টালমাটাল বাজার

অর্ধেকে নেমেছে টাইলস বিক্রি

সাঈদ শিপন
সাঈদ শিপন সাঈদ শিপন , জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৮:৫৫ এএম, ২০ নভেম্বর ২০২২
টাইলসের বাজারে মন্দা, বিক্রি নেমেছে অর্ধেকে

# সিরামিক পণ্যের মধ্যে প্রায় ৭০ শতাংশই টাইলস
# টাইলসের দাম বেড়েছে ১০ থেকে ২৫ শতাংশ পর্যন্ত
# টাইলস বিক্রি অর্ধেকের নিচে নেমে গেছে
# বিক্রি কমায় ব্যবসা টিকিয়ে রাখা নিয়ে শঙ্কা

বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে এমনিতেই বেড়েছে নিত্যপ্রয়োজনীয় প্রায় প্রতিটি পণ্যের দাম। এরই মধ্যে দেখা দিয়েছে গ্যাস সংকট, বাড়ানো হয়েছে জ্বালানির দাম। এর প্রভাব পড়েছে নির্মাণকাজের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উপাদান টাইলসের ওপর। মন্দা দেখা দিয়েছে টাইলস বিক্রিতে। এ খাতের ব্যবসায়ীদের দাবি, ছয় মাস ধরে ব্যবসা খুব খারাপ যাচ্ছে। ক্রেতা তেমন পাওয়া যাচ্ছে না। এতে বিক্রি অর্ধেকে নেমে গেছে।

ব্যবসায়ীদের দাবি, বিক্রি ভালো না হওয়ায় বেশিরভাগ ব্যবসায়ী লোকসান গুনছেন। কোনো কোনো প্রতিষ্ঠান কর্মীদের ঠিকমতো বেতন দিতে পারছে না। সবকিছু মিলে টাইলসের ব্যবসার সঙ্গে জড়িতরা এক ধরনের সমস্যার মধ্যে রয়েছেন। ফলে ব্যবসায়ী, কর্মীদের কারও মন ভালো নেই। কর্মীদের কেউ কেউ ছাঁটাই আতঙ্কেও ভুগছেন।

তবে বিক্রিতে ভাটা পড়লেও গত ছয় মাসে একাধিকবার টাইলসের দাম বেড়েছে। মান অনুযায়ী, সম্প্রতি টাইলসের দাম বেড়েছে ১০ থেকে ২৫ শতাংশ পর্যন্ত। এর মধ্যে সব থেকে বেশি বেড়েছে ছোট টাইলসের দাম। ছোট টাইলসের দাম ২০ শতাংশের ওপরে বেড়েছে। আর বড় টাইলসের দাম বেড়েছে ১০ থেকে ২৫ শতাংশ।

jagonews24

সিরামিক খাত সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বর্তমানে দেশে তিন ধরনের সিরামিক পণ্য উৎপাদন হচ্ছে। এর মধ্যে রয়েছে টাইলস, টেবিলওয়্যার (ক্রোকারিজ পণ্য) ও স্যানিটারিওয়্যার। সিরামিক পণ্যের মধ্যে আছে- বেসিন, কমোড, ডিনার সেট, টি সেট, মগ, বাটি, ফুলের টব, মটকা, কিচেন ওয়্যার থেকে শুরু করে গৃহস্থালির বিভিন্ন জিনিসপত্র। এর মধ্যে টাইলসের বাজার সব থেকে বড়।

আরও পড়ুন: নির্মাণসামগ্রীর অস্বাভাবিক দামে টালমাটাল দেশের আবাসনখাত

ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, সিরামিকের যেসব পণ্য আছে, তার মধ্যে প্রায় ৭০ শতাংশই টাইলস। বাকি ৩০ শতাংশের মধ্যে ২০ শতাংশের মতো স্যানিটারিওয়্যার। ১০ শতাংশ ডিনার সেট, টি সেট, মগ, বাটির মতো ক্রোকারিজ সামগ্রীর পণ্য। দেশে টাইলস উৎপাদনে শতাধিক প্রতিষ্ঠান রয়েছে। তবে বড় বাজারের ৯০ শতাংশ রয়েছে ১০ থেকে ১৫টি কোম্পানির দখলে।

রাজধানী ঢাকায় সব থেকে বেশি টাইলসের প্রতিষ্ঠান রয়েছে হাতিরপুলে। এ অঞ্চলটিতে ছোট-বড় মিলিয়ে শতাধিক প্রতিষ্ঠান রয়েছে। রাস্তার দু’ধারে তাকালেই চোখে পড়ে একটার পর একটা প্রতিষ্ঠানে থরে থরে সাজানো বাহারি টাইলস।

jagonews24

সরেজমিনে সকাল সাড়ে ১০টা থেকে দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত হাতিরপুল এলাকা ঘুরে দেখা যায়, অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানে তেমন ক্রেতা নেই। বেশিরভাগ সময় কর্মীদের অলস সময় পার করতে দেখা যায়।

