কালিগঙ্গায় ৬৮৯ কোটি টাকায় বাঁধ

রক্ষা হবে ঢাকার ১২শ হেক্টর ফসলি জমি-২৭৮০ স্থাপনা

মফিজুল সাদিক
মফিজুল সাদিক মফিজুল সাদিক , জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৮:০০ পিএম, ১১ নভেম্বর ২০২২

প্রতিবছর নদীগর্ভে চলে যায় দেশের হেক্টরের পর হেক্টর ফসলি জমি, হাজারো ঘরবাড়ি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন কাঁচা-পাকা স্থাপনা। রাজধানী ঢাকার আশপাশও রক্ষা পায় না নদীভাঙন থেকে। গুরুত্ব বিবেচনায় জমি ও অবকাঠামো রক্ষায় উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। প্রকল্পের আওতায় ঢাকার নবাবগঞ্জের কালিগঙ্গা নদীর ডান তীর সংরক্ষণ করা হবে। এতে রক্ষা পাবে প্রায় ১২শ হেক্টর ফসলি জমি, বেসরকারি অফিসসহ দুই হাজার ৭৮০টি আবাসিক স্থাপনা, ৭৫ কিলোমিটার পাকারাস্তা এবং স্কুল-কলেজ, মসজিদ-মাদরাসা। এতে ব্যয় হবে ৬৮৯ কোটি টাকা।

‘নদীর তীর সংরক্ষণ’ প্রকল্পটি চলতি সময় থেকে জুন ২০২৪ মেয়াদে বাস্তবায়ন করবে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড (বাপাউবো)। এরই মধ্যে প্রকল্পটি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।

আরও পড়ুন>>পদ্মার ভাঙনে সব হারিয়ে নিঃস্ব দেড় শতাধিক পরিবার

প্রকল্পের উদ্দেশ্য
নদী তীরবর্তী ভাঙনের কবল থেকে স্থাপনাগুলো রক্ষা করা, নদীর গতিপথ পরিবর্তন প্রতিরোধ, সামাজিক নিরাপত্তাসহ এলাকার আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন অব্যাহত রাখা এবং পরিবেশের বিরূপ প্রভাব থেকে প্রকল্প এলাকার জনসাধারণকে রক্ষা করা।

আরও পড়ুন>> শরীয়তপুরে এক মাসে নদীগর্ভে বিলীন শতাধিক ঘরবাড়ি

প্রকল্পের মূল কার্যক্রম
ঢাকার নবাবগঞ্জের কালিগঙ্গা নদীর ডান তীর সংরক্ষণে ১২ দশমিক ৫শ কিলোমিটার নদীতীর সংরক্ষণ, মানিকগঞ্জের সাটুরিয়া উপজেলার কালিগঙ্গা নদীর ১ দশমিক ৬৫০ কিলোমিটার নদীতীর সংরক্ষণ, মানিকগঞ্জের ঘিওর উপজেলার কালিগঙ্গা নদীর দুই কিলোমিটার নদীতীর সংরক্ষণ কাজ করা হবে। মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার কালিগঙ্গা নদীর ৫ দশমিক ৭শ কিলোমিটার নদীতীর সংরক্ষণ কাজের কাটিং ও মানিকগঞ্জ জেলার সিংগাইর উপজেলার কালিগঙ্গা নদীর ১৮শ মিটার নদীতীর সংরক্ষণ করা হবে প্রকল্পের আওতায়।

