পাঁচ বছরে দ্বিগুণের বেশি মাংসের দাম, সমাধান কোন পথে
# মাংসের দামে গরিবের বঞ্চনা, যে পথে কমবে দাম
# সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে গরু, মহিষ কিংবা ছাগলের মাংস
# অনেকেই বলছেন, সরকারের তদারকির অভাবে বেড়েছে মাংসের দাম
# মাংস ব্যবসায়ীদের বড় সিন্ডিকেট আছে, যেখানে সাধারণ ব্যবসায়ীদের হাতে নেই
# মাংসের দাম নিয়ন্ত্রণে সরকার উদ্যোগ না নিলে ব্যবসায়ীরা তো সুযোগ নেবেনই
# মাংস ব্যবসায়ীদের কোনো জবাবদিহি নেই
# মাংস আমদানি করা হচ্ছে, তাহলে স্বয়ংসম্পূর্ণ হলাম কীভাবে?
প্রাণিজ আমিষের একটি বড় উৎস মাংস উৎপাদনে একসময় পিছিয়ে ছিল বাংলাদেশ। এখন মাংসে স্বয়ংসম্পূর্ণ দাবি করা হলেও দাম আকাশছোঁয়া। আগে প্রাপ্যতার অভাব থাকলেও এখন দামের কারণে সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে গরু, মহিষ কিংবা ছাগলের মাংস। পুষ্টির জোগানের সঙ্গে সম্পৃক্ত এ খাবারটি জনগোষ্ঠীর একটি অংশ নিতে না পারায় পুষ্টি পরিস্থিতির উন্নয়ন বিঘ্নিত হচ্ছে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। মাংস ব্যবসায়ী সমিতি বলছে, সিন্ডিকেটের কারণে পেরে ওঠেন না সাধারণ ব্যবসায়ীরা।
গত পাঁচ বছরে মাংসের দাম বেড়েছে দ্বিগুণেরও বেশি। বর্তমানে মাংসের দামকে অনেকে অতিরিক্ত বলেছেন। তারা বলছেন, সরকারের তদারকির অভাবে ব্যবসায়ীরা কারসাজি করে বাড়িয়েছেন মাংসের দাম।
খামারিরা বলছেন, দেশে পশুখাদ্যের অভাব রয়েছে। সেভাবে বাণিজ্যিকভাবে ঘাস উৎপাদন হয় না। আমদানিনির্ভর পশুখাদ্যের দাম অস্বাভাবিক বাড়ায় মাংসের দাম বেড়ে যাওয়ার অন্যতম কারণ। প্রান্তিক পর্যায়ে পরিবারভিত্তিক পশু পালন কমে যাওয়া এবং খামারভিত্তিক ব্যবস্থায় মাংসের দাম এত বেড়ে গেছে। গরুর হাটগুলোতে অতিরিক্ত খাজনা আদায়ও মাংসের দাম বাড়ার কারণ বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।
সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, সরকারের নানা উদ্যোগের কারণেই মাংস উৎপাদনে আজ বাংলাদেশ স্বয়ংসম্পূর্ণ। এরই মধ্যে সিটি করপোরেশন, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে আধুনিক জবাইখানা নির্মাণ, উন্নতমানের ঘাস উৎপাদনসহ বিভিন্ন কার্যক্রমের জন্য ৪ হাজার ২৮০ কোটি টাকার ‘প্রাণিসম্পদ ও দুগ্ধ উন্নয়ন (এলডিডিপি) প্রকল্প’ নিয়েছে সরকার। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে মাংসের দামে এর সুফল পাওয়া যাবে।
ঘাটতি থেকে মাংসের উদ্বৃত্ত উৎপাদন
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) হিসাব অনুযায়ী, একজন মানুষের দৈনিক মাংসের চাহিদা ১২০ গ্রাম। মোট জনসংখ্যা ১৭ কোটি ১৭ লাখ ধরে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের হিসাব অনুযায়ী বছরে দেশে মাংস ও দুধের চাহিদা ৭৫ লাখ ২০ হাজার টন। সেখানে সর্বশেষ ২০২১-২২ অর্থবছরে উৎপাদন হয়েছে ৯২ লাখ ৬৫ হাজার টন। যদিও মাংসের উৎপাদন ২০০৬-০৭ অর্থবছরে ছিল ১০ লাখ ৪০ হাজার টন। দেশে এখন বছরে ১৭ লাখ ৪৫ হাজার টনের বেশি মাংস উৎপাদিত হচ্ছে।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সর্বশেষ জরিপ অনুযায়ী, দেশের শিশুদের মধ্যে খর্বকায় ২৮ শতাংশ, শীর্ণকায় ১০ শতাংশ আর স্বল্প ওজনের ২৩ শতাংশ। তবে চা বাগানে এ হার দ্বিগুণ।
আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশ (আইসিডিডিআর,বি) ও ব্র্যাকের এক গবেষণায় বলা হয়েছে, উচ্চমাত্রার অপুষ্টির ঝুঁকিতে থাকা বিশ্বের ৩৬টি দেশের তালিকায় রয়েছে বাংলাদেশ। দেশের ৫১ শতাংশ শিশু রক্তস্বল্পতায় (এনিমিয়া) ভুগছে। মায়েদের ক্ষেত্রে এ হার ৪২ শতাংশ।
গত এক যুগে প্রতি বছরই বেড়েছে মাংসের উৎপাদন। ২০০৬-০৭ ও ২০০৭-০৮ অর্থবছরে মাংসের উৎপাদন ছিল ১০ লাখ ৪০ হাজার টন করে। এর পরের বছর উৎপাদন ৪০ হাজার টন বাড়ে। ২০০৯-১০ অর্থবছরে মাংস উৎপাদিত হয় ১২ লাখ ৬০ হাজার টন। উৎপাদন ছিল ২০১০-১১ অর্থবছরে ১৯ লাখ ৯০ হাজার টন, ২০১১-১২ অর্থবছরে ২৩ লাখ ৩০ হাজার টন, ২০১২-১৩ অর্থবছরে ৩৬ লাখ ২০ হাজার টন, ২০১৩-১৪ অর্থবছরে ৪৫ লাখ ২১ হাজার ও ২০১৪-১৫ অর্থবছরে ৫৮ লাখ ৬০ হাজার টন।
এরপর ২০১৫-১৬ অর্থবছর থেকে ২০২০-২১ অর্থবছর পর্যন্ত ছয় বছরে মাংস উৎপাদিত হয়েছে যথাক্রমে ৬১ লাখ ৫২ হাজার টন, ৭১ লাখ ৫৪ হাজার টন, ৭২ লাখ ৬ হাজার টন, ৭৫ লাখ ১৪ হাজার টন, ৭৬ লাখ ৭৪ হাজার টন, ৮৪ লাখ ৪০ হাজার টন।
পাল্লা দিয়ে বেড়েছে দাম
দেশে মাংসের উৎপাদন যেমন বেড়েছে, তেমনি পাল্লা দিয়ে বেড়েছে দামও। মাংস এখনো সাধারণ মানুষের কেনার সামর্থ্য নেই।
সরকারি বাণিজ্য সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্যানুযায়ী, প্রতি কেজি গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে ৬৬০ থেকে ৭০০ টাকায়। এক বছর আগে যা ছিল ৫৮০ থেকে ৬০০ টাকা। এক বছরের ব্যবধানে দাম বেড়েছে ১৫ দশমিক ২৫ শতাংশ। খাসির মাংস প্রতি কেজি ৮৫০ থেকে ৯৫০ টাকা।
১৯৯০ সালের দিকে এক কেজি গরুর মাংসের দাম ছিল ৫০ টাকা। এ দামটি দীর্ঘদিন বহাল থাকে। কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) হিসাবে, ১৯৯৫ সালের দিকে প্রতি কেজি গরুর মাংসের দাম ছিল ৬০ টাকা। এরপর প্রতি কেজি গরুর মাংস ২০০১ সালে ৮০ টাকা, ২০০৫ সালে ১০০ টাকা। এরপর ২০০৬ সালে দাম হয় ১৪০ টাকা, ২০০৭ সালে ১৭৬ টাকা, ২০০৮ সালে ১৯২ টাকা, ২০০৯ সালে ২১৮ এবং ২০১০ সালে হয় ২৪৭ টাকা।
২০১৪ সালেও ঢাকায় এক কেজি গরুর মাংসের দাম ছিল ৩০০ টাকা। ২০১৮ সালে ৫২৭ টাকায় ঠেকে দাম। ২০২১ সালের অক্টোবরে গরুর মাংসের গড় দাম ছিল প্রতি কেজি ৫৫০ টাকা। ২০২২ সালের মার্চ থেকে ৭০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি গরুর মাংস।
ক্যাবের সভাপতি গোলাম রহমান জাগো নিউজকে বলেন, ‘এরই মধ্যে অন্যান্য অনেক জিনিসের মতো গরুর মাংসের দামও সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে গেছে। সমস্যা হলো সার্বিক মূল্যস্ফীতি। অন্যদিকে সবাই লাভ বেশি করতে চায়, সেটা হলো লোভস্ফীতি। যারা ব্যবসা-বাণিজ্য করে তাদের লোভ বেড়ে যাওয়ায় লোভস্ফীতি ঘটছে।’