বিক্রির অবস্থা নিয়ে হতাশা প্রকাশ করে তাজিম টাইলসের ম্যানেজার মো. রুবেল জাগো নিউজকে বলেন, ছয় মাস ধরে বিক্রির অবস্থা খুবই খারাপ। ছয় মাস আগে যেখানে প্রতিদিন ৩ থেকে ৪ লাখ টাকার মাল (টাইলস) বিক্রি হতো, এখন সেখানে দিনে ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকার বিক্রি হচ্ছে। কোনো কোনো দিন একজন ক্রেতাও পাওয়া যায় না, এমন ঘটনাও ঘটে। সবকিছু মিলে খুব খারাপ সময় পার করছি।

ক্রেতা না পাওয়ার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, এখন এমনিতেই বাজারে সব পণ্যের দাম বেড়েছে। জীবন ধারণ করাই এখন মানুষের জন্য বড় বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। দালান এখন তুলনামূলক কম হচ্ছে। আবার জ্বালানি ও কাঁচামালের দাম বাড়ার কারণে টাইলসের দাম বেড়েছে। আগে যে টাইলস ৩২ টাকা প্রতি স্কয়ার ফিট বিক্রি করেছি, এখন তার দাম ৩৮ থেকে ৩৯ টাকা। সবকিছু মিলেই বিক্রি কম হচ্ছে।

আরও পড়ুন: জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি: লাগামহীন নির্মাণসামগ্রীর দাম

বিক্রি পরিস্থিতি নিয়ে হতাশা প্রকাশ করেন হোসেন এন্টারপ্রাইজের মালিক মো. আবুল হোসেনও। তিনি বলেন, করোনার ধকল না কাটতেই ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ নতুন সংকট তৈরি করেছে। বৈশ্বিক কারণে সব ধরনের ব্যবসায় নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। এক্ষেত্রে টাইলস খাতও বাদ যায়নি। আমাদের বিক্রি অর্ধেকের নিচে নেমে গেছে।

তিনি বলেন, এখন এমনিতেই বিক্রি কম। এর মধ্যে কারখানায় গ্যাসের চাপ কম। ফলে পণ্যের মান খারাপ হয়ে যাচ্ছে। রিজেক্ট পণ্য তুলনামূলক বেশি হচ্ছে। ফলে আমাদের লোকসানের পাল্লাও ভারী হচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে টিকে থাকা কঠিন হয়ে পড়বে।

হাতিরপুলে টাইলসের যে কয়টি বড় প্রতিষ্ঠান আছে, তার মধ্যে একটি সালমেন ট্রেডিং। সেখানে গিয়ে দেখা যায়, ক্রেতা-দর্শনার্থীদের তেমন আনাগোনা নেই। কর্মীরা অলস সময় কাটাচ্ছেন।

jagonews24

সালমেন ট্রেডিংয়ের ম্যানেজার মো. আজাদ মিয়া বলেন, করোনার সময় আমরা খুব খারাপ সময় পার করেছি। করোনার ধকল না কাটতেই এখন আরেক সমস্যা দেখা দিয়েছে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে বিভিন্ন পণ্যের দাম বেড়েছে। ডলারের দাম বেড়েছে। সেই সঙ্গে কাঁচামালের দাম বেড়েছে। এছাড়া জ্বালানির দাম বেড়েছে। ফলে টাইলসের দামও বেড়েছে। দাম বাড়লেও বিক্রি তেমন হচ্ছে না। আমাদের বিক্রি কমে অর্ধেকের নিচে নেমে গেছে।

আরও পড়ুন: মধ্যবিত্তের ফ্ল্যাট কেনার ‘স্বপ্নভঙ্গ’, হিমশিম ব্যবসায়ীরাও

দেশের মধ্যে সিরামিকের যেসব পণ্য বিক্রি হয়, তার মধ্যে টাইলসের অংশ কেমন জানতে চাইলে তিনি বলেন, সিরামিক পণ্যের মধ্যে টাইলস সব থেকে বেশি। মোট সিরামিক পণ্যের মধ্যে টাইলসের অংশ ৭০ শতাংশের মতো। ২০ শতাংশের মতো বেসিন, কমোডসহ বিভিন্ন স্যানিটারিওয়্যার। ক্রোকারিজ পণ্যের অংশ সব থেকে কম।

সিরমিক পণ্যের বাজার নিয়ে একই ধরনের তথ্য দেন ক্রিস্টাল সিরামিকের সেলস এক্সিকিউটিভ এন এ মিজানুর রহমান।

তিনি বলন, সিরামিক পণ্যের মধ্যে টাইলস প্রায় ৭০ শতাংশ। বাকি ৩০ শতাংশ অন্যান্য পণ্য।

বিক্রি পরিস্থিতি সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমাদের বিক্রি খুব খারাপ। প্রতিনিয়ত লোকসান হচ্ছে। দুই মাস ধরে বেতন নেই। আমরা খুব খারাপ অবস্থার মধ্যে আছি।

এমএএস/ইএ/এসএইচএস/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।