‘গ্যাসের দাম বাড়লে পোশাকখাত আরও চাপে পড়বে’
‘একজন কারখানা মালিককে ব্যাংক ঋণ নিয়ে উৎপাদনে যেতে হয়। গ্যাস বা জ্বালানির দাম বাড়লে শ্রমিকের বেতনের ওপর প্রভাব পড়ে। ব্যাংক ঋণের সুদে চাপ পড়ে। এমন ঝুঁকি নিয়ে কে বিনিয়োগ করবে, কে তার মূলধনের নিশ্চয়তা দেবে?’
বাংলাদেশ পোশাক রপ্তানিকারক ও মালিক সমিতির (বিজিএমইএ) সভাপতি ফারুক হাসান গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধি ও প্রভাব নিয়ে জাগো নিউজের কাছে এভাবে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন।
বাংলাদেশের পোশাকখাতের ইতিহাস অনেক চড়াই-উৎরাইয়ের মধ্য দিয়ে আজকের অবস্থানে এসেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আজকের এই অবস্থানে আসতে অনেক কষ্ট করতে হয়েছে। এই কষ্ট মালিক-শ্রমিক উভয়ের। পোশাকখাতের ব্যবসায়ীদের প্রতিনিয়ত বৈশ্বিক প্রতিযোগিতার সঙ্গে লড়াই করতে হয়। এই প্রতিযোগিতা তীব্র হয়েছে করোনা মহামারির শুরু থেকে। মহামারির প্রভাব তো গোটা দুনিয়াজুড়েই। কী ধরনের সংকট মোকাবিলা করতে হয়েছে, তা কেবল আমরাই জানি। হাজার হাজার অর্ডার বাতিল হয়েছে। অনেক প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে গেছে।’
আরও পড়ুন>>বছরের শুরুতেই দেখা দিতে পারে তেল-গ্যাস সংকট
‘এরপর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। অর্ডার বাতিলের হিড়িক পড়ে গেলো। ইউরোপ-আমেরিকা নিয়েই আমাদের ব্যবসা। আর সেখানেই অস্থিরতা। এই যুদ্ধ সেখানে মন্দাভাব আরও বাড়িয়েছে। আর ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বাংলাদেশের মতো দেশগুলো সবচেয়ে বেশি।’
আরও পড়ুন>>গ্যাসের দাম ফের বাড়লো
বিজিএমইএ সভাপতি মনে করেন, ‘সব কিছুর দাম এরই মধ্যে বেড়ে গেছে। জ্বালানির বাজার অস্থির। জ্বালানির দাম বাড়ানোর কারণে আমাদের পরিবহন ব্যয় বেড়ে গেছে। তার মানে ব্যয় বাড়ার কারণে আমরা এমনিতেই প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে আছি। গ্যাসের দাম বাড়লে প্রতিযোগিতায় আরও পিছিয়ে যাবো। উৎপাদন ব্যয় বাড়লে পণ্যের দাম বাড়াতে হবে। বেশি দামে ক্রেতা পণ্য কিনতে চাইবে না, এটিই স্বাভাবিক। এর প্রভাব সর্বত্রই পড়বে।’
আরও পড়ুন>>গ্যাস সংকট-লোডশেডিংয়ে কারখানার উৎপাদনে ধস
‘পোশাকখাতের অনেক কাঁচামাল বাংলাদেশেই তৈরি হয় এখন। গ্যাসের দাম বাড়লে এসব কাঁচামালের দাম বাড়বে। পোশাকখাতের বাইরেও তো কারখানা আছে। তারা চলবে কীভাবে? তার মানে পণ্যের মূল্য বাড়তে বাধ্য। যেমন ডিজেলের দাম বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে পণ্যের ওপর প্রভাব পড়ে। গ্যাসের দাম বাড়ায় পোশাকখাত আরও চাপে পড়বে। রপ্তানির ওপর সরাসরি প্রভাব পড়বে।’
আরও পড়ুন>>দৈনিক গড়ে ১০০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সংকট
তিনি বলেন, ‘একজন কারখানা মালিককে ব্যাংক ঋণ নিয়ে উৎপাদনে যেতে হয়। গ্যাস বা জ্বালানির দাম বাড়লে শ্রমিকের বেতনের ওপর প্রভাব পড়ে। ব্যাংক ঋণের সুদে চাপ পড়ে। এমন ঝুঁকি নিয়ে কে বিনিয়োগ করবে, কে তার মূলধনের নিশ্চয়তা দেবে?’
‘সরকার মূল্যস্ফীতি কমানোর কথা বলছে। আবার জ্বালানির দাম বাড়াচ্ছে। কী করে সম্ভব? গ্যাসের দাম বাড়ার ঘোষণার পর থেকেই পণ্যের দাম বাড়তে শুরু করেছে। গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধি মূল্যস্ফীতি আকাশচুম্বি করবে।’ যোগ করে ফারুক হাসান।
আরও পড়ুন>>পোশাকখাতে অনেক চ্যালেঞ্জ, সুযোগ সীমাহীন
এই ব্যবসায়ী আরও বলেন ‘সব কিছুর মধ্যে একটা সিস্টেম থাকতে হয়। আর আমরা সিস্টেম লস করে এগিয়ে যাওয়ার কথা বলি। ভাবনার সঙ্গে কাজের কোনো মিল থাকে না। গ্যাস-বিদ্যুতের সিস্টেম লস বহু পুরোনো। ব্যক্তিপর্যায় থেকে সরকারের কর্মকর্তা পর্যন্ত এই সিস্টেম লসের সঙ্গে জড়িত।’
‘গ্যাস-বিদ্যুৎ কেমন করে চুরি হয়, কারা অবৈধ লাইন দেয়, কারা এর থেকে সুবিধা পায়, তা সবারই জানা। অথচ কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয় না। মিটার রিডিং চুরি হয় এটিও সবাই জানেন। কোনো ব্যবস্থা নেই। সিস্টেম লসকে জিরোতে আনতে পারলে এভাবে দাম বাড়ানোর দরকার হতো না বলে মনে করি। অবৈধ লাইনে সরকার কোনো রাজস্ব পাচ্ছে না। হাজার হাজার কোটি টাকা লোকসান হচ্ছে।’
আরও পড়ুন>>রপ্তানি আয়ে রেকর্ড, তৈরি পোশাক থেকেই এলো ৮২ শতাংশ
‘সুতরাং আমি মনে করি, যে কোনো বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে বিকল্প ভাবনা গুরুত্ব দিতে হয়। গ্যাসের দাম বাড়ালেই সংকট কেটে যাবে আমি তা মনে করি না। সংকট আরও বাড়তে পারে। আমি সরকারকে এক্ষেত্রে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে পুনরায় বিবেচনা করার অনুরোধ করছি।’
এএসএস/এএসএ/এএসএম