তিনি বলেন, ‘প্রান্তিক মানুষের এখন কোরবানির ঈদ ছাড়া গরুর মাংস খাওয়ার অবস্থা আছে কী? বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সংকটের প্রভাব বাংলাদেশেও পড়ছে। তবে, দেশের খেটে খাওয়া ও মধ্যবিত্ত মানুষের আয় বাড়ছে না বরং অনেক ক্ষেত্রে কমেছে। তাই তারা সবচেয়ে বেশি বিপাকে আছেন।’
‘তাই সরকারকে এমন পদক্ষেপ নিতে হবে যেন মানুষের আয়-রোজগার বাড়ে। কেউ যাতে অনৈতিকভাবে মুনাফা না করতে পারে। লোভস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। সেটা অন্যান্য পণ্যের মতো গরুর মাংসের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য’ বলেন দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) সাবেক চেয়ারম্যান গোলাম রহমান।
আরও পড়ুন>> ‘নীতিসহায়তা পেলে কম দামে মাংস-ডিম সরবরাহ সম্ভব’
কেন বাড়ছে দাম, যা বলছেন সংশ্লিষ্টরা
খামারিরা মাংসের দাম বেড়ে যাওয়ার জন্য ঊর্ধ্বমুখী উৎপাদন ব্যয়কে দায়ী করছেন। আর উৎপাদন ব্যয় বাড়ানোর ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রাখছে গো-খাদ্য। এক্ষেত্রে নীতিগত সহায়তা চেয়েছেন খামারিরা।
বাংলাদেশ ডেইরি ফারমার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিডিএফএ) সভাপতি মোহাম্মদ ইমরান হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, ‘উৎপাদন খরচ অনেক বেড়েছে। বিশ্বে সবকিছুর দাম বেড়েছে। আমাদের গো-খাদ্যের দামও বেড়েছে। মূলত এজন্যই মাংসের উৎপাদন খরচ বেড়েছে।
‘আমাদের একটা বড় সমস্যা হচ্ছে গরু মাংস ব্যবসায়ীদের হাতে আসার আগে দুটো হাট ঘুরে আসে। মফস্বলের ব্যাপারীরা গেরস্তের কাছে গিয়ে গরু কিনে নিয়ে আসেন। সেটা হাটে তোলেন। সেই লোকাল হাট থেকে আবার ঢাকার ব্যাপারীরা কিনে শহরের হাটে তোলেন। শহরের হাট থেকে কেনেন মাংসের ব্যবসায়ীরা।’
ইমরান হোসেন বলেন, ‘দুটো হাটের যে খাজনা দিতে হয়, এটা কিন্তু অনেক বড় অংক। এক লাখ টাকার গরুতে দেখা গেছে ৫ হাজার টাকা খরচ হয়ে যাচ্ছে। এটাও মাংসের দামে প্রভাব ফেলছে।’
২০১৭ সালের ৩০ এপ্রিল ইজারাদারের চাঁদাবাজিতে মাংসের দাম বাড়ার কারণে অনেক দোকান বন্ধ হয়ে যাচ্ছে জানিয়ে ১৫ দিনের মধ্যে সমস্যার সমাধান করা না হলে প্রথম রমজান থেকে সারাদেশে কর্মবিরতি পালনের ঘোষণা দিয়েছিলেন মাংস ব্যবসায়ীরা। পরে তৎকালীন বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমদের আশ্বাসে সেই কর্মবিরতি প্রত্যাহার করেছিলেন মাংস ব্যবসায়ীরা। তারা জানিয়েছেন, দাবি পূরণে কোনো পদক্ষেপই নেয়নি সরকার।
বাংলাদেশ মাংস ব্যবসায়ী সমিতির মহাসচিব রবিউল আলম বলেন, ‘বাংলাদেশে মাংস ব্যবসায়ীদের একটা বড় সিন্ডিকেট আছে। যেখানে সাধারণ ব্যবসায়ীদের হাতে নেই। এটা মাংস আমদানি করা ব্যবসায়ীদের হাতে চলে গেছে, যারা অবৈধভাবে মাংস আমদানি করে। আমরা ফার্মনির্ভর হয়ে গেছি। এতে মাংসের দাম বেড়েই যাচ্ছে। গরুর মাংসের কেজি ৭০০ টাকা হওয়ায় সাধারণ মানুষ খেতে পারছেন না। হোটেলগুলোতে খাওয়ানো হচ্ছে আমদানি করা নিম্নমানের ভারতীয় মাংস। তবে, ফার্ম বা খামারগুলো চাহিদা অনুযায়ী কোরবানির গরু সরবরাহ করতে পারছে, এটা নিয়ে দ্বিমত নেই। কারণ কোরবানির গরুর দাম বেশি। আমরা যদি মাংসে স্বয়ংসম্পূর্ণ হই তাহলে ভারত থেকে আমদানি করছি কেন?’
