেন। বিশেষ করে ভোজ্যতেল, চিনি ও ছোলার সংকট হবে না বলে আশা করছেন খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ীরা।
আরও পড়ুন>> রমজানের দুই মাস আগেই বাড়ছে ছোলা-খেজুরসহ নিত্যপণ্যের দাম
রমজানে বেশি চাহিদা থাকে ছোলার। আমদানিকারকদের মতে, বছরে ছোলার চাহিদা প্রায় দুই লাখ থেকে সোয়া দুই লাখ টন। এর মধ্যে রমজানেই কেবল চাহিদা থাকে ৭০ হাজার টনের ওপরে। খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ীরা বলছেন, মানসম্মত ও দেখতে সুন্দর হওয়ায় বাংলাদেশে সব সময় অস্ট্রেলিয়ান ছোলার বেশি চাহিদা থাকলেও এবার চিত্র ভিন্ন। এবার বাংলাদেশে ভারতীয় ছোলার আধিক্য রয়েছে।
মেসার্স তৈয়বিয়া ট্রেডার্স ও তৈয়বিয়া ডাল ক্রাশিং মিলের পরিচালক সোলায়মান বাদশা জাগো নিউজকে বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে ছোলার বুকিং রেট আগের চেয়ে কমেছে। ডলার সংকটের কারণে গত দুই মাস বড় বড় ব্যবসায়ীরা তেমন এলসি দিতে পারেননি। রমজান সামনে রেখে এলসি হলেও ডলারের দাম বেশি থাকায় ছোলাসহ সব ধরনের পণ্যের দাম বাড়ছে।
গত বছরের চেয়ে এবার ছোলার দাম বেশি বলে জানান তিনি।
আরও পড়ুন>> রমজানে অতি বিলাসী বিদেশি ফল আমদানি বন্ধ চায় ভোক্তা অধিকার
চাক্তাই-খাতুনগঞ্জ আড়তদার সাধারণ ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. মহিউদ্দিন জাগো নিউজকে বলেন, অস্ট্রেলিয়ান ছোলার রং সুন্দর ও ঝরঝরে হওয়ায় মানুষের কাছে চাহিদা বেশি থাকে। কিন্তু এবার অস্ট্রেলিয়ার ছোলা উৎপাদন মৌসুমের শেষে বন্যা হওয়ায় উৎপাদিত ছোলার রঙে উজ্জ্বলতা নেই। যে কারণে বাজারে এবার অস্ট্রেলিয়ান ছোলার চাহিদা কিছুটা কম।
‘গত বছর শুধু অস্ট্রেলিয়ান ছোলা পাওয়া যেত। এবার তানজানিয়া ও ভারতীয় ছোলার চাহিদা বেশি। বিশেষত তানজানিয়া থেকে ছোলা আমদানির পর ভারত সর্টিং করে পুনরায় বাংলাদেশে রপ্তানি করছে। সরাসরি তানজানিয়া থেকেও ছোলা আসছে। বর্তমানে অস্ট্রেলিয়ান ছোলার দাম মণপ্রতি ২ হাজার ৮শ টাকা, তানজানিয়ার ছোলা ২ হাজার ৮৫০ টাকা এবং ভারতীয় ছোলা ৩ হাজার ১শ টাকার কিছু কমবেশিতে বিক্রি হচ্ছে।’
আরও পড়ুন>> চিনির দাম আরও চড়া, আদা-রসুন-মরিচও দ্বিগুণ
এই ব্যবসায়ী বলেন, ডলারের দাম গত বছর ছিল ৮৬-৮৭ টাকা। এবার ডলারের দাম ১০৬-১০৭ টাকা। এখন আন্তর্জাতিক বাজারে ছোলার বুকিং রেট কম। কিন্তু আমাদের দেশে দাম বেশি। ডলারের দাম বেশি হওয়ায় স্থানীয় বাজারে এসে দাম বেড়ে যাচ্ছে। শুধু ছোলা নয়, তেল-চিনিসহ সব ধরনের আমদানি করা ভোগ্যপণ্যের দাম বেড়েছে।
