এডিপি বাস্তবায়ন

এক টাকাও খরচ করেনি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, এগিয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৯:১০ পিএম, ২৬ জানুয়ারি ২০২৩

চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে (জুলাই-ডিসেম্বর) বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) বাস্তবায়নের হার ২৩ দশমিক ৫৩ শতাংশ। গত পাঁচ অর্থবছরের একই সময়ে তুলনায় এটি সবচেয়ে কম। এছাড়া একক মাস হিসেবে ডিসেম্বরেও কমেছে এডিবি বাস্তবায়ন হার। এদিকে, গত ছয় মাসে এডিপির বরাদ্দের এক টাকাও খরচ করতে পারেনি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। তবে বরাদ্দের ৮০ শতাংশ খরচ করে এগিয়ে আছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। এডিপি বাস্তবায়নে ধীরগতির পেছনে সরকারের ব্যয় সাশ্রয়ী নীতিকেই দায়ী করছেন বিশ্লেষকরা।

বৃহস্পতিবার (২৬ জানুয়ারি) বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) প্রকাশিত হালনাগাদ প্রতিবেদনে জানা গেছে এ তথ্য।

আইএমইডির তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ছয় মাসে এডিপি বাস্তবায়ন হয়েছে ৬০ হাজার ২৪৮ কোটি ৭৪ লাখ টাকার। এ বছর এডিপিতে বরাদ্দ ২ লাখ ৫৬ হাজার কোটি টাকা। অর্থাৎ বরাদ্দের তুলনায় বাস্তবায়ন মাত্র ২৩ দশমিক ৫৩ শতাংশ।

আরও পড়ুন: এডিপি বাস্তবায়ন পাঁচ বছরে সব থেকে কম 

গত পাঁচ অর্থবছরের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, ২০২০-২১ অর্থবছরে এডিপি বাস্তবায়ন ছিল সবচেয়ে কম, ২৩ দশমিক ৮৯ শতাংশ। তবে গত ২০২১-২২ অর্থবছরে একটু বেড়ে এডিপি বাস্তবায়ন হয়েছিল ২৪ দশমিক শূন্য ৬ শতাংশ। ২০১৯-২০ অর্থবছরের একই সময়ে বাস্তবায়নের হার ছিল ২৬ দশমিক ৫৯ শতাংশ। সবচেয়ে বেশি বাস্তবায়ন হয়েছিল ২০১৮-১৯ অর্থবছরে। ওই অর্থবছরের আলোচ্য সময়ে ২৭ দশমিক ৪৫ শতাংশ এডিপি বাস্তবায়ন হয়।

এদিকে, একক মাস হিসেবে শুধু ডিসেম্বরে মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলো প্রকল্প বাস্তবায়নে খরচ করেছে ১৩ হাজার ১২৬ কোটি ৬৪ লাখ টাকা। এই এক মাসে বাস্তবায়নের হার ৫ দশমিক ১৩ শতাংশ। এর আগের বছরের ডিসেম্বরে এডিপি বাস্তবায়ন ছিল ৫ দশমিক ৪৫ শতাংশ।

চলতি অর্থবছরে মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলোর মোট প্রকল্প সংখ্যা এক হাজার ৪৯৬টি। এর মধ্যে মূল প্রকল্প এক হাজার ৪৪১টি, উপ-প্রকল্প ৪৬টি এবং উন্নয়ন সহায়তা থোক বরাদ্দ ৯টি। এসব প্রকল্পের মধ্যে কারিগরি সহায়তা প্রকল্প ১০৬টি এবং এক হাজার ২৯৬টি বিনিয়োগ প্রকল্প।

আরও পড়ুন: সার্কের ৫ দেশের সঙ্গে বাণিজ্য ঘাটতি ১২ হাজার ৬৬৬ মিলিয়ন ডলার 

মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলোর তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে এক টাকাও খরচ করতে পারেনি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয়টির আওতায় চলতি অর্থবছরে ১০১ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। এরপর মাত্র শূন্য দশমিক ৫৯ শতাংশ বাস্তবায়ন করে পিছিয়ে আছে অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ। চলতি অর্থবছরে অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগে ৩৬৩ কোটি টাকা বরাদ্দ থাকলেও খরচ করতে পেরেছে মাত্র ২ কোটি ১৬ লাখ টাকা। এছাড়াও মাত্র ২ দশমিক ৪৯ শতাংশ এডিপি বাস্তবায়ন করেছে বাংলাদেশ সরকারি কর্মকমিশন। এরপর ২ দশমিক ৯৯ শতাংশ বা ৪৪ কোটি ৩১ লাখ টাকা এডিবি বাস্তবায়ন করেছে জননিরাপত্তা বিভাগ। যদিও চলতি অর্থবছরে জননিরাপত্তা বিভাগের জন্য বরাদ্দ এক হাজার ৪৮৩ কোটি টাকা।

