পরিবার পরিকল্পনা শিখতে বিদেশ ভ্রমণ, ব্যয় ৯ কোটি ৩৪ লাখ

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৯:০৯ এএম, ১৭ নভেম্বর ২০২২

অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যেও বিদেশ ভ্রমণে যেতে তোড়জোড় থেমে নেই সরকারি কর্মকর্তাদের। স্থানীয় সরকার বিভাগের শহর এলাকায় স্বল্প আয়ের মানুষ ও বস্তিবাসী, বিশেষ করে শিশু, নারী ও দরিদ্র জনগোষ্ঠীর পুষ্টি, স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা ব্যবস্থার উন্নয়নে একটি প্রকল্পে বিদেশে প্রশিক্ষণ নিতে চাওয়া হয়েছে ৯ কোটি ৩৪ লাখ টাকা। সংকটের এই সময়ে বিদেশে প্রশিক্ষণের জন্য এত অর্থ ব্যয়কে অযৌক্তিক মনে করছে পরিকল্পনা কমিশন।

প্রকল্পটির সংশোধিত প্রস্তাবনা থেকে জানা যায়, ১০ সিটি করপোরেশন ও ১৭টি পৌরসভার ছিন্নমূল ও নিম্ন আয়ের মানুষের স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করতে ‘আরবান প্রাইমারি হেলথ কেয়ার সার্ভিস ডেলিভারি’ প্রকল্পে এই প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে স্থানীয় সরকার বিভাগ।

প্রকল্পটির মূল ডিপিপিতে বৈদেশিক প্রশিক্ষণ খাতে রাখা হয়েছিল ১০ কোটি ১৮ লাখ টাকা। পরে সংশোধিত ডিপিপিতে এ খাতে ব্যয় ধরা হয়েছে ৯ কোটি ৩৪ লাখ টাকা। এরই মধ্যে বৈদেশিক প্রশিক্ষণে প্রকল্পটিতে ৭৮ লাখ টাকা ব্যয়ও করা হয়েছে। বাকি টাকা আগামী দুই বছরের মধ্যে ব্যয় করতে চান কর্মকর্তারা। অথচ সরকারের প্রধান শেখ হাসিনা বৈশ্বিক সংকটের কথা বিবেচনা করে কৃচ্ছ্রসাধনের কথা বলেছেন। খুব প্রয়োজন না হলে কোনো ব্যয় করতে নিষেধ করেছেন। তা আমলে নিয়ে অর্থমন্ত্রণালয় ১০ নভেম্বর এক পরিপত্রে উন্নয়ন বাজেট ও পরিচালন বাজেট উভয় ক্ষেত্রে সরকারি কর্মকর্তাদের পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত বিদেশ সফর বন্ধ করেছে।

আরও পড়ুন: বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া সরকারি কর্মকর্তাদের বিদেশ সফর নয়: অর্থমন্ত্রী

এ নিয়ে জানতে চাইলে প্রকল্পটির পরিচালক ও যুগ্ম সচিব এ এফ এম আলাউদ্দিন খান বলেন, প্রকল্পের প্রস্তাবনায় বৈদেশিক প্রশিক্ষণের প্রয়োজন থাকতেই পারে। সরকারি সিদ্ধান্ত অনুযায়ী তা ব্যয় করা হবে। সরকার অনুমতি না দিলে বিদেশে প্রশিক্ষণে যাওয়া হবে না।

এদিকে প্রকল্পটিতে বিদেশে প্রশিক্ষণের পাশাপাশি দেশে প্রশিক্ষণে মূল ডিপিপিতে ১৮ কোটি ৬৪ লাখ টাকা বরাদ্দ ছিল। গত চার বছরে এ খাতের ৫০ শতাংশ ব্যয় হয়েছে। বাকি অর্থ আগামী দেড় বছরে ব্যয় করতে চান সংশ্লিষ্টরা।

প্রকল্পটির উপস্থাপনা থেকে জানা যায়, মূল ডিপিপিতে ছয়তলা বিশিষ্ট ৮টি নগর মাতৃসদন ও তিনতলা বিশিষ্ট ২০টি নগর স্বাস্থ্য কেন্দ্রের সংস্থান ছিল। কিন্তু সংশোধিত ডিপিপিতে নগর মাতৃসদনের সংখ্যা ঠিক রাখলেও নগর স্বাস্থ্য কেন্দ্রের সংখ্যা কমিয়ে ১৭টি করা হয়েছে। সময় বৃদ্ধি করা হচ্ছে এক বছর তিন মাস। মূল প্রকল্পে বাস্তবায়নকাল ছিল ২০১৮ সালের এপ্রিল থেকে ২০২৩ সালের মার্চ পর্যন্ত। কিন্তু এই দীর্ঘ সময়ে কাজের অগ্রগতি হয়েছে খুবই কম। চলতি বছরের জুন পর্যন্ত আর্থিক অগ্রগতি হয়েছে মাত্র ৩৪ দশমিক ৩০ শতাংশ ও বাস্তব অগ্রগতি ৪০ শতাংশ। তাই বাকি কাজ শেষ করতে ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত সময় বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে।

আরও পড়ুন: ঘাস চাষ শিখতে বিদেশ সফর, কাল প্রকল্প উঠছে একনেকে

এছাড়া প্রকল্পটিতে পরামর্শক খাতে ব্যয় ধরা হয়েছে ৬৮ কোটি ১৯ লাখ টাকা। মেডিক্যাল ও সার্জিক্যাল ইক্যুইপমেন্ট বাবদ ১৭ কোটি টাকা। বেসরকারি খাতের লোকবল বাবদ থোক বরাদ্দ ধরা হয়েছে ১৪ কোটি ১৭ লাখ টাকা। এভাবে কয়েকটি খাতে ব্যয় বেড়েছে। সব মিলিয়ে এক হাজার ১৩৫ কোটি থেকে ব্যয় বাড়িয়ে ধরা হয়েছে এক হাজার ২১৯ কোটি টাকা। এর মধ্যে এডিবির ঋণ ৯৫২ কোটি টাকা, বাকি অর্থ সরকারি কোষাগার থেকে ব্যয় করা হবে।