প্রান্তিক মানুষ গরু পালন ছেড়ে দিচ্ছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘কারণ গরু-মহিষ পালনের মতো পরিবেশ সৃষ্টি করতে পারিনি। পশুর খাবার তো সহজলভ্য করতে পারিনি। গরু প্রাকৃতিক পরিবেশে লালন-পালন করতে হবে।’
বাংলাদেশ থেকে মাংসসহ পশুর নানা অংশের রপ্তানির বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে জানিয়ে রবিউল আলম বলেন, ‘এখনই আমরা গরুর হাড়, শিং, চামড়া, নাড়িভুঁড়ি, মূত্রনালি ও চর্বি রপ্তানি করছি। ২০১৫ সালে আমরা ১৭০ কোটি মার্কিন ডলারের ষাঁড়ের যৌনাঙ্গ রপ্তানি করেছি। এটা চীন, ব্যাংকক, হংকংসহ বিভিন্ন দেশে রপ্তানি হয়। কিন্তু এক্ষেত্রে সরকারের কোনো উদ্যোগ নেই। এ ক্ষেত্রে বড় রপ্তানি খাত চামড় ধ্বংস করে ফেলেছি। এক সময় দেখা যাবে— এখন যেখানে ২০০ ট্যানারি করেছে সেগুলোর কাঁচামাল হিসেবে ভারত থেকে চামড়া আমদানি ছাড়া কোনো উপায় থাকবে না।’
‘ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের মধ্যে স্থায়ী গরুর হাট মাত্র একটি। গাবতলীতে একটি হাট হওয়ায় এখানে চলে স্বেচ্ছাচারিতা। ইজারাদাররা কোনো শর্ত, নিয়ম-কানুন মানেন না। মাংস ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে জোর করে বেশি খাজনা আদায় করেন। একজন মাংস ব্যবসায়ীর জন্য খাজনা ১০০ টাকা, কিন্তু গাবতলী গরুর হাটে ৫ হাজার টাকা পর্যন্ত খাজনা আদায় করা হয়।’
মাংস ব্যবসায়ী সমিতির মহাসচিব আরও বলেন, ‘সমস্যা নিয়ে অনেক আন্দোলন করেছি। কোনো কাজ হয়নি। এখন আর বলি না। আমার তো ক্ষতি নেই। আমি তো মাংস বেচে মানুষের গলা কেটে টাকা আদায় করছি। যে গলাকাটা থেকে সরকার ক্রেতাদের রক্ষা করবে সেই সরকার তো আমাকে সুযোগ করে দিচ্ছে। সরকার নিয়ন্ত্রণের উদ্যোগ না নিলে ব্যবসায়ীরা তো সুযোগ নেবেনই। মাংস ব্যবসায়ীদের ছেড়ে দেওয়া হয়েছে, কোনো জবাবদিহিতা নেই।’
ভারত থেকে আমদানি করা মাংসের মান দেখার কোনো ব্যবস্থা নেই জানিয়ে তিনি বলেন, ‘কত টাকায় আমদানি করা হয়, আর কত টাকায় বিক্রি করা হয় সেটা দেখার কেউ নেই। মাংসের দাম যদি ৫০০ টাকায় রাখতে পারতাম, তবে আমরা উপকৃত হতাম। অতিরিক্ত দামের কারণে মাংসের দোকান বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। একটা বাজারে গিয়ে দেখবেন, দুটি মাংসের দোকান খোলা আর ৮-১০টি বন্ধ। সাধারণ মানুষ মাংস কিনতে পারছেন না। মাংসের দাম সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে না রাখতে পারলে ধ্বংস হয়ে যাবেন ব্যবসায়ীরা।’
ঝিগাতলায় আনোয়ারের গরুর মাংসের দোকান মালিক কাজী আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘গরুর খাবারের দাম অনেক বেড়ে গেছে। আগে গ্রামাঞ্চলে সব বাড়িতেই যে দু-চারটা গরু থাকতো, এখন গরু পালন করা ছেড়েই দিয়েছে। এসব কারণে গরুর মাংসের দামও অনেক বেড়ে গেছে।’
গরুর মাংসের এত দাম থাকার পরও মাংস ব্যবসায়ীরা ভালো নেই দাবি করে ঢাকা মেট্রোপলিটন মাংস ব্যবসায়ী সমিতির সাবেক কার্যকরী সভাপতি আনোয়ার বলেন, ‘দোকানের একজন কর্মচারীকে ৭০০-৮০০ টাকা রোজ দিতে হয়। একটি দোকানে কমপক্ষে তিন-চারজন কর্মচারী লাগে। ঢাকার মধ্যে কিছু এলাকায় দোকান ভাড়া অনেক বেশি। অনেক মাংসের দোকান বন্ধ হয়ে গেছে। কোরবানির দু-তিন মাস মাংসের চাহিদা কম থাকে, তখন অনেক দোকান বন্ধ থাকে, কিন্তু দেখেন এবার এখনো অনেক দোকান বন্ধ।’