আলোচ্য সময়ে ১০ শতাংশের কম এডিপি বাস্তবায়ন করা প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে রয়েছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। তারা ৫ দশমিক ৩১ শতাংশ এডিপি বাস্তবায়ন করেছে। ভূমি মন্ত্রণালয় বাস্তবায়ন করেছে ৬ দশমিক শূন্য ৭ শতাংশ বা ৫০ কোটি ২৫ লাখ টাকা। যেখানে তাদের জন্য ৮২৭ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় বাস্তবায়ন করেছে ৫ দশমিক ৫০ শতাংশ। তারা খরচ করেছে ১০১ কোটি ৩৯ লাখ টাকা। চলতি অর্থবছরে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে এক হাজার ৮৪৪ কোটি টাকা। এছাড়াও স্বাস্থ্য খাতের দুই প্রতিষ্ঠানও এডিপি বাস্তবায়নে করেছে ১০ শতাংশের নিচে। ৯ দশমিক ৫৭ শতাংশ বাস্তবায়ন করেছে সুরক্ষা সেবা বিভাগ। স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ বাস্তবায়ন করেছে ৯ দশমিক ৫১ শতাংশ।

চলতি অর্থবছরে সবচেয়ে বেশি প্রায় ৮০ শতাংশ এডিপি বাস্তবায়ন করেছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। এরপর সর্বোচ্চ ৪৪ শতাংশ বাস্তবায়ন করেছে ধর্ম মন্ত্রণালয় ও সেতু বিভাগ। ৪২ শতাংশ বাস্তবায়ন করেছে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়। এছাড়াও আলোচ্য সময়ে ৪০ শতাংশ বাস্তবায়ন করেছে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ।

আরও পড়ুন: জানুয়ারির ২০ দিনে রেমিট্যান্স এসেছে ১৩১ কোটি ডলার 

এদিকে, ব্যয় কম হওয়ার পেছনে চলতি অর্থবছরের শুরু থেকে নেওয়া ব্যয় সাশ্রয়ী নীতিকে দায়ী করছেন অনেকে। ২০২২-২৩ অর্থবছরে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে প্রকল্প বাস্তবায়ন, জরুরি না হলে বিদেশ সফর ও গাড়ি কেনা বন্ধ, আসবাব কেনায় আরও সাশ্রয়ী হওয়াসহ নানা উদ্যোগ নেওয়া হয়। এর প্রতিফলন পড়েছে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) বাস্তবায়নে।

দেশের অর্থনীতিতে চাপের পরিস্থিতিতে সরকার সম্প্রতি প্রকল্পগুলোকে ‘এ’, ‘বি’ ও ‘সি’ শ্রেণিতে ভাগ করেছে। ‘এ’ শ্রেণির প্রকল্পকে সবচেয়ে বেশি অগ্রাধিকার দিয়ে বাস্তবায়ন করা হবে। এর মানে, চলতি এডিপিতে যা বরাদ্দ আছে, তা পুরোটাই খরচ করতে হবে। ‘বি’ শ্রেণিতে থাকা প্রকল্পগুলোর বরাদ্দ (দেশজ উৎসের অর্থ) ২৫ শতাংশ কমানো হয়েছে। ‘সি’ শ্রেণির প্রকল্পকে নামমাত্র বরাদ্দ দিয়ে বাঁচিয়ে রাখা হবে।

পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ‘এ’ শ্রেণিতে ৬৪৬টি প্রকল্প, ‘বি’ শ্রেণিতে ৬৩৬টি এবং ‘সি’ শ্রেণিতে ৮১টি প্রকল্প রাখা হয়েছে। এ ছাড়া ৯টি প্রকল্প কোনো শ্রেণিতে রাখা হয়নি।

আরও পড়ুন: রিজার্ভ থেকে রেকর্ড ৮৫০ কোটি ডলার বিক্রি 

এডিপি বাস্তবায়নের বিষয়ে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, আগে থেকে প্রস্তুতি না নিয়ে বাজেট পাস হওয়ার অপেক্ষায় বসে থাকে বাস্তবায়নকারী সংস্থাগুলো। বাজেট পাসের পর বিভিন্ন পেপারওয়ার্ক, টেন্ডারিং, অনুমোদন- এসব করতেই বছরের অর্ধেক চলে যায়। তারপর দেখা যায় বছরের শেষে তাড়াহুড়ো করে কাজ করে। তখন দেখা যায় কাজের মান খারাপ হয়, থাকে না তদারকি।

এমওএস/কেএসআর/জিকেএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।