শেয়ারের দাম বাড়ায় দাপট দেখালো ‘পচা’ জুট স্পিনার্স
টানা পতন থেকে বেরিয়ে গত সপ্তাহে কিছুটা ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতার দেখা পেয়েছে দেশের শেয়ারবাজার। এই বাজারে দাম বাড়ার ক্ষেত্রে দাপট দেখিয়েছে লোকসানে পতিত হয়ে বছরের পর বছর বিনিয়োগকারীদের কোনো ধরনের লভ্যাংশ না দেওয়া জুট স্পিনার্স। এই কোম্পানির শেয়ার এক শ্রেণির বিনিয়োগকারীদের পছন্দের শীর্ষে থাকায় সপ্তাহজুড়েই দাম বেড়েছে। ফলে প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) দাম বাড়ার শীর্ষ স্থানটি দখল করেছে কোম্পানিটি।
গত সপ্তাহজুড়ে জুট স্পিনার্সের শেয়ার দাম বেড়েছে ২২ দশমিক ৩৫ শতাংশ। টাকার অঙ্কে বেড়েছে ৪৪ টাকা ২০ পয়সা। সপ্তাহের শেষ কার্যদিবস শেষে কোম্পানিটির প্রতিটি শেয়ারের দাম দাঁড়িয়েছে ২৪২ টাকা, যা আগের সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে ছিল ১৯৭ টাকা ৮০ পয়সা।
শেয়ারের এমন দাম বাড়া কোম্পানিটির উৎপাদন নানা সমস্যায় পড়ে ২০১৬ সালের জুনে বন্ধ হয়ে যায়। তবে চলতি বছরের ১৫ সেপ্টেম্বর ডিএসই’র মাধ্যমে পরীক্ষামূলক উৎপাদন শুরুর ঘোষণা দেয় জুট স্পিনার্স। এই ঘোষণার পর আড়াই মাস কেটে গেলেও এখনো উৎপাদনে ফিরতে পারেনি কোম্পানিটি।
এদিকে ডিএসইর মাধ্যমে সর্বশেষ প্রকাশিত আর্থিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, কোম্পানিটি চলতি বছরের জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত তিন মাসের ব্যবসায় শেয়ারপ্রতি ১২ টাকা ৪৫ পয়সা লোকসান করেছে। আগের বছরেও একই সময়ে শেয়ারপ্রতি লোকসান হয় ১০ টাকা ৮৩ পয়সা।
তার আগে ২০১৬ সালে শেয়ারপ্রতি লোকসান হয় ৪২ টাকা ১০ পয়সা। এছাড়া ২০১৫ সালে ১৯ টাকা ৬৯ পয়সা, ২০১৪ সালে ৪৩ টাকা ৬৪ পয়সা এবং ২০১৩ সালে ৪৮ টাকা ১৪ পয়সা শেয়ারপ্রতি লোকসান করে এই কোম্পানিটি।
লোকসানে নিমজ্জিত হওয়ায় বছরের পর বছর বিনিয়োগকারীদের কোনো ধরনের লভ্যাংশ দিতে পারেনি কোম্পানিটি। ফলে শেয়ারবাজারে ‘জেড’ গ্রুপ বা পচা কোম্পানির তালিকায় স্থান হয়েছে কোম্পানিটির।
মাত্র ১ কোটি ৭০ লাখ টাকা পরিশোধিত মূলধনের কোম্পানিটির শেয়ার সংখ্যা ১৭ লাখ। এর মধ্যে ৩৯ দশমিক ৮২ শতাংশ আছে উদ্যোক্তা ও পরিচালকদের হাতে। বাকি শেয়ারের মধ্যে ৩৬ দশমিক ৯৮ শতাংশ শেয়ার আছে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে। আর প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের কাছে আছে ২৩ দশমিক ২০ শতাংশ।
সীমিত সংখ্যক শেয়ার হওয়ার কারণে কোনো বিশেষ চক্র এমন লোকসানি কোম্পানিটির শেয়ার দাম বাড়াচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। উৎপাদন বন্ধ হওয়ার আগে জুট স্পিনার্স খুব ভালোভাবে চলেছে তাও নয়। ২০১৬ সালে উৎপাদন বন্ধের আগে ২০১৫, ২০১৪ এবং ২০১৩ সালেও কোম্পানিটি বড় লোকসান করে।
এদিকে শেয়ারের দাম হু হু করে বাড়লেও কোম্পানিটির শেয়ার খুব একটা লেনদেন হয়নি। গত সপ্তাহজুড়ে কোম্পানিটির শেয়ার লেনদেন হয়েছে ২ কোটি ৩৭ লাখ ৪৬ হাজার টাকা। আর প্রতি কার্যদিবসে গড়ে লেনদেন হয়েছে ৪৭ লাখ ৪৯ হাজার টাকা।
গত সপ্তাহে দাম বাড়ার শীর্ষ তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে থাকা পেপার প্রসেসিং অ্যান্ড প্যাকেজিংয়ের শেয়ার দাম বেড়েছে ১৫ দশমিক ২৯ শতাংশ। ১৪ দশমিক ৭৬ শতাংশ দাম বাড়ার মাধ্যমে তৃতীয় স্থানে রয়েছে মুন্নু এগ্রো।
এছাড়া দাম বাড়ার শীর্ষ ১০-এ স্থান করে নেওয়া প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে আমরা নেটওয়ার্কের ১৪ দশমিক ১৪ শতাংশ, তালিকাভুক্ত বেঙ্গল উইন্ডসোর থার্মোপ্লাস্টিকের ১৩ দশমিক ৩১ শতাংশ, জেমিনি সি ফুডের ১১ দশমিক শূন্য ৮ শতাংশ, বিকন ফার্মার ১০ দশমিক ৬১ শতাংশ, ফাইন ফুডের ১০ দশমিক ১৬ শতাংশ, এপেক্স ফুডসের ৯ দশমিক ৯৪ শতাংশ এবং ইউনিক হোটেলের ৯ দশমিক ৬৮ শতাংশ দাম বেড়েছে।
এমএএস/ইএ/এমএস