তিনি বলেন, ‘মানুষের আয় রোজগার কম। ৭০০ টাকা দিয়ে এক কেজি মাংস খেতে গেলে আনুষঙ্গিক জিনিস মিলে প্রায় এক হাজার টাকা খরচ। তাই মানুষ খুব দরকার না হলে গরুর মাংস কেনেন না।’
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) পশু বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. আবুল হাশেম বলেন, ‘২০১২-১৩ সালের দিকেও এখনকার থেকে অর্ধেক দামে মাংস পাওয়া যেতো। গরুর মাংসের কেজি ২৮০ থেকে ৩০০ টাকা ছিল। আগে ভারত ও মিয়ানমার থেকে সীমান্ত দিয়ে গরু আসতো। সেটি এখন আর হচ্ছে না। এতে আমাদের সুবিধাও হয়েছে। আমাদের এখানে প্রচুর ফার্ম গড়ে উঠেছে। নিজেদের উৎপাদন বেড়েছে।’
তিনি বলেন, ‘ক্ষুদ্র খামারিরা দাম পাওয়ার ক্ষেত্রে বঞ্চিত হচ্ছেন। ভোক্তারা যে দামটা দেন, সেটার সুবিধা পান না তারা। মাঝখান দিয়ে মধ্যস্বত্বভোগীরা লাভটা নেন।’
গরুর হাটের হাসিলও (খাজনা) উৎপাদন খরচ বাড়ার আরেকটি কারণ জানিয়ে এ শিক্ষক বলেন, ‘অন্যদিকে আগে একটা চামড়ার ভালো দাম পাওয়া যেতো। আমি গত কোরবানিতে ৯৫ হাজার টাকা দিয়ে গরু কিনলাম, কিন্তু চামড়াটা ২০০ টাকা দাম বলায় একটি এতিমখানায় দিয়ে দেওয়া হয়েছে। যদি চামড়ার ন্যায্যমূল্যটা পাওয়া যেত তাহলে এ টাকা মাংসের দামে কম হতো। সেখানে একটু হলেও সুবিধা পাওয়া যেতো। এখন পশুর দানাদার খাবারের অনেক দাম। মোট উৎপাদন খরচের ৭০-৮০ শতাংশ যায় পশুখাদ্যে।’
এখন যে মাংসের দাম রয়েছে তা বেশি জানিয়ে তিনি বলেন, সরকার সবকিছু বিবেচনা করে মাংসের দাম বেঁধে দিতে পারতো।
‘মাংসে স্বয়ংসম্পূর্ণ’ সরকারের এমন দাবির প্রতি সন্দেহ পোষণ করে এ বিজ্ঞানী বলেন, ‘মাংসের দাম বেশি, অতিরিক্ত মাংসটাও তো দেখছি না। বরং উল্টো মাংস আমদানি হচ্ছে। তাহলে আমরা স্বয়ংসম্পূর্ণ হলাম কীভাবে? প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের এ পরিসংখ্যানের ওপর আমরা আস্থা রাখতে পারছি না।’
দাম কমবে যে উপায়ে
বাংলাদেশ ডেইরি ফারমার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি বলেন, ‘আমরা সরকারের কাছে পলিসি সাপোর্ট চেয়েছি। যাতে গরুর মাথাপিছু আয় সর্বোচ্চ হয়। সেক্ষেত্রে উৎপাদন খরচ কমবে, এতে মাংসের দামও কমবে। এখন আমরা একটি দেশি গরু থেকে দেড়শ কেজি মাংস পাই, সেখানে যদি প্রতি গরু থেকে ৩০০ কেজি মাংস পাই এমন কোনো জাত দেওয়া হয় তাহলে খরচ কমানো সম্ভব। গো-খাদ্য আমদানির শুল্ক কমিয়েও সরকার আমাদের উৎপাদন খরচ কমাতে সহায়তা করতে পারে।’
ইমরান হোসেন বলেন, ‘হাটে যে অতিরিক্ত খাজনা দিতে হয়, এটা এড়ানো যায়। সেক্ষেত্রে আমরা সরকারের কাছে নীতিসহায়তা চাইছি। সরকার এসব বিষয়ে ব্যবস্থা নিলে বাজারে এর প্রভাব পড়বে বলে আমি মনে করি। মাংসের দাম কমে যেতে বাধ্য।’
মাংস ব্যবসায়ী সমিতির মহাসচিব বলেন, ‘এখন পশুপালন হচ্ছে খামারনির্ভর। আমি যতক্ষণ পর্যন্ত সাধারণ কৃষক ও গৃহস্থকে পশু পালনের আওতায় না আনতে পারবো, ততক্ষণ পর্যন্ত দামেও সুফল পাওয়া যাবে না।’
