ইউরোপীয় ইউনিয়নে পোশাক রপ্তানি বেড়েছে ১৬.৬১ শতাংশ
চলতি (২০২২-২৩) অর্থবছরের প্রথম ছয়মাসে (জুলাই-ডিসেম্বর) দুই হাজার ৭৩১ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছেন রপ্তানিকারকরা। এটি ২০২১-২২ অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ১০ দশমিক ৫৮ শতাংশ বেশি। চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে ডিসেম্বর সময়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নে বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানি ১৬ দশমিক ৬১ শতাংশ বেড়েছে।
এসময়ে পোশাক রপ্তানি থেকে দেশে এসেছে ১১ দশমিক ৫০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা ২০২১-২২ অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ৯ দশমিক ৮৭ বিলিয়ন ডলার। অর্থাৎ এক বছরের ব্যবধানে ইউরোপীয় ইউনিয়নে পোশাক রপ্তানি বেড়েছে ১ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলার। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) পরিসংখ্যান থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
রপ্তানিকারকরা বলছেন, ইউরোপীয় ইউনিয়নে দেশের প্রধান রপ্তানি বাজার জার্মানি, স্পেন ও ফ্রান্সে রপ্তানি বেড়েছে। এর মধ্যে গত অর্থবছর জার্মানিতে রপ্তানি একই সময়ের তুলনায় ৩ দশমিক ৫৪ শতাংশ বেড়ে ৩ দশমিক ৪৫ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয়মাসে স্পেন ও ফ্রান্সে দেশের রপ্তানি যথাক্রমে ১৭ দশমিক ৬২ শতাংশ এবং ৩৩ দশমিক শূন্য ৮ শতাংশ বেড়েছে।
আরও পড়ুন: ইউরোপে পোশাক রপ্তানি বেড়েছে, কমেছে রাশিয়া-চীনে
ফলে স্পেনে রপ্তানি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ দশমিক ৭০ বিলিয়ন ডলার এবং ফ্রান্সে রপ্তানি ১ দশমিক ৪১ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হয়েছে। অন্যদিকে উল্লেখিত সময়ের মধ্যে পোল্যান্ডে আমাদের রপ্তানি ১৮ দশমিক ৪৩ শতাংশ কমেছে।
এদিকে, যুক্তরাষ্ট্রে দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি ২০২২-২৩ সালের জুলাই থেকে ডিসেম্বর মাসে ৪ দশমিক ২৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে দাঁড়িয়েছে, যার প্রবৃদ্ধি গত বছরের একই সময়ের তুলনায় মাত্র ১ দশমিক ১১ শতাংশ। একই সময়ে যুক্তরাজ্য ও কানাডায় রপ্তানি যথাক্রমে ১১ দশমিক ৮৯ শতাংশ ও ২৮ দশমিক ৪২ শতাংশ বেড়েছে। অর্থাৎ যুক্তরাজ্যে রপ্তানি বেড়ে ২ দশমিক ৩৯ বিলিয়ন ডলার এবং কানাডায় ৭৭৪ দশমিক ১৬ মিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে।
আরও পড়ুন: সাত মাসে ২৪ বিলিয়ন ডলারের পোশাক রপ্তানি
তৈরি পোশাক শিল্প মালিক ও রপ্তানিকারক সমিতি বিজিএমইএর পরিচালক মো. মহিউদ্দিন রুবেল বলেন, ক্যালেন্ডার বছরের তথ্য বিবেচনা করলে দেখা যাবে, ২০২২ সালে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রপ্তানিতে একটি নতুন মাইলফলক রচিত হয়েছে। রপ্তানি বাজারের দিক থেকে প্রধান দেশগুলোতে তৈরি পোশাক রপ্তানিতে ইতিবাচক প্রবৃদ্ধি দেখা গেছে। তবে অর্থবছরের আগের মাসগুলোর তুলনায় পরবর্তীসময়ে প্রবৃদ্ধি কিছুটা কমেছে, যা আগামীতে প্রবৃদ্ধি আরও হ্রাস পেতে পারে বলে ইঙ্গিত দেয়।
তিনি বলেন, অপ্রচলিত বাজারে আমাদের পোশাক রপ্তানি আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ৩২ দশমিক ১৯ শতাংশ বেড়ে ৩ দশমিক শূন্য ৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার থেকে ৪ দশমিক শূন্য ৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে পৌঁছেছে। অপ্রচলিত বাজারের মধ্যে জাপানে রপ্তানি ৪২ দশমিক ৫৪ শতাংশ বেড়ে ৭৫৪ দশমিক ৭২ মিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে। ভারতেও আমাদের রপ্তানি উল্লেখযোগ্যভাবে ৫০ শতাংশ বেড়েছে, যার পরিমাণ ৫৪৮ দশমিক ৮৯ মিলিয়ন ডলার।
আরও পড়ুন: রপ্তানি আয়ে রেকর্ড, তৈরি পোশাক থেকেই এলো ৮২ শতাংশ
এদিকে, ২০২২ সালের নভেম্বরে ৫০৯ কোটি ২৫ লাখ ডলারের বা পাঁচ বিলিয়ন ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়। বছরের শেষ মাস ডিসেম্বরে রপ্তানি আয় হয়েছে ৫৩৬ কোটি ৫১ লাখ ডলার অর্থাৎ ৫ দশমিক ৩৬ বিলিয়ন ডলার, যা দেশের ইতিহাসে একমাসে রপ্তানি আয়ের হিসাবে সর্বোচ্চ।
অন্যদিকে ২০২১ সালের ডিসেম্বরের চেয়ে ৯ দশমিক ৩৩ শতাংশ বেশি। চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয়মাসে দুই হাজার ২৯৯ কোটি ৬৬ লাখ ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি হয়েছে। মোট রপ্তানি আয়ের ৮৪ দশমিক ৮৭ শতাংশ এসেছে এ খাত থেকে। এ আয় গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ১৫ দশমিক ৫৬ শতাংশ বেশি। নিট পোশাকে ১৩ দশমিক ৪২ শতাংশ ও ওভেন পোশাকে ১৮ দশমিক ২৯ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে।
আরও পড়ুন: যুক্তরাষ্ট্রে পোশাক রপ্তানি বেড়েছে ৪৬ শতাংশ
এ প্রসঙ্গে বিজিএমইএর পরিচালক বলেন, বিজিএমইএর বিশ্লেষণ অনুযায়ী- ২০২১ সালের তুলনায় বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রপ্তানি ২০২২ সালে ২৭ দশমিক ৬৪ শতাংশ বেড়েছে। পোশাকশিল্পের এ সাফল্যে সব উদ্যোক্তা, বিজিএমইএর সব সহকর্মী এবং এ শিল্পের সব শ্রমিকদের অভিনন্দন জানাই। একইসঙ্গে এ শিল্পের সব সংকটে সার্বিক সহায়তার জন্য আমি প্রধানমন্ত্রীর প্রতি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।
ইএআর/এএএইচ/জেআইএম