আরও পড়ুন>> নদীভাঙনে দিশেহারা হরিনাপাটি গ্রামের মানুষ

বাপাউবো জানায়— নানান কারণে প্রকল্পটি হাতে নেওয়া হচ্ছে। কালিগঙ্গা বাংলাদেশের উত্তর-কেন্দ্রীয় অঞ্চলের মানিকগঞ্জ ও ঢাকা জেলার একটি নদী। দৈর্ঘ্য প্রায় ৯৬ কিলোমিটার এবং প্রস্থ প্রায় ২৪২ মিটার। নদীটি ব্রহ্মপুত্র নদ থেকে উৎপত্তি হয়ে মানিকগঞ্জ সদর, সাটুরিয়া, ঘিওর, সিঙ্গাইর উপজেলার মধ্যদিয়ে প্রবাহিত হয়ে ঢাকার নবাবগঞ্জ উপজেলার কৈলাইল ইউনিয়নের ধলেশ্বরী নদীতে পতিত হয়েছে। নদীটির প্রকৃতি সর্পিলাকার। প্রতিবছর বর্ষায় নদীটিতে ব্যাপক ভাঙন দেখা যায়। ২০০৭ থেকে ২০১৯ পর্যন্ত নদীর অবস্থান পর্যবেক্ষণে নদীর দুই তীরে বিশাল ভাঙন দেখা গেছে, ফলে দ্রুত ভাঙন রোধ জরুরি।

আরও পড়ুন>> রাজশাহীতে অসময়ে পদ্মায় ভাঙন, গৃহহারা ৩১ পরিবার

নবাবগঞ্জ উপজেলার তুলশীখালীতে ১০০ মিটার, মালিকান্দায় ৫০০, মেলেংয়ে ৩০০ ও পাতিলঝাপ বাজারে ৪৯১ মিটার এলাকায় কালিগঙ্গা নদীর ডান তীরে স্থায়ী বাঁধ দেওয়া হবে। নদীর বুকে জেগে ওঠা চরের কারণে স্থায়ী তীর সংরক্ষণ কাজের জন্য গত কয়েক বছরে তীব্র ভাঙনের সৃষ্টি হয়েছে। এছাড়া উপজেলার শোল্লা ইউনিয়নের পাতিঝাকে এক, চাকবাড়িতে দেড়, চকোরিয়ায় এক, সিনজুরিতে দেড়, মদনমহনপুরে এক, কৈলাইল ইউনিয়নে এক কিলোমিটার বাঁধ দেওয়া হবে। তুলশীখালী থেকে মালিকান্দা হয়ে নবাবগঞ্জ বাঁধ কাম রাস্তাও হুমকির সম্মুখীন।

আরও পড়ুন>> সিরাজগঞ্জে যমুনার ভাঙনে ১৫০ মিটার এলাকা বিলীন

অন্যদিকে, মানিকগঞ্জসহ জেলার সাটুরিয়া, মানিকগঞ্জ সদর এবং সিংগাইর উপজেলা দিয়ে প্রবাহিত কালিগঙ্গা নদী এলাকায় শূন্য দশমিক ৫শ কিলোমিটার, আয়নাপুর এলাকায় শূন্য দশমিক ৫শ কিলোমিটার, ঘিওরসহ এ জেলায় অনেক অঞ্চল ঝুঁকিতে। এসব এলাকার বসতবাড়ি, সড়ক, সরকারি-বেসরকারি স্থাপনাসহ অনেক গ্রাম নদীর গর্ভে বিলীন হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। দ্রুতসময়ে এ নদীতীর সংরক্ষণ না করলে বিলীন হবে ফসলের মাঠ। জেলার সাটুরিয়া, ঘিওর, মানিকগঞ্জ সদর এবং সিংগাইর উপজেলার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ এলাকা রক্ষা জরুরি হয়ে পড়েছে।

আরও পড়ুন>> ফরিদপুরে বেড়েছে পদ্মার ভাঙন, বিলীন হচ্ছে ফসলি জমি

পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের (পরিকল্পনা-২) উপ-সচিব খায়রুন নাহার জাগো নিউজকে বলেন, ঢাকার প্রকল্পটি অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। মূলত ঢাকা-নবাবগঞ্জের জমিরক্ষা বাঁধ, সরকারি স্থাপনা ও অবকাঠামো রক্ষা করা হবে। এজন্য কালিগঙ্গা নদীর ডান তীর রক্ষা প্রয়োজন। এছাড়া মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার কালিগঙ্গা নদীর ৫ দশমিক ৭শ কিলোমিটার নদীতীর সংরক্ষণ কাজের কাটিং করে মানিকগঞ্জের সিংগাইর উপজেলার কালিগঙ্গা নদীর ১৮শ মিটার নদীতীর সংরক্ষণ কাজ করা হবে প্রকল্পের আওতায়।

এমওএস/এমএএইচ/এএসএ/এএসএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।