আরও পড়ুন>> মাংসজাতীয় পণ্য রপ্তানিতেও মিলবে নগদ সহায়তা
বিস্তৃত এলাকা নিয়ে একটি প্রজনন কেন্দ্র গড়ে তোলার প্রস্তাব তুলে ধরে সরকারের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, সরকার মানুষকে একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্পের আওতায় বাড়ি দিতে পেরেছে। সেখানে মানুষকে বিনামূল্যে দুটি গরু বা মহিষের বাচ্চা দিতে পারবে না! এছাড়া বিভিন্ন চরাঞ্চলকে সরকার নিজেদের আওতায় নিয়ে পশুপালনের জন্য গড়ে তুলতে পারে।
‘আমরা তো রোহিঙ্গাদেরও পশু পালনের কাজে লাগাতে পারি। তাদের যদি বিনামূল্যে দুটো বাছুর দেওয়া হয়, তাহলে তারা কেন পালন করবে না। ওদের তো কোনো কাজ নেই। আমরা যদি এভাবে সাধারণ মানুষকে ব্যাপকভাবে পশু পালনের আওতায় আনতে পারি, তাহলে ভারত-মিয়ানমার থেকে ৫০ থেকে ৬০ হাজার কোটি টাকার মাংস আমদানির প্রয়োজন হবে না। সাধারণ মানুষের হাতে গরু, মহিষ, ছাগল ছানা তুলে দিতে সরকার প্রথমে ১০ হাজার কোটি টাকা দিয়ে প্রজনন প্রকল্প শুরু করুক।’
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের অধীনেও একটি গরুর হাট করার দাবি জানিয়ে রবিউল আলম বলেন, তাহলে দুটি জায়গা দেখে আমরা গরু কিনতে পারবো। একটি হাটের কাছে আর জিম্মি হয়ে থাকতে হবে না। একটি প্রতিযোগিতা থাকবে। শুধু গাবতলীর হাট নয়, দেশের আরও যেসব হাট রয়েছে সবখানেই মাংস ব্যবসায়ীরা ইজারাদারদের কাছে অত্যাচারিত। সরকারি নিয়মকানুন কিছুই মানেন না ইজারাদাররা। সরকার সেখানে কোনো ব্যবস্থাও নেয় না। সিটি করপোরেশনের দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তারা এর সঙ্গে জড়িত।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমদানির সঙ্গে তুলনা করে মাংসের দামটা উঠে আছে। সরকার ভারতীয় মাংস আমদানি বন্ধ করেছে। কিন্তু মাংসের একটা যৌক্তিক দাম নির্ধারণ করে দিতে পারতো। সরকার যদি চায় ৫০০ টাকার বেশি দামে মাংস বিক্রি করতে দেবো না, সেটা সম্ভব।’
ঝিগাতলার মাংস ব্যবসায়ী আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘গরুর মাংসের দাম কমাতে সরকারকে গোখাদ্যের দাম কমতে হবে। প্রান্তিক পর্যায়ে প্রতিটি ঘরে যাতে মানুষ গরু পালন করে সেই বিষয়ে উৎসাহ দিতে হবে। প্রয়োজনে ঋণের ব্যবস্থা করতে হবে। মাঠপর্যায়ে গিয়ে দেখতে হবে কী কারণে মাংসের দাম এত বেশি হচ্ছে। সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে সেই অনুযায়ী সমাধানের উদ্যোগ নিতে হবে।’
মাংসের বিষয়ে যা বলছেন প্রাণিসম্পদ বিভাগের কর্মকর্তারা
প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের পরিচালক (উৎপাদন) ডা. মোহাম্মদ রেয়াজুল হক বলেন, ‘বিশ্ব পরিস্থিতির কারণে পশুখাদ্যের বিভিন্ন উপাদানের দাম বেড়েছে, দানাদার খাদ্যের দাম বেড়েছে। এজন্য উৎপাদন খরচ বেড়েছে। তাই মাংসের দাম কিছুটা ঊর্ধ্বমুখী।’
তিনি বলেন, ‘গরুর মাংসের কেজি ৭০০ টাকা এটাকে বেশিই মনে করছি। সহনীয় পর্যায়ে রাখতে প্রচেষ্টা রয়েছে, সেটা অব্যাহত থাকবে।’