প্রকল্পের আওতায় দেশেও চলছে নানান ধরনের প্রশিক্ষণ কার্যক্রম, সংগৃহীত ছবি

বর্তমানে কাজের অগ্রগতির ব্যাপারে জানতে চাইলে প্রকল্প পরিচালক বলেন, কিছু কারণে প্রকল্পের অগ্রগতি কম হয়েছে। সব কাজ শেষ করতে প্রকল্প সংশোধন করে সময় বাড়ানো হচ্ছে। কিছু ক্ষেত্রে সরকারের সিদ্ধান্ত অনুয়াযী অর্থ কাটছাঁট করা হচ্ছে। গাড়ি কেনার অর্থ কমানো হচ্ছে।

আরও পড়ুন: খিচুড়ি রান্না ও পরিবেশন শিখতে বিদেশ যাবেন কর্মকর্তারা

পরামর্শক ফি বৃদ্ধির ব্যাপারে তিনি বলেন, তারা কাজ করলে বেতন তো দিতে হবে। প্রকল্পটি সংশোধনের জন্য পরিকল্পনা কমিশনে প্রস্তাব পাঠানো হলে তা যাচাই-বাচাই করতে গত ১৪ নভেম্বর প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটি (পিইসি) সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় কিছু ব্যাপারে আপত্তি করে তা সংশোধন করতে বলা হয়েছে। সংশোধিত ডিপিপি পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হলে চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য তা একনেক সভায় উপস্থাপন করা হবে।

এ প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য হলো শহর এলাকায় বসবাসকারী জনসাধারণ, বিশেষ করে শিশু, মহিলা ও দরিদ্র জনগোষ্ঠীর পুষ্টি, স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা অবস্থার উন্নয়ন সাধন করা। বিশেষ করে প্রকল্পের আওতাভুক্ত এলাকার প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা প্রদানের আর্থিক ও ভৌত সক্ষমতা বৃদ্ধিকরণ। নগরবাসীদের জন্য মানসম্মত প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা, বিশেষ করে মাতৃ ও শিশুস্বাস্থ্য সম্পর্কিত অপরিহার্য সেবা প্রদান প্যাকেজসমূহ নিশ্চিত করা। প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা গ্রহীতার সংখ্যা (বিশেষ করে দরিদ্র মহিলা, নবজাতক এবং শিশু) বৃদ্ধিকরণ। প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা প্রদানের প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থা শক্তিশালীকরণ।

স্থানীয় সরকার (সিটি করপোরেশন) আইন-২০০৯, স্থানীয় সরকার (পৌরসভা) আইন-২০০৯ অনুসারে নগরবাসীকে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা প্রদান করা সিটি করপোরেশন ও পৌরসভাসমূহের দায়িত্ব।

এ পরিপ্রেক্ষিতে ১৯৯৮ সাল থেকে স্থানীয় সরকার বিভাগের আওতায় আরবান প্রাইমারি হেলথ কেয়ার (UPHC) শিরোনামে জুলাই ১৯৯৮ থেকে জুন ২০০৫ মেয়াদে ১ম পর্যায় ও জুলাই ২০০৫ থেকে ২০১২ মেয়াদে ২য় পর্যায় প্রকল্প বাস্তবায়ন হয়। পরে আরবান প্রাইমারি হেল্প কেয়ার সার্ভিস ডেলিভারি প্রজেক্ট (UPHCSDP) নামে জুলাই ২০১২ থেকে মার্চ ২০১৮ (১ম পর্যায়) এবং এপ্রিল ২০১৮ থেকে মার্চ ২০২৩ পর্যন্ত (২য় পর্যায়), যা বর্তমানে চলমান রয়েছে।

আরও পড়ুন: ‘কামান দাগা’ নিয়েও এডিস মশা নিয়ন্ত্রণে ‘ব্যর্থ’ দুই সিটি করপোরেশন

প্রস্তাবনায় বলা হয়, আরবান প্রাইমারি হেলথ কেয়ার সার্ভিস ডেলিভারি (২য় পর্যায়) প্রকল্পটি এপ্রিল ২০১৮ হতে মার্চ ২০২৩ মেয়াদে বাস্তবায়নের জন্য ১১৩৬ কোটি টাকা প্রাক্কলিত ব্যয়ে একনেক কর্তৃক অনুমোদিত হয়। বর্তমানে বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হারের পরিবর্তনে স্থানীয় মুদ্রায় বরাদ্দ বৃদ্ধি, জিওবি অর্থের ভ্যাট/ট্যাক্স হার বৃদ্ধি ও পার্টনারশিপ এলাকার পরিবর্তনের কারণে UPHCSDP (২য় পর্যায়) প্রকল্পটির ১ম সংশোধনের প্রস্তাব করা হয়েছে। সংশোধন প্রস্তাবে ব্যয় প্রাক্কলন করা হয়েছে ১২১৮.৯৪ কোটি টাকা এবং বাস্তবায়ন মেয়াদকাল এপ্রিল ২০১৮ হতে জুন ২০২৪ পর্যন্ত। এক্ষেত্রে ব্যয় বৃদ্ধি পেয়েছে ৮২.৯৪ কোটি (৭.৩০%) টাকা এবং মেয়াদ বৃদ্ধি পেয়েছে ১ বছর ৩ মাস।

এমওএস/এমএইচআর/এএসএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।