তবে রমজানে তেমন সংকট হবে না জানিয়ে তিনি বলেন, এখন ছোলা, তেল, চিনির এলসি হয়েছে। এগুলো স্বাভাবিকভাবে হলে রমজানের শুরুতে বাজারে আসবে। তাই রোজা শুরু হলেও রমজানকেন্দ্রিক পণ্যের কোনো সংকট থাকবে না।
গত বছরের তুলনায় এবার ভোজ্যতেলের দাম কম থাকলেও বেশি রয়েছে চিনির দাম। সরকারি ঘোষণার চেয়েও বাজারে বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে চিনি।
আরও পড়ুন>> রমজানে সুযোগ নিলে শক্ত ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ ডিসিদের
তথ্য অনুযায়ী, দেশে বছরে ২০ লাখ টন ভোজ্যতেলের চাহিদা রয়েছে। যার বেশিরভাগই আমদানিনির্ভর। চাহিদার দুই-তৃতীয়াংশই আসে খোলা। এর মধ্যে রান্নার কাজে সয়াবিন ব্যবহৃত হলেও প্রক্রিয়াজাত খাবার তৈরিতে ব্যবহার করা হয় পাম অয়েল। তাই মোট চাহিদার অর্ধেক আসে পাম অয়েল।
খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ীদের মতে, দেশে বছরে প্রায় ১৮ লাখ টন চিনির চাহিদা থাকে। যার ৯৫ শতাংশের বেশি আমদানি করতে হয়।
খাতুনগঞ্জের বাজারে এস আলম গ্রুপের চিনিই বেশি পাওয়া যায় বলে জানান ব্যবসায়ীরা। সবশেষ বৃহস্পতিবার দুপুরে খাতুনগঞ্জের বাজারে চিনির ডিও মূল্য ছিল ৩৯২০-৩৯৩০ টাকা। তবে রেডি চিনি কিনতে প্রতি মণে আরও ২০-৩০ টাকা বেশি গুনতে হয় পাইকারি খরিদদারদের।
চট্টগ্রামের এস আলম, টিকে গ্রুপের পাশাপাশি সিটি গ্রুপের ভোজ্যতেল পাওয়া যাচ্ছে। বৃহস্পতিবার দুপুরে খাতুনগঞ্জের পাইকারি বাজারে এস আলম গ্রুপের পাম অয়েল চার হাজার ৬২০ থেকে চার হাজার ৬৩০ টাকায়, সিটি গ্রুপের পাম অয়েল চার হাজার ৬৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
আরও পড়ুন>> রমজানে একসঙ্গে পুরো মাসের পণ্য না কেনার অনুরোধ
খাতুনগঞ্জের আর এম এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী আলমগীর পারভেজ জাগো নিউজকে বলেন, গত বছর রমজানের আগে পাম অয়েলের দাম মণপ্রতি ছয় হাজার টাকা পর্যন্ত ছাড়িয়েছিল। কিন্তু এখন ৪ হাজার ৬শ টাকার কাছাকাছি। তবে গত বছর চিনির বাজার ছিল প্রতি মণ ২৬-২৭শ টাকা। এখন বাজারে চিনির দাম ৩ হাজার ৯শ টাকার ওপরে।
তিনি বলেন, ডলার সংকটের কারণে সব ধরনের ভোগ্যপণ্যের দাম বেশি। ডলারের সাময়িক সংকট থাকলেও আমদানি বন্ধ হয়নি। এখন মিল মালিকদের কাছে ভোজ্যতেল রয়েছে। কিন্তু তারা বিক্রি করছেন না। এতে বাজারে দাম বাড়ছে।
ইকবাল হোসেন/এএসএ/এমএস