গৃহস্থ পর্যায়ে গরু পালনের প্রবণতা কমে যাচ্ছে, মাংসের দাম বেশি হওয়ার এটাও একটা কারণ বলছেন সংশ্লিষ্টরা- এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘কোরবানির ঈদে যে গরুগুলো আসে এর বড় একটা অংশ আসে যারা দু-একটা করে গরু পালন করেন সেখানে থেকে। তবে, সারা বছর জবাই করার জন্য তারা গরু ছাড়তে চান না। এটা একটা বিষয়। তারা কোরবানিতেই গরু বিক্রি করতে চান।’
‘প্রান্তিক পর্যায়ে গৃহস্থরা গরু পালন করেন না, এমন নয়। মূলত তারা কোরবানির সময় বিক্রি করেন। তবে, সারা বছর মাংসের জোগানের ক্ষেত্রে এ উৎস থেকে গরু কম আসে, এটা সত্য কথা।’
গৃহস্থ পর্যায়ে গবাদিপশু পালনের জন্য সরকার গুরুত্ব দিচ্ছে জানিয়ে পরিচালক বলেন, ‘আমাদের যতগুলো প্রকল্প রয়েছে, সবগুলোকে প্রান্তিক মানুষের সুবিধার বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে করা হয়েছে। মাঝখানে কিন্তু মানুষ গরু পালন করা ছেড়েই দিয়েছিল, এখন আবার শুরু করেছে। আমরা যে মাংসে স্বয়ংসম্পূর্ণ সেখানে প্রান্তিক পরিবারগুলোরও বড় অবদান রয়েছে। এ পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে, আরও হবে।’
বলা হচ্ছে কোরবানির গরুর চাহিদা ও উৎপাদনের হিসাব অনুযায়ী আমরা মাংসে স্বয়ংসম্পূর্ণ। সারা বছর চাহিদা ও জোগানের তেমন কোনো হিসাব নেই- এ বিষয়ে পরিচালক বলেন, ‘আমরা অবশ্যই স্বয়ংসম্পূর্ণ। উন্নত দেশে মাংস ও দুধ রপ্তানি করে। দেখা যাবে— তারা আবার প্রাণিসম্পদের কিছু পণ্য হয়তো আমদানি করে। আমরা বলছি, ৯২ লাখ টন মাংস উৎপাদন, বিশ্ব খাদ্য সংস্থায় একজন মানুষের দৈনিক যে ১২০ গ্রামের লক্ষ্যমাত্রা দেওয়া হয়েছে, আমরা সেটা পার হয়েছি, এখন আমরা ১৩৬ গ্রামে পৌঁছেছি।’
‘তবে মানুষের মাংসের চাহিদা ক্রমেই বাড়ছে। কখনো কখনো চাহিদার কাছাকাছি আবার কখনো বেশি উৎপাদন হয়, এভাবে চলে। কোনো একটি নির্দিষ্ট সংখ্যা ধরে এটা বলা যাবে না’ বলেন রেয়াজুল হক।
বিসিএস লাইভস্টক একাডেমির সহযোগী অধ্যাপক ড. মো. সফিকুর রহমান বলেন, ‘যারা গরু কিনে মাংস হিসেবে বিক্রি করছে আর যারা খামারি রয়েছেন তাদের মধ্যে একটা সমন্বয় করতে পারে সরকার। সমন্বয়হীনতা আছে, এটা সমন্বয় দরকার।’
তিনি বলেন, ‘মাংসের দাম সব জায়গায় একরকম নয়। গো-খাদ্যের দাম কমানো গেলে উৎপাদন খরচ কমিয়ে মাংসের দামও কমানো যেতে পারে। এক্ষেত্রে সরকার ও প্রাইভেট সেক্টরের কাজ করার সুযোগ আছে।’
সফিকুর রহমান আরও বলেন, ‘গরুর জন্য দরকার ঘাস। ঘাস খাওয়ালে গরুর উৎপাদন বাড়ে, খরচও কমে আসে। দানাদার খাবার কমিয়ে ঘাসের উৎপাদন বাড়িয়ে উৎপাদন খরচ কমাতে পারি। আমাদের যে দু-তিনটি ফসল হয়। এর মাঝে দু-এক মাস জমি অনাবাদি থাকে। অনেক পতিত জমি আছে, সেখানেও ঘাস চাষ করা যায়। এ সময় ঘাস আবাদ করা যেতে পারে। ব্যয় কমলে মাংসের দামও কমবে।’
ভূমিকা রাখবে প্রাণিসম্পদ ও দুগ্ধ উন্নয়ন প্রকল্প
প্রাণিসম্পদ ও দুগ্ধ উন্নয়ন প্রকল্প মাংসের দাম কমানোর ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখতে পারে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। মাংস উৎপাদন ও প্রক্রিয়াকরণ পর্যায়ে কাজ করবে প্রকল্পটি।
