দুই’শ কোটি টাকার নিচে নামলো লেনদেন
দিন যতো যাচ্ছে শেয়ারবাজারে লেনদেন খরা ততো প্রকট হয়ে উঠছে। সোমবার প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) লেনদেন কমে দুই’শ কোটি টাকার নিচে চলে এসেছে। লেনদেন খরার সঙ্গে দেখা দিয়েছে দরপতন। ডিএসই এবং অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) সবকটি মূল্যসূচক কমেছে। সেই সঙ্গে কমেছে লেনদেন অংশ নেওয়া বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার দাম।
শেয়ারবাজারে এমন লেনদেন খরা দেখা দিলেও নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) লেনদেন বাড়াতে সম্প্রতি ১৬৯টি প্রতিষ্ঠানের ফ্লোর প্রাইস (শেয়ারের সর্বনিম্ন দাম) তুলে দিয়েছে। কিন্তু ফ্লোর প্রাইস তুলে দেওয়ার পর লেনদেনের গতি বাড়ার বদলে উল্টো আরও কমেছে। এতে ২০২০ সালের ৭ জুলাইয়ের পর বিনিয়োগকারীদের আবার দুই’শ কোটি টাকার কম লেনদেন দেখতে হলো।
শেয়ারবাজারে ভয়াবহ দরপতন দেখা দিলে চলতি বছরের ২৮ জুলাই প্রতিটি সিকিউরিটিজের ফ্লোর প্রাইস বেঁধে দেয় বিএসইসি। এতে শেয়ারবাজারে দরপতন কিছুটা কমলেও দেখা দেয় লেনদেন খরা। সম্প্রতি লেনদেন খরা আরও প্রকট হয়। এতে ফ্লোর প্রাইসের সমালোচনা করে বিভিন্ন পক্ষ। এমন পরিস্থিতিতে গত বুধবার ১৬৯ প্রতিষ্ঠানের ফ্লোর প্রাইস তুলে দিয়ে একটি নির্দেশনা জারি করা বিএসইসি।
ফ্লোর প্রাইস তুলে দেওয়ার পাশাপাশি এসব প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে নতুন সার্কিট ব্রেকার (দাম বাড়া বা কমার সীমা) চালু করা হয়। নতুন সার্কিট ব্রেকারের নিয়ম অনুযায়ী, ফ্লোর প্রাইস তুলে নেওয়া ১৬৯ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার দাম একদিনে এক শতাংশের বেশি কমতে পারবে না। তবে দাম বাড়ার ক্ষেত্রে স্বাভাবিক সার্কিট ব্রেকারের নিয়ম কার্যকর হবে।
সার্কিট ব্রেকারের এই নিয়মের কারণে ফ্লোর প্রাইস তুলে দেওয়ার পরও ১০ টাকার নিচে থাকা প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম নতুন করে আর কমার সুযোগ নেই। আবার যে ১৬৯ প্রতিষ্ঠানের ফ্লোর প্রাইস তুলে দেওয়া হয়েছে বাজার মূলধনে সম্মিলিতভাবে সেসব প্রতিষ্ঠানের অবদান ৫ শতাংশের মতো। ফলে এসব প্রতিষ্ঠান মূল্যসূচকে খুব একটা প্রভাব রাখে না।
বাজার পর্যালোচনায় দেখা যায়, সোমবার লেনদেন শুরু হয় বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার দাম কমার মাধ্যমে। লেনদেনের পুরো সময়জুড়েই দরপতনের তালিকা বড় থাকে। তবে লেনদেনের শেষ ঘণ্টায় এসে পতনের মাত্রা বেড়ে যায়। এতে দিনের লেনদেন শেষে ডিএসইতে যে কয়টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম বেড়েছে, কমেছে তার পাঁচগুণের বেশি।
এতে দিনের লেনদেন শেষে ডিএসইতে মাত্র ২৫ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার দাম বাড়ার তালিকায় নাম লিখিয়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ১৩৭টির। আর ১৬৭টির দাম অপরবর্তিত রয়েছে। ফলে ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স আগের দিনের তুলনায় ১২ পয়েন্ট কমে ৬ হাজার ১৮৯ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে।
অপর দুই সূচকের মধ্যে বাছাই করা ভালো ৩০টি কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই-৩০ সূচক আগের দিনের তুলনায় ৩ পয়েন্ট কমে ২ হাজার ১৯১ পয়েন্টে অবস্থান করছে। আর ডিএসই শরিয়াহ্ আগের দিনের তুলনায় ৩ পয়েন্ট কমে ১ হাজার ৩৫৪ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে।
সবকটি মূল্যসূচক কমার পাশাপাশি ডিএসইতে কমেছে লেনদেনের পরিমাণ। দিনভর ডিএসইতে লেনদেন হয়েছে ১৯৮ কোটি ৭ লাখ টাকা। আগের দিন লেনদেন হয় ২২৭ কোটি ৭৪ লাখ টাকা। সে হিসেবে লেনদেন কমেছে ২৯ কোটি ৬৭ লাখ টাকা। লেনদেন শুধু আগের কার্যদিবসের তুলনায় কমেনি, ২০২০ সালের ৭ জুলাইয়ের পর ডিএসইতে সর্বনিম্ন লেনদেন হলো। ২০২০ সালের ৭ জুলাই ডিএসইতে ১৩৮ কোটি ৫৬ লাখ টাকার লেনদেন হয়।
লেনদেন খরার বাজারে ডিএসইতে টাকার অঙ্কে সব থেকে বেশি লেনদেন হয়েছে মুন্নু সিরামিকের শেয়ার। কোম্পানিটির ১৭ কোটি ১৫ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছ। দ্বিতীয় স্থানে থাকা ওরিয়ন ইনফিউশনের ১৪ কোটি ৯৯ লাখ টাকার লেনদেন হয়েছে। ১১ কোটি ৬৬ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেনের মাধ্যমে তৃতীয় স্থানে রয়েছে ইন্ট্রাকো রিফুয়েলিং স্টেশন।
এছাড়া ডিএসইতে লেনদেনের দিক থেকে শীর্ষ দশ প্রতিষ্ঠানের তালিকায় রয়েছে- ওরিয়ন ফার্মা, সি পার্ল বিচ রিসোর্ট, বসুন্ধরা পেপার, এডিএন টেলিকম, জেনেক্স ইনফোসিস, অ্যাডভেন্ট ফার্মা এবং মুন্নু এগ্রো।
অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক মূল্যসূচক সিএএসপিআই কমেছে ২৩ পয়েন্ট। বাজারটিতে লেনদেন হয়েছে ২৪ কোটি ১৪ লাখ টাকা। লেনদেন অংশ নেওয়া ১৩৭টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ১৯টির দাম বেড়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ৪১টির এবং ৭৭টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।
এমএএস/এমআরএম/জেআইএম