বিদেশি ফল না খেয়ে দেশি ফল খাওয়ার পরামর্শ ভূমিমন্ত্রীর
বর্তমান বৈশ্বিক সমস্যার পরিপ্রেক্ষিতে দেশের বিত্তবানদের আমদানি করা বিদেশি ফল না খেয়ে দেশি ফল খাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী।
রোববার (২০ নভেম্বর) চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) কৌশলগত বিনিয়োগকারী নিয়ে রেডিসন ব্লু চট্টগ্রাম বে ভিউ হোটেলে আয়োজিত চুক্তি সই অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ পরামর্শ দেন।
বসুন্ধরা গ্রুপের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান এবিজি লিমিটেড সিএসই’র কৌশলগত বিনিয়োগকারী হিসেবে চুক্তি সই করে। এতে গেস্ট অব অনার ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান।
বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র মো. রেজাউল করিম চৌধুরী, শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী, বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল ইসলাম এবং বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহান।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে ভূমিমন্ত্রী ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের প্রভাবে দেশের অভ্যন্তরে খাদ্য সমস্যা ও ডলার সংকটের প্রসঙ্গ তুলে ধরেন। বৈশ্বিক সমস্যার কারণে এখন ডলার নিয়ে সমস্যা দেখা দিলেও আগামী জানুয়ারিতে এ সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
মন্ত্রী বলেন, আমাদের ফরেন কারেন্সিতে একটু চাপ পড়ছে। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ অন্যদের দৃষ্টিতে কমেছে। আমার দৃষ্টিতে রিজনেবল রিজার্ভ আছে। এটা এই কারণে আমি বলছি, ইন্টারন্যাশনাল স্টান্ডার্ড অনুযায়ী তিন মাসের রিজার্ভ যথেষ্ট।
সাইফুজ্জামান চৌধুরী বলেন, আমি জানি না মৌসুমের সময় মৌসুমি ফল না খেয়ে বিদেশি ফল আমাদের কেন খেতে হবে? এখানে আমার সামনে যারা আছেন সালমান এফ রহমান ভাই, আহমেদ আকবর সোবহানসহ আপনাদের বিদেশি ফল পছন্দ। হয়তো বিদেশি ফল ছাড়া খেতে পারেন না। কিন্তু আমি সারা বছর দেশি ফল- জাম, কাঁঠাল, পেয়ারা এগুলো খাই।
ভূমিমন্ত্রীর এমন মন্তব্যে অনুষ্ঠানস্থলে উপস্থিতরা উচ্চ স্বরে হেসে ওঠেন। কেউ কেউ হাত তালি দিতে থাকেন। এ পরিস্থিতিতে প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান নিজেও হাসতে হাসতে ভূমিমন্ত্রীর দিকে আঙুল নাড়িয়ে কিছু একটা বলেন।
এর মধ্যেই ভূমিমন্ত্রী বলেন, আমি আপনাদেরকে সরকারের মন্ত্রী হিসেবে অনুরোধ করবো, একটু কষ্ট করেন। আমাদের জায়গায় চলে আসেন। একটু দেখেন আমরা কীভাবে দেশি ফল খেয়ে আছি। আপনারাও আমাদের মতো অভ্যাস করুন। কয়েকটা মাস, এরপরে আবার খেতে পারবেন।
মন্ত্রী বলেন, আমের সিজনে আম খাবো জামের সিজনে জাম খাবো। এখন দেখি সারা বছর আম পাওয়া যায়। সিঙ্গাপুর থেকে আম আসে, অস্ট্রেলিয়া থেকে আসে। আমিতো আম খাবো গ্রীষ্মকালে। এখন আমের সিজন নাই, এখন পেয়ারা পাওয়া যায়, এখন পেয়ারা খাবো।
তিনি আরও বলেন, এটা খুবই আশ্চর্য, বছরে এক বিলিয়ন ডলারের বেশি মূল্যের ফল ও খেজুর আমদানি হয়। দরকার আছে কি? দরকার আছে কি?
এ সময় উপস্থিত অতিথিরা মন্ত্রীর সঙ্গে সম্মতি জানিয়ে বলেন, না। আর মন্ত্রী বলেন নো নিড। প্লাস নট এসেন্সিয়াল আইটেম (অপ্রয়োজনীয় পণ্য)। এখন রেঞ্জ রোভার, মার্সিডিজ, এসকার আরও কী কী শুনি। দরকার তো নেই। ঠিক আছে করছেন, সমস্যা নেই। দেশের জন্যই তো করছেন। পয়সা কামাচ্ছেন। বাট আপাতত একটু কষ্ট করি। আপাতত আমরা এগুলো ডিসকারেজ করছি।
অনুষ্ঠানে গেস্ট অব অনারের বক্তব্যে সালমান এফ রহমান বলেন, প্রধানমন্ত্রী আমদানি নিয়ন্ত্রণের উদ্যোগ নেন। আমদানি নিয়ন্ত্রণের জন্য তিনি বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরকে নির্দেশ দিলেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরকে ধন্যবাদ জানাই এই নিয়ন্ত্রণ সুন্দরভাবে করার জন্য।
তিনি বলেন, এ নিয়ন্ত্রণের ফলে আমাদের ব্যবসায়ীদের অনেক অসুবিধা হয়েছে দুই মাস। এলসিগুলা আমরা ওপেন করতে পারি নাই। এর রেজাল্টটা কী হয়েছে? গত মাস চলতি হিসাবে আমাদের সারপ্লাস হয়েছে। এখন আমরা যা কিছু আমদানি করছি তা রপ্তানি এবং রেমিট্যান্সের সমান।
সালমান এফ রহমান আরও বলেন, এখন আমাদের যে সমস্যা হচ্ছে কিছু লিগ্যাসি পেমেন্ট আছে। আগে আমাদের যেসব ডিফল্ট এলসি ছিল সেগুলোর পেমেন্ট এখন ডিউ হচ্ছে। এই লিগ্যাসি পেমেন্টগুলো ইনশাল্লাহ ডিসেম্বরের মধ্যে শেষ হয়ে যাবে। জানুয়ারি থেকে আমাদের ডলারের সমস্যা সমাধান হয়ে যাবে।
এমএএস/কেএসআর