ডিসিসিআই
কর্মী ছাঁটাই না করে টিকে থাকাই ব্যবসায়ীদের বড় চ্যালেঞ্জ
কর্মী ছাঁটাই না করে ২০২৩ সালে ব্যবসায়ীদের টিকে থাকা সব থেকে বড় চ্যালেঞ্জ। এমনটি মনে করছে ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই)।
সংগঠনটির সভাপতি ব্যারিস্টার সামির সাত্তার বলেন, পরিবর্তিত অর্থনৈতিক বাস্তবতার পরিপ্রেক্ষিতে মাইক্রোসফট, গুগলের মতো বড় বড় কোম্পানি কর্মী ছাঁটাই করছে। আমি মনে করি আমাদের এখানে কর্মী ছাঁটাই না করে, প্রফিট মার্জিন কমিয়ে হলেও ব্যবসা সচল রাখাই হবে ২০২৩ সালে ব্যবসায়ীদের সব থেকে বড় চাওয়া-পাওয়া।
শনিবার (২১ জানুয়ারি) এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন তিনি। দেশের সমসাময়িক অর্থনীতির সার্বিক পরিস্থিতি এবং ২০২৩ সালে ডিসিসিআই’র কর্ম-পরিকল্পনা তুলে ধরতে এই সংবাদ সম্মেলন করা হয়।
আরও পড়ুন: ‘গ্যাসের দাম বাড়লে পোশাকখাত আরও চাপে পড়বে’
সামির সাত্তার বলেন, খবরের কাগজে দেখলাম মাইক্রোসফটের মতো বড় কোম্পানি বৃহস্পতিবার (১৯ জানুয়ারি) ১০ হাজার কর্মী ছাটাই করেছে। গুগলের মতো বড় কোম্পানি ১২ হাজার কর্মী ছাঁটাই করেছে। এরা কর্মী ছাঁটাই করছে পরিবর্তিত অর্থনৈতিক বাস্তবতার পরিপ্রেক্ষিতে।
‘তারা এতো বড় প্রতিষ্ঠান হয়ে, বিশ্বের লিডিং প্রতিষ্ঠান হয়ে যদি কর্মী ছাঁটাই করে, আমি মনে করি আমাদের এখানে যদি ব্যবসা চালিয়ে যেতে পারি, প্রফিট মার্জিন কমিয়ে হলেও যদি চলমান রাখতে পারি এবং অ্যাম্পলি ছাটাই না করতে পরি, সেটাই হচ্ছে ২০২৩-এর চাওয়া-পাওয়া। সেটাই হবে সাকসেসফুল বিজনেস’ বলেন ডিসিসিআই’র সভাপতি।
ঢাকার ব্যবসায়ীদের বড় সংগঠনের এই সভাপতি আরও বলেন, অর্থনৈতিক বাস্তবতার পরিপ্রেক্ষিতে আমাদের সবাইকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। সেটা শুধু প্রাইভেট সেক্টর না, সরকারি বলেন, বেসরকারি বলেন, সবাইকে অর্থনৈতিক বাস্তবতাকে মাথায় রাখতে হবে।
আরও পড়ুন: সবচেয়ে বেশি দাম বেড়েছে চাল-আটা-ডাল-বেকারি পণ্যের
সামির সাত্তার আরও বলেন, ২০২২ সালে আমরা প্রথমবারের মতো ৫০ বিলিয়ন ডলার রপ্তানি আয় করতে পেরেছি। ২০২৩ সালে রপ্তানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ৬৭ বিলিয়ন ডলার নির্ধারণ করা হয়েছে। বৈশ্বিক সংকটের কারণে আমাদের রপ্তানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন নাও হতে পারে। রপ্তানি আয় বাড়াতে ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন ও ইউএসএ’র পাশাপাশি দক্ষিণ এশিয়া এবং আফ্রিকার বাজারে আমাদের পণ্য নিয়ে যাওয়ার পদক্ষেপ নিতে হবে।
তিনি বলেন, মনিটরি পলিসি (মুদ্রানীতি) ভালো হয়েছে। তবে এটাকে শুধু কাগজে-কলমে রাখলে হবে না। এটাকে কঠোরভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে। খেলাপি ঋণ এখন ১ দশমিক ৩৪ ট্রিলিয়নে (১ লাখ ৩৪ হাজার কোটি টাকা) গিয়ে হিট করেছে। আমার মনে হয় খেলাপি ঋণের ওপর সব থেকে বেশি ফোকাস দেওয়া দরকার।
আরও পড়ুন: ১০ মাসে ইউরোপের বাজারে ১৯.৪০ বিলিয়ন ডলারের পোশাক রপ্তানি
খেলাপি ঋণকে কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে এবং কমিয়ে রাখতে হবে বলে জানান ডিসিসিআই সভাপতি।
তিনি বলেন, মুদ্রানীতি ছয় মাস পর পর হচ্ছে। আমরা চাইবো তিন মাস পর পর পলিসি করা। কারণ মনিটরি পলিসির বাস্তবতা কিন্তু বার বার পরিবর্তন হচ্ছে। প্রতি সপ্তাহে, প্রতি মাসে পরিবর্তন হচ্ছে। সেটাকে অ্যাড্রেস করার জন্য যদি তিন মাস পর পর মুদ্রানীতি হয়, তাহলে তা প্রাইভেট সেক্টরের জন্য সহায়ক হবে।
গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম বাড়ানো নিয়ে সাংবাদিকদের করা এক প্রশ্নে ডিসিসিআই সভাপতি বলেন, গ্যাসের দাম তো বাড়বেই। জ্বালানি সংকট যেভাবে বাড়ছে, তাতে গ্যাসের দাম বাড়বেই। আমরা চাই নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস। দাম বাড়িয়ে শিল্পে যদি নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস পাওয়া যায়, তাহলে সমস্যা নেই।
আরও পড়ুন: ‘ভোক্তা ঋণ বাড়লে অর্থনীতি আরও অস্থির হবে’
আরেক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, গ্যাসের দাম বৃদ্ধির সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়বে বড় ও শিল্পপর্যায়ে। বড় বড় শিল্পগুলোকে ঠিক করতে হবে কীভাবে চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করবে। গ্যাসের দাম বৃদ্ধির প্রভাব শিল্প পণ্যের ওপর পড়বে। গ্যাসের দাম কীভাবে সমন্বয় করবে তা শিল্প মালিকদের ঠিক করতে হবে। তারা কর্মী ছাটাই করে করবে নাকি প্রফিট মার্জিন কমিয়ে আনবে। এটা ব্যবসায়ীদের ঠিক করতে হবে। তবে আমি মনে করি ভালো ব্যবসায়ীরা কর্মী ছাটাই করতে চাইবেন না।
রমজানে পণ্যের দামের লাগাম টেনে ধরার বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, রমজানে পণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে আমাদের প্রস্তাব এলসি মার্জিন কমিয়ে আনা। বাজার মনিটরিং আরেকটি পদক্ষেপ হতে পারে।
এমএএস/জেডএইচ/জেআইএম