চালের ‘সন্তোষজনক’ মজুতের সময় দামও সর্বোচ্চ
বর্তমানে সরকারি গুদামে পৌনে ১৬ লাখ টনের মতো খাদ্যশস্য মজুত রয়েছে। এর মধ্যে চালই রয়েছে ১৩ লাখ ৬৩ হাজার টনের বেশি, যা মোটামুটি সন্তোষজনক বলা চলে। খাদ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, চালের মজুত ভালো হলেও বাজারে চালের দাম রয়েছে সর্বোচ্চ পর্যায়ে। চলতি বছরের নভেম্বরেই মোটা চাল ৫২ থেকে ৫৬ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে, যা নিম্ন আয়ের মানুষকে ভোগাচ্ছে বেশ।
খাদ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে (৬ নভেম্বর পর্যন্ত) দেশে খাদ্যশস্যের মজুত ১৫ লাখ ৮১ হাজার ১৬৬ টন। এরমধ্যে চাল ১৩ লাখ ৬৩ হাজার ৯৩৩ টন, গম দুই লাখ ৯ হাজার ৩৩৩ টন এবং ধান ১২ হাজার ১৫৩ টন।
গত বছর (২০২১ সাল) এ সময়ে খাদ্যশস্যের মজুতের পরিমাণ ছিল ১৫ লাখ ৪৭ হাজার ৩৫০ টন। এরমধ্যে চাল ছিল ১৩ লাখ ৪৯ হাজার ৭২০ টন, গম এক লাখ ৯৪ হাজার ৭০০ টন এবং ধান চার হাজার ৫২০ টন। এর আগে ২০২০ সালের এ সময়ে খাদ্যশস্যের মোট মজুত ছিল ১০ লাখ ৪২ হাজার ৯৭০ টন। চাল ছিল সাত লাখ ৫৪ হাজার ১৩০ টন, গম দুই লাখ ৮১ হাজার ১২০ টন এবং ধান ১১ হাজার ৮৯০ টন।
সরকার বলছে গুদামে মজুত ভালো, কিন্তু চালের দামে স্বস্তিতে নেই ক্রেতা
এতে দেখা যায়, গত দুই বছরের একই সময়ের মজুতের চেয়ে বর্তমানে খাদ্যশস্যের মজুত বেশি। অন্যদিকে চালের বাজারও অস্থির। বিস্তৃত পরিসরে ওএমএস বা খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি চালিয়েও বাজারে সেভাবে প্রভাবে ফেলা যাচ্ছে না।
আরও পড়ুন: ওএমএসের চাল-আটা কিনতে অপেক্ষা যেন ফুরোয় না
তবে খাদ্য বিভাগের কর্মকর্তারা এ মজুতকে ‘সন্তোষজনক’ বলছেন। আমন ধান বাজারে এলে চালের দাম কিছুটা কমতে পারে বলে জানিয়েছেন তারা।
খাদ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (সংগ্রহ ও সরবরাহ অনুবিভাগ) মো. মজিবর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, এখন আমাদের মজুত ভালো। শুধু এখন নয়, কিছুদিন ধরেই এটা আমরা সন্তোষজনক পর্যায়ে রাখছি।
তিনি বলেন, এরই মধ্যে আমন সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ হয়েছে। সফলভাবে আমন কেনা গেলে, মজুত পরিস্থিতি খারাপ হওয়ার সুযোগ নেই। তবে আমাদের খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি চলছে। সেখানে মজুতের একটা অংশ চলে যাচ্ছে।
খাদ্যশস্যের মজুত ভালো থাকলেও চালের বাজার ঊর্ধ্বমুখী। সরকারি বাণিজ্য সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) ৭ নভেম্বরের তথ্য অনুযায়ী, মানভেদে সরু চাল কেজিপ্রতি দাম ৬২-৭৫ টাকা, মাঝারি মানের চাল ৫২-৫৮ এবং কেজিপ্রতি মোটা চাল ৪৮-৫২ টাকা। প্রতি কেজি আটা বিক্রি হচ্ছে ৫৮-৮০ টাকায়।
আমনে ৮ লাখ ধান-চাল কিনবে সরকার
চলতি আমন মৌসুমে অভ্যন্তরীণ বাজার থেকে আট লাখ টন ধান ও চাল কিনবে সরকার। প্রতি কেজি চাল ৪২ ও ধান ২৮ টাকা দরে কেনা হবে। গত ১ নভেম্বর খাদ্য পরিকল্পনা ও পরিধারণ কমিটির সভায় নেওয়া হয় এ সিদ্ধান্ত।
আগামী ১০ নভেম্বর থেকে সরকারিভাবে ধান ও চাল সংগ্রহ কর্মসূচি শুরু হবে বলে জানান খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার।
বাড়ছে চালের দাম, তাই বোর্ডে দামও পরিবর্তন করতে হয় সময়ে সময়ে
বিশ্বজুড়ে খাদ্য সংকট নিয়ে মন্ত্রী বলেন, সবকিছু আমাদের মাথায় আছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দৃঢ়তার সঙ্গে পরিস্থিতি মোকাবিলা করছেন। বাংলাদেশে খাদ্যসংকট হবে বলে মনে করি না।
আরও পড়ুন: ৪২ টাকায় চাল, ২৮ টাকা দরে ধান কিনবে সরকার
আমনের লক্ষ্যমাত্রা ও উৎপাদন পরিস্থিতি নিয়ে কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক বলেছিলেন, আমন আমাদের একটা বড় ফসল। এখন অবশ্য বোরো অনেক বেশি হয়েছে। দুই কোটি টন বা তার বেশি বোরো হয়। আর আমন হয় এক কোটি ৫০ টনের মতো। এ বছর শ্রাবণ মাসে একদিন বৃষ্টি হয়েছে। আমরা এটি নিয়ে খুবই উৎকণ্ঠার মধ্যে ছিলাম। প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে সবাই চিন্তিত ছিলাম যে ধান লাগানো যাচ্ছে না। আমন হলো ফটোসেনথেটিক। দিন ছোট হয়ে এলে আমন ধানে ফুল এসে যায়, ফুল আসলেই কমে যায় উৎপাদন। ধান বড় হতে পারে না। কিন্তু একদম শেষের দিকে কৃষকরা সেচ দিয়ে নানাভাবে মোটামুটি চাষ করেছেন।
আরএমএম/জেডএইচ/জিকেএস