গো-খাদ্য উৎপাদন বাড়াতে উন্নত জাতের ঘাস চাষ কার্যক্রম সম্প্রসারণে বিভিন্ন উপজেলায় উন্নত জাতের ঘাসের নার্সারি/প্রদর্শনী স্থাপনের সংস্থান প্রকল্পে রয়েছে। এ কার্যক্রমের আওতায় প্রতিটি উপজেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তরে উন্নত জাতের ঘাসের নার্সারি/প্রদর্শনী স্থাপন, কাটিং উৎপাদন, কৃষকদের মধ্যে বিতরণ ও কৃষক/খামারিদের ঘাস চাষে উদ্বুদ্ধ করা হবে।
এছাড়া স্বাস্থ্যসম্মতভাবে পশু জবাই এবং মাংস প্রক্রিয়াকরণের জন্য সিটি করপোরেশন এলাকায় তিনটি এবং ২০টি জেলায় একটি করে আধুনিক পশু জবাইখানা নির্মাণ করা হবে। এসব কাজ আন্তর্জাতিক মানের ডিজাইন ও সুপার ভিশন ফার্মের মাধ্যমে বাস্তবায়ন করা হবে। এছাড়া উপজেলা পর্যায়ে ১৭০টি মাংসের কাঁচাবাজার নির্মাণ ও উন্নয়ন করা হবে বলেও জানিয়েছেন প্রকল্প সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
প্রাণিসম্পদ ও ডেইরি উন্নয়ন প্রকল্পের প্রধান প্রযুক্তিগত সমন্বয়কারী মো. গোলাম রাব্বানী বলেন, ‘উৎপাদন খরচ কমাতে পারলে মাংস কম দামে বাজারে ছাড়া যাবে। এখন মূল জায়গাটা হলো পশুখাদ্যের দাম কমানো। পশুখাদ্যের মধ্যে তিনটি বিষয় গুরুত্বপূর্ণ- সবুজ ঘাস, শুকনো খড় ও দানাদার খাবার। গরুকে যদি পর্যাপ্ত ঘাস খাওয়ানো যায় তাহলেই উৎপাদন খরচ কমবে। এক্ষেত্রে আমরা বুঝে হোক না বুঝে হোক দানাদার খাদ্যের ওপর নির্ভরশীল হয়ে যাচ্ছি। পশুখাদ্যের মধ্যে দানাদার খাদ্যের দাম সবচেয়ে বেশি।’
‘প্রাণিসম্পদ ও দুগ্ধ উন্নয়ন প্রকল্প’ এ জায়গাটিতেই কাজ করছে জানিয়ে তিনি বলেন, কম দামের পশুখাদ্যের উৎপাদন বাড়ানো, প্রক্রিয়াকরণ ও বাজারে সহজলভ্য করা হবে। এক্ষেত্রে আমরা উদ্যোক্তা উন্নয়নের কাজ করছি। এখানে সবুজ ঘাসের বাণিজ্যিক উৎপাদন, প্রক্রিয়াকরণ করা হবে। এক্ষেত্রে ভালো ভালো উদ্যোক্তা আনা হবে। এটি সফলভাবে করতে পারলে বাজারে এর প্রভাব পড়বে। নতুন নতুন উদ্যোক্তারা উৎসাহিত হবেন।
আরও পড়ুন>>মাছ-মাংস-ডিম উৎপাদনে বাংলাদেশ স্বয়ংসম্পূর্ণ: প্রধানমন্ত্রী
তিনি বলেন, ‘এছাড়া স্থানীয় সরকার বিভাগের আওতায় আমরা পশু জবাইখানাও করে দেবো। মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় থেকে নকশা অনুমোদন পেয়েছি। বিভিন্ন সিটি করপোরেশন ও পৌরসভার সঙ্গে সমঝোতা স্মারক সই করছি। এর মধ্যে রাজশাহী, খুলনা সিটি করপোরেশন এবং চাঁপাইনবাবগঞ্জ, লালমনিরহাট পৌরসভার সঙ্গে সমঝোতা স্মারক সই হয়েছে। বিভাগীয় পর্যায়ে সিটি করপোরেশন এলাকায় তিনটি এবং জেলা পর্যায়ে ২০টি স্থানে জবাইখানা করা হবে। এখন পর্যন্ত ১৫টি স্থানে পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র পেয়েছি।’
‘এসব স্থানে স্বাস্থ্যসম্মতভাবে পশু জবাই ছাড়াও জবাইয়ের আগে পশু পরীক্ষা-নীরিক্ষা, জবাইয়ের পর মাংস পরীক্ষা-নীরিক্ষা, স্বাস্থ্যসম্মত মাংস উৎপাদন, সংরক্ষণের ব্যবস্থা থাকবে। পশু জবাই ও মাংসের মাননিয়ন্ত্রণ আইনের বলে যেখানে সেখানে পশু জবাই করার কথা নয়, যেটা আমরা নিশ্চিত করতে পারবো এসব সুযোগ-সুবিধা ডেভেলপ করার মাধ্যমে’ বলেন গোলাম রাব্বানী।
এলডিডিপি প্রকল্পের প্রধান প্রযুক্তিগত সমন্বয়কারী আরও বলেন, ‘যারা মাংস প্রক্রিয়াকরণের সঙ্গে জড়িত আমরা তাদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থাও এ প্রকল্পের মাধ্যমে করবো।’
আইএইচআর/এমএএইচ/এএসএম